পেঁয়াজের উপকারিতা
পেঁয়াজের উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পেঁয়াজ যখন কাটতে গেলে চোখে পানি আসে আমাদের অনেকেরই। তবে এই পেঁয়াজ যে আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপকারী তা জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। পেঁয়াজে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুনের পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে।
রান্না থেকে শুরু করে স্যালাদ, স্যান্ডউইচ বা মুড়িতে মেখে যেমন নানাভাবে পেঁয়াজ খাওয়া যায়, তেমনি এর রয়েছে নানাবিধ গুণ। একাধিক গবেষণার মাধ্যমে এই কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, পেঁয়াজের ভিতরে অবস্থিত বেশ কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান একাধিক রোগের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
Contents
- ১.মুখের গন্ধ দূর করতে পেঁয়াজের উপকারিতা
- ২.খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
- ৩.জ্বরের প্রকোপ কমায়
- ৪.ডায়বেটিস রুখতে সাহায্য করে
- ৫.ইনসোমনিয়ার প্রকোপ কমিয়ে থাকে
- ৬.পোড়া ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
- ৭.আঁচিল দূর করে
- ৮.স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়
- ৯.ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়
- ১০.কাশির প্রকোপ কমায়
- ১১.হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- ১২.ত্বকের সমস্যা দূর করে
- ১৩.ব্যথা নিরাময় করে
- ১৪.নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে
- ১৫.দাঁতের সংক্রমণ রোধ করে
- ১৬.চুলের যত্নে পেঁয়াজের উপকারিতা
১.মুখের গন্ধ দূর করতে পেঁয়াজের উপকারিতা
আপনারা হয়তো কথাটা শুনে অবাক হলেন। ভাবছেন পেঁয়াজ খেলেই তো মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। আপনারা পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে মুখ থেকে যে গন্ধটা বের হয় সেটা হচ্ছে সাময়িক গন্ধ। কিছুক্ষণ পর হয়ত এই গন্ধটা আর থাকবে না। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসতে থাকে। পেঁয়াজ খাওয়ার মাধ্যমে মুখের গহব্বরে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলো মরতে শুরু করে। যার ফলে আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে থাকে এবং পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে দাঁতের মাড়িতে নানাবিধ রোগ হওয়ার আশংকা অনেক কমে যায়।
২.খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
পেঁয়াজ শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা বাড়িয়ে একদিকে যেমন শরীরকে চাঙ্গা রাখে তেমনি অন্যদিকে হার্ট এর কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আর এইভাবে পেঁয়াজ তার নিজের বিশেষ ক্ষমতা বলে আমাদের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
৩.জ্বরের প্রকোপ কমায়
আপনার যদি ঘন ঘন জ্বর আসার প্রবণতা থাকে তাহলে আপনার জন্য দারুন এবং কার্যকারী একটি উপাদান হতে পারে পেঁয়াজ। আপনি শুতে যাওয়ার আগে একটি পিঁয়াজ কেটে নিন। এবার তার সাথে অল্প করে আলু এবং দুটি রসুনের কোয়া নিয়ে মিশিয়ে মোজার মধ্যে রেখে সেই মোজা পড়ে শুয়ে পড়ুন। আপনি যদি এইভাবে এই কাজটা কয়েকজন করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।
৪.ডায়বেটিস রুখতে সাহায্য করে
ডায়াবেটিস হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর একটি রোগ। যার একবার ডায়াবেটিস হয় তার খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ভয়ংকার এই রোগ ডায়াবেটিস কে দাবিয়ে রাখতে হলে পেঁয়াজের গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না। পেঁয়াজের মধ্যে উপস্থিত তো বেশ কিছু উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে দেয় না। সেইসাথে ইনসুলিনের ঘাটতি যেন না হয় সেদিকেও উপাদানগুলি খেয়াল রাখে। যার ফলে সাধারণত ডায়াবেটিসের পুকুরপাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
৫.ইনসোমনিয়ার প্রকোপ কমিয়ে থাকে
যাদের অনিদ্রা ইন্সমনিয়ার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য দারুন একটি কার্যকারী উপাদান হতে পারে পেঁয়াজ। ইনসেমনিয়া রোগটি হলে ঘুম আপনার সাথে খেলা করতে লাগে। ঘুম যেন চোখে আসি আসি করে আর আসে না। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে পারেন কেননা ইনসোমনিয়ার মত রোগ উপশমে পেঁয়াজ হল দারুন একটি সবজি।
৬.পোড়া ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
সাধারণত রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক গৃহিণী ঘটে থাকে। আর যে জায়গায় পুড়ে যায় সে জায়গায় তখন অসম্ভব জ্বালা-যন্ত্রণা হতে থাকে। এক্ষেত্রে পেঁয়াজ হতে পারে দারুন একটি উপাদান। আপনার রান্না করতে গিয়ে যদি কোন সময় হাত পুড়ে যাই তাহলে আপনার ক্ষতস্থানে এক টুকরো পেঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন। আপনি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে দেখবেন আপনার জ্বালা ভাব কমে আসার সাথে সাথে আপনার ক্ষত সেরে যাবে।
৭.আঁচিল দূর করে
আপনার যদি আচিঁল হয়ে থাকে তাহলে আপনি গোল করে একটা পিয়াজ কেটে সেই আচিঁলের ওপর দিয়ে বেঁধে রাখুন। এমনভাবে বাঁধবেন যেন সেটি পড়ে না যায়। প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে আপনি যদি এই কাজটি করতে পারেন তাহলে দেখবেন অল্পদিনের মধ্যেই আপনার আঁচিল খসে পড়ে গিয়েছে।
৮.স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়
আপনি যদি নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেতে থাকেন তাহলে আপনার ব্রেনের শক্তি অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে, তেমনি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একাধিক ব্রেন ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পেয়ে থাকে। তাছাড়া যাদের স্মৃতি দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে থাকেন তাহলে তাদের এই রোগটি আস্তে আস্তে নিরাময় হবে।
৯.ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়
নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে ব্রেন, ক্লোন ও ঘাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্য তে এসে দাঁড়ায়। কেননা এই সবজিটির ভেতরে উপস্থিত বেশকিছু কার্যকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শরীরের ভিতর ক্যান্সার কোষের বাসা বাঁধতে দেয় না। ফলে এসব ধরণের মরণ রোগ আপনার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেনা।
১০.কাশির প্রকোপ কমায়
প্রথমে আপনাকে একটি পিয়াজ কেটে নিয়ে তার রস সংগ্রহ করে নিতে হবে। তারপরেতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে এই মিশ্রন দিনে কম করে দুইবার পান করলে আপনার যদি খুব বেশি কাশির সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি ধীরে ধীরে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
১১.হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
যারা হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন একটু খেলেই হজম হতে চায় না, গ্যাসের সৃষ্টি হয়, পেট সকল সময় ফাঁপা থাকে, তারা রোজ একটি করে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। পেঁয়াজে থাকা বিদ্যমান উপাদান খাবার হজমের বিভিন্ন এনাইজম তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে আমাদের খাবার দ্রুত হজম হয়ে থাকে।
১২.ত্বকের সমস্যা দূর করে
পোকামাকড়ের কামড় হোক বা রোদে পোড়া দাগই হোক বা ব্রণ ফুসকুড়ি এ সমস্ত সমস্যা গুলো যদি আপনার থেকে থাকে তাহলে আপনি সেই জায়গায় পেঁয়াজের রস লাগান। প্রথমে আপনার এর জন্য একটু জ্বলতে পারে,তবে এই উপায়টি এসব সমস্যা সমাধান করতে দ্রুত কাজ করবে।
১৩.ব্যথা নিরাময় করে
যেকোনো ধরনের ব্যথা নিরাময় করতে পেঁয়াজ হল কার্যকরী একটি উপাদান। আপনার হাটুর গিরায় ব্যথা থাকলে আপনি নিয়মিত সেই স্থানে পেঁয়াজের রস মালিশ করতে পারেন। আস্তে আস্তে দেখতে পাবেন আপনার ব্যথাটা অনেক কমে যাচ্ছে এবং আপনার ব্যথা সেরে যাবে।
১৪.নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে
সাধারণত গৃষ্ম কালে বা শীতকালে অনেকের নাক থেকে রক্ত পড়ার এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। যদি এই সমস্যার সময়ে আপনার পাশে পেঁয়াজ থাকে তাহলে আপনি পেঁয়াজ সরাসরি কেটে তার ঘ্রাণ নিতে থাকুন। এর ফলে রক্তপাত কমে যাবে বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
১৫.দাঁতের সংক্রমণ রোধ করে
দাঁতের সংক্রমণ রোধ করতে পেঁয়াজের জুড়ি মেলা ভার। আপনাকে এর জন্য দুই থেকে তিন মিনিট পেঁয়াজ চিবিয়ে খেতে হবে।এর ফলে দাঁতের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সব জীবাণুগুলো মরে যাবে যার ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেক কমে যাবে।
১৬.চুলের যত্নে পেঁয়াজের উপকারিতা
চুলের যত্নে পেঁয়াজের অসংখ্য উপকারিতা আছে। আপনারা যারা আমাদের আগের পোস্টগুলো পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন হেয়ার প্যাক বানাতে পেঁয়াজের ব্যবহার কতটা কার্যকরী। নিচের পোস্টগুলো দেখুন
- চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়
- চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- খুশকি দূর করার উপায় প্রাকৃতিকভাবে
- চুল ঘন করার উপায় naturally
- চুল স্ট্রেইট করার নিয়ম
- চুল সিল্কি করার উপায়
- চুল বাঁধার সহজ নিয়ম
পরিশেষে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেই পেঁয়াজের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবেনা। পেঁয়াজ রান্না থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন, বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় তাছাড়া আরও অনেক ভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। আর রান্নাঘরে তো বাঙালি পেঁয়াজ ছাড়া কিছু বোঝেনা। তাই নিয়মিত পেঁয়াজ খান দূরে থাকুন মারাত্মক সব রোগ গুলো থেকে এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করুন।
এই আর্টিকেলে ব্যবহৃত এক বা একাধিক কপিরাইটবিহীন ছবি Freepik.com থেকেে সংগৃহীত হয়েছে।