শিক্ষা

এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা বর্তমান সময়টা যেভাবে কাজে লাগাবে

প্রিয় শিক্ষার্থীরা আশা করি সবাই ভালো আছো এবং পরীক্ষা নিয়ে বেশ চিন্তিতও আছো।পরীক্ষা হবে কি হবে না সে চিন্তা তো আছেই বা হলেও ভালো করতে পারবো কি না সেটাও একটা চিন্তার বিষয়।


প্রথমেই বলে রাখি পরীক্ষা যে হবে এটা মোটামুটি কনফার্ম। কিন্তু কখন হবে সেটা বলা মুশকিল। তবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার চার সপ্তাহ আগে তারিখ ঘোষণা করবে। তাই দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বর্তমান সময়টা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব।আর যদি মনের ভেতর ভয় রেখে পড়াশুনা বাদ দিয়ে সময় নষ্ট করো তাহলে যে ঠকে যাবে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।মনে রাখতে হবে, এ সময়টাতে পড়ালেখা ছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করা যাবে না। যেমন এখন মনে হতে পারে এ অনিশ্চয়তার জীবনে পড়ালেখা করে কি হবে। তার চেয়ে বরং টিকটকের ভিডিও বানাই, ইউটিউব চ্যানেল খুশি, ফেসবুকে পেইজ খুলে লেখালিখি করি।

এরকমটা করাই যাবে না। আর জীবন এখন অনিশ্চয়তার না। আশেপাশে তাকালেই দেখা যায় জীবন কতটা স্বাভাবিক এখন।তবে ফেসবুক, ইউটিউব যে একেবারেই চালাইবা না তা কিন্তু না। চালাইবা বাট সেটা যেন পরিমিত আকারে হয়। দৈনিক সর্বোচ্চ এক ঘন্টা চালালেই বোধ হয় যথেষ্ট। এর বেশি নয়। আর সপ্তাহে দু একদিন মুভি দেখা যেতে পারে বিনোদনের জন্য।

এখন আসি পড়াশুনা কিভাবে করবো?

ভালো ফলাফলের জন্য রুটিন করে পড়ার কোন বিকল্প নাই। দিনের ও রাতের কোন সময় কোন বিষয় পড়বা সেটা নির্ধারণ করে ফেলতে হবে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ইংরেজি, আইসিটি।দুপুরের আগে বাংলা। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু রেস্ট নিয়ে গণিত বইয়ের অংক করা যেতে পারে। বিকালে একটু হাঁটতে বের হতে পারো। সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা করার পর পদার্থ আর রসায়ন নিয়ে বসতে পারো। আর রাতে ঘুমানোর আগে কয়েকটা ম্যাথ করলা।

বিষয় গুলো কিভাবে পড়বো?

এখন যেহেতু সময় কমই বলা যায় তাই পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একদিনে একটা চাপ্টার শেষ করতে হবে। যেমন ধরো, পদার্থ ১ম পত্রের তরঙ্গ চাপ্টারটা পড়লা। পড়ার পর সে চাপ্টার রিলেটেড প্রশ্ন, ম্যাথ সলভ করতে হবে। তারপর টেস্ট পেপার হাতে নিয়ে সে চাপ্টার রিলেটেড সৃজনশীল প্রশ্নগুলো সলভ করতে হবে। এরপর দিন কিন্তু পদার্থ ১ম পত্র পড়া যাবে না। পরদিন আবার পদার্থ ২য় পত্রের একটা চাপ্টার শেষ করতে হবে। মানে একদিন প্রথম পত্র পড়লে পরদিন দ্বিতীয় পত্র। এটা যে কোন বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য। তবে বাংলা আর ইংরেজীর ক্ষেত্রে একদিনে একের অধিক চাপ্টার শেষ করতে হবে। কারণ এ দুইটা বিষয়ে চাপ্টার সংখ্যা অনেক বেশি। আর যাদের বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা তাদেরকে ইংরেজিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

কারণ ইংরেজিতে এ প্লাস না পেলে বুয়েটে পরীক্ষা দেওয়া যায় না।ইংরেজি প্রথম পত্রের জন্য নবদূত টেস্ট পেপারটা ফলো করতে হবে। পাঞ্জেরিতে অনেক ভুল থাকে। যেমন আমাদের সময় যে রিএরেঞ্জটা পরীক্ষায় এসেছিলো সেটার সমাধান পাঞ্জেরিতে ভুল ছিলো আর নবদূতে সঠিক ছিলো। কিন্তু আমি পাঞ্জেরির সমাধানটা দিয়েছিলাম। এর জন্যই আমার এ প্লাসটা মিস হয়েছিলো। কারণ রিএরেঞ্জে পুরো চৌদ্দ নম্বর।

আইসিটির ক্ষেত্রে একদিনে একটা চাপ্টারের তিন ভাগের এক ভাগ আর রসায়নের ক্ষেত্রে একটা চাপ্টারের অর্ধেক শেষ করলেই চলবে। ম্যাথের বিষয়টা আলাদা।রুটিন অনুযায়ী ম্যাথের জন্য যেটুকু সময় বরাদ্দ থাকবে সে সময়ে যত ম্যাথ করা যায় ততই ভালো।

যারা পড়াশুনায় পিছিয়ে আছো তারাও হতাশ হইও না। যথা সম্ভব চেষ্টা করো। এইচএসসি তে যতটুকু সম্ভব ফলাফল অর্জন করো। এ প্লাস না পাও সমস্যা নেই। এডমিশনের আগে পরিশ্রম করলে মোটামুটি ভালো একটা পাবলিকে চান্স পাওয়া সম্ভব। এরকম স্টুডেন্ট আছে যারা পিছিয়ে থেকেও এডমিশনের সময় ভালোভাবে পড়ে একটা পাবলিকে চান্স পেয়েছে। অতএব প্রাইভেটের চিন্তা আপাতত বাদ দিয়ে পড়ালেখা করো।

এ সময়টাতে কি এডমিশন প্রস্তুতি নেবো?

একটু আকটু নিতে পারো।তবে তার আগে অবশ্যই মেইন বই,টেস্ট পেপার পড়তে হবে।মেইন বই বুঝে বুঝে পড়তে পারলে এডমিশনের অনেকটা কভার হয়ে যায়। এক সাবজেক্টের জন্য কমপক্ষে দুইজন রাইটারের বই পড়তে হবে। ধরো পদার্থ বিজ্ঞানের তরঙ্গ চাপ্টারটা দুইজন রাইটারের বই থেকে পড়লা। তারপর ঐ চ্যাপ্টার রিলেটেড প্রশ্নপত্র মেইন বই ও টেস্ট পেপার থেকে সমাধান করলা। অতপর যদি সময় থাকে তাহলে ভার্সিটি/মেডিকেলের প্রশ্ন ব্যাংক হাতে নিবা। সেখান থেকে ঐ চাপ্টার রিলেটেড প্রশ্নগুলো সলভ করবা।
অনেকে মনে করতে পারো, এইচএসসি পরীক্ষা হবে না আর আমার সব পড়া হয়ে গেছে,অতএব এখন আমি শুধু এডমিশনের জন্য পড়বো।
এরকমটা করা বোকামি হবে। কারণ এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%। তারপরও ধরলাম, যদি নাও হয় তাহলে কি মেইন বই আর টেস্ট পেপারগুলো সলভ করা কি বিফলে যাবে?

অবশ্যই না। এ পড়াগুলোও পরবর্তীতে কাজে লাগবে। টেস্ট পেপার সলভ করতে গিয়ে অনেক সময় বই থেকে সূত্র দেখতে হবে। এতে করে সূত্রটা মুখস্ত হয়ে গেলো। আর এমসিকিউ সলভ করতে গিয়েও কয়েক লাইন পড়া হয়ে যাবে মেইন বইয়ের। এটাও এডমিশনের জন্য উপকারে আসবে।

আমি দেখেছি, অনেক আগে থেকে এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীও বুয়েট মেডিকেলে পড়ছে, আবার এইচএসসি পরীক্ষার পর এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীও বুয়েট মেডিকেলে পড়ছে। অতএব তেমন কোন পার্থক্য নেই।
একটা বিষয় বলে রাখি, এখন নতুন কোন টপিক, মানে আগে কখনো যে টপিক পড়া হয়নি সেটা পড়বা না। তবে টপিকটা যদি সহজ হয় তাহলে পড়তে পারো। আর এ সময়টাতে মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকবা। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। মনে রাখবে, এ পরিস্থিতিতে তুমি শুধু একা না। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এ সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেটা তোমার জন্য কঠিন সেটা সবার জন্যই কঠিন। অতএব চিন্তামুক্ত থাকতে পারো। রিলাক্সে রুটিন করে পড়াশুনা করো। ভালো কিছুই আসবে।

এইচএসসির পর, এডমিশনের আগে দিক নির্দেশনা দিয়ে আরো একটা পোস্ট করবো। ততদিন ভালো থেকো সবাই। জমির পরিমাপ সম্পর্কে আমাদের ওয়েবসাইটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট দেওয়া আছে এখনই দেখে নাও। এই সময় কাজে লাগাতে ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয় করার উপায় এবং ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো কমপ্লিট গাইডলাইন দেওয়া আছে এই পোস্ট দুটি দেখে নিন।

রাজীব আহমেদ সুজন

ফার্মেসি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

5/5 - (11 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button