বর্ণমালার আদিকথন
বর্ণমালার আদিকথন
যে চিহ্ন দ্বারা মানুষ বোধগম্য হয় অর্থ্যাৎ মনের ভাবকে অন্যের নিকট বোধগম্য হয় এমন কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিহ্নকেই মূলত বর্ণমালা বলা হয়। আমার যে বর্ণ গুলো অধ্যয়ন করছি তা বাংলা ভাষার। এগুলো মূলত সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রবর্তিত। যেমনঃ সংস্কৃত বহিত্র >বৈঠা ; সংস্কৃত শব্দ হস্ত> প্রাকৃত শব্দ হত্থ> বাংলা শব্দ হাত ।
মোদ্দাকথা, মনের ভাব প্রকাশের লিখন ভিত্তিক প্রতীক বা উপাদান হচ্ছে বর্ণমালা ।
সংস্কৃত বর্ণমালা
প্রাকৃতের বাতাবরণে সংস্কৃত ভাষার গর্ভে বাংলা ভাষার জন্ম। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার,বিশেষত বাংলা গদ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান পুরুষ ও অগ্রণী ব্যক্তিত্ব।তিনিই প্রথম বাংলা ভাষার পূর্ণ ব্যাকরণ লিখেছেন এবং সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রসারণ হলেও আজ অব্দি বাংলা ভাষার ব্যাকরণ এই আদলের মধ্যেই রয়েছে।
বাংলা সাহিতের আদি এবং প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ কি এবং চর্যাপদের বিষয়বস্তু নিচের পোস্ট থেকে জেনে নিন।
বাঙ্গালির শিক্ষা-দীক্ষার পটভূমি বিচার করলেই বিদ্যাসাগরের “বর্ণপরিচয়” এর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। তখন সবকিছু ( হিসাবনিকাশ, বাক্য, শ্লোক )মুখস্থ করা হতো। তৎকালীন সময়ে পাশ্চাত্যের মুদ্রণ যন্ত্রে মুদ্রিত গ্রন্থ পাঠে জাত যাবে-এরকম কুসংস্কারও ছিলো। অপরদিকে, রাধাকান্তদেব রচিত “বাঙ্গালার শিক্ষাগ্রন্থ” -১৮২১ বইটিতে “বর্ণমালা”, ব্যাকরণ, ইতিহাস , ভূগোল ও গণিতের সমাবেশ ঘটেছে এবং বইটির পৃষ্ঠা ছিলো ২৮৮। এরকম ঢাউস ও গুরুগম্ভীর বইকে উপযুক্ত ভাবার কোনো উপায় নেই।
শ্রীরামপুর মিশনে বাংগালীদের নিজস্ব মুদ্রণযন্ত্রের মাধ্যমে লিপিধারা (১৮১৫), জ্ঞানারুণেদা (১৮২০),রাজা রামমোহন রায়ের গৌড়ীয় ব্যাকরণ(১৮৩৩), হ্যালহেডের গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ সহ (১৭৬৮)প্রকাশিত হয় ।
শ্রীরামপুর মিশন (১৮০০-১৮৪৫) ভারতের প্রথম নিজস্ব প্রচারক সংঘ। ১৮০০ সালের ১০ জানুয়ারি উইলিয়াম কেরী ও ভ্রাতৃবৃন্দ এ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন হুগলি জেলার দুটি স্থান থেকে বাংলায় যীশুর বাণী প্রচার শুরু করে। এই জেলার ব্যান্ডেলে প্রথম ক্যাথলিক চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় (১৫৯৯)। এর দুশ বছর পর (১৮০০) শ্রীরামপুরে প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ গড়ে ওঠে। এই চার্চ ও মিশন প্রতিষ্ঠা করেন উইলিয়াম কেরী (১৭ আগস্ট, ১৭৬১)। তাঁরই উদ্যমে ১৭৯২ সালে ‘ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি’ গঠিত হয়।
ফলে বোঝা যায় , ইংরেজ ঔপনিবেশিকরা-ও চেয়েছিলো একটি স্বশিক্ষিত জাতি। তাই তাদের হাত ধরেও ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব পেয়েছে। শাসনকার্যে ইংরেজি জানা যেমন জরুরি তেমন বাংলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
চলতে থাকে ভাষা চর্চা ।
১৭৬৮ খ্রিঃ হালেদের প্রকাশিত বইয়ে স্বরবর্ণের সংখ্যা ছিলো ১৬ ।
পরবর্তী প্রায় একশত বছর পরও মদনমোহনের শিশুশিক্ষা প্রথম ভাগ পর্যন্ত স্বরবর্ণের সংখ্যা ১৬টিই ছিল। এগুলোও অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ৠ, ঌ, ৡ, এ, ঐ, ও, ঔ, অ০, অঃ।
বিদ্যাসাগর এই সংখ্যা কমিয়ে ১২তে নামালেন।
তিনি ভূমিকায় লিখলেন:
“বহূকালাবধি বর্ণমালা ষোল স্বর ও চৌত্রিশ ব্যঞ্জন এই পঞ্চাশ অক্ষরে পরিগণিত ছিল। কিন্তু বাঙ্গালা ভাষায় দীর্ঘ ৠ-কার ও দীর্ঘ ৡ-কারের প্রয়োজন নাই। এই নিমিত্ত ঐ দুই বর্ণ পরিত্যক্ত হইয়াছে। আর সবিশেষ অনুধাবন করিয়া দেখিলে অনুস্বার ও বিসর্গ স্বরবর্ণ মধ্যে পরিগণিত হইতে পারে না। এই নিমিত্তে ঐ দুই বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ মধ্যে পঠিত হইয়াছে। আর চন্দ্রবিন্দুকে ব্যঞ্জনবর্ণস্থলে এক স্বতন্ত্র বর্ণ বলিয়া গণনা করা গিয়াছে। “ড, ঢ, য এই তিন ব্যঞ্জনবর্ণ পদের মধ্যে অথবা পদের অন্তে থাকিলে, ড়, ঢ়, য় হয়।”
তখন একটি প্রতিবেদন শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে প্রায় পাঠ্যবইয়ের অভাবের কথা বলা হয়।
১৮৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৬জুন ” সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়” এর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়-
“গর্ভমেন্টের যে কয়টা পাঠশালা আছে -তাহাতে বাংলাভাষার শিক্ষা দিবার শৃঙ্খল মাত্র নাই।”
বিদ্যাসাগরও থেমে নেই।
বিদ্যাসাগর তার মৌলিক সংস্কারের ১২৫ বছর পর স্বরবর্ণে মাত্র আর একটি সংস্কার ঘটিয়েছে, তাহলো ঌ বর্ণটি বাদ দেওয়া। এখন স্বরবর্ণ ১১টি। আর ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল ৩৪টি।
বিদ্যাসাগর তাতে নতুনভাবে ছয়টি বর্ণ যুক্ত করেন। অনুস্বার ও বিসর্গকে স্বরবর্ণ থেকে ব্যঞ্জনবর্ণে নিয়ে এসে চন্দ্রবিন্দুকেও যোগ করে দিলেন।
ড, ঢ, য-এর দ্বিবিধ উচ্চারণের ক্ষেত্রে নিচে ফুটকি বা শুন্য দিয়ে নতুন তিনটি ব্যঞ্জন অক্ষর আবিষ্কার করলেন। তা ছাড়া বিদ্যাসাগর দেখলেন, “বাঙ্গালা ভাষায় একারের ত, ত্ এই দ্বিবিধ কলেবর প্রচলিত আছে।” তাই এটিকেও ব্যঞ্জনবর্ণে যুক্ত করেছেন। আর ক্ষ যেহেতু ক ও ষ মিলে হয় “সুতরাং উহা সংযুক্তবর্ণ, এ জন্য অসংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ গণনাস্থলে পরিত্যক্ত হইয়াছে।”
এভাবে তার হাতে ব্যঞ্জনবর্ণ হলো ৪০টি।
এর মধ্যে স্বরবর্ণ ঌ-এর মতই শুধু অন্তঃস্থ ‘ব’ বর্ণটি বাদ যায়। আর স্বরবর্ণ হয় ১১টি , ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।
এভাবেই পেলাম আমাদের বাংলা বর্ণমালা ।
বিসিএস বাংলা সাহিত্যের জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন এবং জাতিসংঘের ইতিহাস আমাদের ওয়েবসাইট থেকে পড়ে নিন। এই গুলো আপনার যেকোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য খুবই উপকারী। জমির পরিমাপ সম্পর্কে আমাদের ওয়েবসাইটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট দেওয়া আছে এখনই দেখে নিন।