এসইও কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলতে বুঝায় গুগল, ইয়াহু, বিং এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেইজের অবস্থান ইম্প্রুভ করার প্রক্রিয়া। সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে (SERP) আপনার ওয়েবসাইটের পেইজগুলোর যত ভাল অবস্থান হবে, তত বেশি আপনার বিজনেস অথবা সার্ভিসের জন্য টার্গেটেড কাস্টমার পাবার সম্ভাবনা বেশি।
অনলাইন মার্কেটিং এ এসইও এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি এবং এটি বাড়ছেই। বিজনেস ওনারদের এসইও এর উপর আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। কেননা সার্চ রেজাল্টে যদি কোন বিজনেস প্রথম দিকে খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে ওই বিজনেসের সফল হবার চান্স শূন্যের কোটায়। তাই এসইও সম্পর্কে জানার এবং এটি শেখার গুরুত্ব অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের পোস্টে আমরা জানবো, এসইও কি এবং কিভাবে শিখবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
Contents
এসইও কি?
এক কথায় বলতে গেলে ইউজারদের ভিন্ন ভিন্ন কোয়ারির জন্য আপনার ওয়েবসাইটের ভিন্ন ভিন্ন পেইজ সার্চ রেজাল্টের প্রথম পজিশনে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া। মাথায় রাখতে হবে যে, সার্চ ইঞ্জিন কে অপটিমাইজ করা আমাদের কাজ নয়, আর এটা কখনো সম্ভব ও না। সার্চ ইঞ্জিন গুলো তাদের সার্চ রেজাল্ট পেইজের প্রথম পজিশনে একটা ওয়েবসাইট কে কেন নিয়ে আসবে সে বিষয়ে স্পেসিফিক গাইডলাইন দিয়েছে। তাহলে, সার্চ ইঞ্জিনের গাইডলাইন ফলো করে আপনার ওয়েবসাইট অপটিমাইজ করার প্রক্রিয়া হলো এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
এসইও কিভাবে কাজ করে?
এটি জানতে হলে আগে আপনাকে জানতে হবে সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে। আমাদের আগের পোস্ট পড়ে জেনে আসুন। সাধারণত সার্চ ইঞ্জিন গুলো বট এর সাহায্যে ওয়েবসাইট গুলোতে উপস্থিত পেইজ গুলোকে ক্রল করে একটি ইনডেক্সের মধ্যে ইনফরমেশন গুলো সাজিয়ে। আচ্ছা আমরা যখন কোন কিছু সার্চ করি তখনই কি বট সবগুলো ওয়েবসাইট চেক করে আমাদের দরকারি ইনফরমেশন গুলো দেখায়?
এই ইনডেক্স কে একটি বিশাল আকারের লাইব্রেরি হিসেবে ভাবতে পারি, যেখানে লাইব্রেরিয়ান আমাদের কোয়ারি অনুযায়ী দরকারি বই বা ওয়েবসাইটের পেইজ গুলো আমাদের সামনে এনে দেয়।
আরেকটি এলগরিদমের সাহায্যে ইনডেক্স হওয়া পেজ গুলোকে নির্বাচন করা হয়, নির্দিষ্ট কোয়ারির জন্য কোন পেইজ টি সবার উপরে দেখাবে এবং তার পরের রিলেভেন্ট পেইজ গুলো আসবে। গুগলের এক্ষেত্রে ২০০টির ও বেশি রেংকিং ফ্যাক্টর দেয়া আছে। নিচের পোস্ট থেকে এগুলো অবশ্যই দেখে নিবেন।
যদিও পরবর্তিতে গুগলের বেশ কিছু আপডেট এসেছে, কোর ওয়েব ভাইটাল এবং লিংক শেয়ারিং সম্পর্কে। এগুলো এর সাথে যোগ হবে। সার্চ এলগরিদম গুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে কোন একজন ইউজার যেকোন ইনফরমেশন জানার জন্য সার্চ করার সাথে সাথেই সঠিক ইনফরমেশন পেয়ে যায়। আপনার ওয়েবসাইট এবং কন্টেন্ট গুলো যদি এই র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর গুলো মেনে অপটিমাইজ করতে পারেন তাহলে ইউজারের কোয়ারির জন্য আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট সার্চ রেজাল্টের প্রথম অবস্থানে র্যাংক করবে।
আপনাদের সুবিধার্থে Backlinko ওয়েবসাইট থেকে আমি একটি ছবি সংগ্রহ করেছি। এটি দেখে আপনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন, আপনার ওয়েবসাইট গুগলে র্যাংক করানোর জন্য আপনাকে কি কি করতে হবে।
মার্কেটিং এ এসইও এর গুরুত্ব
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি হলো এসইও। পুরো পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ দিনে বেশ কয়েকবার সার্চ ইঞ্জিন গুলো ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য জানার জন্য। একটু ভেবে দেখুন সার্চ ইঞ্জিন ছাড়া অনলাইন জগতের অস্তিত্ব কেমন হতে পারে?
সাধারণত লোকেরা বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে জানার জন্য গুগলে সার্চ করে। তাছাড়া যেকোন তথ্য বা সমস্যার সমাধান পেতে তারা সার্চ ইঞ্জিন গুলো ব্যবহার করে। তাই সার্চ ইঞ্জিন হলো আপনার অনলাইন বিজনেস বা সার্ভিসের জন্য টার্গেটেড অডিয়েন্স পাবার প্রধান সোর্স। সার্চ রেজাল্টে আপনার ওয়েবসাইটের ভালো অবস্থানের উপর আপনার ব্যবসার সাফল্য নির্ভর করে।
সার্চ ইঞ্জিনের আরো কিছু ফিচার যেমন, রিচ স্নিপেট, নলেজ গ্রাফ, থ্রি প্যাক রেজাল্ট এবং ওয়েবসাইটের সাইট লিংক আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ডিং প্রমাণ করে। যা আপনার ওয়েবসাইটে অনেক বেশি ট্রাফিক ড্রাইভ করতে এবং সেল বাড়াতে সাহায্য করে।
এসইও হলো বিনামূল্যে সার্চ ইঞ্জিনের টপ পজিশনে থাকার দীর্ঘস্থায়ী একটি প্রক্রিয়া। তাই অনলাইন মার্কেটিং এ এসইও এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর রা আপনার কাছে কি চাচ্ছে। এখান থেকে আপনি খুব সহজে অডিয়েন্স ইনসাইট রিসার্চ করতে পারবেন এবং অধিক পরিমাণে স্পেসিফিক কাস্টমার টার্গেট করতে পারবেন, যা আপনার বিজ্ঞাপনের খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
একটি ব্লগ/ওয়েবসাইটের জন্য SEO এর গুরুত্ব কি?
ধরুন আপনি কম্পিউটার সম্পর্কে মানুষকে কিছু শেখানোর জন্য আপনার নিজের একটি ব্লগ শুরু করেছেন।
আপনি কম্পিউটার সম্পর্কিত বিষয়ে অনেক দুর্দান্ত পোস্ট লিখেছেন এবং প্রকাশ করেছেন। কিছু দিন পর দেখবেন কেউ আপনার এই পোস্টগুলো পড়েনি।
এটাই ঘটে। যখন আমরা SEO কে মাথায় না রেখে একটি বিষয়ে ব্লগ পোস্ট জমা দেই। এসইও ছাড়া আপনি সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্রাফিক পেতে পারবেন না।
কিন্তু অন্যদিকে যদি আপনি ব্লগ পোস্টে নিয়মিত এসইও করেন, তাহলে আজ না হয়, কিছু দিন পরে, 1 মাস পরে বা 1 বছর পরে, সেই বিষয়ে আপনার পোস্ট সার্চ ইঞ্জিনে দেখা যাবে। এবং আপনি অনেক ফ্রি ট্রাফিক পাবেন।
প্রকৃতপক্ষে, এসইও করার কারণ হল যে লোকেরা তাদের ব্লগ, ওয়েবসাইটে সার্চ ইঞ্জিন থেকে টার্গেটেড ট্রাফিক পায়। আর যদি তারা বেশি ট্রাফিক পায়, তাহলে সেই ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরির উদ্দেশ্য পূরণ হয়।
ধরুন আমরা যদি আমাদের এই এসইও কিভাবে শিখবো ব্লগ পোস্টের SEO না করি, তাহলে সার্চ ইঞ্জিনে আমাদের পোস্ট আসা কঠিন হয়ে যাবে। এবং আপনাকে তথ্য প্রদানের আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে না।
তাহলে এখন আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে এসইও কি? এবং এটি ইন্টারনেটে যে কোন ওয়েবসাইটের জন্য ফসলে পানি হিসেবে কাজ করে।
এসইও এর ভবিষ্যৎ
আমাদের দেশের কথা চিন্তা করলে, কয়েক বছর আগে ওয়েবসাইট মানে শুধুমাত্র শোকেজ হিসেবে ব্যবহার হত, যার লিংক বিজসেন কার্ডে ব্যবহার ছাড়া অন্য কোন কাজে লাগত না। বর্তমানে প্রতিটি বিজনেসের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়েবসাইট। তাছাড়া এমন অনেক বিজনেস গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র তাদের ওয়েবসাইট কে নির্ভর করে।
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অনলাইন বিজনেস শুধু বাড়তেই থাকবে। যতদিন অনলাইনে বিজনেস থাকবে ততদিন এসইও এর গুরুত্ব শুধু বাড়তেই থাকবে। কেননা এসইও একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাহলে বুঝতেই পারছেন এসইও এর ভবিষ্যৎ কোথায়।