সুরা মুলক বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফযিলত এবং শানে নুযূল

সূরা মুলক (সুরা ৬৭) একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা আল্লাহর অসীম শক্তি, সৃষ্টি এবং মৃত্যুর পরকালের স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি “তাবারাকাল্লাযি” নামেও পরিচিত এবং কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুরা হিসেবে পাঠ করা হয়। নিচে সুরা মুলক-এর বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, তাৎপর্য এবং ফজিলতসহ বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হলো:
Contents
সূরা মুলক বাংলা উচ্চারণ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
- উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”
- অর্থ: পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
- উচ্চারণ: “তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মূলকু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর”
- অর্থ: মহিমান্বিত তিনি, যার হাতে রাজত্ব এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
- উচ্চারণ: “আল্লাযি খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা লিয়াবলুয়াকুম আইয়্যুকুম আহসানু আমালা; ওয়া হুয়াল আযীযুল গাফূর”
- অর্থ: যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন তোমাদের মধ্যে কে কর্মে উত্তম। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।
الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا مَا تَرَى فِي خَلْقِ الرَّحْمَنِ مِنْ تَفَاوُتٍ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَى مِنْ فُطُورٍ
- উচ্চারণ: “আল্লাযি খালাকা সাবআ সামাওয়াতিন তিবাকা; মা তারা ফি খালকির রাহমানি মিন তাফাউতিন; ফারজিইল বাসারা হাল তারা মিন ফুতুর”
- অর্থ: যিনি সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে। তুমি রহমানের সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি দেখতে পাবে না। তুমি দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ, কোনো খুঁত দেখতে পাও কি?
ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ
- উচ্চারণ: “সুম্মার জিইল বাসারা কার্রাতাইনি ইয়ানকালিব ইলাইকাল বাসারু খাসিআঁ ওয়া হুয়া হাসীর”
- অর্থ: তারপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও, দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ
- উচ্চারণ: “ওয়া লাকাদ জাইয়্যানাস সামাআদ দুনইয়া বিমাসাবিহা ওয়া জাআলনাহা রুজুমান লিশ শায়াতিনি ওয়া আ’তাদনা লাহুম আযাবাস সাঈর”
- অর্থ: আমি নিকটতম আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং শয়তানদের জন্যে প্রস্তুত করেছি প্রজ্বলিত অগ্নির শাস্তি।
সূরা মুলকের বাংলা অর্থ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম:
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মূলকু:
মহিমান্বিত তিনি, যার হাতে রাজত্ব।
আল্লাযি খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা:
যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন।
আল্লাযি খালাকা সাবআ সামাওয়াতিন তিবাকা:
যিনি সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে।
ওয়া লাকাদ জাইয়্যানাস সামাআদ দুনইয়া বিমাসাবিহা:
আমি নিকটতম আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত করেছি।
সূরা মুলকের তাৎপর্য
- আল্লাহর ক্ষমতা ও মহিমা: সূরা মুলকে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি কুরআনের সৃষ্টির প্রতি এক বিস্ময়কর সাক্ষী, যা সমস্ত জীবন্ত ও অজিভ বস্তুর উপর আল্লাহর নিয়ন্ত্রণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
- মৃত্যু ও জীবনের উদ্দেশ্য: সূরা মুলক এও জানায় যে, আল্লাহ জীবন ও মৃত্যুর সৃষ্টির মাধ্যমে মানবজাতির জন্য পরীক্ষা রেখেছেন, যাতে তারা ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে।
- আকাশমণ্ডলীর সৃষ্টি: সূরা মুলকে সাত আকাশের সৃষ্টি এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। এসব নিদর্শন আমাদের চিন্তা ও মননে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্মরণ করায়।
- শয়তানের বিরুদ্ধে সতর্কতা: শয়তানদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সতর্কতার গুরুত্ব সূরা মুলকে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে মুসলিমরা শয়তানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত থাকে।
সূরা মুলক পাঠের ফজিলত
- মৃত্যুর পর সুরক্ষা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সূরা মুলক পাঠকারীকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করা হবে।”
- আধ্যাত্মিক প্রশান্তি: এই সূরা পাঠে মানসিক শান্তি ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
- গুনাহ মাফ: নিয়মিত সূরা মুলক পাঠ করলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন।
কখন সূরা মুলক পড়বেন?
- ঘুমানোর আগে: রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন রাতে সূরা মুলক পড়তেন।
- জুমার দিনে: জুমার দিনে সূরা মুলক পাঠ করা বিশেষ সওয়াবের কাজ।
- যেকোনো সময়: যেকোনো সময় এই সূরা পাঠ করা যায় এবং এর ফজিলত লাভ করা যায়।
শেষ কথা
সূরা মুলক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা আল্লাহর ক্ষমতা ও মহিমা স্মরণ করিয়ে দেয়। নিয়মিত এই সূরা পাঠ করে আপনি আধ্যাত্মিক শান্তি ও আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ