ডিজিটাল মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন প্রয়োজন

ডিজিটাল মার্কেটিং কি- এককথায় বলতে গেলে কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মার্কেটিং ডিজিটাল প্লাটফর্মে করাকেই ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। আমরা অফলাইনে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের যে মার্কেটিং দেখে থাকি সেইম একই কাজ অনলাইনে করা হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। আশা করি আপনাদের সবারই এই অফলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে বেশ ভালো আইডিয়া আছে, কিন্তু অনলাইন মার্কেটিং টা এত সহজে বুঝবেন না। আমি আপনাদের সুবিধার্থে খুব সুন্দর করে সহজভাবে এখন পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলব, যেহেতু আমি নিজে একজন ডিজিটাল মার্কেটার।

যারা ডিজিটাল মার্কেটিং এ কাজ করে তাদেরকে ডিজিটাল মার্কেটার বলা হয়। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা ব্যপক আকারে বেড়ে গিয়েছে। এই সম্পর্কে যদি আপনার স্পষ্ট ধারণা না থাকে তাহলে এই কম্পিটিটিভ ওয়ার্ল্ডে টিকতে পারবেন না। প্রত্যেকটি বিজনেসের জন্য অনলাইনে আসা একেবারে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। অফলাইনে যারা মার্কেটিং করছে তাদের তুলনায় অনলাইন মার্কেটাররা একটি বিজনেস কে খুব দ্রুত প্রসারিত করতে পারছে।

আপনি যদি একজন বিজনেজ ওনার হন অথবা একজন মার্কেটার হন এই বিষয়টি জানা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া প্রতিটি মানুষেরই ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা এবং এই বিষয়ে নূন্যতম ব্যাসিক দক্ষতাটুকু থাকা প্রয়োজন। কেননা, আপনি যদি চাকরির কথাও চিন্তা করেন, বর্তমানে অফলাইন প্রসেস থেকে অনলাইন নিয়োগ প্রসেসকেই প্রায় সব কোম্পানি বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নিই

ডিজিটাল মার্কেটিং কি what is digital marketing

একটি ব্যবসার সফলতা পুরোপুরিভাবে নির্ভর করে তার মার্কেটিং এর উপর। মার্কেটিং বলতে সাধারণত আমরা কোন পণ্য বা সার্ভিসের প্রচার প্রচারণাকেই বুঝি। কিন্তু না, এর অর্থ আরো অনেক গভীর। শুধুমাত্র প্রচার প্রচারণা দিয়েই মার্কেটিং এর প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায় না। একটু ভাবুন, আমি আপনার কাছে আমার পণ্যের প্রচার করলাম, কিন্তু আমার এই পণ্য আপনি নিবেন না, আপনার কোন প্রয়োজন নেই। তাহলে এই মার্কেটিং কি আমার জন্য কোনভাবে লাভজনক হবে? কখনো না। সহজ কথায়, মার্কেটিং হলো ক্রেতার মন জয় করে তার কাছে কোন পণ্য বিক্রি করা। এবার আসুন ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করি,

যেহেতু বিষয়টা একটু জটিল, আমি উদাহরণের মাধ্যমে আপনাকে স্পষ্টভাবে বুঝাবো। ধরুন, আপনার একটি মোবাইল ফোনের দোকান আছে, তার পাশেই আপনার বন্ধুরও একটি মোবাইলের দোকান। তাহলে, আপনাদের দুজনের বিজনেসের মধ্যে সবসময় একটা কম্পিটিশন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এখন, আপনার বন্ধু ফেসবুকে একটি পেইজ খুলল তার দোকানের নামে এবং তার যত কাস্টমার আছে সবাইকে ওই পেজে এনগেইজ করে ফেলল, পাশাপাশি আপনার এলাকার যত মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে সবাই আস্তে আস্তে তার পেইজ ফলো করতে লাগল। আপনি দেখলেন হুট করে আপনার দোকানের কাস্টমার কমে গেল, যারা আপনার দোকানে আসত তারাও আপনার বন্ধুর দোকানে চলে যাচ্ছে। তাহলে এখানে ঘটনাটা কি ঘটল, ভাবুন

খুব সিম্পল ব্যপার, আপনার এলাকার অধিকাংশ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। আপনার বন্ধুর বিজনেসের অনলাইন প্রেজেন্স থাকায় তার দোকানে নতুন কোন মোবাইল ফোন আসার সাথে সাথে ফেসবুক পেজে ছবি আপলোড করে দেয় এবং তার পেজের ফলোয়াররা খুব সহজে জানতে পারে। এদিকে আপনার অনলাইনে কোন এক্টিভিটি নাই। আপনার দোকানে তার থেকে ভালো পণ্য নিয়ে আসলেও আপনার কাস্টমার রা এত তাড়াতাড়ি কোন আপডেট পাচ্ছে না। তাহলে আপনি আপনার বন্ধুর সাথে কম্পিটিশনে টিকে থাকতে পারবেন?

তো এভাবেই, প্রতিটি বিজনেসের অনলাইন প্রেজেন্স এর গুরুত্ব অপরিহার্য হয়ে গেছে। অফলাইনে যেমন কাস্টমার পাওয়ার জন্য আপনাকে মার্কেটিং করতে হয়েছে, একইভাবে অনলাইনেও মার্কেটিং করা প্রয়োজন। আপনার বন্ধুর পেজটি এতদিনে সবাই চিনে গেছে, আর আপনি নতুন একটি পেজ নিয়ে এসেছেন। আপনার বন্ধুর পেজ থেকেই তারা পণ্য কিনবে, আপনার পেজে আসার আর কোন প্রয়োজন তাদের নেই। আপনি যে আপনার বন্ধুর থেকে ভালো সার্ভিস দিচ্ছেন, তা তো আপনার অডিয়েন্সদের বুঝাতে হবে, তাদের কাছে আপনার পেজটি রিচ করতে হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধারণা কিভাবে এসেছে। আপনার কনসেপ্ট আরো ক্লিয়ার করতে নিজে নিজে একটু ভাবুন।

অফলাইনে যেমন দেখেন, জনসমাগম বেশি আছে এমন জাগায় ৫০০টাকার একটা ব্যানার লাগিয়ে দিলে ওই জাগায় যত লোক আসবে সবার কাছে আপনার বিজনেস পরিচিত হয়ে যাবে। অনলাইনে কিন্তু বিষয়টা এরকম সহজ না। আবার ধরুন, আপনার বিজনেসের সব কাস্টমার মহিলা, যেখানে অধিকাংশ মহিলারাই বাইরে আসে না, তাদের জন্য আপনার ভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হয়। এক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটিং আপনাকে বেশি সুবিধা দিবে। আপনার ধারণা যখন আরো স্পষ্ট হবে তখন বুঝতে পারবেন অফলাইন মার্কেটিং এর তুলনায় অনলাইন মার্কেটিং অনেক বেশি ফলপ্রসূ এবং আপনার মার্কেটিং কস্ট তুলনামুলকভাবে কম।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর পরিচিতি

ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বিশাল একটা সেক্টর। সহজে বুঝার জন্য ৩টা ক্যাটাগরিতে চিন্তা করুন

স্মার্ট অফলাইন মার্কেটিং

ইলেক্ট্রনিক বিলবোর্ড এবং সাধারণ বিলবোর্ডের পার্থক্য ভাবুন। ঢাকা শহরের ব্যস্ততম রাস্তার পাশে আপনার একটি রেস্টুরেন্ট আছে। আপনি তার সামনে একটি ইলেক্ট্রনিক বিলবোর্ড লাগিয়ে দিলেন, যেটিতে একটার পর একটা খাবারের ছবি ভেসে আসছে। শুধু তাই নয়, কাস্টমারদের ফিডব্যাকও দেখানো হচ্ছে। এগুলো সাধারণ বিলবোর্ডের তুলনায় বেশি কাস্টমারের মনোযোগ কেন আকর্ষন করবে না? তাহলে বুঝুন আপনার সেল কি পরিমাণে বাড়বে?

আপনি যখন মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের দোকানে যান তখন দেখবেন, কিছু ডেমো ডিভাইস সাজানো আছে, যেগুলো কাস্টমাররা খুব মনোযোগী হয়ে দেখতেছে। আপনার যদি কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দোকান থাকে তাহলে, ডেমো ডিভাইস রাখা টা একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।

টিভি মার্কেটিং

টেলিভিশন মার্কেটিং কে আপনি মার্কেটিং জগতের দৈত্য হিসেবে ভাবতে পারবেন। এর ফলাফল কোনদিনই কমবে না। এটি এমন একটি ইন্ডাস্ট্রি যেখানে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি পরিমাণে অর্থ ব্যয় করা হয় মার্কেটিং এর প্রয়োজনে।

টেলিভিশনে আপনারা যেসব এড দেখতে পান, স্বাভাবিক ভাবেই এরা আপনার মনে দীর্ঘকাল স্বায়ী হয়। তারা এড গুলো এমন ভাবে তৈরি করে যে আপনি নিজের অজান্তেই তাদের মার্কেটিং করে দেন। যেকোন কোম্পানির ব্র্যান্ডিং এ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে টিভি মার্কেটিং। তাহলে আপনি যদি অফলাইন মার্কেটিং এর কথা ভাবেন, আমি আপনাকে সাজেস্ট করব টিভি মার্কেটিং এর প্রতি বেশি মনোযোগী হন।

ফোন মার্কেটিং

বর্তমানে ৭৫% এর বেশি মানুষ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। রিসার্চ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ডেক্সটপ পিসি বা ল্যাপটপের তুলনায় ফোন মার্কেটিং বেশি কার্যকরী ফলাফল দিয়েছে।

টেক্সট ম্যাসেজিং এবং ফোন কলস এই মার্কেটিং এ খুব বেশি কার্যকরী। আপনার বিজনেসে বিভিন্ন অফার, কুপন, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি আপনার কাস্টমারের ফোনে পাঠিয়ে দিন। মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে এটা অনেক বেশি এনগেইজিং। তাই যত বেশি পারেন আপনার কাস্টমারের ফোন নাম্বার গুলো সংগ্রহ করুন এবং মার্কেটিং এর এই প্রক্রিয়াটি ফলো করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিস্তার

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্র গুলো সম্পর্কে সহজে আলোচনা করার জন্য আমি এগুলোকে ৮টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক-

  1. Search Engine Optimization (SEO)
  2. Search Engine Marketing (SEM)
  3. Social Media Marketing (SMM)
  4. Content Marketing
  5. Email Marketing
  6. Affiliate Marketing
  7. Pay Per Click Advertising (PPC)
  8. Cost Per Action Marketing (CPA Marketing)

    ডিজিটাল মার্কেটিং একক কোন বিষয় নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে মার্কেটিং জগতের এর সামগ্রিক বিষয়। আমরা যেমন অফলাইন মার্কেটিং দেখি অনলাইনেও ঠিক একইভাবে মার্কেটিং করতে হয়, কিন্তু স্ট্র্যাটেজি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
    ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক:

1.Search Engine Optimization :

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা সংক্ষেপে এসইও (SEO) হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসইও এর মানে হলো, সার্চ ইঞ্জিনের গাইডলাইন ফলো করে আপনার সাইটের কন্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করে তৈরি করা। ধরুন আপনার আপনার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট যদি আপনার কাস্টমার রা সার্চ করে খুঁজে না পায়, তাহলে আপনি কখনোই সফল হতে পারবেন না।

আপনার বিজনেসের জন্য নতুন কাস্টমার বা বিজনেসের ব্র্যান্ডিং করার জন্য এসইও এর বিকল্প নেই। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং দীর্ঘস্থায়ী টেকনিক। আমাদের ওয়েবসাইট থেকে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের ২০০+ র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর এবং এসইও এর উপর একটি কমপ্লিট কোর্স দেখে নিতে পারেন।

তারপর আসুন গুগল মাই বিজনেস। আপনারা নিশ্চয়ই কোন সার্ভিস বা প্রোডাক্ট সার্চ করলে প্রথমে কিছু রেজাল্ট দেখতে পান, যা শুধু গুগল ম্যাপের। এগুলোকে বলা হয় গুগল থ্রি প্যাক রেজাল্ট। আপনার বিজনেসের অনলাইন প্রেজেন্স গ্রো করতে গুগল মাই বিজনেস ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।

আপনার বিজনেসকে খুঁজে পেতে আপনার কাস্টমার রা যেসব কিওয়ার্ড ব্যাবহার করে তা খুঁজে বের করতে গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানার ব্যাবহার করুন। কিওয়ার্ড বাছাই করতে আপনি সবসময় লো কম্পিটিশন কিওয়ার্ড বাছাই করবেন। লং টেইল কিওয়ার্ড এক্ষেত্রে বেশি হেল্পফুল। তারা আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে কি ডিভাইস ব্যবহার করছে, কোন লোকেশন থেকে ভিজিট করছে, কোন সার্চ ইঞ্জিন বা কোন রেফারেল ওয়েবসাইট থেকে, জেন্ডার, এইজ, কত সময় ব্যয় করছে আপনার ওয়েবসাইটের কোন পেইজে, সমস্ত কিছু জানতে আপনার সাইটে গুগল এনালিটিক্স ব্যাবহার করুন।

গুগল সার্চ কনসোল গুগলের আরো একটি অসাধারণ ফ্রি সার্ভিস, যার সাহায্যে আপনি দেখতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটে যারা ভিজিট করছে তারা কোন কোন কিওয়ার্ড ব্যাবহার করে আপনার সাইটে ভিজিট করে। কোন কিওয়ার্ডের জন্য আপনার ওয়েবসাইটের কোন পেইজটি কত নাম্বার সার্চ রেজাল্টে র‍্যাঙ্ক করছে। আর এগুলো দেখে আপনি আরো আইডিয়া পাবেন, আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর রা পরবর্তী কি সার্ভিস বা প্রোডাক্ট আপনার কাছে চাইছে।

2.Search Engine Marketing (SEM):

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বা SEM এর মানে হলো বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজে এড দেয়া। ধরুন, আপনার বিজনেসের অডিয়েন্স আপনার সাইট খুঁজে পেতে যেসব কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সেসব কিওয়ার্ডের জন্য আপনার সাইটের অবস্থান অনেক নিচের দিকে। আমরা জানি যে, সার্চ রেজাল্টের প্রথম ৩টির পরে আর কেও ক্লিক করে না, দেখতেও চায় না। তাহলে আপনি কোনভাবে আপনার সাইটে কোন ভিজিটর পাবেন না।

কাস্টমাররা আপনার বিজনেস রিলেটেড যেসব কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে সেসব কিওয়ার্ডের জন্য আপনার সাইটকে সার্চ রেজাল্টের প্রথম অবস্থানে দেখানোর জন্য এড দেয়া হলো সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং। কিওয়ার্ড বাছাই এবং কোন কিওয়ার্ডের জন্য প্রতি ক্লিকে আপনাকে কত পেমেন্ট করতে হবে এগুলো জানতে হলে আপনাকে গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানার ব্যবহার করতে হবে।

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর গুরুত্ব কতটুকু সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনি সেটা নিজেই বুঝেন। আপনার ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের জন্য ভিজিটর পেতে এবং আপনার বিজনেসের ব্র্যান্ডিং এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং।

এই প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল। তবে বেশ কিছু টেকনিক আছে, যেগুলো মানলে আপনি এর ব্যয় অনেক কমিয়ে আনতে পারবেন। এর জন্য আপনার সাইটে রিলেভেন্ট কন্টেন্ট থাকতে হবে। এড দেয়ার জন্য কিওয়ার্ড অপটিমাইজ করে নিতে হবে। আপনাকে স্পেসিফিক অডিয়েন্স টার্গেট করতে হবে। যারা এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য তাদের জন্য পরবর্তীতে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে পোস্ট লিখব।

3.Social Media Marketing (SMM)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর অবস্থান। প্রতিটি মানুষ, যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, সবাই নিজেকে সোস্যালাইজ করার জন্য বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে নিজেকে যুক্ত রাখে। তার মানে বুঝতেই পারছেন প্রতিটি বিজনেসের কাস্টমারদের ই আপনি সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে খুঁজে পাবেন। এই জন্য এর মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি আপনাকে খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে।

সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোতে আপনি নিয়মিত কাজ করলে খুব সহজে আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ডিং করে ফেলতে পারবেন। এজন্য আপনাকে সবসময় আপনার অডিয়েন্সের ইন্টারেস্টের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন অফার, কম্পিটিশন, ইভেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার বিজনেসের অডিয়েন্সদের খুব সহজে এনগেইজড রাখতে পারবেন।

সোস্যাল মিডিয়া এডভার্টাইজিং এ কস্ট অনেক কম, বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইন্সতাগ্রামে। আর কাস্টমার টার্গেট করাও অনেক সহজ। তাই সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ ইনভেস্ট করতে সব বিজনেস ওনারদের আগ্রহ একটু বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন সোস্যাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুক, ইন্সতাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার, লিঙ্কডিন, পিন্টারেস্ট, রেডিট ইত্যাদি। এই প্ল্যাটফর্ম গুলোতে আপনার অনলাইন প্রেজেন্স থাকতেই হবে।

4.Content Marketing

আপনি যদি জানতে চান ডিজিটাল মার্কেটিং এর জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কোনটি? তাহলে জেনে নিন, কন্টেন্ট হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। একটি ওয়েবসাইট র‍্যাংক করানোর জন্য কন্টেন্ট কে কিং বলা হয়। কন্টেন্ট ছাড়া একটা ওয়েবসাইট র‍্যাংক করানোর দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। এইজন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ।

ইমেজ, টেক্সট এবং ভিডিও এই তিনটি জিনিস কন্টেন্ট মার্কেটিং এ আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। ইতিপূর্বে আপনাকে কিওয়ার্ড রিসার্চের কথা বলেছি। নিশ্চয়ই আপনাকে এমন কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে যেগুলো সার্চ ভ্যালু আছে এবং কম্পিটিশন লো। এবার আপনার সিলেক্ট করা কিওয়ার্ড দিয়ে আর্টিকেল লিখুন। কন্টেন্ট মার্কেটিং এর জন্য কি ধরণের আর্টিকেল লিখতে হবে তা জানতে আমার আরেকটি পোস্ট থেকে আর্টিকেল লেখার নিয়ম জেনে নিন।

কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার বিজনেসের ব্র্যান্ডিং করতে পারবেন। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে আপনার কন্টেন্ট গুলো র‍্যাংক করিয়ে নতুন কাস্টমার পেতে পারেন। আপনার ভিজিটরদের ইন্টারেস্ট এবং তারা নতুন কি চাইছে আপনার কাছে তা জানতে গুগল এনালিটিক্স এবং সার্চ কনসোল ব্যবহার করতে হবে।

5.Email Marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং এ সফল হবার জন্য ইমেইল মার্কেটিং এর উপর আপনাকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একটু ভেবে দেখুন প্রতিদিন আপার ইনবক্সে কতগুলো ইমেইল আসে, সাথে এডও। নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন অনেক আনওয়ান্টেড ইমেইল ও আসে, যেগুলো আপনার কাছে বিরক্তিকর এবং আপনার ইনবক্স ফুল করে ফেলে।

আরো ভাবুন, এত ইমেইল থেকে আপনি কয়টা ইমেইল খুলে দেখেন? এবার কাস্টমারদের কথা ভাবুন। আগে আপনাকে আপনার স্পেসিফিক কাস্টমার টার্গেট করে তাদের ইমেইল সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইনে বেশ কিছু টুল পাবেন ইমেইল মার্কেটিং এ যেগুলো আপনার জন্য হেল্পফুল হবে। তবে আপনাকে ইমেইল সংগ্রহ করতে বেশ কিছু টেকনিক ফলো করতে হবে।

সঠিক উপায়ে ইমেইল মার্কেটিং করতে না পারলে আপনার মার্কেটিং কস্ট বেড়ে যাবে এবং কোন প্রকার বেনিফিট পাবেন না। ইমেইল টেম্পলেট ডিজাইন, ইমেইল রাইটিং, আই ক্যাচি সাবজেক্ট এই জিনিস গুলো আপনাকে ইমেইল মার্কেটিং এ সফল হতে সাহায্য করবে। আর অনলাইনের ঐ টুল গুলো ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন আপনার ইমেইল মার্কেটিং এর সাকসেস রেট সম্পর্কে। ইমেইল মার্কেটিং এ ক্যাম্পেইন রান করার সময় আপনাকে খুব বুঝে শুনে ইনভেস্ট করতে হবে।

6.Affiliate Marketing

এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো আপনার কোন পণ্য বা সার্ভিস অন্য কেউ বিক্রি করে দিবে, বিনিময়ে আপনি তাকে লভ্যাংশ দিবেন। এটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর খুবই চমকপ্রদ একটি বিষয়। আপনার অনলাইন বিজনেস গ্রো করতে এফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক বেশি হেল্প করে।

এক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং লোভনীয় হচ্ছে এমাজনের এফিলিয়েট মার্কেটিং। একটু লক্ষ করলে দেখতে পাবেন অধিকাংশ অনলাইন বিজনেসে এফিলিয়েট মার্কেটিং যুক্ত আছে। আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো, আপনার বিজনেসে এফিলিয়েট অবশ্যই যুক্ত করুন। যতটুকু সম্ভব লভ্যাংশ শেয়ারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে আপনার বিজনেসের এফিলিয়েট লোভনীয় করে তুলুন।

এতে বিভিন্ন জাগয়া থেকে মার্কেটার রা আপনার বিজনেসের এফিলিয়েট করে ব্র্যান্ডিং গ্রো করতে সাহায্য করবে। আরেকটি বিষয় আছে লিড জেনারেশন, এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ঠিক পাশাপাশি যার অবস্থান। ধরুন আপনি অনলাইনে কোন সার্ভিস বা কোর্স সেল করেন। ওই বিষয়ে যেসব কিওয়ার্ড লিখে গুগলে যারা সার্চ করে এবং ওই কিওয়ার্ড গুলোর জন্য যেসব ওয়েবসাইট ১ম দিকে র‍্যাংক করে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা আপনার সার্ভিস বা বিজনেসকে প্রোমোট করবে। এভাবে আপনি সেল জেনারেট এবং কাস্টমার আরো বেশি পেতে পারেন।

7.PPC Advertising (Pay Per Click)

এ সম্পর্কে অল্প কিছু ধারণা পেয়েছেন সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং অংশে। PPC মানে হলো পে পার ক্লিক, অর্থাৎ প্রতি ক্লিকের জন্য আপনাকে পে করতে হবে। সার্চ এড ছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ এড হলো ডিসপ্লে এড। এতে আপনি খুব কম খরচে অনেক বেশি মানুষের কাছে আপনার এড রিচ করাতে পারবেন। সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটি পাবেন তা হলো আপনার বিজনেসের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ছবি এবং ভিডিও দেখাতে পারবেন, যা আপনার অডিয়েন্সদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

ডিসপ্লে এডের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে অনেক বেশি ট্রাফিক ড্রাইভ করতে পারবেন। আমরা সাধারণত বিভিন্ন ব্লগে এবং ইউটিউব ভিডিও তে ডিসপ্লে এড দেখে থাকি। গুগল আপনাকে এই ডিসপ্লে এডে কস্ট অপটিমাইজ করতে অনেক বেশি হেল্প করে। গুগল নিজে আপনার এড টার্গেটেড অডিয়েন্স দের দেখায়। নিজের ভিডিও মার্কেটিং ছাড়া অন্যের ভিডিও তে এড দেখিয়ে আপনি সুবিধা নিতে পারেন।

8.CPA Marketing (Cost Per Action)

CPA মার্কেটিং বুঝার জন্য আপনি পিপিসি এবং এফিলিয়েটের একটা কম্বিনেশন চিন্তা করতে পারেন। একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করুন, মার্কেটিং এ আমাদের উদ্দ্যেশ্য থাকে যা আমরা ইনভেস্ট করব তার থেকে বেশি যেন আমরা রিটার্ন পাই। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভাষায় যাকে বলা হয় ROI অর্থাৎ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট। সিপিএ মার্কেটিং এ আপনার আরওআই সবচেয়ে বেশি হতে পারে।

ধরুন আপনি ১০০$ এ একটি জুতা বিক্রি করবেন। যে মার্কেটার সিপিএ মার্কেটিং করে আপনার জুতা বিক্রি করে দিল তাকে দিলেন ১০$, তাহলে আপনার মার্কেটিং কস্ট হলো ১০$ মার্কেটিং এর এই প্রক্রিয়া টি মূলত ব্যবহার করা হয় লিড জেনারেশনের কাজে। এখান থেকে আপনি একদম রিয়েল কাস্টমার পেতে পারেন এবং সেল জেনারেট করতে পারেন। ই-কমার্স সাইটে কোয়ালিটি ট্রাফিক ড্রাইভ করতে এটি ব্যবহার করা হয়।

আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রোমোট করার জন্য সিপিএ মার্কেটিং আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে। এর জন্য আপনাকে কোন মার্কেটিং এজেন্সি বা কোন ডিজিটাল মার্কেটার হায়ার করার প্রয়োজন হবে না। বিভিন্ন সিপিএ মার্কেটিং নেটওয়ার্কে গিয়ে আপনি অফার সাবমিট করে দিয়ে আসুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন

এতক্ষণে আমরা ধাপে ধাপে যেসব ব্যাখ্যা দিয়েছি তা থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা খুব ভালো ভাবে জেনে গেছেন নিশ্চয়ই। এই হেডলাইনে আশা করি আর কোন কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। এখন আমি আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন দিব। যদি আপনার অনলাইনে কোন বিজনেস থাকে তাহলে এগুলো আপনার অবশ্যই মানতে হবে।

অনলাইনে মার্কেটিং করার মূল উদ্দেশ্য হল বিজনেসের অনলাইন প্রেজেন্স এবং ব্র্যান্ডিং গ্রো করা। অনলাইনে যদি আপনার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে আপনি কখনো আপনার বিজনেসের অডিয়েন্স খুঁজে পাবেন না এবং ব্যবসায় সফল হতে পারবেন না। বর্তমান কম্পিটিটিভ ওয়ার্ল্ডে আপনার বিজনেস টিকিয়ে রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই অনলাইন মার্কেটিং এ গুরুত্ব দিতে হবে।

আপনারা অনেক সময় আপনাদের বিজনেসের জন্য ডিজিটাল মার্কেটার, মার্কেটিং এজেন্সি অথবা বিভিন্ন টুলের সাহায্য নিতে চান। সেক্ষেত্রে আপনি খুব ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নিবেন। কখনো অটোমেটেড টেকনিকে যাবেন না। এডভার্টাইজিং বা পেইড মার্কেটিং এর থেকে বেশি গুরুত্ব দিন অর্গানিক মার্কেটিং এর দিকে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরো অনেক গুলো খেত্র আছে। আপনি যত বেশি পারেন আপনার বিজনেসের অনলাইন প্রেজেন্স গ্রো করুন।

Conclusion

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এতক্ষণ যা কিছু জানলেন এর বাইরে আপনার যদি আরো কিছু জানার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করুন। আমরা আপনার কমেন্ট সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করি। ডিজিটাল মার্কেটিং এ যারা নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য পরবর্তীতে আরো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট থাকবে। সবসময় সঠিক ইনফরমেশন পেতে এবং ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করুন আর আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

ফ্রিল্যান্সিং এবং অনলাইনে ইনকাম সম্পর্কে আমাদের ওয়েবসাইটে জেনে নিন।

4.8/5 - (42 votes)

5 Comments

  1. ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আধুনিক অনলাইন মার্কেটিং সিস্টেম।

  2. আপনার লেখার ধারাবাহিকতা খুবই সুন্দর।

  3. Good write-up, I am normal visitor of one’s website, maintain up the nice operate, and It’s going to be a regular visitor for a long time.

  4. এত সুন্দর করেরে সব কিছু বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। লেখাটি আমার অনেক ভালো লেগেছে।

    আমার ব্লগ ঘুরে আসতে পারেনঃ

    https://ridoyhasanalif.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button