দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত এবং কখন পড়তে হয়
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত এবং কখন পড়তে হয় তা জানতে পারবেন আজকের পোস্টে। দোয়া কুনুত একটি বিশেষ দোয়া। যার মাধ্যমে, আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা:) আমাদেরকে অন্যান্য দুয়ার মত নম্রতা, আনুগত্য এবং আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করতে শিখিয়েছেন। এই বিশেষ দোয়া বিতর নামাজের শেষ রাকাতে পড়া হয়।
দোয়া কুনুত বিতরের নামাযে তৃতীয় রাকাতে পড়তে হয়।
Contents
দোয়া কুনুত আরবী
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
اَللَّمُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈ’নুকা, ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’’মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ’, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, – ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা – আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ব।
দোয়া কুনুত এর বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।
দোয়া কুনুতের ফজিলত
আবু দাউদের বর্ণনা থেকে জানা যায় হাসান ইবনে আলী রাঃ এই দোয়াটি মুহাম্মাদের (সা.) কাছ থেকে শিখেছিলেন। দাউদ আরো বলেছেন যখন মুসলমানদের উপর কোন বিপদ অথবা বিপর্যয় আসতো তখন মুহাম্মদ (সা.) পড়তেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’
عن ابن مسعود رضي الله عنه إن النبي صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع، قال الدار قطني وأبان بن أبي عياش متروك، قلت : ورواه الخطيب في كتاب القنوت من غير طريق أبان بن أبي عياش وذكره ابن الجوزي في التحقيق من جهة الخطيب وسكت عنه إلا أنه قال : أحاديثنا مقدمة كما في نصب الراية قال الترمذي في العلل : وقد روى غير واحد عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله بن مسعود أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في وتره قبل الركوع.
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি একরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে ছিলাম। তিনি শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সূরা আ’লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও কাফিরূন পাঠ করলেন এবং রুকু-সিজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতিহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনূত পড়লেন।
’
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : بت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فقام من الليل فصلى ركعتين، ثم قام فأوتر فقرأء بفاتحة الكتاب وسبح اسم ربك الأعلى ثم ركع وسجد ثم قام فقرأ يفاتحة الكتاب وقل يا أيها الكافرون ثم ركع وسجد وقام فقرأ بفاتحة الكتاب و قل هو الله أحد ثم قنت ودعا قبل الركوع.
(কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১; হিলয়া, আবু নুআইম-নসবুর রায়াহ ২/১২৪)
দোয়া কুনুত সম্পর্কে হাদিস
তিরমিজি ১৭৪৫. আবুল জাউযা [রহঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হাসান [রাঃআঃ] বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দিয়েছিলেন যেগুলো আমি বিত্রের কুনূতে পড়ে থাকিঃ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
“আল্লাহুম্মা ইহদিনী ফীমান হাদাইতা ওয়া আফিনী ফীমান ‘আফাইতা ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা ওয়া বারিক লী ফীমা আতাইতা ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা, ইন্নাকা তাক্বদী ওয়ালা ইউক্দা ‘আলাইকা ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইতা, তাবারাকতা রব্বানা ওয়া তাআলাইতা।
আবুল হাওরা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
আবুল হাওরা (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন। এগুলো আমি বিতরের নামাযে পাঠ করে থাকিঃ
“اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّمَا قْضَيْتَ؛ إِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ”.
“হে আল্লাহ! যাদেরকে তুমি হিদায়াত করেছো আমাকেও তাদের সাথে হিদায়াত কর, যাদের প্রতি উদারতা দেখিয়েছ তুমি তাদের সাথে আমার প্রতিও উদারতা দেখাও। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ তাদের সাথে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ কর। তুমি আমাকে যা দান করেছ তার মধ্যে বারকাত দাও। তোমার নির্ধারিত খারাবি হতে আমাকে রক্ষা কর। কেননা তুমিই নির্দেশ দিতে পার, তোমার উপর কারো নির্দেশ চলে না। যাকে তুমি বন্ধু ভেবেছ সে কখনও অপমানিত হয় না। তুমি কল্যাণময়, তুমি সুউচ্চ”। সহীহ। ইরওয়া— (৪২৯), মিশকাত— (১২৭৩), তা’লীক আলা-ইবনু খুজাইমাহ– (১০৯৫), সহীহ আবু দাউদ- (১৪২৫)।
এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
১। নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও স্থানে দোয়া পাঠ করাকে কুনূতের দোয়া বলা হয়। বেতর নামাজে কুনূতের দোয়া পাঠ করার বিষয়টি আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে নির্ভরযোগ্য পন্থায় সাব্যস্ত হয় নি। তবে তিনি আল হাসান বিন আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] কে বেতর নামাজের কুনূতে পাঠ করার জন্য এই দোয়াটি শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন বেতর নামাজে কুনূতের এই দোয়াটি কোনো কোনো সময় পাঠ করে।
২। বেতর নামাজের শেষ রাকাতে রুকূর পূর্বে অথবা রুকূ থেকে উঠার পর, উভয় অবস্থায় কুনূতের দোয়া পাঠ করা জায়েজ।
আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন।