স্কিন কেয়ার

ব্রণ দূর করার উপায়: এক্সপার্টদের টিপস

অনেক সময় দেখা যায় ঠিক কাল একটা প্রোগ্রাম বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইভেন্ট রয়েছে। আর আজকেই একটা ব্রণ উকি দিলো। সেক্ষেত্রে এক রাতেই যেনো এই ব্রণ টা আপনাকে মনক্ষুন্ন না করে তার জন্য রয়েছে কিছু ঘরোয়া সমাধান। পুরো পোস্ট জুড়ে থাকবে ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ, যেগুলো করে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণ দূর করতে পারবেন।

আমাদের ত্বকে রয়েছে ছোট ছোট পোরস বা গর্ত যা আমাদের বাহিরের ত্বক কে Sebaceous Glands  এবং Hair follicles এর সাথে যুক্ত করে। এবং আমাদের ডারমিস লেয়ারে সিবাম নিষ্কাশন এর মাধ্যমে আমাদের ত্বকের হাইড্রেশন এবং রেসিলিয়েন্ট অর্থাৎ স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চয়তা করে। কখনো পোরস এ ময়লা, মৃত কোষ জমে থাকে। যার দরুন ত্বকে ব্রণের সৃষ্টি হয়।

আবার  কখনো হরমোনাল ইমব্যালেন্স এর কারণে সিবাম নিষ্কাশন অধিকমাত্রায় বেড়ে যায় এবং সেই থেকেও ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে। পুরো পোস্ট টি পড়ার আগে নিচের পোস্ট থেকে ব্রণ হবার কারণ সমূহ জেনে নিন।

ব্রণ দূর করার উপায় naturally

ব্রণ দূর করার জন্য প্রথম যেই পদ্ধতি গুলো নিয়ে কথা বলবো সেটি ব্রণ হবার পর থেকে ব্রণের স্পট এর ট্রিটমেন্ট পর্যন্ত কার্যকরী হবে।

প্রথম পদ্ধতি 

 উপকরণঃ

  1. দারচিনির গুঁড়া
  2. গ্রীন টি
  3. মধু

গ্রীন টি তে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট(antioxidants)  অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি(anti-inflammatory), অ্যান্টিবায়োটিক(Antibiotic) প্রপার্টিজ যা ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে।

দারু চিনিতে রয়েছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিজ যা ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং গ্রীনটিতে রয়েছে অ্যাসট্রিনজেন্ট প্রপার্টিজ যেটা কিনা আমাদের পোরস গুলো কে ছোট করে দেয় এবং আমাদের স্কিন দেখতে অনেক টান টান লাগে।

মধু আমাদের  ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে এর সাথে ব্রণ চলে যাবার পর ব্রণের দাগ থাকতে দেয় না। এবং ওপেন পোরস কে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

বানানোর প্রক্রিয়াঃ

প্রথমেই একটি পাত্রে পানি গরম করে আমরা যেভাবে নরমাল গ্রিন-টি বানাই সেভাবে গ্রিনটি বানাতে হবে। এখন একটি পরিষ্কার পাত্রে এক চিমটি দারচিনির গুঁড়ো সাথে পরিমাণমতো মধু এবং গীনটি নিয়ে তার একটি প্যাক বানাতে হবে। 

ব্যবহারবিধিঃ

যেখানে যেখানে ব্রণ রয়েছে সেখানে সেখানে এই স্পট ক্রিম লাগাতে হবে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি

 উপকরন সমূহঃ

  1. মুলতানি মাটি
  2. হলুদের গুঁড়া
  3. মধু
  4. গোলাপজল/ সাধারণ পানি

মুলতানি মাটি আমাদের ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমায় এবং এর সাথে  মৃত কোষ কে  নিষ্কাশন করে।

হলুদগুঁড়োতে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিজ যেটা কিনা ব্রণের ভিতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে ব্রণ হওয়া রোধ করে।

মধু আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং গোলাপজল আমাদের ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। 

 বানানোর প্রক্রিয়া

 প্রথমেই এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি নিয়ে তাতে এক চামচ হলুদ গুঁড়া এবং হাফ চামচ মধু নিয়ে নিন। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশানোর জন্য গোলাপজল অথবা সাধারণ পানি ও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্যবহারবিধি

যেসব জায়গায় ব্রণ রয়েছে সেসব জায়গায় শুধুমাত্র  একটি আঙুলের সাহায্যে হালকা করে লাগিয়ে নিন যেনো সেখানে  কোন ঘর্ষণের সৃষ্টি না হয় বা ব্রণ টি ফেটে না যায়।ভালোভাবে শুকিয়ে তা পুরো রাত রেখে দিন।এবং সকালে  সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

তৃতীয় পদ্ধতি

 উপকরন সমূহঃ

  1. চন্দন গুড়া
  2. জায়ফল এর গুড়া
  3. ট্রি টি ওয়েল
  4. গোলাপজল

জায়ফলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি(anti-inflammatory), এবং এন্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপার্টিজ যা ব্রণ এবং ব্রণের দাগ এর বিরুদ্ধে কাজ করে। চন্দন গুড়ো ত্বক কে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে ত্বকে ব্রণ উঠার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়। এবং ট্রি টি ওয়েলে রয়েছে  এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিজ যা ব্রণের ভিতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে  ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে।

বানানোর প্রক্রিয়া

আধ চামচ জায়ফলের গুড়োর সাথে  ১ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়া এবং  দুই থেকে তিন ড্রপ ট্রি টি ওয়েল নিয়ে নিন। এবং উপাদানগুলো মিক্স করে গোলাপ জলের সাহায্যে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন।

ব্যবহারবিধি

এটিও ঠিক আগের পদ্ধতিটির মতো যেসব জায়গায় ব্রণ রয়েছে সেসব জায়গায় ব্যবহার করতে হবে এবং সম্পূর্ণ রাত রেখে সকালে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।শোয়ার পূর্বে তা অবশ্যই ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।

চতুর্থ পদ্ধতি

আলু একটা অংশ একটু চিকন করে কেটে তা আপনার যেসব অংশে ব্রণ এর দাগ রয়েছে সেখানে লাগিয়ে পুরো রাত রেখে দিন।যদি আপনি পুরো রাত না রাখতে পারেন সেক্ষেত্রে তিন থেকে চার ঘণ্টা রেখে দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন।আলুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা আপনার ত্বকে বড় হতে থাকা ব্রণ কে যেমন বড় হতে দিবে না এর পাশাপাশি কোনো ব্রণের দাগ থেকে থাকলে তা দূর করতেও সাহায্য করবে।আর এই পরিবর্তন আপনার নিজের চোখ কেই অবিশ্বাস করবে।এটা ওয়েলি স্কিন এর জন্য অনেক ভালো কার্যকরী। 

পঞ্চম পদ্ধতি

যাদের শুষ্ক ত্বক তারা যেসব জায়গায় ব্রণ রয়েছে সেই জায়গা গুলোতে মধু লাগিয়ে রেখে দিলে এর  অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ ব্রণ এর ভিতরে থাকা জার্ম এর সাথে ফাইট করে ব্রণকে দূর করতে সহায়তা করে। 

ষষ্ঠ পদ্ধতি

 আমরা সকলেই জানি গ্রিন টি তে রয়েছে anti-inflammatory প্রোপার্টিজ যেটা কিনা ব্রন এর ভিতরে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে। একটি গ্রিন টি ব্যাগ ব্যবহার করার পর তা ফ্রিজে রেখে দিন। যখনই ঠান্ডা হয়ে যাবে সেই গ্রিন টি ব্যাগটি বের করে রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকের যেখানে যেখানে ব্রণ রয়েছে সেখানে সেখানে হালকা করে চাপ দিন। এবং তা পুরো রাতের জন্য এভাবে রেখে দিন।

ব্রণ দূর করতে আইস কিউবসঃ

ব্রণ দূর করতে আইসকিউব এক অনন্য ভূমিকা পালন করে।ত্বকে আইস কিউব ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মাবলী রয়েছে যা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। যেমন আপনি যখন আইসকিউব ব্যবহার করছেন, ব্যবহারের পূর্বে  আইসকিউব টি অবশ্যই পরিষ্কার করে ধুয়ে নিবেন। এবং আপনার ফেইস ও  ফেসওয়াস দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিবেন। আপনার পছন্দমত একটি টোনার ব্যবহার করবেন। যাদের হাত ঠান্ডা সেন্সেশন  সহ্য করতে পারে না  অথবা যাদের ত্বক একটু সেনসিটিভ তারা চাইলে একটি পরিষ্কার রুমাল অথবা পরিষ্কার টিস্যু দিয়ে ও আইসকিউবটি আপনার ফেইস এ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যত কিছুই ব্যবহার করেন না কেনো খেয়াল রাখতে হবে প্রতিটি জিনিস যেন পরিষ্কার হয়।

ট্রি টি আইস কিউব

উপকরণ সমূহঃ

  1. অ্যালোভেরা জেল
  2. ট্রি টি ওয়েল
  3. আইস কিউব ট্রে

ট্রি টিতে রয়েছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিজ যা ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে এবং অ্যালোভেরা ত্বক এর পোরসকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে তা ছোট করে রাখে। 

বানানোর প্রক্রিয়াঃ

প্রথমে একটি পরিষ্কার বাটিতে আধ কাপ এর মতো পানি নিয়ে তাতে ৩ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে নিন। তার সাথে ৮-১০ ড্রপ ট্রি টি অয়েল নিয়ে নিন। এবং ভালোভাবে নেড়ে নিন।  মিশ্রণটি একটি আইস কিউব ট্রে তে ঢেলে ফ্রিজে রেখে দিন।

ব্যবহারবিধিঃ

ব্রণ এবং ব্রণের জায়গায় আইসকিউব টি ব্যবহার করে  পুরো রাত রেখে দিন। এবং পরদিন দেখবেন একটি স্মুথ  ত্বক আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

সতর্কতাঃ

যাদের অ্যালোভেরা ত্বকে শুট করে না তারা শুধু ট্রি টি দিয়ে এই আউস কিউব টি বানাতে পারেন।

পটেটো আইস কিউব

উপকরণ সমূহ

  1. আলু
  2. আনার
  3. লেবু

বানানোর প্রক্রিয়া

একটি মাঝারি সাইজের আলু নিয়ে তা পরিষ্কার করে কেটে কমপ্লিট ব্লেন্ড করে ফেলতে হবে। তার সাথে আধ বাটি আনার নিয়ে সেগুলো ও ব্লেন্ড করতে হবে।এবং এই মিশ্রণ এ যোগ করতে হবে অর্ধেক পরিমাণ লেবুর রস। মিশ্রণটি ভালোভাবে নেড়ে তা আইস কিউব ট্রে তে স্টোর করতে হবে। ব্রণ দূর করা ছাড়াও এ  আইস কিউবটি আরো নানা স্কিন প্রবলেম এ অনেক সাহায্য করবে।

 নিম আইস কিউব

 উপকরণ সমূহ

  1. পরিষ্কার নিম পাতা
  2. সাধারণ পানি

বানানোর প্রক্রিয়া

পরিমাণমতো নিমপাতা নিয়ে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট বানাতে হবে। একটি পাত্রে পানি নিয়ে মৃদু আঁচে চুলায় বসিয়ে তাতে সেই পেস্ট করা নিম দিয়ে দিতে হবে এবং ভালোভাবে নাড়তে হবে।৫ মিনিট পর তা উঠিয়ে ঠান্ডা হবার জন্য রেখে দিতে হবে।ঠান্ডা হয়ে গেলে তা আইস কিউব ট্রে তে স্টোর করতে হবে।

 সতর্কতাঃ

নিম আইস কিউব ব্রণ দূর করা ছাড়াও অন্যান্য নানা ত্বকের প্রবলেমের জন্য অনেক ভালো কাজ করে কিন্তু কারো যদি নিমে এলার্জি থাকে সেক্ষেত্রে তারা এই আইস কিউব ব্যবহার না করাই উচিত।

গ্রিন টি-এর টোনার 

গ্রিন টি বানানোর পর একে ঠান্ডা করে একটি স্প্রে বোতলে নিয়ে নিন। চাইলে এর সাথে ল্যাভেন্ডার অয়েল ব্যবহার করতে পারেন যার মধ্যে রয়েছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস যা ব্রণের বিরুদ্ধে অনেক ভাল কাজ করে এবং ত্বককে ব্রণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

সর্বোপরি বলে রাখা ভালো উপরের কোন পদ্ধতিই চিরকালের জন্য আপনার ব্রণ ওঠা কে রোধ করতে পারবে না। ব্রণ সম্পূর্ণরূপে দূর করার জন্য আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কিছু টিপস্ এন্ড ট্রিকস্ ফলো করাও উচিত এবং তা আমাদের পূর্বের ব্লগে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি চাইলে সেখান থেকে জেনে নিতে পারেন।

Conclusion

ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে আমি যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি এখানে বর্ণনা করেছি এগুলো আমার নিজের এক্সপেরিমেন্ট করা। আমি নিজে এসব উপায়ে ভালো ফলাফল পেয়েছি। আপনি চাইলে এই সবগুলো উপায়ে চেষ্টা করতে পারবেন। এগুলোর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সুস্থ ও সুন্দর ত্বক পেতে নিয়মিত ত্বকের যত্ন করার কোন বিকল্প নেই। আমরা অনেকেই সময়ের অভাবে বাজারের সস্তা পণ্য কিনে আমাদের ত্বকে ব্যবহার করি। যা আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ও বিপদজনক। আরো গুরুত্বপূর্ণ টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করুন।

5/5 - (20 votes)

Subna Islam

খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে, গভীর স্বস্তিতে, তৃপ্তিতে বা খারাপ লাগায় এক আল্লাহর কাছে মনের প্রতিটা কথা খুলে বলার মধ্যে যে শান্তি,, তা একবার উপলব্ধি করে দেখুন।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button