সূরা বাইয়্যিনাহ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও তাফসীর
সূরা বাইয়্যিনাহ মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরা বাইয়্যিনাহ কোরআন মাজিদের ৯৮ নম্বর সূরা। সূরা বাইয়্যিনাহর আয়াত সংখ্যা ৮ টি।
Contents
সূরা বাইয়্যিনাহ এর আরবি উচ্চারণ
لَمْ يَكُنِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ وَٱلْمُشْرِكِينَ مُنفَكِّينَ
حَتَّىٰ تَأْتِيَهُمُ ٱلْبَيِّنَةُ
رَسُولٌ مِّنَ ٱللَّهِ يَتْلُوا۟ صُحُفًا مُّطَهَّرَةً
فِيهَا كُتُبٌ قَيِّمَةٌ
وَمَا تَفَرَّقَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ ٱلْبَيِّنَةُ
وَمَآ أُمِرُوٓا۟ إِلَّا لِيَعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ
وَيُقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤْتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلْقَيِّمَةِ
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ وَٱلْمُشْرِكِينَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ
خَٰلِدِينَ فِيهَآ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمْ شَرُّ ٱلْبَرِيَّةِ
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ ٱلْبَرِيَّةِ
جَزَآؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّٰتُ عَدْنٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا رَّضِىَ ٱللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا۟ عَنْهُ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِىَ رَبَّهُۥ
সূরা বাইয়্যিনাহ বাংলা উচ্চারণ
লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূমিন আহলিল কিতা-বি ওয়াল মুশরিকীনা মুনফাক্কীনা হাত্তাতা’তিয়াহুমুল বাইয়িনাহ। রাছূলুম মিনাল্লা-হি ইয়াতলূসুহুফাম মুতাহহারাহ। ফীহা-কুতুবুন কাইয়িমাহ। ওয়ামা- তাফাররাকাল্লাযীনা ঊতুলকিতা-বা ইল্লা- মিম বা‘দি মা- জাআতহুমুল বাইয়িনাহ। ওয়ামাউমিরূইল্লা-লিয়া‘বুদুল্লা-হা মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা হুনাফাআ ওয়া ইউকীমুসসালা-তা ওয়া ইউ’তুঝঝাকা-তা ওয়া যা-লিকা দীনুল কাইয়িমাহ। ইন্নাল্লাযীনা কাফারূমিন আহলিল কিতা-বি ওয়াল মুশরিকীনা ফী না-রি জাহান্নামা খা-লিদীনা ফীহা- উলাইকা হুম শাররুল বারিইইয়াহ। ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি উলাইকা হুম খাইরুল বারিইইয়াহ। জাঝাউহুম ‘ইনদা রাব্বিহিম জান্না-তু‘আদনিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু খা-লিদীনা ফীহাআবাদার রাদিয়াল্লা-হু ‘আনহুম ওয়া রাদূ ‘আনহু যা-লিকা লিমান খাশিয়া রাব্বাহ।
সূরা বাইয়্যিনাহ বাংলা অর্থ
আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের ছিল, তারা প্রত্যাবর্তন করত না যতক্ষণ না তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসত। অর্থাৎ আল্লাহর একজন রসূল, যিনি আবৃত্তি করতেন পবিত্র সহীফা, যাতে আছে, সঠিক বিষয়বস্তু। অপর কিতাব প্রাপ্তরা যে বিভ্রান্ত হয়েছে, তা হয়েছে তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরেই। তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার তলদেশে নির্ঝরিণী প্রবাহিত। তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্যে, যে তার পালনকর্তাকে ভয় কর।
সূরা বাইয়্যিনাহ এর তাফসীর
মুসনাদে আহমাদে হযরত আমর ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ যখন [ لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ ]- সূরাটি শেষ পর্যন্ত অবতীর্ণ হয় তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে এ সূরাটি হযরত উবাই (রাঃ)-এর নিকট পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উবাই (রাঃ)-কে এ কথা জানানোর পর হযরত উবাই (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)! সেখানে কি আমার কথা আলোচিত হয়েছে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাকে বললেনঃ “হ্যা, হ্যাঁ।” হযরত উবাই (রাঃ) তখন কেঁদে ফেললেন।
মুসনাদেরই অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত উবাই (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ্ তা’আলা কি আমার নাম উচ্চারণ করেছেন?”
রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উত্তরে হ্যা’ বললেন। তখন হযরত উবাই (রাঃ) কেঁদে ফেললেন।
মুসনাদে আহমাদের অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, যে সময় হযরত উবাই (রাঃ) এ ঘটনাটি বর্ণনা করেন সে সময় বর্ণনাকারী হযরত উবাই (রাঃ)-কে বলেনঃ “হে আবু মুনযির (রাঃ)! তাহলে তো আপনি খুবই আনন্দিত হয়েছেন?” উত্তরে হযরত উবাই (রাঃ) বলেনঃ কেন আনন্দিত হবো না? আল্লাহ্ রাব্বল আলামীন স্বয়ং বলেনঃ
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থাৎ “তুমি বলে দাও আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা লাভ করে যেন তারা আনন্দিত হয়। এটা তারা যা পুঞ্জীভূত করে তার চেয়ে বহুগুণে উত্তম।” (১০ : ৫৮)
অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত উবাই (রাঃ)-এর সামনে এ সূরাটি পড়ার পর পাঠ করেনঃ
অর্থাৎ “আদম সন্তান যদি একটা উপত্যকা পূর্ণ মাল যাঞ্চা করে, অতঃপর তাকে তা দেয়া হয় তবে অবশ্যই সে দ্বিতীয়টির জন্যে প্রার্থনা করবে, সেটাও যদি তাকে প্রদান করা হয় তবে সে তৃতীয়টির জন্যে প্রার্থনা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ভরবে না। তবে যে তাওবা করবে আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করবেন। আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তিই দ্বীনদার যে একাগ্রচিত্তে তাঁর ইবাদত করে। তবে সে মুশরিক, ইয়াহুদী এবং নাসারা হতে পারবে না। যে ব্যক্তি কোন পুণ্য কাজ করবে তার অমর্যাদা করা হবে না।”
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে আবুল মুনযির (রাঃ)! আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি যেন তোমার সামনে কুরআন পাঠ করি।” হযরত উবাই (রাঃ) তখন বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি, আপনার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আপনার কাছে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেছি।” নবী করীম (সঃ) ঐ কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন। হযরত উবাই (রাঃ) তখন আর্য। করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার কথা কি সেখানে আলোচনা করা হয়েছে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “হ্যা, তোমার নাম ও নসব এ সবই মালায়ে আ’লায় আলোচিত হয়েছে।” হযরত উবাই (রাঃ) তখন বললেনঃ “তা হলে পাঠ করুন!”
এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে হযরত উবাই (রাঃ)-এর মানসিক দৃঢ়তা এবং ঈমান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যেই রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁর সামনে এ সূরাটি পাঠ করেছিলেন।
মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবী দাউদ, সুনানে নাসাঈ এবং সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, একবার হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআত শুনে হযরত উবাই (রাঃ) অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর কাছে তিনি যেমনভাবে এ সূরার কিরআত শুনেছিলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তেমনভাবে পড়েননি। রাগতভাবে হযরত উবাই হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট গমন করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) উভয়ের কিরআত শুনে বলেনঃ “উভয়ের কিরআতই বিশুদ্ধ।” হযরত উবাই (রাঃ) বলেনঃ আমি এ কথা শুনে এমন সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেলাম যে, যেন অজ্ঞতার যুগের সন্দেহ আমার সামনে এসে গেল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ অবস্থা দেখে আমার বুকে হাত রাখলেন। আমার বুক ঘামে ভিজে গেল। আমার উপর এমন ভয় চাপলো যে, যেন আমি রাব্বল আলামীন আল্লাহকে সামনে দেখতে পাচ্ছি। নবী করীম (সঃ) বললেনঃ “শোনো, হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার সামনে এসেছিলেন। তিনি বললেনঃ “উম্মতকে একই কিরআতে কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্যে আল্লাহ্ তা’আলা নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বললামঃ আমি আল্লাহ্ তা’আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং মাগফিরাত কামনা করছি। অতঃপর আমাকে দু’প্রকারের কিরআতের অনুমতি প্রদান করা হলো। কিন্তু আমি আরো বাড়ানোর আবেদন জানালাম। অবশেষে সাত প্রকারের কিরআত পাঠের অনুমতি দেয়া হলোʼʼ। অতঃপর এ সূরা নাযিল হলো এবং এতে রয়েছেঃ
رَسُولٌ مِّنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفًا مُّطَهَّرَةً
فِيهَا كُتُبٌ قَيِّمَةٌ
“নবী করীম (সঃ) মানসিক দৃঢ়তার শিক্ষা দান এবং সতর্ককরণের উদ্দেশ্যে হযরত উবাই (রাঃ)-কে এ সূরাটি তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দেন। কেউ যেন এটা মনে না করে যে, শিখবার ও মনে রাখবার উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত উবাই (রাঃ)-এর সামনে এ সূরাটি তিলাওয়াত করেছিলেন। এসব ব্যাপারে। আল্লাহ্ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।ʼʼ
আরো পড়ুনঃ