অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম 2023
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হলে আপনার যা কিছু লাগবে এবং কিভাবে আবেদন করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য স্ক্রিনশট সহ এখানে দেয়া হলো। জেনে নিন নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
জন্ম নিবন্ধন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হওয়ায় নিজের অথবা সন্তানের বা পরিবারের কারোর জন্ম নিবন্ধন করতে হবে সঠিক উপায়ে। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো- জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে, অনলাইনে নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত।
Contents
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন করতে বেশ কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। তবে জন্ম নিবন্ধনের সময় শিশু বা ব্যক্তির বয়স অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন। যেমন-
নিবন্ধন কারীর বয়স ৪৫ দিনের কম হলে
জন্মগ্রহনের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে কোন সরকারি ফি প্রদান করতে হয়না। নিম্নোক্ত ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন করা যায়-
- জন্মগ্রহণকৃত হাসপাতালের ছাড়পত্র অথবা ইপিআই টিকা কার্ড।
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের রশিদ।
- আবেদনকারী বাবা বা মায়ের মোবাইল নাম্বার।
নিবন্ধন কারীর বয়স ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর হলে
নিবন্ধন কারীর বয়স ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হলে ৫০ টাকা সরকারি সেবা ফি প্রদান করতে হয়। নিজ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশনে এ ফি গ্রহন করা হয়। এক্ষেত্রে যে ডকুমেন্টস গুলো লাগে তা ৪৫ দিনের পূর্বে শিশুর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর মতোই তবে শুধু একটি এক্সট্রা ডকুমেন্ট লাগতে পারে। তা হলো-
জন্মগ্রহণকৃত হাসপাতালের ডাক্তারের প্রত্যয়ন পত্র অথবা স্কুলে ভর্তি হলে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্র। প্রত্যয়ন পত্রে নিবন্ধন কারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম উল্লেখ রাখতে হয়।
নিবন্ধন কারীর বয়স ৫ বছরের উপরে হলে
নিবন্ধন কারীর বয়স ৫ বছরের উপরে যেকোন বয়স পর্যন্ত হলে প্রতি বছরের জন্য সরকারি ফি ১০ টাকা করে বৃদ্ধি পায়। জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করার সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সেই ফি প্রদান করলে জন্ম নিবন্ধন প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো হলো-
- বয়সের প্রমান স্বরূপ একজন সরকারি ডাক্তার কর্তৃক সত্তায়িত প্রত্যয়নপ্ত
- বাসার হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিশোধের কপি।
- স্কুলের শিক্ষার্থী হলে স্কুলকর্তৃক একটি প্রত্যয়ন পত্র। এক্ষেত্রে কোন সার্টিফিকেট থাকলে তা প্রদান করা যায়।
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- যার জন্ম নিবন্ধন করা হবে তার এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৫ বছরের পরেও জন্ম নিবন্ধন না করে থাকলে শিশুর স্কুলে ভর্তিসহ অন্যান্য কাজে ব্যাঘাত ঘটে। বলে রাখা ভালো বয়স ১৭-১৮ এর বেশি হলে জন্ম নিবন্ধন করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন করে ফেলুন।
নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম কি
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার জন্ম নিবন্ধনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী একজন মানুষের নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, লিঙ্গ, বাবা-মায়ের নাম, বাবা-মায়ের জাতীয়তা ও ঠিকানা গ্রহন করে সরকারিভাবে এন্ট্রি করার মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন প্রদান করা হয়।
স্ব-শরীরে নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সন্তানের বাবা-মা বা সন্তান নিজে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে বর্তমানে দেশকে সহজ করার লক্ষে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সেবা চালু আছে। www.bdris.gov.bd এই সাইটে প্রবেশ করে সহজেই হাতে থাকা মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যায়।
বর্তমানে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং একটি শিশু জন্মগ্রহনের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে।
তবে ৫ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে না পারলে পরবর্তীতে নিবন্ধন করতে পারলেও অতিরিক্ত ডকুমেন্টস প্রদান সহ বেশ কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়।
অনলাইনে নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনে খুব সহজেই নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন করা যায়। আবেদন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরন করুন-
ধাপঃ-১ নিবন্ধন সাইটে প্রবেশ
প্রথমে মোবাইল বা কম্পিউটার এর একটি ব্রাউজারে bdris লিখে সার্চ করলে জন্ম নিবন্ধন সাইট প্রথমেই পাবেন। সাইটে প্রবেশ করে মেনু থেকে জন্ম নিবন্ধন আবেদন এ ক্লিক করুন। অথবা সরাসরি এই লিংকে যান – https://bdris.gov.bd/br/application
ধাপঃ-২ আবেদনের ঠিকানা নির্বাচন
আপনার জন্ম নিবন্ধন টি কোন ঠিকানায় আওতায় করতে চান তা সিলেক্ট করে পরবর্তী তে ক্লিক করুন।
ধাপঃ-৩ নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি
এখানে যার নিবন্ধন করা হবে তার নামের প্রথম ও শেষ অংশ বাংলা ও ইংরেজিতে লিখতে হবে এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। তারপর পিতামাতার কততম সন্তান ও লিঙ্গ কি তা নির্বাচন করুন।
ধাপঃ- ৪ জন্মস্থানের ঠিকানা
নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জন্মগ্রহণকৃত দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া ও পোস্ট অফিসের তথ্য প্রদান করে পরবর্তীতে ক্লিক করুন।
ধাপঃ- ৫ পিতা-মাতার তথ্য
নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পিতার নাম বাংলা ও ইংরেজিতে লিখতে হবে। পিতার জন্ম নিবন্ধন বা আইডি কার্ডের নম্বর এখানে লিখতে হবে। তারপর পিতার জাতীয়তা সিলেক্ট করুন
মাতার ক্ষেত্রেও একইভাবে সকল তথ্য প্রদান করে এ পরবর্তী তে ক্লিক করুন।
ধাপঃ- ৬ বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা যদি জন্মস্থানের ঠিকানার মতো হয় তাহলে কোনটিই নয় সিলেক্ট করে জন্মস্থান ও বর্তমান ঠিকানা একই তে ক্লিক করতে হবে।
উপরের চিত্রের মতো একই ভাবে স্থায়ী ঠিকানার জন্যও বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা একই তে ক্লিক করতে হবে। তবে জন্মস্থান ও ঠিকানা একই না হলে তা ধারাবাহিক ভাবে পূরন করতে হবে।
ধাপঃ- ৭ আবেদনকারীর প্রত্যয়ন
এখানে কে আবেদন করছে তা সিলেক্ট করতে হবে। নিবন্ধনাধীন ব্যক্তি যদি বাবা হয় তাহলে বাবা আর যদি নিজেই নিবন্ধন করে তাহলে নিজ সিলেক্ট করতে হবে। তারপর আবেদনকারীর একটি সচল মোবাইল নাম্বার ও একটি ইমেইল দিতে হবে।
ধাপঃ- ৮ সংযোজন ফাইল আপলোড
এখানে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংযোজন করে দিতে হয়। সংযোজনে ক্লিক করে ফাইল সিলেক্ট করে তা আপলোড করে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখবে ফাইল সাইজ যেনো ১০০ kb এর নিচে হয়।
ধাপঃ- ৯ রিভিউ এন্ড সাবমিট
এইবার সকল প্রদানকৃত তথ্য একনজরে আপনাকে দেখানো হবে। তা সমূর্ন ঠিক থাকলে সাবমিট করে দিন। আপনার নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
ধাপঃ- ১০ আবেদন কপি প্রিন্ট
এবার আবেদন আইডি দেখানো হবে ও আবেদন কপি প্রিন্ট করার অপশন থাকবে। আপনি আপনার আবেদন করে রাখতে পারবেন জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহের জন্য।
উপরোক্তভাবে নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করে আপনার প্রয়োজনীয় জন্ম নিবন্ধন টি করে নিন।
জন্ম নিবন্ধন করার প্রয়োজনীয়তা
একজন মানুষের প্রাথমিক নাগরিকত্বের প্রমান সহ জন্ম, বয়স, পরিচয়ের একটি স্বীকৃত সনদ হলো জন্ম নিবন্ধন। একটি শিশুর বা একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের জন্য জন্ম নিবন্ধনের বহুল প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা পেতে, জাতীয় পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড করতে, ট্রেড লাইসেন্স, বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন, পাসপোর্ট তৈরি, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সহ এজাতীয় সকল কাজেই জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন।
FAQ’s
পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে কি কি লাগে?
পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে প্রথমেই https://everify.bdris.gov.bd/ এই সাইটে প্রবেশ করে আপনার ১৬ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নম্বরের স্থানে ১৭ ডিজিট বানিয়ে নম্বর দিয়ে যাচাই করে নিন। যদি তথ্য আসে কিন্তু শুধু বাংলা থাকে তাহলে সংশোধনের আবেদন করার মাধ্যমে ইংরেজি অনলাইন করা যায়।
জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে?
শিশুর বয়স ৪৫ দিনের কম হলে জন্ম নিবন্ধনের জন্য কোন সরকারি ফি প্রদান করতে হয় না। এবং ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর হলে ৫০ টাকা সরকারি ফি দিতে হবে। এবং ৫ বছরের উপরে প্রতি বছরের জন্য ১০ টাকা বৃদ্ধি পাবে।
কিভাবে জন্ম নিবন্ধন আবেদন যাচাই করা যায়?
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার পর সম্পূর্ন হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে প্রথমে- https://bdris.gov.bd/br/application/status এই লিংকে প্রবেশ করুন। তারপর আবেদনপত্রের ধরন, এপ্লিকেশন আইডি নম্বর ও জন্মতারিখ প্রদান করে জন্ম নিবন্ধনের অবস্থা জানা যায়।
একজন ব্যক্তি কতবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে?
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বৈধভাবে একজন ব্যক্তি একবার জন্ম নিবন্ধন করতে পারবে। একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকলে সেই ব্যক্তি আইনি ঝামেলার শিকার হতে পারে।
শেষকথা
জন্ম নিবন্ধন একটি মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম অনুযায়ী শীঘ্রই আপনার নিকটস্তদের জন্ম নিবন্ধন করে নিন।
আজকে লেখার মূল বিষয় ছিলো নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম। আশা করি পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে ভূলবেন না, ধন্যবাদ।