ই কমার্স বিজনেস প্ল্যান
ই কমার্স বিজনেস প্ল্যান – Covid-19 বা করোনা ভাইরাস এর জন্য বর্তমান সময়ে সকল অফলাইন পরিচালিত ব্যাবসার খুব খারাপ অবস্থা চলছে। এক্ষেত্রে যদি অনলাইনের ব্যাবসা গুলোর কথা বলি তাহলে ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা যায়।
দেখা যাচ্ছে অফলাইন থেকে অনলাইন ব্যবসা করার মাধ্যমটি বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়ে উঠেছে।
Covid 19 এর পরও E-commerce Business গুলোর চাহিদা থাকবে প্রচুর। কেননা এখন মানুষ বাড়িতে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে টিভি, ফ্রিজ, যেকোনো খাবার, কসমেটিক সামগ্রী, এমনকি বাড়ি গাড়ি পর্যন্ত কিনে নিতে পারছে।
যার ফলে মানুষের আর কষ্ট করে বহু দূর গিয়ে কিছু কিনতে হচ্ছে না, শুধুমাত্র নিজের মন মতো যেকোনো প্রোডাক্ট অর্ডার করে দিলেই সেটি নিজের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
বিশ্বের সকল দেশে Online E-commerce Business এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর যেহেতু ইন্টারনেট এর ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে, সেহেতু অনলাইন ব্যবসার জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান ব্যবসায়ীরা অনলাইনের ই-কমার্স ব্যবসার দিকে অনেকটাই ঝুঁকে পড়েছেন। তবে আপনি যদি ব্যবসা করবেন ভাবছেন তবে আপনার জন্য সবচেয়ে সেরা অপসন হবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করা।
আজকের আর্টিকেলে আমরা ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
শুরুতে জেনে নেওয়া যাক, ই-কমার্স ব্যাবসা কি? (What is E-commerce Business?)
“E-commerce” এর পুরো অর্থ হচ্ছে ‘Electronic commerce‘ অথবা ‘Internet commerce’.
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইন্টারনেটে যেকোনো পণ্য কেনা বেচা করার প্রক্রিয়াকে ই-কমার্স ব্যাবসা বলা হয়।
অর্থাৎ এই ব্যাবসায়ের ক্ষেত্রে কাস্টমার ঘরে বসেই তার কাঙ্খিত প্রোডাক্ট বা সার্ভিস অর্ডার করতে পারবে, এবং অর্ডার করা প্রোডাক্টটিও কাস্টমারের কাছে বিক্রেতা পৌঁছে দিবে সরাসরি।
এমনিতে অনলাইনে যেকোনো ব্যাবসায়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বপ্রথম সঠিক মার্কেটিং বা প্রচার এর কৌশল জানতে হবে। মার্কেটিং পলিসি এবং কৌশল জানলে আপনি সহজেই প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন।
এজন্য আমি আপনাদের বলবো যদি আপনি নতুন হোন এবং আপনার মার্কেটিং নিয়ে কোনো আইডিয়া নেই সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে মার্কেটিং কিভাবে করতে হয় সেটি জানুন।
কোন বিজনেস niche বেছে নিবেন সেটি সম্পর্কে প্রথমে অনেকের মাথায় প্রশ্ন থাকে। যেকোনো Business এর শুরুতে যে বিষয়টি ভাবতে হবে সেটি হচ্ছে Perfect Niche Selection, অর্থাৎ আপনি কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন সেটা আপনাকে প্রথমে বেছে নিতে হবে।
নিচে আমি আপনাদের কয়েকটি ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান সম্পর্কে বলছি, যেগুলোর চাহিদা সময়ের সাথে সাথে অনেকটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে চলুন কয়েকটি সেরা ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সেরা কিছু ই কমার্স বিজনেস প্ল্যানঃ
(Best E-commerce Business Ideas)
১.কম্পিউটার ও ল্যাপটপ
একটা সময় ছিল যখন মানুষ অনলাইন থেকে বেশি দামের কিছু কিনতে ভয় করত। তবে এখন আর সেই সময় নেই। বর্তমান দিনে অনলাইনের মাধ্যমে অনেক ক্রেতা আছেন যারা ল্যাপটপ, কম্পিউটার ক্রয় করে থাকছেন।
আর অনলাইন ই-কমার্স মার্কেটে এমন অসংখ্য প্লাটফর্ম পাবেন যারা বিভিন্ন ব্র্যান্ড এর ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি বিক্রি করছে।
তাই অনলাইন ব্যাবসায় শুরু করার ক্ষেত্রে যদি আপনার ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার নিয়ে ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার নিয়ে একটি ই-কমার্স বিজনেস দার করাতে পারেন।
ল্যাপটপ, কম্পিউটার বললাম বলে যে শুধুমাত্র ল্যাপটপ আর কম্পিউটার বিক্রি করবেন সেটা কিন্তু না, এখানে আপনি ল্যাপটপ, কম্পিউটার এর বিভিন্ন পার্টস কিংবা যন্ত্রাংশ বিক্রি করতে পারেন।
আর একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, electric product কিন্তু অকেজো হয় না, এটি বিক্রি হবেই।
২. কাপড়ের ব্যাবসা
অনলাইনে ব্যাবসার ক্ষেত্রে কাপড়ের ব্যাবসা অধিক লাভজনক বলে আমি মনে করি। কাপড় কিন্তু আমরা সকলেই কিনে থাকি। কাপড় কিনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের একটি টি-শার্ট কিনতে গেলে দাম ঠিক থাকলে কালার মিলে না কিংবা পছন্দ হয় না, আবার দেখা যায় পছন্দ হচ্ছে তবে দামের সমস্যা।
তবে এই সমস্যা দূর করেছে অনলাইন, অনলাইনে আপনি আপনার যেকোনো পছন্দের কাপড় খুঁজে নিতে পারেন আপনার বাজেট অনুযায়ী। ফলে একজন ক্রেতাকে আর বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘুরে কাপড় কেনার দরকার হয় না।
তাহলে বুঝতেই পারছেন কাপড়ের ব্যাবসায় অবশ্যই লাভজনক। এই ব্যাবসার চাহিদা যেমন বর্তমানে আছে তেমনি ভবিষ্যতে আরও বেশি চাহিদা বাড়তে থাকবে।
৩.কসমেটিকস ও জুয়েলারি
আগে মেয়েরা কসমেটিকস এবং জুয়েলারি কিনতে বিভিন্ন দোকানে ঘুরতো। কিন্তু বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে জুয়েলারি এবং কসমেটিকস সামগ্রী কেনা বেচার চাহিদা বাড়ছে।
আর তাই আপনিও চাইলে Cosmetics এবং বিভিন্ন জুয়েলারি প্রোডাক্ট নিয়ে একটি E-commerce Website বানাতে পারেন।
৪.অনলাইন লার্নিং সাইট
বর্তমানে Online Learning প্রক্রিয়াটি অধিক প্রচলিত। এখন প্রায় সকল অভিভাবকরা চায় যে তাদের ছেলে মেয়েরা যেনো সকল কিছু অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে শিখুক।
আর তাই আপনি চাইলে একটি অনলাইনে লার্নিং সাইট খুলতে পারেন। এখানে আপনি টিউশন এর জন্য আলাদা শিক্ষক রাখতে পারেন।
এইধরনের লার্নিং সাইটগুলোতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী যাওয়া যায়। আর যত বেশি ছাত্র ছাত্রী আপনার সাইটে শিখতে আসবে আপনি তত আয় করতে পারবেন। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরাও ভালো কিছু শিখতে পারবে।
এছাড়াও আপনি শিক্ষা বিষয়ে নানান ক্লাস কোর্স হিসেবে বানিয়ে আপনার ইকমার্স সাইট দ্বারা সেটিকে অনেকের কাছে বিক্রি করতে পারেন।
বর্তমানে Online Class এর অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে, যার ফলে আপনি আপনার সাইটে ছাত্র ছাত্রীদের লাইভ ক্লাসের ব্যাবস্থা করে দিতে পারেন।
এইভাবে আপনি লার্নিং সাইট বানিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের উপকারের পাশাপাশি নিজেও আয় করতে পারবেন।
৫.খাবার সামগ্রী বিক্রি
বর্তমানে মানুষেরা ঘরে বসে থেকে তাদের পছন্দের যেকোনো রেসিপি বা খাবার অর্ডার করছে অনলাইনে। হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন।
অনলাইনে অনেক ধরনের ই-কমার্স আছে, যারা অনলাইনের মাধ্যমে কাস্টমারদের মাঝে বিভিন্ন ফুড বিক্রি করে থাকে।
এটি বর্তমানে অনেক লাভজনক হয়ে উঠেছে। কেননা আমাদের আসে পাশে এমনিতে অনেক ধরনের খাবার রেস্টুরেন্ট ও হোটেল থাকে, যার ফলে আমরা যদি সরাসরি দোকান দিয়ে খাবার বিক্রি করতে চাই তাহলে খুব একটা লাভ হয় না।
কিন্তু অনলাইনে যদি আপনি একটি সাইটের মাধ্যমে ফুড বিক্রি ব্যাবস্থা করেন তাহলে লোকেরা খুব সহজে ঘরে বসে যেকোনো ফুড অর্ডার করতে পারবে।
৬. ইলেক্ট্রনিক প্রোডাক্ট বিক্রি
ছোটখাটো অনেক ধরনের ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট আছে যেগুলো কেনার জন্য লোকেদের দোকানে যেতে হয়। যদি আপনি একটি ই-কমার্স সাইট বানিয়ে সেখানে ছোটখাটো ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট বিক্রি শুরু করেন, তাহলে আপনার ক্ষতি হবে না বরং লাভ হবে।
বর্তমান সময়ে অনলাইনের মাধ্যমেই লোকেরা ইলেক্ট্রনিক বিভিন্ন পার্টস কিনছে। আর আমি আপনাদের আগেই বলেছি ইলেকট্রনিক পণ্য কখনো অকেজো হয়ে পড়ে না, তাই ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে না এখানে।
৭. স্মার্ট ঘড়ি/ স্মার্ট ওয়াচ বিক্রি
বর্তমান সময়ে স্মার্ট ওয়াচ এর চাহিদা অনেক বেশি রয়েছে। তাই আপনি চাইলে একটি সাইট বানিয়ে সেটির মাধ্যমে স্মার্টওয়াচ বিক্রি করতে পারেন।
কারণ লোকেরা স্মার্টওয়াচ গুলো সাধারণত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিনে থাকে। যার জন্য স্মার্ট ওয়াচ ব্যবসাটিও কোনো দিক দিয়ে খারাপ নয়।
এছাড়াও আরো অনেক ধরনের লাভজনক ই-কমার্স ব্যাবসা টপিক রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি বিজনেস করতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে লাভজনক ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান গুলো সম্পর্কে জানতে পারলাম।
E-commerce Business এর ক্ষেত্রে যেটি অনেক গুরত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে মার্কেটিং বা প্রচার। ধরুন আপনি একটি লাভজনক টপিক বেছে নিয়ে একটি E-commerce Site বানালেন।
তাহলে আপনি যদি মার্কেটিংয়ের সঠিক কৌশল এই না জানেন তাহলে কিভাবে আপনি আপনার প্রোডাক্টের প্রচার করবেন মানুষের কাছে? আর প্রচার না করলে আপনার প্রোডাক্ট কিনবে কারা?
তাই সঠিক মার্কেটিং পলিসি সম্পর্কে জেনে এই ব্যাবসা করলে অধিক লাভবান হতে পারবেন।
আর্টিকেলটা ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। যেকোন প্রশ্ন কিংবা মতামত অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ