স্কিন কেয়ার

মেছতা দূর করার উপায়

মেছতা দূর করার উপায়ঃ মুখের মেছতা পড়ার সমস্যায় বর্তমানে কমবেশি অনেকেই ভুগে থাকেন। আমাদের মুখে যখন মেছতা পড়ে তখন আমরা আয়নার সামনে গেলে আমাদের নিজের মুখ দেখে নিজেরই খারাপ লাগে।

নিজের ত্বক নিখুঁত এবং সুন্দর করার জন্য আমরা মেয়েরা কত কিছুই না করে থাকি। কিন্তু তারপরও যেন আমাদের মুখের মেছতা দাগ কোন ভাবে যেতে চায় না মাঝে মধ্যে মুখে মেছতা চলে আসে।

আমাদের আশপাশে এই মুখে মেছতার দাগ নিয়ে ভুগছেন অনেক মহিলাই আছেন। তারা সবাই বলে থাকেন এই মেছতা দূর করার উপায় জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি কিন্তু আমাদের কোনো প্রতিকার মেলেনি।

আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব কিভাবে আপনারা আপনাদের মুখের মেছতার দাগ দূর করবেন সেই বিষয় নিয়ে। এর জন্য অবশ্যই আমাদের এই পোস্টটি আপনাদেরকে বিস্তারিত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবেঃ

মেছতা কি

মেছতা চিনেন না বা আপনার এলাকায় আশেপাশে কেউ মেছতা সমস্যায় ভুগছেন না এমন লোক হয়তো এখন পাওয়া যাবে না। মেছতা হলো সাধারণত ছোট ছোট বাদামি রঙের ছোপ বা দাগ যা বেশিরভাগ সময় মুখের ত্বকে হাতের বাহুতে বা আমাদের অনেকের ঘাড়ে বা পিঠে দেখা যায়।

সহজ কথায় যদি আমি আপনাদেরকে বলতে চাই তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন যে শরীরের যেসব স্থানে সাধারণত সূর্যের সংস্পর্শ থেকে থাকে সেসব জায়গায় মেছতার দাগ দেখা যায়।

মেছতার দাগ কেন হয়

সূর্যের এক ধরনের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি শরীরে মেলানিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। তাই সাধারণত আমরা যখন বেশিক্ষণ রোদে থাকি, শরীরের কিছু কিছু অংশের ত্বকে মেলানিন বেড়ে যায় যার ফলে স্থানের রং অনেকটা গাঢ় হয়ে যায়।

আপনি যদি মেছতার চিকিৎসা করে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন এটি পুরোপুরি ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। তবে আপনি চাইলে ঘরোয়া কিছু পরিচর্যার মাধ্যমে মেছতার দাগ ধীরে ধীরে অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন। তাহলে চলুন এবার দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক মুখের অবাঞ্ছিত মেছতার দাগ আপনারা তুলবেন কিভাবে সেই সম্পর্কেঃ

মেছতা দূর করার উপায়

(১)অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার

আপনাকে এক চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে সাথে সমপরিমাণ মধু এই দুইটা একসাথে ভালোভাবে খুব সুন্দর করে মিশিয়ে নিতে হবে।

তারপর মিশ্রণটি মিক্স করা হয়ে গেলে এবার আক্রান্ত স্থানে এটি সুন্দর করে ম্যাসেজ করতে হবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট।

তারপর আপনি এটা হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। আপনি যদি শুধুমাত্র এই প্যাকটি মেছতায় লাগান তাহলে প্রতিদিনই ব্যবহার করতে পারেন।

আর যদি মনে করেন যে পুরো মুখেই আমি এই প্যাকটা লাগাবো তাহলে আপনি একদিন পরপর ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার মুখের ত্বকের জন্য খুবই ভালো হয়।

২.অ্যালোভেরা

আপনাকে এর জন্য শুধুমাত্র অ্যালোভেরার একটি ডালই যথেষ্ট। অ্যালোভেরার একটি পাতা নিয়ে আপনি তার রস বের করে আক্রান্ত স্থানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট খুব সুন্দর করে মাসাজ করতে হবে।

তারপর আপনাকে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনি চাইলে অ্যালোভেরার জেল মেছতা আক্রান্ত স্থানে সারারাত লাগিয়ে রাখতে পারেন।

অ্যালোভেরা জেল মূলত ডার্ক সেলের ডিপিগমেন্টেশন করে মেছতার দাগ অনেকাংশে কমিয়ে থাকে।

৩.কলার খোসা

মেছতা দূর করার উপায়

মেছতার দাগ দূর করার জন্য কলার খোসা হচ্ছে আরেকটি কার্যকরী উপাদান। আপনাকে এর জন্য কলার খোসার ভেতরের দিকটা নিয়ে মেছতা আক্রান্ত স্থানে তিন থেকে চার মিনিট ঘষতে হবে।

এতে করে কলার খোসায় যে উপাদানগুলো থাকবে তা আপনার ত্বক শুষে নিতে পারবে। আপনি প্রতিদিন একবার করে এই প্যাক টি ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বক ফর্সা করতে এবং বয়সের ছাপ দূর করার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাছাড়া কলার খোসা তে গ্লুকোনোল্যাক্টোন নামক এক ধরনের উপাদান পাওয়া যায়।

৪.আমন্ড অয়েল

মেছতা দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে এটিও একটি কার্যকরী উপাদান। প্রথমে আপনাকে অল্প আমন্ড অয়েল গরম করে নিতে হবে।

তারপর দুই থেকে তিন ফোঁটা আমন্ড অয়েল আঙ্গুলে নিয়ে মেছতা আক্রান্ত স্থানে দুই থেকে চার মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে।

সাধারণত প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসাবে কাজ করে থাকে এবং মেছতার দাগ দূর করে থাকে। তাছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এর মত উপাদান যা ত্বককে ভেতর থেকে অনেকটা নারিশ করে তোলে।

৫.লেবুর রস

মেছতা দূর করতে লেবুর রস ও গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। প্রথমে আপনাকে লেবুর রসের সাথে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে তা পাতলা করে নিতে হবে।

তারপর এই মিশ্রণটি মেছতার দাগে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। আপনারা চাইলে প্রতিদিন এই প্যাক টি ব্যবহার করতে পারেন।

তবে যাঁদের ত্বক অনেকটা সেনসিটিভ তারা একদিন পরপর ব্যবহার করবেন এতে করে আপনাদের ত্বকের জন্য ভালো হবে। লেবুর রস মূলত প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসেবে কাজ করে ত্বকের নানা ধরনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

৬.টমেটোর রস

প্রথমে একটি ছোট টমেটো নিয়ে ভালোভাবে ম্যাশ করে নিতে হবে। তারপর ম্যাচড করা টমেটো আপনার মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

তারপর আপনাকে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনি চাইলে এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি ত্বকের টাইরোসিনেজের এক্টিভিটি কমায় ও ত্বককে ফর্সা করে।

৭.টক দই

প্রথমে আপনাকে ১ টেবিল চামচ টক দই ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি মাক্স তৈরি করে নিতে হবে। এবার সেটি মেছতার দাগে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

তারপর ১০ মিনিট হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি লাগিয়ে স্থানটি খুবই সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনারা চাইলে এটি প্রতিদিন একবার করে ব্যবহার করতে পারেন এতে করে খুবই ভালো হয়।

আপনার মেছতার দাগ দূর করে ত্বক ফর্সা করার জন্য খুবই পারফেক্ট কম্বিনেশন হলো টক দই ও মধু। আপনারা এই প্যাকটি ব্যবহার করলে অবশ্যই উপকার পাবেন।

৮.পেঁয়াজের রস

প্রথমে এর জন্য আপনাকে ছোট একটি পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর সেই রসের সাথে এক চা-চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মেশাতে হবে।

তারপর এই মিশ্রণটি মেছতার ওপর লাগিয়ে আপনাকে ৩-৪ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর গরম বা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ভাল রেজাল্ট পেতে হলে এই প্যাকটি প্রতিদিন মেছতার ওপর লাগাতে হবে।

আপনি সাধারণত এই পদ্ধতি অবলম্বন করে মেছতা ও বর্ণের যেকোনো দাগ খুব সহজেই আপনার মুখ থেকে দূর করতে পারবেন খুব তাড়াতাড়ি।

মেছতা দূর করতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন

১.রোদ থেকে দূরে থাকতে হবে

২.সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে

৩.ত্বক ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে

৪.প্রতিদিন এক্সফোলিয়েট করুন

৫.ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে কেননা মেছতার দাগ অনেক সময় ঠোঁটেও পড়ে।

আপনারা যদি উপরোক্ত উপাদান গুলো ব্যবহার করার সাথে সাথে এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার মেছতার দাগ ধীরে ধীরে উঠতে থাকবে।

আমাদের শেষ কথা

আপনারা উপরোক্ত নিয়মগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই মেছতার দাগ আপনাদের পক্ষ থেকে ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে পারবেন। আমি আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মেছতার দাগ দূর করার সেরা উপায় গুলো সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি।

তার পরেও এই বিষয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থেকে থাকে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (21 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button