ইসলাম

সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, শানে নুযুল ও ফজিলত

সূরা কাওসার পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ। পবিত্র    কোরআন      মজিদের      ১১৪     টি    সুরার     মধ্যে সবচেয়ে ছোট সূরা হল সূরা কাওসার। সূরা কাওসার পবিত্র কোরআনের ১০৮ তম সূরা। সূরা কাওসার এর আয়াত সংখ্যা ৩।

সূরা কাওসার এর আরবি উচ্চারণ

إِنَّآ أَعْطَيْنَٰكَ ٱلْكَوْثَرَ
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلْأَبْتَرُ

সূরা কাওসার এর বাংলা উচ্চারণ

1, ইন্নাআ‘তাইনা-কাল কাওছার।
2, ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার।
3, ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।

সূরা কাওসার এর অর্থ

নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।

সূরা কাওসার এর শানে নুযুল

সূরা কাওসার কুখ্যাত আস ইবনে ওয়াইলের  ব্যাপারে নাজিল  হয়েছে।   সে   রাসূলেপাক   সাল্লাল্লাহু    আলাইহি ওয়াসাল্লামকে     আবতার       বা     নির্বংশ     বলে      কটুক্তি  করেছিল।    এর     পরিপ্রেক্ষিতে     আল্লাহতায়ালা    সূরাটি অবতীর্ণ করে  তার জবাব   প্রদান    করেন। সাথে সাথে  রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে   শান্ত্বনা প্রদান করেন।

মুহাম্মদ    ইবনে   আলী   ইবনে    হোসাইন    থেকে   বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তির পুত্র সন্তান মারা যায় আরবিতে তাকে আবতার   বা   নির্বংশ  বলা   হয়।  রাসূলেপাক   সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম এর   পুত্র   হযরত কাসেম অথবা ইব্রাহিম    যখন       শৈশবেই    ইন্তেকাল     করলেন,    তখন কাফেরগণ     তাকে     আবতার     বলে     উপহাস      করতে  লাগল। তাদের মধ্যে আস   ইবনে ওয়াইল  জঘণ্যতম। তার সামনে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন  আলোচনা হলে সে  বলত, আরে উনার কথা বাদ দাও, উনি তো আবতার।  উনার  মৃত্যুর পর উনার নাম   উচ্চারণ   করার    মতো    কেউ   থাকবে   না।   তখন আল্লাহ তায়ালা সূরা কাউছার অবতীর্ণ করেন।
ان العاص بن وائل السهمى تلا قى مع رسول الله صلى الله عليه  وسلم فى المسجد عند باب بنى  سهم- فتحدثا  وناس من صناديد قريش جلوس فى المسجد- فلما دخل قالوا له من الذى تحدث معه؟ فقال ذلك الابتر يعنى به النبى وكان قد   توفى ولده القاسم فلما قال  تلك  المقالة نزلت السورة تسلية وتبشيراله-

অর্থঃ একবার আস বিন ওয়াইল কাবা ঘরের বনী সাহম দরজার       নিকট       রাসূলেপাক         সাল্লাল্লাহু       আলাইহি ওয়াসাল্লাম    এর    সাথে    সাাত    করে    কিছু    বাক্যলাপ  করল।      তখন      কুরাইশদের        নেতৃস্থানীয়       লোকজন মসজিদের    ভিতরে    বসা    ছিল।    অতঃপর      যখন    সে ভিতরে প্রবেশ   করল   তখন তারা  জিজ্ঞাসা করল তুমি  কার   সাথে    কথা   বললে?     সে   বলল    ঐ   আবতারের সাথে।       অর্থাৎ       নবী       করিম       সাল্লাল্লাহু       আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর সাথে।  সে সময় নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি     ওয়াসাল্লাম      এর     পুত্র     কাসেম     ইন্তেকাল  করেছিলেন। আসের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা    তাঁর  হাবিবকে   শান্ত্বনা  ও   সুসংবাদ  প্রদানের  জন্য সূরা কাউছার অবতীর্ণ করেন।

সূরা কাওসার এর ফজিলত

হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর পুত্র কাসেম এবং শেষ পুত্র ইব্রাহিম যখন মারা যায় তখন কাফেররা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) কে নিয়ে অনেক কটূক্তি করতে লাগলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ )তাদের কথায় অনেক মর্মাহত হলেন।

যারা মুহাম্মদ (সাঃ ) কে নিয়ে কটূক্তি করতেন তারমধ্যে একজন হলো এস ইবনে ওয়ায়েল। যখন রাসূল (সাঃ ) এর বিষয়ে কিছু বলা হতো তখন তিনি বলতেন, তোমরা তাকে নিয়ে চিন্তা করতেছো কেন তার কথা বাদ দাও সে তো লেজকাটা বা নির্বংশ।

সে মারা গেলে তার নাম নেওয়ার কেও থাকবে না। এসব কটূক্তি শুনে রাসূল (সাঃ ) অনেক কষ্ট পেতেন। তখন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর কষ্টকে দূর করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সূরা কাওসার নাম এ সূরাটি নাজিল করে তাকে সান্তনা দেন।

আরও বলেন, হে নবী !আপনাকে যারা নির্বংশ বলতেছে তারাই নির্বংশ হয়ে যাবে। তাদের নাম নেওয়ার মতো কেও বেঁচে থাকবে না। তাই আপনি বিস্মিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করুন।

সূরা কাওসার নাজিলের সময় সাহাবীগণ মুহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ )এর চেহারা মোবারকে নূরানী হাসি দেখতে পেয়েছিলেন। হজরত আনাস (রাঃ ) হতে বর্ণিত ,একদিন মসজিদে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন।

হঠাৎ মহানবী (সাঃ ) এর মাঝে তন্দ্রা অথবা এক ধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলো। এরপর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) হাসিমুখে মাথা উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ !আপনার হাসির কারণ কি ?

তিনি বললেন ,এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা নাজিল হয়েছে। তার পর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সস ) বিসমিল্লাহ সহ সূরা কাওসার পাঠ করে শোনালেন। তারপর রাসূল (সাঃ ) জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি জান ,কাওসার কি ?আমরা বললাম আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল ভালো জানেন।

হজরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বললেন, এটা জান্নাতের একটি নহর। আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অনেক কল্যাণ আছে ।মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন কেয়ামতের দিন হাউজে কাওসারের পাশে আমার উম্মত গন অবতরন করবে ।

কেয়ামতের দিন হাউজে কাওসার থেকে আমার উম্মতরা পানি পান করতে যাবে। তখন কিছু লোককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলব, হে রব !সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন ,আপনি জানেন না ,আপনার পরে তারা নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল। (মুসলিম শরীফ ,বোখারী ,আবু দাউদ ,নাসায়ী )

হাউজে কাওসারের পানি দুধের থকে শুভ্র, মধুর চেয়ে মিষ্টি, বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা এবং মিসকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ সম্পন্ন ।হাউজে কাওসারের দৈৰ্ঘ্য ও প্রস্থে সমান। তার কোন সমূহের প্রত্যেকটি কোন এক মাসের রাস্তার সমান।

হাউজে কাওসারের পানির মূল উৎস হলো জান্নাত। জান্নাত থেকে দুটি খালের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। খাল দুটি একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। এর পানি পান করার পাত্র থাকবে আকাশের তারকাসম। হাউজে কাওসার থেকে একবার পানি পান করলে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (12 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button