দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, কখন পড়তে হয় এবং পড়ার নিয়ম
দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, কখন পড়তে হয় এবং পড়ার নিয়ম পাবেন এই পোস্টে। তাশাহহুদের পর আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হয়। দুরূদ শরীফ পাঠ করা ছাড়া নামাজ সম্পূর্ন হয় না। তাই আমাদের উচিত বুঝে শুনে শুদ্ধভাবে দুরূদ শরীফ পাঠ করা।
দুরূদ শরীফ গোটা জীবনে একবার পাঠ করা ফরজ। যেখানেই মহানবীর নাম আসে, একবার পাঠ করা ওয়াজিব। নামাযের অভ্যন্তরে ‘আত্তাহিয়্যাতু’-এর পর পাঠ করা ‘সুন্নাত’। আর সর্বদা পাঠ করা মুস্তাহাব।
আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবের প্রশংসা ও গুণগান মর্যাদাময় স্থানে করেছেন এবং তাঁর উপর রহমত প্রেরণ করেছেন। ফেরেশতাগণও রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের মহত্ব বর্ণনা করেছেন। অতএব, মুসলমানদেরও এরূপ মর্যাদা সহকারে দুরূদ সালাম প্রেরণ করা জরুরি।
পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু মহান আল্লাহ্ তা‘আলার গুণগান করে, কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা স্বয়ং তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। এজন্য দুরূদ শরীফ পাঠ করা একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত।
দূরূদ শরীফ আরবিঃ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ’ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ. اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ.
দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিউ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মদিম, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।”
দুরুদ শরীফ বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত নাযিল করো যেমন রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত নাযিল করো যেমন বরকত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। (সহীহ বুখারী, হাদীস:২৯৭০)
Contents
অর্থসহ ছোট দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
ছোট দরুদ শরীফ সলাতে পড়া যাবে না। সালাত ব্যতীত অন্য কাজে সংক্ষিপ্ত দরুদ হিসেবে এগুলো পড়া যাবে।
সাহাবী উকবা ইবনু আমির (রা) বলেন, “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে এসে বসল এবং বলল, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা আমরা জানি। কিন্তু আমরা আপনার উপর কিভাবে ‘সালাত’ তথা দরূদ পাঠ করব? আমাদেরকে তা বলে দিন।” তখন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম (কিছুক্ষণ) চুপ থাকলেন, এমনকি আমরা ভাবলাম যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না করতো, তাহলে অনেক ভাল হত! তারপর নবী (সাঃ) বললেন, “তোমরা আমার উপর সালাত (দুরুদ) পাঠ করার জন্য বলোঃ
اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَبىّ الأُمِيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিনিন-নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদিন কামা সল্লাইতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম-মাজীদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নিরক্ষর নবী মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে রহমত প্রেরণ কর, যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। (ইসমাঈল কাযীঃ হাদীস নং ৫৯)
ছোট দুরুদ সম্পর্কে যায়েদ ইবনু খারিজাহ (রা) বলেন, “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে (দুয়া ও দুরুদের ব্যাপারে) প্রশ্ন করলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরা আমার উপর সালাত (দরূদ) পড় এবং অনেক বেশী দুয়া করার জন্য চেষ্টা কর। (আমার জন্য দুরুদ পড়ার জন্য তোমরা) এইভাবে বলোঃ
ছোট দরুদ শরীফ আরবিঃ الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মু’হাম্মাদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর।
(সুনানে নাসায়ীঃ হাদীস নং-১২২৫)
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহা’ম্মাদ।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।
সবচাইতে ছোট যেই দুরুদ হলোঃ
صلى الله عليه وسلم
বাংলা উচ্চারণঃ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম।
বাংলা অর্থঃ আল্লাহ তাঁর (মুহা’ম্মদের) প্রতি সালাত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।
দুরুদ শরীফ কখন পড়তে হয়?
নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান হবে।” ইমাম তাবরানী হাদীসটি দুইটি সনদে সংকলন করেছেন, যার একটি সনদ হাসান। মাজমাউ’য যাওয়ায়েদঃ ১০/১২০, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ১/২৭৩।
দরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কোরআনে এসেছে ‘অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তাঁর প্রতি যথাযথ দরুদ ও সালাম পেশ করো’ (সূরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)।
- জীবনে একবার দরুদ-সালাম পাঠ করা ফরজে আইন।
- দরুদ-সালাম অত্যন্ত আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সঙ্গে খুব ধীরস্থিরভাবে চুপি চুপি পড়া উচিত।
- দরুদ পড়ার সময় অধিক নড়াচড়া, মাথা দুলানো, চিৎকার বা উঁচু আওয়াজ করা যাবে না।
- একই বৈঠকে একাধিকবার নবী (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে প্রথমবার সবার জন্য দরুদ পাঠ করা আবশ্যক (ওয়াজিব)।
- নবীজি (সা.)-এর নাম এক বৈঠকে বারবার লিখলে প্রথমবার দরুদ লিখা আবশ্যক (ওয়াজিব)।
- অজু ছাড়া যে কোনো অবস্থায় দরুদ পড়া যায়। তবে অজু অবস্থায় এবং আদবের সঙ্গে দরুদ পড়া উত্তম।
- জুমা বা ঈদের খুতবায় নবী (সা.)-এর নাম এলে মনে মনে দরুদ পড়বে, মুখে উচ্চারণ করবে না।
- নবীজির রওজা শরিফ জিয়ারত ও তার নাম বলা বা শোনার সময়। মসজিদে প্রবেশের সময় ও বের হওয়ার সময়। কোনো বৈঠক থেকে ওঠার সময়। দোয়া বা মোনাজাতের আগে ও পরে। আজানের পর দোয়ার আগে। অজুর শেষে, চিঠিপত্র বা অন্য কিছু লিখার আগে। কোরআন তেলাওয়াত বা অন্য কোনো বইপুস্তক পাঠের আগে। দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ ও সব রকমের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব সময় বেশি করে দরুদ পড়ুন।
দুরূদ শরীফের ফজিলত
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গী হওয়ার সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত সেই ব্যক্তি,যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করে। (তিরমিজী শরিফ)
নবী (সাঃ)আরও ইরশাদ করেন – “ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার উপর বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করে।” (তিরমিজী শরিফ)
তিনি মহানবী (সাঃ) আরও বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। (মুসতাদরাকে হাকেম হাদীস নং-২০৫৬)
নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেন– যে ব্যক্তি সকালে আমার উপর দশবার দুরূদ পড়বে এবং সন্ধ্যায় দশবার দুরূদ পড়বে কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশ করব। (ত্ববারানী আউসাত হাদীস নং-৫২৩, নাসায়ী সুনানে কুবরা, হাদীস:৯৮৯০)
এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির উপর রহমত নাজিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর আস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৩৮৪)
হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের তুলনায় আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার ওপর দরূদ পড়বে।’ (সুনানে তিরমিজি: ৪৮৪)
হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল) অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪৬)
হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম স্তরে চড়লেন তখন বললেন, ‘হে আল্লাহ কবুল করুন’। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন, ‘হে আল্লাহ কবুল করুন’। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন, ‘হে আল্লাহ কবুল করুন।’ খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা আপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনও শুনিনি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হলো না- সে বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো কিন্তু সে আপনার ওপর দরূদ পড়ল না- সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম, তখন তিনি বললেন, যে পিতা-মাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। (বায়হাকি: ১৪৬৮)
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি- ‘যে ব্যক্তি আমার উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশকারী হবো।’ [আল্ ক্বওলুল বদী’]
হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত- ‘নিঃসন্দেহে প্রত্যেক দোয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে, তা থেকে কিছুই উপরে আরোহন করে না, যতক্ষণ না তুমি তোমার নবীর উপর দুরূদ শরীফ পড়বে।’
দুরূদ পাঠের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় ফযিলত হল দুরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হয়। কেননা, আল্লাহর এক বিন্দু রহমত সমগ্র পৃথিবীর চেয়েও বড় এবং প্রশস্ত।
সূত্র: সহিহ সিত্তাহ
জুমার দিনে বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত
‘তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ: ১০৪৭)
হাদিসে কুদসিতে মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন—
‘তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পড়ো। কারণ, জিব্রাইল (আ.) এইমাত্র আল্লাহ তায়ালার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে।’’ (তারগিব: ৩/২৯৯)
জুমার দিনের এই বিশেষ আমল সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (স.) আরো ইরশাদ করেন—
‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসর নামাজের পর ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরিফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে’ (আফদালুস সালাওয়াত: ২৬)। দরুদটি হলোঃ
اللهم صل على محمد النبي الأمي وعلى آله وسلم تسليمًا
‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লিম তাসলীমা’
অন্য হাদিসে হজরত আলি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি নবী কারিম (স.)-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল: ১৭৪)
আবু উমামা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আমার ওপর জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ আমার উম্মতের দরুদ জুমার দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার নিকটতম হবে।’ (তারগিব: ১৫৭)
সুতরাং হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত লাভের জন্য বিশেষ করে জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ সকল মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়। অন্য দিনেও দরুদ পাঠের গুরুত্ব অসীম। আল্লাহর রহমত পেতে হলে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওপর দরুদ পড়ার বিকল্প নেই।
মহান আল্লাহও প্রিয়নবীর ওপর দরুদ অবতীর্ণ করেন, ফেরেশতারাও নবী (স.)-এর প্রতি রহমত ও বরকত কামনা করেন। ‘হে মুমিন! তোমরাও তাঁর ওপর দরুদ পাঠ করো এবং সালাম প্রেরণ করো।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
আল্লাহ তায়ালা মুসললিম উম্মাহকে নবী করিম (স.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠের তওফিক দান করুন। আমিন।