স্বাস্থ্য

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং রুপচর্চায় এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে।

লেবু আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ফল। বাঙালিদের দুপুর এবং রাতের খাবার সুস্বাদু করতে যে ফলটি পরিপূরক ভূমিকা পালন করে সেটি হলো লেবু। বাঙালিদের প্রধান খাবার ভাতের সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস স্বাদ বাড়ানোর কাজ করে জোরেসোরে। এটি অতি সাধারণ একটি ফল। কিন্তু এর উপকারিতা অসাধারণ। 

Contents

লেবুর পুষ্টি উপাদান 

পৃথিবীর সব লেবুই সাইট্রাস ফলের অন্তর্ভুক্ত। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড।

এছাড়াও লেবুতে পলিফেনলস, টের্পেনস এবং ট্যানিন সহ অসংখ্য ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। এতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি-ভাইরাল গুনাগুন যা  বিভিন্ন রোগব্যাধি  প্রতিকার ও প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা পালন করে। এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এলিমেন্ট ওষুধি গুনাগুন বহন করে।

লেবুর উপকারিতা 

১. উচ্চ রক্তচাপ কমায় 

লেবুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি আর পটাশিয়াম এবং লেবু সাইট্রাস পরিবারভুক্ত। এতে আরো কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা শরীরের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং লেবুতে বিদ্যমান পটাশিয়াম হৃদপিন্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

২.মানসিক চাপ কমায় 

লেবুর রসে ভিটামিন সি রয়েছে যা মানুষের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। মানসিক বিষণ্নতায় শরীরবৃত্তীয় কারণে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দেয় এবং  লেবুর রস সেটি পূরণ করে নিমিষেই। ফলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।

৩. ওজন কমাতে সাহায্য করে 

ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা অপরিসীম আমরা কমবেশি সবাই জানি যে লেবুর রস ওজন কমাতে কতটা কার্যকরী। আমরা দৈনিন্দন জীবনে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণে খাই। এবং এ তুলনায় দেখা যায় আমাদের পরিশ্রম এর পরিমাণ অনেক কম। যার ফলে শরীরে মেদ জমতে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবুর রস একটু কুসুম গরম পানিতে মধুর সাথে মিক্স করে খেলে পেটের চর্বি দূর হয়। এবং লেবুতে বিদ্যমান পেকটিন, খাদ্যআঁশ ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ এ ভূমিকা পালন করে থাকে, যার ফলে শরীরের ওজন দ্রুত গতিতে কমতে থাকে।

৪. কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এই লেবু। এটি শরীরের উপকারী কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৫.রক্তশুন্যতা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে

আমাদের দৈনন্দিন খাবারে খাবার লোহা বা আয়রন থাকে, যা শোষণের জন্য ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয় এবং খাবারের সঙ্গে লেবু সেবন করলে তা দ্রুত খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে এবং শরীরে রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া প্রতিরোধ করে থাকে।

৬. ক্যান্সার দূর করে

আমরা সবাই জানি ভিটামিন সি শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এবং গবেষণায় দেখা গেছে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং পুষ্টি উপাদান সমূহ ক্যান্সারের ক্ষতিকারক কোষ ধ্বংস করে যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

৭.কালচে ভাব দূর করতে

অনেক সময় আমাদের ঘাড়, গলায় বা শরীরের নানা জায়গায় কালো দাগ পড়ে যায়। অনেক সময় শরীরে মরা চামড়া ও জমতে থাকে। সেসব জায়গায় লেবু দিয়ে ঘসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে স্থান ধুয়ে মধু মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে পুনরায়  ধুয়ে নিন। এই প্রক্রিয়ায় সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ বার করলে  দারুণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

৮.পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে

পেটের যেকোনো সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য আমাদেরকে অনেক অসুস্থ করে ফেলে। শরীরের অস্বস্তি ভাব কমাতে একটি লেবু অল্প কিছু লবণ এর সাথে মিশিয়ে খেলে আরাম বোধ হতে পারে।

১১.ক্ষত সারাতে সহায়তা করে 

লেবুর উচ্চ ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা ভাইরাস জনিস ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। সর্দি, কাশি, ঠান্ডা বা ভাইরাস জনিত ক্ষত সারাতে সহায়তা করে।

১২.গলার সংক্রমণ রোধ করে 

লেবুর রসে আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এক অনন্য বৈশিষ্ট্য, যার ফলে গলাব্যথা, মুখের ঘা আর টনসিলের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে লেবু।

১৩. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে

লেবুতে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী এলিমেন্টস থাকায় তা মাড়ির ব্যাথা, দাতের সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ অনেকটাই দূর করে।

১৪. সুস্থ দাতের জন্য লেবু 

তাজা লেবুর রস দাতের ব্যাথা উপশমে,মাড়ি ব্যাথায়,মাড়ি ফোলার ব্যাথা থেকে শুরু করে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতেও সাহায্য করে। অনেকের দাত প্লাক জমার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ পড়ে যায়। লেবুর রস সেই দাগ নিরসনে ও সহায়তা করে।

১৫. চুলে লেবুর ব্যবহার 

অনেকের চুলে খুশকি হয়, স্কাল্পে ক্ষত হয়, স্কাল্পে রেগুলার লেবু দিয়ে মাসাজ করে তারপর শ্যাম্পু করলে খুশকি দূর হয়। এবং চুলে কোনো ক্ষত থাকলে তাও দূরীভূত হয়।চুলে কোনো ক্ষত বা ফাংগাল সম্পর্কিত সমস্যা হয়না।

১৬. ব্রন দূর করতে লেবু

সরাসরি লেবু মুখের ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি অনেক ক্ষারীয় পদার্থ যার দরুন অনেকের কিছু বিশেষ সাইডএফেক্ট হতে পারে। কিন্তু ব্রণ দূর করতে এই লেবুর রস অনেক ভালো কাজ করে। লেবুর ১-২ ফোটা রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে মুখে যেসব জায়গায় ব্রণ রয়েছে সেই জায়গাগুলোতে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং প্যাকটি লাগানোর সময় ব্রনে আঙ্গুল দিয়ে ঘষবেন না বরং আলতো করে প্যাকটি সেই নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে দিবেন। ১৫ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন। এই প্যাক আপনার ত্বকে বিদ্যমান ব্রন কে ছোট করবে এবং ব্রণের দাগ হতে দিবেনা।

১৭. ঠোঁটের সৌন্দর্য বর্ধনে

আমাদের ত্বকের মতো ঠোঁটে ও ডেডসেল জমে।এই ডেডসেল রিমুভ এর জন্য লেবুর ছোট একটি টুকরো কেটে হালকা ভাবে ঠোঁটে ঠলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর ঠোটে ১০ মিনিট এর মতো মধুর লেপ লাগিয়ে রাখুন। এরকম সপ্তাহে ১-২দিন করে করুন। ঠোঁট গোলাপি রাখতে এই পদ্ধতি অনেক ভালো কার্যকরী হবে।

১৮. নখ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে

এক টুকরো ছোট লেবুর টুকরো দিয়ে ঘসে নখে থাকা ময়লা এবং মরা চামড়া দূর করে নখ কে একদম পরিষ্কার এবং গোলাপি বর্নের করা সম্ভব। 

বাতাবি লেবুর উপকারিতা 

বাতাবি লেবু যাকে আমরা জাম্বুরা বলে চিনি। এটি একটি অন্যতম জনপ্রিয় টক-মিষ্টি জাতীয় মৌসুমি ফল।

এটি ১৫-২০ সে.মি. ব্যস বিশিষ্ট এবং প্রায় ১-২ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। সবজাতীয় লেবুর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি বড়।

এই ফলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুন।

বাতাবি লেবুতে রয়েছে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার বা আশ, ফ্যাট, প্রোটিন এবং চিনি।

১. এই ফল ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।

বাতাবি লেবুতে রয়েছে বায়োফ্যাভোনয়েড যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।অতিরিক্ত  ইস্ট্রোজেন থেকে শরিরকে মুক্ত রাখার  ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় বাতাবি লেবুর ভূমিকা রেখে থাকে। প্রোস্টেইট  ক্যান্সার প্রতিরোধে বাতাবি লেবু কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

২. হজম সমস্যায় কার্যকরী 

অম্ল জাতীয় হবার কারণে খাদ্য পরিপাকে বাতাবি লেবু অত্যন্ত সহায়ক। খাদ্য পাচিত হওয়ার পর বাতাবি লেবুর রস অ্যালকালাইন রিএকশন তৈরি করে হজমে সহায়তা করে।

৩. হৃদ রোগের জন্য উপকারী

বাতাবি লেবুতে আছে যথেষ্ট পরিমান পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি। ফলে বাতাবিলেবু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। নিয়মিত রক্তচাপ হৃদরোগের জন্য উপকারী।বাতাবি লেবু রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

৪.  রক্ত পরিষ্কারক

বাতাবি লেবুতে বিদ্যমান পেকটিন ধমনীর রক্তের দূষিত পদার্থ জমা হতে বাধা দেয় এবং দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। বাতাবি লেবুর রস রক্তের লোহিত কণিকাকে টক্সিন ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।

৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে

বাতাবি লেবুতে রয়েছে fat-burning এনজাইম যা শ্বেতসার এবং সুগার শোষণ করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

৬.  ত্বকের সতেজতা ধরে রাখে

অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকার কারণে ধমনীর ইলাস্টিক অবস্থা ও দৃঢ়তা রক্ষায় ও বাতাবি লেবু অত্যন্ত কার্যকর। আর ত্বকের যত্নেও এটি উপকারী কারণ এটি ত্বককে সতেজ রাখে। ত্বকে সহজে ফাইন লাইন আসতে দেয় না। এই লেবুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

৭. দাঁত ও মাড়ির রোগে উপকারী

বাতাবি লেবুর পাতা ব্যবহার করা হয় দাঁতের যত্নে। বাতাবি লেবুর রস মাড়ির নানা সমস্যার জন্যও  উপকারী।

কাগজি লেবু বা পাতি লেবুর উপকারিতা 

যাদের সর্দিকাশির সমস্যা রয়েছে তারা গরম পানিতে এই লেবুর রস মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাবেন।

কাগজি লেবু বা পাতি লেবুতে থাকা ভিটামিন সি দাঁতের মাড়ি, মুখের আশেপাশে থাকা ক্ষত সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।

প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে খালি পেটে লেবুর রস খেলে লিভার বা পিত্ত থলির সমস্যা দূর হয়।

এই লেবুও আমাদের ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে থাকে।

পেটের সমস্যার সমাধানে লেবু কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।ডায়রিয়া, বদ হজম, কিংবা  কোষ্ঠকাঠিন্য এসব সমস্যায় লেবুর একগ্লাস পানি নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এটি পেট পরিষ্কার করতে অনেক সাহায্য করে।

ফুসফুসের জন্যও এই লেবু অনেক ভালো কাজ করে। ত্বকের সমস্যা, রক্তের নানা জটিলতা দূর করতেও এই লেবু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

লেবুর খোসা খাওয়ার উপকারিতা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে লেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন এর চেয়ে প্রায় ৫-১০ গুন বেশি পরিমাণ ভিটামিন থাকে লেবুর খোসায়।লেবুর খোসায় রয়েছে বেটা-ক্যারোটিন, পোলেট, ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

১. লেবুর খোসা ক্যান্সার কোষের জীবাণু ধংস করে।

২. লেবুর খোসা নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাল ইনফেকশন থেকে বাচা যায়।

৩. লেবুর খোসা নিয়মিত সেবনে শরীরে ব্লাড সার্কুলেশন অনেক বেড়ে যায় এবং শরীরের প্রতিটি জায়গায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত প্রবাহ হয়।যার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৪. লেবুর খোসা শরীরে সাইট্রিক এসিড এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ফলে কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা একদম ক্ষীণ হয়ে যায়।

৫. লেবুর খোসায় বিদ্যমান পেকটিন নামক উপাদান মানুষের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জড়াতে সাহায্য করে যা ওজন কমার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

৬.নিয়মিত লেবুর খোসা সেবনের ফলে শরীরে এন্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং টক্সিন পদার্থ পাকস্থলী থেকে সহজে বের হয়ে যেতে পারে যা পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৭.  নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়ার ফলে এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।এবং ভবিষ্যতে ও হাড়ের গঠন এবং কার্যকারিতা জনিত সমস্যা নিরসনে সাহায্য করে থাকে।

৮. লেবুর খোসায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক উজ্জল করতে এবং ত্বকে বিদ্যমান বলিরেখা দূর  করতে সহায়তা করে।

লেবুর খোসার ব্যবহার 

ঘরের পোকামাকড় এবং পিপড়া দূর করতে লেবুর খোসা বিশেষ কার্যকরী। লেবুর খোসা ঘরের চারপাশে এবং বিভিন্ন ফার্নিচারের নিচে দিয়ে রাখলে সেখানে পোকামাকড়, পিপড়া জমতে পারে না। 

ঘরের স্যাঁতসেঁতে ভাব বা আশটে গন্ধ দূর করার জন্য লেবুর খোসা ব্যবহার করা যায়। এর জন্য একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে কিছু দারচিনি মিশিয়ে তার সঙ্গে লেবুর খোসা সহ ৫ থেকে ৬ মিনিট তা সিদ্ধ করে নিন। মিশ্রণ টি ছেকে একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন এবং আপনার ঘরের চারপাশে ছিটিয়ে দিন। তাজা লেবুর গন্ধ আপনার ঘরের আশটে গন্ধ দূর করবে এর পাশাপাশি এয়ার ফ্রেশনার হিসেবেও কাজ করবে।

অনেক সময় আমাদের কাপড়ে ঘামের দাম লেগে কিছু কিছু জায়গায় হলদেটে ভাব চলে আসে। এই হলদে ভাব দূর করার জন্য একটি লেবুর রস অর্ধেক ব্যবহার করার পর এর খোসাটি দিয়ে সেই স্থান ঘসে সেখানে অল্প কিছু বেকিং সোডা মিশিয়ে সারারাত রেখে দিলে হলদে ভাব কমে যায়। একই কাজ করা যায় কারো কাপড়ে যদি চর্বি বা তেল লেগে থাকে তখন। এর জন্য শুধুমাত্র অর্ধেকটি লেবুই যথেষ্ট। কোনো বেকিং সোডার ও প্রয়োজন নেই।

চায়ের কেটলি বা পেয়ালায় চা খেতে খেতে অনেক টা দাগ হয়ে যায়।আমাদের রেগুলার খাবারের থালা বাসন ও অনেক সময় হলদেটে হয়ে যায়। সেইসব দাগ দূর করতেও সহায়তা করে লেবুর খোসা।এর জন্য একই পদ্ধতিতে লেবুর খোসা সিদ্ধ করে খোসা সহই মিশ্রণটি সেই পাত্রে ১ঘন্টা রেখে দিন। এরপর সেই জায়গাটি খানিকক্ষণ ঘসে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে চা বা কফির দাগ পরিষ্কার করা সম্ভব। 

ব্রণ দূর করতে লেবুর খোসা থেকে তৈরি করা মিশ্রণ আপনারা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন হবে এক কাপ পানি এবং লেবুর খোসা। এই এক কাপ পানিতে লেবুর খোসা সিদ্ধ করে তা ঠাণ্ডা হবার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন এবং এটি মুখ ধোয়ার সময় ব্যবহার করুন। যেহেতু লেবুর খোসায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল, anti-inflammatory উপাদান সেহেতু এগুলো  আপনার ব্রণ দূর করতে সাহায্য করবে।

লেবুর রসের এবং শরবতের উপকারিতা 

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে  কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে ১ গ্লাস শরবত বানিয়ে পান করুন। এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এই  পদ্ধতিতে ১মাস লেবুর রস পান করলে তা ওজন হ্রাসে সহায়তা করবে।

 নিয়মিত লেবুর রস এবং মানুষকে মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা থেকে অনেকটা মুক্ত করে। লেবুর রস পরিপাকনালীতে প্রবেশ করে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরে ফুরফুরা ভাব নিয়ে আসে যা মানুষের  মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।

লেবুর রস কিডনি এবং লিভার পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। যেহেতু লেবুতে অধিক পরিমাণে সাইট্রিক এসিড আছে তাই লেবুর রস কিডনিতে ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’ নামক এক ধরনের ক্ষতিকর পাথর গঠনে বাধা দেয়। 

লেবু কোলন, পিত্তথলি ও লিভার থেকে বজ্য পরিষ্কারের সাহায্য করে তাছাড়া খাদ্য হজম, মূত্রথলীর সংক্রমণ প্রতিরোধে নানাবিধ উপকার করে থাকে।

লেবু ক্যান্সার প্রতিরোধ ও শরীরের পিএইচ এর সমন্বয় গঠন করে। মানব দেহ সুস্থ থাকার জন্য শরীরের পিএইচ অর্থাৎ পাওয়ার অব হাইড্রোজেন স্কেল হল ৭, যা ১ থেকে ১৪ এর মধ্যে ওঠানামা করে। লেবু পানে একজন ব্যক্তির শরীরের ক্ষার ৭ এর মধ্যে থাকায় তা ক্যান্সার প্রতিরোধ সহ নানাবিদ রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

মধু ও লেবুর রসের উপকারিতা 

লেবু ও মধুর পানি একটি ডিটক্স ওয়াটার যা আমাদের শরীরের টক্সিন জাতীয় পদার্থগুলোকে দূর করতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত টক্সিন জাতীয় পদার্থ গুলো যখন শরীর থেকে বের হয়ে যায় তা আমাদের ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করে সুতরাং বলা যায় লেবু এবং মধু মিশ্রিত পানি আমাদের শরীরের ওজন কমাতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে।

কিন্তু অবশ্যই  নিয়মিত ডায়েট মেনে এই পানীয় পান করতে হবে তাহলেই শরীরের ওজন কমানো সম্ভব।

আমাদের শরীরের কোথাও ক্ষত থাকলে লেবু এবং 

মধুর মিশ্রিত পানি সেই ক্ষত দ্রুত শুকাতে সহায়তা করে।

প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে তা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক ভালো কাজ করে।কারণ লেবুর  ভিটামিন সি ই এবং মধুতে বিদ্যমান ময়শ্চার স্কিনের ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে দেয় এবং স্কিনকে অনেক চকচকে ও সতেজ করে রাখে। যাদের স্কিন অতিরিক্ত মাত্রায় অয়েলি বা তৈলাক্ত তাদের স্কিনে অয়েল ব্যালেন্স করে থাকে এই লেবুর পানি।

ঠান্ডা বা সর্দি কাশি জনিত সমস্যায় বা এলার্জি জনিত  হাঁচি কাশির সমস্যায় ও লেবুর পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে, সর্দি-কাশিকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আমাদের দৈনিন্দন চলাফেরায় যে এনার্জির প্রয়োজন সে এনার্জি বুস্টাপ এবং মেটাবলিক রেট কে বাড়াতে সহায়তা করে লেবু এবং মধুর মিশ্রিত পানি।

সকালে খালি পেটে লেবু এবং মধুর পানি নিয়মিত পান করতে পারলে তা চুলের জন্য অসম্ভব ভালো কাজ করে চুলকে মসৃণ এবং সুন্দর করে তোলে।

লেবুর শরবত বানানোর নিয়ম

লেবুর শরবত বানানোর আগে লেবুর রস কিভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন সে সম্পর্কে বলা যাক। এভাবে সংরক্ষণ করে ১৫-২০ দিন লেবুর শরবত বানানো সম্ভব। 

লেবুর রস সংরক্ষণ করার জন্য প্রথমে একটি লেবু কে হাফ করে কেটে নিন এবং যতগুলো লেবু আপনার প্রয়োজন তা মাঝখানে কেটে তার রস একটি ছাকনির সাহায্যে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করুন।এর সাথে এক-তৃতীয়াংশ পানি যোগ করে নিন। সম্পূর্ণ মিশ্রণ টি একটি বা দুটি পরিষ্কার আইসট্রেতে সংরক্ষণ করুন এবং ফ্রিজে রেখে দিন। সম্পূর্ণরূপে ফ্রোজেন হয়ে গেলে তা বের করে একটি পরিষ্কার স্টোরেজ পলিথিন এ নিন এবং আবার ফ্রিজে রেখে দিন।যখন প্রয়োজন হবে তখন শুধুমাত্র একটি বা দুটি কিউব বের করে লেবুর শরবত বানিয়ে নিন।একটি ছোট আইসকিউব এর সাথে ২০০ – ২৫০  মিলি লিটার পানি দিয়ে শরবত বানানো সম্ভব। 

প্রথমেই লেবুর শরবত বানানোর জন্য একটি আইস ট্রে থেকে কিছু আইস কিউব নিয়ে নিন আর আপনারা যদি সংরক্ষণ না করে থাকেন সেক্ষেত্রে একটি লেবুর অর্ধেক কেটে তার অর্ধেক রস বা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী রস নিয়ে নিন।কতটুকু রস নিবেন বা প্রয়োজন তা নির্ভর করছে আপনি কোন রকমের লেবু ব্যবহার করছেন তার উপর। এর সাথে দুই থেকে আড়াই চামচ চিনি বা চিনির সিরা নিয়ে নিন। এক চিমটি পরিমাণ বিটলবণ মিক্স করে ভালোভাবে নেড়ে নিন। এর সাথে ২০০ মি.লি এর মতো পানি নিয়ে নিন।তৈরি হয়ে গেলো লেবুর শরবত। এর সাথে অনেকে ইসুবগুলের ভুষি খেতে পছন্দ করে এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ও অনেক উপকারী। 

দ্বিতীয় পদ্ধতির জন্য একটি পরিষ্কার গ্লাসে প্রথমেই এক থেকে দুই চামচ পরিমান লেবুর রস নিয়ে তাতে আড়াই চামচ পরিমান চিনি বা চিনির সিরা নিয়ে নিন।ভালোভাবে নেড়ে পুদিনা পাতার রস দিয়ে নিন এক চা চামচ পরিমান। যারা রস করতে পারবেন না তারা সব উপাদান মিক্স করার পর উপরে পুদিনা পাতা মিক্স করে অপেক্ষা করবেন।এরপর যোগ করে নিন আধা চা চামচ আদার রস এবং বিট লবণ পরিমাণ মতো।সবগুলো উপাদান একসাথে ভালোভাবে নেড়ে নিন। এবং এর সাথে ২০০ মি.লি এর মতো পানি মিক্স করুন।

অনেকে লেবুর শরবত এ চিনি, লেবু, বিটলবণ ছাড়াও কিছুটা জিরার গুড়ো মিক্স করেও শরবত বানাতে পছন্দ করেন।

এই প্রতিটি লেবুর শরবতই অনেক রিফ্রেসিং এবং মজাদার।

লেবুর পাতা কোকড়ানো রোগ

লেবুর পাতা কোকড়ানো রোগ লেবুর অন্যতম একটি কমন রোগ। এটি এক প্রকার সুরঙ্গ কারি পোকার মাধ্যমে লেবুপাতায় ছড়ায়। এই পোকা পাতায় তার লার্ভা নির্গমন করে ফলে পাতার একপাশ থেকে কোকড়ানো শুরু হয়ে যায়। আস্তে  আস্তে পুরো পাতা জুড়ে এর কোঁকড়ানো ভাব চলে আসে। বিভিন্ন শোষক পোকা অনেক সময় পাতার রস খেয়ে ফেলে এবং পাতায় এক প্রকার ব্যক্টেরিয়ার আক্রমন এর শিকার হয়।এই সংক্রমণ থেকে লেবু গাছ কে বাচাতে হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক যেমন এডমায়ার অথবা টিডো প্রায় ১ মি.লি অথবা ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। এতে করে লেবুর এই পাতা কোকড়ানো রোগ সেরে যাবে।

লেবুর আচার

লেবুর আচার  বানানোর জন্য প্রথমেই নিয়ে নিন ১০ টি লেবু। প্রয়োজনে কম বেশি নিতে পারেন। লেবু গুলো ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। কখনোই ভেজা অবস্থায় লেবু কাটা বা ভেজা অবস্থায় আচার বানানোর বাকি স্টেপ শুরু করা উচিত নয়, এতে করে আচার জলদি নষ্ট হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে, এবং আচারে ছত্রাক পড়ে যেতে পারে।

শুকানোর পর লেবু গুলোকে  মাঝখান থেকে চার টুকরো করে কিউব আকৃতিতে কেটে কেটে নিতে হবে। এরপর এর সাথে মিক্স করতে হবে ২-৩ চামচ পরিমান লবণ, ২ চামচ পরিমান হলুদের গুড়ো, ৩-৪ চামচ পরিমান মরিচের গুঁড়ো, এবং ২ চামচ পরিমান পাচফোড়ন গুড়ো,আপনারা চাইলে ঘরে বানানো পাচফোড়ন ব্যবহার করতে পারেন। এতে গন্ধ অনেক ভালো আসে। সবগুলো উপাদান লেবুর টুকরো গুলোর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে হাতে চটকিয়ে নিন। এতে করে লেবুর রসগুলো বের হয়ে আসবে প্রথমেই। পরে আর তিতো ভাব থাকবেনা।

এরপর একটি কাচের পাত্রে অল্প পরিমাণ সরিষার তেল নিয়ে এর ভিতর লেবুগুলো নিয়ে নিন মসলাসহ। এবং পুরো কাচের জার টিতে লেবুর আচারের উপুড় পর্যন্ত ভালোভাবে সরিষার তেল দিয়ে জারের মুখ ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এতে প্রচুর পরিমাণে তেল ব্যবহার করতে হয় যেনো সবগুলো লেবুই একদম তেলের ভিতর থাকে।

এই আচার রোদে বা চুলোয় দেয়ার প্রয়োজন নেই। এতে লেবুর পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। এভাবে বানিয়ে লেবুর আচার ১ বছর পর্যন্ত রাখা যায়। খোলা জায়গা কিংবা ফ্রিজে রেখে তা সংরক্ষণ করতে পারেন। 

লেবুর চারার দাম

আমাদের এই প্যান্ডেমিক এর  সময় ভিটামিন সি এর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। এর সাথে বেড়েছে লেবুর চাহিদা।তাই অনেকেই লেবু চাষের দিকে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। লেবুর দুইরকম চারা পাওয়া যায়, বিচিসহ এবং বিচি ছাড়া যাকে বলে সিডলেস লেবুর চারা। এই লেবু ফলন প্রক্রিয়া অতি দ্রুত সম্পন্ন করে। এবং এটি  অত্যন্ত সুস্বাদু বলে এর চাহিদা কৃষক বা গ্রাহক দুইজন এর কাছেই বেশি। এবং লেবু চাষে প্রতি বছরই বাড়ছে আবাদী জমির পরিমান। বাজারে সীডলেস লেবু প্রতি’শ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা দরে।

অন্যদিকে বিচি সহ যেসব লেবু রয়েছে সেসব লেবুর চাষ ও হচ্ছে।যেখানে প্রতি একরে সাধারণত ৩০০–৩৫০টি চারা রোপণ করা হয়। এবং এতে খরচ পড়ে প্রতি একরে ৭০–৮০ হাজার টাকা।

লেবু বিক্রি শুরু করতে হয় চারা রোপণের তিন বছর পর থেকে। 

লেবু বেশি খেলে কি হয়

ওজন হ্রাসের জন্য কেউ যদি প্রচুর পরিমাণে লেবুর রস খেতে থাকে অন্যান্য খাবার বাদ দিয়ে তাহলে কার্বোহাইড্রেট এর অভাব দেখা দিতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসতে পারে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তাই প্রতিদিনকার রুটিন এ পরিমাণমত লেবু খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। বয়স কিংবা শরীরের অবস্থাভেদে লেবু কম বা বেশি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা হতে পারে। তাই বুঝে শুনেই লেবু খাওয়া উচিত।

4.6/5 - (206 votes)

Subna Islam

খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে, গভীর স্বস্তিতে, তৃপ্তিতে বা খারাপ লাগায় এক আল্লাহর কাছে মনের প্রতিটা কথা খুলে বলার মধ্যে যে শান্তি,, তা একবার উপলব্ধি করে দেখুন।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button