নারী স্বাধীনতা – স্বাধীন দেশে নারীরা কি আদৌ স্বাধীন?
“নারী স্বাধীনতা”- দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে খুবই মুখরোচক টপিক। কেউ হাসিটাট্টা করে উড়িয়ে দেয় আবার কেউ এই এই শব্দের সম্মান রক্ষার্থে রাজপথে নামে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি রাজপথ নারীর স্বাধীনতা দিতে পেরেছে?
আমি নারী, বাংলাদেশে জন্ম আমার, গর্বিত বাঙালি। অর্ধ শতাব্দী আগে দেশ স্বাধীন হলেও এদেশের সমাজ নারীর জন্য কারাগার ছাড়া কিছুই নয়। আমি ঠিকই বুঝেছি দেশ স্বাধীন হলেও আমরা নারীরা স্বাধীন নই। হতে পারে আমি একজন স্বাধীনতাকামী মানুষ কিন্তু দিনের শুরুতে বা শেষে আমাকে নারী বলেই ডাকা হয়।
সেই সুপ্রাচীন কাল হতে এদেশের সমাজ নারীর পিঠে চাবুক মেরে তাকে চার দেয়ালে বন্দি করে রাখতে চেয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এই চাবুক মারার প্রথা বন্ধ হয়নি। ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীকে সহস্য বাক্য বাণের আঘাত সহ্য করে চলতে হয়। স্বাধীনতা চাওয়া কি নারীর অপরাধ? নাকি এই সমাজ নারী স্বাধীনতার মানেই বুঝেনা?
এই সমাজের অনেকেই দিনভর নারী স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা বলে গলা ফাটান। কিন্তু দেখা যায় দিন শেষে সেই গলা ফাঠানো ব্যাক্তিটিই ঘরে ফিরে তার স্ত্রী-কন্যাকে চার দেয়ালের ভেতরে আরো ঘন অন্ধকার কোনে ছুড়ে ফেলেন? তাহলে কি লাভ হলো এই লোক দেখানো নারী স্বাধীনতা কামনার?
যে দেশে আজ পযর্ন্ত নারীর অধিকারের সার্বজনীন স্বীকৃতি সৃষ্টি হয়নি, যে দেশে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে বড় হয় না নারীরা, জাতীয়তা বোধের অবস্থান থেকে সেই দেশের স্বাধীনতা একজন নারীর জন্য যত গৌরবের হোক না কেন তার নিজের দৈনন্দিন জীবনে সেই দেশের স্বাধীনতা কতটুকু ভূমিকা রাখে তা ভেবে দেখবার বিষয়।
বিদেশের কিছু বিষয় যেমন নারী -পুরুষের মধ্যে বৈষম্য থাকলে ও প্রতিদিনের চলাফেরা, কাজকর্ম, জীবন যাপনে মনে হয়না কেও কারো থেকে কম। অথচ বাংলাদেশে প্রতিটা পদে পদে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে আমি একজন নারী।
প্রতিদিন সকালে পত্রিকা খুললেই কোন না কোন পাতায় ধর্ষনের খবর, তাদের হাত থেকে বাদ যায়নি শিশুও – যে এখনো পূর্ণ নারী হয়ে ওঠেনি, খবর পাওয়া যায় ঘরে কিংবা অফিসে, গাড়িতে কিংবা হাটার পথে প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার নারী।
বড় বড় নারী স্বাধীনতার বুলি ছেড়ে নারীদের ঘর থেকে বের করছেন তো ঠিকই কিন্তু নারীর স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারছেন কি? প্রশ্ন রইল দেশের বড় বড় কর্তা ব্যাক্তিদের উপর যারা নারী স্বাধীনতা শব্দটি ভাঙ্গিয়ে সমাজের মাথায় চড়ে বসে আছেন।
এ দেশে যথাসম্ভব বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু অত্যাচারিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে কজন মানুষ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে। যে দেশে ক্রমশ নারীর উপর অত্যাচার বেড়েই চলছে সে দেশের নারীরা আর যাই হোক স্বাধীন হতে পারে না। প্রতিনিয়ত নারী তার প্রাপ্য স্বাধীনতাকে হারাচ্ছে।
এ দেশের নারীরা যখন স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশ করতে পারবে, তার পথ চলাকে আরো গতিশীল করতে পারবে, সেই দিনই জাতি হিসাবে আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারবো। একজন নারী হিসেবে সেদিনই আমি দেশের স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ অনুভব করবো।