Uncategorized

ভারত চীন সীমান্ত সংঘর্ষ

5/5 - (11 votes)

ভারত এবং চীনের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত বহুদিনের পুরনো। ৩৪৪০ কিলোমিটারের ভারত-চীন সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মুখোমুখি হবার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধে চীনের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয় ভারত, তারপর ১৯৬৭ ও ১৯৭৫ সালেও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে ১৫ই জুন রাতেই প্রথমবারের মত হতাহতের ঘটনা ঘটে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? এই নিয়মিত সংঘাতের পেছনের কারণ কি?

ভারত চীন সীমান্ত সংঘর্ষ পেছনের কারণ

এর উত্তর পেতে হলে আমাদের যেতে হবে অনেকটা পেছনের দিকে প্রায় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের দিকে। কিন্তু আমি এখন এত পিছনে যাবোনা। তিব্বত সংকট, চতুর্দশ দালাইলামাকে ভারতের আশ্রয় প্রদান, আকসাই চীন, অরুনাচল প্রদেশ এসব নিয়ে পিছনে বহু ঘটনা ঘটেছে। এসব লিখতে গেলে এই আর্টিকেল অনেক বড় হয়ে যাবে। আমি শুধু সাম্প্রতিক যে সংঘর্ষ হয়ে গেছে সেটার পেছনের কারণ নিয়ে লিখবো।

গত ১৫ই জুন দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষের প্রধান কারণ হচ্ছে ৩২৩ কি.মি. এর একটা স্ট্র্যাটেজিক রোড (DSDBO ROAD) যেটা ভারত নির্মান করেছে এবং যার নির্মাণ কাজ প্রায় এক তৃতীয়াংশ শেষ হয়েছে। রাস্তাটি লাদাখের রাজধানী লেহ থেকে দুই দেশের মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রন রেখা লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল (LAC) এর পাশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে যেটা দৌলত বেগ ওল্ডি বিমান ঘাটি পর্যন্ত গিয়েছে এবং পরবর্তীতে এই রোড ভারত নিয়ে যাবে সিয়াচল হিমবাহ পর্যন্ত। এই বিমান ঘাটির এক পাশে চীন এবং এক পাশে পাকিস্তান। যেখান থেকে ভারত খুব সহজেই দুই দেশের উপর বিমান হামলা চালাতে পারে যদি কখনো যুদ্ধ বেঁধে যায়।

এই বিমান ঘাটিতে গাড়ি দিয়ে যাবার কোন উপায় ছিলনা এই রাস্তা নির্মিত হবার আগে। সেখানে পৌছাবার একমাত্র উপায় ছিল আকাশপথ। কারণ এই পুরো এলাকাটা দুর্গম পাহাড় বেষ্টিত জনমানবহীন একটা এলাকা। এই রাস্তা নির্মিত হবার কারণে ভারতের সামরিক বাহিনীর কাছে সেখানে রেশন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো খুব সহজ হয়ে যায়।

এই রোড থেকেই ভারত আরেকটা লিংক রোড বানায় যেটা LAC এর কাছাকাছি গালয়ান উপত্যকার দিকে গিয়েছে এবং চীন আপত্তিটা করে সেখানেই। একটা কথা বলে রাখি, গালওয়ান উপত্যকার যে জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে অর্থাৎ এই লিংক রোড উপত্যকার যে অংশের সাথে সংযোগ ঘটানোর কথা সেই অংশটার উচ্চতা ১৪০০০ ফুট। যেখান থেকে ভারতীয় সেনারা খুব সহজেই চীনের উপর নজরদারি করতে পারে এবং মূলত এই কারণেই রাস্তাটা নির্মান করা নিয়ে আপত্তি করে চীন।

আরেকটা বিষয় উল্ল্যেখ্য যে, চীনও গালওয়ান ভ্যালির দিকে একটা রাস্তা নির্মাণ করেছে গালওয়ান নদীর পাশ দিয়ে। যেটা সম্পর্কে ভারতীয় সেনারা জানতো না। অবশ্য এমন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় না জানাটাই স্বাভাবিক।
তো ভারত দাবি করছে যে গালওয়ান ভ্যালির যে জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে সেটা ভারতের সীমানায় পরেছে এবং চীনের সেনারা আগে থেকেই সেখানে ঘাটি গেড়েছিলো যেটা সম্পর্কে ভারত জানতো না। ভারতীয় সেনারা যখন চীনের সেনাদের সেখান থেকে সড়ে যেতে বলে তখনই বাঁধে সংঘর্ষ।

আরেকটা বিষয় উল্ল্যেখ্য যে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যেভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয় ভারত-চীন সীমান্তে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়না। এর পিছনে কাজ করছে ১৯৯৩ সালের “মেইন্টেন্যান্স অফ পিস এন্ড ট্র্যাঙ্কুয়েলিটি” চুক্তি, ১৯৯৬ সালের আস্থা বর্ধক ব্যবস্থাপত্র এবং পরবর্তীতে ২০০২ এবং ২০০৫ সালেও তাদের মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি। ২০১৩ সালে “বর্ডার ডিফেন্স কোঅপারেশন” এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করে এই দুই দেশ। এই চুক্তি গুলোতে বলা আছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলে কোনপ্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবেনা। যদি র‍্যাংক অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র কাউকে বহন করতে হয় হয় তবে তার নল থাকবে নিচের দিকে।

এই চুক্তি গুলোর কারনেই ১৫ই জুন অস্ত্রের ব্যবহার হয়নি। ধাক্কাধাক্কি হয় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে কয়েকজন সেনা সদস্য নিচের গালওয়ান নদীতে পরে যায়। ভারত দাবি করছে তাদের সেনা সদস্যরা কোন প্রকার অস্ত্র বহন করেনি কিন্তু চীনের সেনারা কাটাওয়ালা লোহার রড ব্যবহার করেছিল।

গালওয়ান ভ্যালির যে জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে সামরিক ভাষায় তার নাম Gallowan Flash Point PP 14। যেটা দুই দেশই তাদের সীমানায় দাবি করছে এবং দুই দেশই সেই জায়গায় ঘাটি গাড়তে চাইছে। কারণ সেখানে যাদের ঘাটি থাকবে তারা অন্যের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। সামরিক কৌশলে যারা উপরে অবস্থান করে তারা বরাবরই সুবিধা পায়। সেখানে যে দেশ সেনা ঘাটি স্থাপন করতে পারবে রণকৌশলে তারাই এগিয়ে থাকবে।

আশা করি তাহলে বুঝাতে পেরেছি এই রাস্তাটা নিয়ে কেন চীনের আপত্তি। কেন চীন চায়না এই রাস্তাটা হোক। অপরদিকে চীন মধ্য এশিয়ার সাথে ব্যাবসায়িক সংযোগ স্থাপনের জন্য একটা রোড নির্মান করেছে যেখানে পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যিক করিডোর The China-Pakistan Economic Corridor বা CPEC নির্মিত হয়েছে যেটা নিয়ে আপত্তি আছে ভারতের। ওই রাস্তাটি গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে। এখানেই আপত্তি ভারতের। এতে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে মনে করছে ভারত। এদিকে আবার চীন মনে করছে ভারত যদি দৌলত বেগ ওল্ডি বিমান ঘাটি থেকে রাস্তা সিয়াচল হিমবাহ পর্যন্ত নিয়ে যায় তাহলে সহযেই চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরে সহজেই নজরদারি করতে পারবে ভারত।

দুই দেশই সীমান্তে তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে চাইছে। ভারত যেটা গত এক দশক থেকে বেশি করছে। ভারতের সাথে বলতে গেলে বর্তমানে সীমান্ত সম্পর্ক কোন দেশেরই ভালোনা। নেপাল কিছুদিন আগে ভারতের দাবিকৃত অঞ্চল নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীন ও পাকিস্থানের সাথে তো আগে থেকেই সম্পর্ক খারাপ। এদিকে বাংলাদেশে বিএসএফের সীমান্ত হত্যা চলছেই। তাই এই সকল কারণ বিবেচনায় ভারত বর্তমানে সীমান্তে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করছে।

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানঃ রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের ভবিষ্যত কোন পথে? এই পোস্টটি অবশ্যই পড়ে নিবেন। ধন্যবাদ।।

zahid

A professional SEO Expert & Digital Marketing Consultant. Enhancing online visibility of business is my job. Keeping update myself with new search algorithm update and stay top on search results is my passion.

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button