ইতিহাস

পিগলি উইগলিঃ যেখান থেকে সুপার শপের জন্ম।

সুপার শপের জগতে বাংলাদেশে জনপ্রিয় নাম স্বপ্ন, মিনা বাজার এবং অ্যাগোরা। এখানে বাজার করেনি বা বাজার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি এমন মানুষের সংখ্যা শহরাঞ্চলে নিতান্তই কম। কে না চায় নিজ হাতে নিজের পছন্দমত পণ্যসামগ্রী দোকান থেকে নিজের ব্যাগে ভরতে তাও যদি একই ছাদের নিচে পাওয়া যায় নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যসামগ্রী। যেখানে বিক্রেতারা শিক্ষিত, আচরনে স্মার্ট এবং সেবাই যাদের মূল লক্ষ্য। বাজারে ্গিয়ে ভীড় ঠেলে পণ্য ক্রয় করার চেয়ে সুপার শপে ক্রয় করাটা আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ীও বটে। কিন্তু জানেন কি এই সুপার শপ ধারণাটির জন্ম কিভাবে হয়েছে? অনেকেরই না জানার কথা। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে আসলো এই সুপার শপ এর ধারণা, কিভাবে একটি দোকান পাল্টে দিলো আমাদের কেনাকাটার ধারণাকে।

সময়টা বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে। ক্লারেন্স সন্ডারস আমেরিকার মেমফিসে পিগলি উইগলি(Piggly Wiggly) নামে তার দোকান শুরু করেন। যেখানে ক্রেতারা দোকানে এসে দোকানের ক্লার্কের কাছে তার বাজারের তালিকা দেন এবং ক্লার্ক তালিকা অনুযায়ী পণ্য ব্যাগে ভরে তা ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করে। ক্রেতাকে তখন লম্বা লাইনে দাড়িয়ে পণ্য মূল্য পরিশোধ করতে হতো। যেটা ছিল সময় সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর ব্যাপার। এই অসুবিধা থেকে ক্রেতাদের পরিত্রাণ দিতে ক্লারেন্স সন্ডারস জন্ম দিলেন এক যুগান্তকারি আইডিয়ার।

এখন থেকে আর ক্রেতাদেরকে ক্লার্কের হাতে পণ্য তালিকা প্রদান করেতে হবেনা। দোকানে সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো থাকবে পণ্য এবং ক্রেতারা নিজের প্রয়োজনীয় পণ্য সেখান থেকে নিজের হাতে সংগ্রহ করবেন। কোন পণ্য খুঁজে পেতে অসুবিধা হলে দায়িত্বরত বিক্রয়কর্মীর সাহায্য নিতে পারবেন। পণ্য সংগ্রহ শেষ হলে দোকানের কাউন্টারে দাম দিয়ে বের হয়ে আসবেন।

কিন্তু ক্রেতারা কি এই ধরণের কেনাকাটা পছন্দ করবে? এটা নিয়ে সংশয় বোধ করছিলেন ক্লারেন্স সন্ডারস। ১৯১৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর, তিনি ক্রেতাদের আমন্ত্রন জানাতে লাগলেন এটা করে দেখার জন্য। এবং ফলাফল স্বরূপ দেখা গেল যে ক্রেতারা এটা দারুন পছন্দ করতে শুরু করেছে। সেদিন দোকানে তিনি ১০০০ পণ্যের স্টক করেছিলেন যেটা সচরাচর দোকান থেকে ৪গুন বেশি ছিলো।

সেদিনের পর থেকে পিগলি উইগলিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাদের আফিসিয়াল তথ্যমতে বর্তমানে ১৭টি রাজ্যে ৫৩০টির বেশি শাখা আছে এবং পিগলি উইগলিই পৃথিবীর প্রথম সেলফ-সার্ভিস সুপার শপ হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। পিগলি উইগলি শুধুমাত্র সেলফ-সার্ভিস শপিংয়ের ধারণাই দেয়নি সাথে আরো কিছু নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে। যেমন:

  • বিক্রয়কর্মীদের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম।
  • পণ্যের গায়ে মূল্য যুক্ত করে দেয়া।
  • দোকানের সামনের ঘূর্ণায়মান দরজা।
  • প্রিন্টেড ইনভয়েস।

এগুলো ছাড়া আমরা বর্তমান সুপার শপ গুলো চিন্তাও করতে পারিনা। আর এই সকল কিছুর জন্যই সুপার শপ জগতের এক অনন্য নাম পিগলি উইগলি।

পিগলি উইগলি নামের ইতিহাস:

ক্লারেন্স সন্ডারস পিগলি উইগলি নামের পেছনের ঘটনাকে রেখেছেন এক রহস্যের মাঝে। তিনি কখনোই ব্যাখ্যা করেননি তিনি এই নামের ধারণা কোথায় পেয়েছেন। তবে এই নাম নিয়ে দুইটা গল্প প্রচলিত আছে। এক গল্প মতে ক্লারেন্স একবার ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছিলেন। যাবার পথে তিনি জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন কিছু ছোট শূকর (Pigg) একটা বেড়া দখল করার জন্য লড়াই করছিল। সেখান থেকেই নিজের মনে মনে এই ছোট ছান্দিক নামটা তৈরি করেছিলেন। আরেকটা গল্প মতে, যখন লোকেরা তাকে এই নামের ইতিহাস জিজ্ঞেস করে যে আপনি এমন মজার একটা নাম কিভাবে পেলেন তখন তিনি হেসে উত্তর দেন “যাতে লোকে এটা জিজ্ঞেস করে”।

তবে নামের পিছনের ইতিহাস যাই হোক, এই নাম যে ১০০ বছর পরেও ইতিহাসের পাতায় স্বমহিমায় উজ্জ্বল তা আমরা নি:সন্দেহে বলতে পারি। পৃথিবীতে আজ অনেক বড় বড় সুপার শপ আছে কিন্তু যার হাত ধরে এই যুগান্তকারি ধারনার জন্ম হয়েছে তার নামই বা আমরা কয়জন জানি। এই ছোট্ট একটা আইডিয়া বদলে দিয়েছে আমাদের দৈনন্দিন কেনাকাটার চিরাচরিত রূপকে। বাচিয়ে দিয়েছে আমাদের মূল্যবান সময়। সুযোগ করে দিয়েছে হাজারটি পণ্য হতে নিজের পছন্দের পণ্যটি নিজ হাতে বেছে নেবার। পৃথিবীতে আরো অনেক সুপার শপের জন্ম হবে কিন্তু পিগলি উইগলি থাকবে সবার উপরে।

গ্রিক পুরাণের একটি অসাধারণ রূপকথার গল্পের ফিনিক্স পাখি নিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে একটি আর্টিকেল আছে। এটি অবশ্যই পড়ে নিবেন। ধন্যবাদ।

5/5 - (36 votes)

Admin at Shopnik.com.bd

As the driving force behind Shopnik.com.bd, the Admin is dedicated to providing readers with insightful and informative blogs across a wide range of topics. From expert reviews on the latest products to engaging articles from anonymous contributors, the Admin ensures that every post is designed to inform, inspire, and engage. Whether it's tech, lifestyle, or the latest trends, Shopnik.com.bd is your go-to source for up-to-date information and valuable content.

One Comment

  1. সত্যি আজ প্রথম এই সুপার শপের ইতিহাস জানলাম। তবে খুবই ভালো লাগছে এটা ভেবে যে , তখনকার সময়ের একটা ভাবনা আজও সমানভাবে জনপ্রিয়তার সাথে টিকে আছে। ভাবা যায় কতটা দূরদৃষ্টিসম্পর্ন ছিলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button