শিক্ষা

বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য – নমুনা ও লেখার নিয়ম

বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেয়ার প্রয়োজন পরে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কর্মক্ষেত্রে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন। কিভাবে আপনার বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় উপস্থাপন করবেন, সে বিষয়ে আজ কথা বলব নমুনাসহ।

প্রথমেই একটি বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য পড়ে নিন।

বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য

উপস্থিত প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিবৃন্দ, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলী এবং অভিভাবক বৃন্দ, আমার সহপাঠী, অগ্রজ এবং প্রিয় অনুজদের জানাই আমার সালাম, আদাব এবং শুভেচ্ছা।

আজকের এই বিদায়ী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। আজকের এই দিনটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটা একই সাথে আনন্দের এবং আমরা যারা বিদায় নিচ্ছি তাদের জন্য অত্যন্ত বেদনারও বটে। বিদায় সাময়িক হোক বা চিরবিদায় হোক, দুটোই বেদনার।

আজ থেকে ৫ বছর আগে এই বিদ্যালয়ের আঙিনায় আমাদের পদচারণ ঘটেছিলো। চোখের পলকে যেন দীর্ঘ পাঁচটা বছর কেটে গেছে। ভাবতেই খারাপ লাগছে এই ক্যাম্পাসের প্রাক্তনদের খাতায় আমরাও নাম লেখাতে যাচ্ছি।

‘যেতে নাহি দেবো হায়
তবু যেতে দিতে হয়
তবু চলে যায়।’

অনন্ত মহাকালের যাত্রায় আমরাও একেকজন পথিক। আমরা সামনে এগিয়ে যাই সময়ের প্রয়োজনে। আর পেছনে ফেলে যাই কত সুখ দুঃখের স্মৃতি। এ বিদ্যালয়েও আমাদের কত শত স্মৃতি রয়েছে। আমরা ছিলাম একটা পরিবারের মতো। আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম না। এ বিদ্যালয় আমাদের শিখিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও অনেক কিছু। এখানে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় প্রতি বছর যা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা আর খেলাধুলারও ব্যবস্থা আছে। তাই তো দূর দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে এসে ভিড় করে। অভিভাবকরা চান এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে তাদের ছেলে মেয়েরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক।

প্রিয় শিক্ষক মন্ডলী, আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়। বিদ্যা শুধু বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এই পুরো পৃথিবীটাই এক বিরাট পাঠশালা এটা আপনাদের কাছ থেকেই শিখেছি। আপনারা যতটা না শাসন করেছেন আমাদের তার চেয়েও বেশি আদর আমরা আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি। নিজের অজান্তে অথবা জেনে শুনে আপনাদের সাথে অনেক বেয়াদবি করেছি। এ জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। নিশ্চয়ই আমাদেরকে নিজের ছেলে মেয়ে মনে করে ক্ষমা করে দিবেন।

প্রিয় অভিভাবক বৃন্দ, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষকদের পাশাপাশি আপনাদেরও অবদান রয়েছে। এ বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের সাফল্য ধরে রাখার পেছনে আপনাদের অবদান অনস্বীকার্য। এ জন্য এ বিদ্যালয় আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

‘কেন বাড়লে বয়স ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়।
কেন হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভিড় হারানোর তালিকায়।’

প্রিয় সহপাঠী বন্ধুগণ, বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ সময়টা তোমাদের সাথে কেটেছে। কতই না আনন্দে কেটেছে সময়গুলো তা বলা বাহুল্য। একজন আরেকজনের বিপদে যেভাবে এগিয়ে এসেছো তোমরা তা কোনদিন ভুলার নও। তবে আজকের বিদায় শেষ বিদায় নয়। আবার আমাদের দেখা হবে কোন এক রৌদ্রজ্বল দিনে ক্যাম্পাসের এ আঙিনায়। আমরা আবার মিলিত হবো অনেক অনেক গল্প নিয়ে। সেদিন হয়তো কৃষ্ণচূড়া আর শিমুল ফুলে ছেয়ে যাবে চারদিক।

প্রিয় অগ্রজ, আপনাদের দিক নির্দেশনা আমাদের বিদ্যালয় জীবনে পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে। আপনাদের কাছ থেকে আমরা যে স্নেহ আর ভালোবাসা পেয়েছি আর বিপদে আপদে যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা কোনদিন ভুলবো না। আমরা আপনাদের ছোট ভাই বোনের মতো। আপনাদের সাথে কোন বেয়াদবি করে থাকলে আমাদের ক্ষমা করে দিবেন।

প্রিয় অনুজ, তোমাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই। শিক্ষকরা আমাদের পরম শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের প্রতি কোন অন্যায় বা বেয়াদবি করবে না। তারা আমাদের গুরুজন। তাদের সাথে বেয়াদবি হয় এমন কোন কাজ করবে না।গুরুজনে শ্রদ্ধা না থাকলে কেউ কখনো উঁচুতে উঠতে পারে না। আজকাল আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষকরা আজ লাঞ্চিত ও নিপীড়িত। শিক্ষার্থীদের নৈতিক স্খলনই এর একমাত্র কারণ। শিক্ষকরা যেন শিক্ষার্থীদের দ্বারা এরকম লাঞ্চিত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।তোমাদের প্রতি আমাদের বড়দের কোন অভিযোগ নেই। জানি, ছোটরা বেয়াদবি করতে পারে না। তারপরও যদি তোমাদের মনে কোন সংশয় থেকে থাকে যে, তোমরা বেয়াদবি করেছো, সেক্ষেত্রে আমি আমার সহপাঠী বন্ধুগণের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আমরা তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। তোমাদের প্রতি কোন অন্যায় করে থাকলে আমাদেরও ক্ষমা করে দিও।

আমি আমার বক্তব্য আর দীর্ঘায়িত করতে চাই না। আজ অশ্রুসিক্ত নয়নে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।আপনারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন অনেক দূর যেতে পারি, প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি। একটা সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

আসসালামু আলাইকুম

আরো পড়ুনঃ পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান a to z, খুটিনাটি প্রশ্নোত্তর 2022

4.8/5 - (91 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button