বিভিন্ন প্রকার কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন এই পোস্টে।
বলুন তো, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল কি?
উত্তর হচ্ছে কলা। শুধু তাই নয় উৎপাদন,স্বাদ ও সুগন্ধের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় কলাকে ফলের রাণীও বলা হয়। এই অসাধারণ ফলটির রয়েছে অনেক উপকারিতা। পুরো পোস্ট জুড়ে থাকবে কলার উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত। আঁশ ও ভিটামিনে ভরপুর হওয়ায় কলা “সুপারফুড” হিসেবেও পরিচিত।
এক জরিপে দেখা গেছে, সকালের নাস্তায় সবচেয়ে বেশি খাওয়া খাবারের মধ্যে ডিমের পরেই কলার স্থান।
কেবল পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবেই নয় অর্থকারী ফসল হিসেবেও কলার চাষাবাদ বেশ লাভজনক। খনার বচন আছে “কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত “।
কলায় দুটি অংশ থাকে। ওপরের সবুজ (পাকলে হলুদ) আবরণকে খোসা এবং ভেতরের নরম সাদা অংশকে পাল্প বলে, যা পরবর্তীতে পাকার পর ভোজ্য অংশ হিসেবে কাজ করে। কলার যে জাতটি পৃথিবীতে সর্বাধিক পরিমাণে চাষাবাদ করা হয় তার নাম “গ্রোস মিচেল” (Gros Michel) ।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে বাংলাদেশে প্রায় ৪০-৫০ টি জাতের কলার চাষ হয়। এগুলোর মধ্যে অমৃতসাগর,সবরি, কবরি, চাঁপা,সিঙ্গাপুরী বা কাবুলী,মেহেরসাগর,এঁটে বা বিচিকলা, কাঁচকলা বা আনাজিকলা, জয়েন্ট গভর্নর এসব উল্লেখযোগ্য।
একটি বড় কলায় (৮-৯ ইঞ্চি) রয়েছে
১২০ ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৪৯০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম যা একজন মহিলার দৈনিক পটাশিয়ামের চাহিদার ১৯ শতাংশ এবং পুরুষের চাহিদার ১৫ শতাংশ পূরণ করে থাকে।
Contents
কলার পুষ্টিগুণ
কলার রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ । পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম কলার পুষ্টিগুণ গুলো নিম্নরূপঃ-
- ১০৯ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি
- ৭ গ্রাম প্রোটিন
- ২৫ গ্রাম শর্করা
- ০.৮ গ্রাম চর্বি
- ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১
- ২.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি
- ৮০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ
- ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২
- ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
আরো পড়ুনঃ কলার ফুলের উপকারিতাঃ ত্বক ও চুলের এই ৩টি সমস্যায় অবশ্যই ব্যবহার করুন, কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্ন প্রকার কলার উপকারিতা
কলা বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের একটি বিখ্যাত ফল। বাংলাদেরশের প্রায় সব অঞ্চলেই কলার চাষ হয়। প্রায় ৫০টির ও বেশি প্রজাতির কলা রয়েছে। এর মধ্যে সবার কাছে পরিচিত ও বিখ্যাত কিছু প্রজাতির কলার উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নিই
সরবি কলার উপকারিতা
স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের বিচারে সবার আগে সরবি কলার অবস্থান। এর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এটি শিশু এবং বয়স্কদের জন্য বেশি উপকারী। এর ফলন সব জাগায় হয় না। তাই এর দাম ও তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি।
সাগর কলার উপকারিতা
বিভিন্ন প্রকার কলার মধ্যে সাগর কলার উপকারিতা অন্যতম। এটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চাষ হয় এবং বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। সাগর কলা প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। এর ছাল থেকে শুরু করে আশ সবকিছুই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাগর কলার প্রধান উপকারিতা গুলো হলোঃ-
- রক্তচাপের সমস্যা দূর করে,
- হজমশক্তি বৃদ্ধি করে হজমের সমস্যা দূর করে,
- পেশীর সমস্যা দূর করে, মজবুত পেশী গঠনে সাহায্য করে,
- গর্ভবতী মহিলাদের শারিরীক ও মানসিক চাপ দূর করে,
- দেহের পুষ্টি উপাদান বজায় রাখতে কাজ করে,
- গ্যাস্ট্রিক বা আলসার রোগীদের জন্য সাগর কলা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে।
চাপা কলার উপকারিতা
- নার্ভকে সতেজ রাখে ও মানসিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে,
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে,
- শরীরের হাড়ের বৃদ্ধি করে,
- মাথাব্যথা ও বাতের ব্যথার প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে,
- রক্তস্বল্পতা দূর করে ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে,
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কাঁচকলা বা আনাজিকলার উপকারিতাঃ
- আলসার, ডায়রিয়া, বদহজম এমনকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাঁচকলা পথ্য হিসেবে কাজ করে,
- কাঁচকলায় থাকা “শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড” শরীরে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে,
- পেটের খারাপ ব্যক্টেরিয়া দূর করে,
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়,
সিঙ্গাপুরী বক কাবুলী কলার উপকারিতাঃ
- এ কলায় প্রচুর আয়রন আছে যা রক্তশূন্যতা দূর করে,
- এতে প্রচুর পটাশিয়াম আছে যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে,
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে,
- প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করে,
এঁটে বা আটিয়া বা বিচিকলার উপকারিতাঃ
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও শরীরকে ঠান্ডা রাখে,
- কৃমিজনিত সমস্যা দূর করে,
- আলসার,আমাশয় ও ডায়াবেটিসের পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়,
- কুষ্ঠ ও হিস্টেরিয়া রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে,
- এই কলাকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার পথ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
কলার খোসার উপকারিতা
অনেকেই কলার খোসার উপকারিতা না জেনে এর অপব্যবহার করে থাকেন। কলা খাওয়া শেষে এর খোসা যেখানে সেখানে ফেলে দেন। কিন্তু শুনতে অদ্ভুত লাগলেও কলার খোসার রয়েছে অনেক ঔষুধি গুন। চলুন এবার সেইসব গুন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক,
অবসাদ দূর করতেঃ কলার খোসায় রয়েছে সেরোটোনিন যা শরীরের অবসাদ দূর করে,
মসৃণ ত্বকের জন্যঃ কলার খোসার ভেতরের অংশ মুখে লাগিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও মোলায়েম হয়,
সাদা দাঁতের জন্যঃ হলুদ দাঁত নিয়ে চিন্তায় আছেন। কলার খোসার ভেতরের অংশ দিয়ে দাঁত মাজুন দেখবেন দাঁত সাদা হতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয় এটি দাঁতকে মজবুতও করে।
ব্রণ দূর করতেঃ মধুর সঙে কলার খোসা মিশিয়ে মুখে ভালো করে ঘষলে ব্রণ ও মুখের দাগ দূর হয়,
সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসায়ঃ বিশেষজ্ঞরা বলে,সোরিয়াসিসের মত কঠিন ত্বকের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কলার খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে,
দাদের ওষুধঃ কলার খোসা দাদের ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। চুলকানির স্থানে কলার খোসা ঘষলে চুলকানি বন্ধ হবে এবং নিয়মিত ব্যবহারে দ্রুত দাদ সেরে যাবে। এছাড়াও আঁচিল দূর করতে এমনকি ব্যথানাশক হিসেবেও কলার খোসা বেশ কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ হলে করণীয়, ব্রণ দূর করার উপায়
দাঁতের যত্নে করণীয় কি কি জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটে।
কাঁচা কলা vs পাকা কলাঃ
কাঁচা কলা | পাকা কলা |
কাঁচা কলায় আঁশের পরিমাণ বেশি থাকে | অন্যদিকে পাঁকা কলায় আঁশের পরিমাণ কম থাকে |
কাঁচা কলায় ক্যালসিয়াম ও লৌহের পরিমাণ বেশি থাকে | পাকা কলায় শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে |
কাঁচা কলা আলসার, ডায়রিয়া, বদহজম প্রতিরোধ সহায়ক | পাকা কলা টিউমার,ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক |
কাঁচকলা ইনসুলিন সেনসিটিভ | পাকা কলা অধিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ |
কাঁচকলায় প্রবায়োটিক ব্যকটেরিয়া থাকে যা স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় | পাকাকলা শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে |
Conclusion
তবে সে কাঁচকলায় হোক কিংবা পাকাকলা, দুটোয় যেনো পুষ্টির বাতিঘর। তাই প্রতিদিন কলা খান, সুস্থ থাকুন। পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করুন। এই পোস্ট থেকে কলার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারলেন। সবচেয়ে সস্তায় অত্যাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কলা সম্পর্কে অন্যদের জানাতে অবশ্যই এই পোস্ট টি শেয়ার করবেন। আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে, কলার এতো উপকারীতা আগে জানতামনা