সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও তাফসীর
সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ ও তাফসীর জেনে নিন এই পোস্টে। সূরা ক্বদর মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরা আল-কদর কোরআন মাজিদের ৯৭ নাম্বার সূরা। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৫ টি।
Contents
সূরা কদর এর আরবী উচ্চারণ
إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْرِ
وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ
لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
تَنَزَّلُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
سَلَٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ
সূরা কদর বাংলা উচ্চারণ
ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।
ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর।
লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।
তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।
ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা‘ইল ফাজর।
সূরা কদর এর বাংলা অর্থ
আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে।
শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?
শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।
এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
সূরা কদর এর শানে নুযুল
ইবনে আবী হাতেম (রাঃ)-এর রেওয়ায়েতে আছে, রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) একবার বনী-ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জেহাদে মশগুল থাকে এবং কখনও অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানগণ একথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা কদর অবতীর্ণ হয়। এতে এ উম্মতের জন্যে শুধু এক রাত্রির ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ইবনে জরীর (রহঃ) অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী-ইসরাঈলের জনৈক এবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি এবাদতের মশগুল থাকত ও সকাল হতেই জেহাদের জন্যে বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জেহাদে লিপ্ত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেহ্মিতেই আল্লাহ্ তাআলা সূরা-কদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ থেকে আরও প্রতীয়মান হয় যে, শবে-কদর উম্মতে মুহাম্মদীরই বৈশিষ্ট্য।
সূরা কদর এর তাফসীর
(১) إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ ‘আমি একে নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’।
অর্থ ابتدأنا انزال القرآن على قلب خاتم النبيين ‘শেষনবীর হৃদয়ে আমরা কুরআন নাযিলের সূচনা করেছি’। এখানে ‘আমরা’ বলে বহুবচনের সম্মানজনক ক্রিয়াপদ (صيغة العظمة) আনা হয়েছে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব প্রকাশের জন্য। যেমন তিনি অন্যত্র বলেছেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ ‘আমরা যিকর (কুরআন) নাযিল করেছি এবং আমরা এর হেফাযতকারী’ (হিজর ১৫/৯)। কখনো নিজের একত্ব বর্ণনার জন্য একবচনের ক্রিয়াপদ (صيغة الوحدانية) ব্যবহার করেছেন। যেমন إِنَّنِي أَنَا اللهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدْنِيْ وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي ‘নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তুমি আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণে ছালাত কায়েম কর’ (ত্বোয়াহা ২০/১৪)। (هُ) সর্বনাম দ্বারা ‘কুরআন’ বুঝানো হয়েছে। যদিও পূর্বে তার উল্লেখ নেই। তবে বিষয়টি পরিষ্কার। আর পুরা কুরআনই তো একটি সূরার ন্যায় (কুরতুবী)।
‘ক্বদর’ (القدر) অর্থ الشرف، المنزلة সম্মান, মর্যাদা। لَيْلَةُ الْقَدْرِ অর্থ মর্যাদার রাত্রি। অথবাلَيْلَةٌ ذُوْ قَدْرٍ মহিমান্বিত রজনী। অথবা لَيْلَةُ التَّقْدِيْرِ ‘তাক্বদীর নির্ধারণের রাত্রি’। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ- فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ- أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ- ‘আমরা একে নাযিল করেছি বরকতময় রাত্রিতে। আর আমরা তো সতর্ককারী’। ‘এ রাত্রে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়’। ‘আমাদের আদেশক্রমে। আর আমরাই তো প্রেরণকারী’ (দুখান ৪৪/৩-৫)।
এ রাতের নেক আমল সমূহের ছওয়াব তুলনাহীন। তাছাড়া এ রাতে সর্বাধিক মর্যাদামন্ডিত কিতাব সর্বাধিক মর্যাদামন্ডিত রাসূলের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। সেকারণেও এ রাতকে লায়লাতুল ক্বদর বা মহিমান্বিত রজনী হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকতে পারে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানবজাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ এলাহী গ্রন্থ আল-কুরআন নাযিলের সূচনা হয়েছে ক্বদরের রাত্রিতে। এ রাত্রিটা কোন্ মাসে? সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন, شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ- ‘রামাযান মাস। যে মাসে নাযিল হয়েছে কুরআন, মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও হেদায়াতের স্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসাবে এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। অর্থাৎ ক্বদরের রাত্রি হ’ল রামাযান মাসে, কথিত শা‘বান মাসে নয়। ক্বদর রাত্রিকে অন্যত্র ‘মুবারক রাত্রি’ বলা হয়েছে। যেমন, إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ‘আমরা একে নাযিল করেছি বরকতময় রজনীতে’ (দুখান ৪৪/৩)।
ইকরিমা থেকে উক্ত রাত্রি অর্থ ‘শা‘বানের মধ্য রাত্রি’ বলে বর্ণিত হয়েছে। ইবনু কাছীর বলেন, এটি একেবারেই দূরবর্তী কথা (فَقَدْ أَبْعَدَ النَّجْعَةُ)। কেননা কুরআন নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছে ‘রামাযানে নাযিল হয়েছে’ বলে (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। এ প্রসঙ্গে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে تُقْطَع الآجَالُ مِنْ شَعْبَانَ إلَى شَعْبَانَ حَتَّى إنَّ الرَّجُلَ ليَنْكِحُ، ويُولدُ لَهُ، وَلَقْدَ أُخْرِج اسْمُهُ في الْمَوْتَى ‘এই রাতে এক শা‘বান থেকে পরবর্তী শা‘বান পর্যন্ত সবকিছুর তাক্বদীর নির্ধারিত হয়। এমনকি এই সময় কার বিয়ে হবে, সন্তান হবে বা মৃত্যু হবে সবই’।[1] তা ‘মুরসাল’। এরূপ দুর্বল দলীল দিয়ে কুরআনী দলীল সমূহের মুকাবিলা করা যায় না’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা দুখান ৪৪/৩-৪)। অতএব এ আয়াতে বিদ‘আতীদের জন্য কোন দলীল নেই। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, যারা সূরা দুখানে বর্ণিত ‘মুবারক বাত্রি’ অর্থ ‘মধ্য শা‘বান’ বলেন এবং ক্বদরের রাত্রির ন্যায় ঐ রাত্রিতে তাক্বদীর বণ্টন হয় বলেন, তারা গায়েবী বিষয়ে অকাট্য দলীল ব্যতীত কথা বলার দুঃসাহস দেখিয়ে থাকেন। যে বিষয়ে নিষ্পাপ রাসূল (ছাঃ) থেকে কোন ছহীহ মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়নি, সে বিষয়ে কোনরূপ ধারণা পোষণ করা আমাদের জন্য সিদ্ধ নয়’।
আরো পড়ুনঃ