সূরা আল ইনশিরাহ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত
সূরা আল ইনশিরাহ মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরা আল ইনশিরাহ কোরআন মাজিদের ৯৪ নাম্বার সূরা। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৮ টি।
Contents
সূরা ইনশিরাহ এর আরবী উচ্চারণ
أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ
وَوَضَعْنَا عَنكَ وِزْرَكَ
ٱلَّذِىٓ أَنقَضَ ظَهْرَكَ
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
فَإِنَّ مَعَ ٱلْعُسْرِ يُسْرًا
إِنَّ مَعَ ٱلْعُسْرِ يُسْرًا
فَإِذَا فَرَغْتَ فَٱنصَبْ
وَإِلَىٰ رَبِّكَ فَٱرْغَب
সূরা ইনশিরাহ এর বাংলা উচ্চারণ
১) আলাম নাশরাহলাকা সাদরাক।
২) ওয়া ওয়াদা‘না-‘আনকা বিঝরাক
৩) আল্লাযীআনকাদা জাহরাক।
৪) ওয়া রাফা‘না-লাকা যিকরাক।
৫) ফাইন্না মা‘আল ‘উছরি ইউছরা-।
৬) ইন্না মা‘আল ‘উছরি ইউছরা-।
৭) ফাইযা-ফারাগতা ফানসাব।
৮) ওয়া ইলা- রাব্বিকা ফারগাব।
সূরা ইনশিরাহ এর বাংলা অনুবাদ
১) আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি?
২) আমি লাঘব করেছি আপনার বোঝা,
৩) যা ছিল আপনার জন্যে অতিশয় দুঃসহ।
৪) আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।
৫) নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
৬) নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।
৭) অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন।
৮) এবং আপনার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ করুন।
সূরা ইনশিরাহ এর ফজিলত
সূরা ইনশিরাহ’য় প্রথমত আল্লাহ রাসূল (সা:) এর বক্ষ জ্ঞানে পরিপূর্ণ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তা সত্ত্বেও কোনো কোনো তাফসীরকার বলেন যে, ফেরেশতা মহানবী (সা.)-এর বক্ষ বিদারণ করেছেন এবং তাঁর হৃদয় ধৌত করেছেন। এটা বুদ্ধি-বিবেকের সম্পূর্ণ বিপরীত ও অযৌক্তিক কথা। কারণ বুক ধুয়ে কখনও আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয় না।
দ্বিতীয়ত আল্লাহ তাঁর প্রতি এই অনুগ্রহ করেছেন যে, পবিত্র কুরআন ব্যাখ্যা ও ঐশী বিধিবিধান পৌঁছানো এবং তা বাস্তবায়িত করার যে গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে ছিল তা হযরত আলীর (আ.)-এর খেলাফত ও প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে লাঘব করে দিয়েছেন। আর যেহেতু এ আদেশ অর্থাৎ আলী (আ.)-এর খেলাফতের ঘোষণাকে তিনি খুব কঠিন কর্ম গণ্য করেছিলেন সে কারণে আল্লাহ যেরূপে অন্য স্থানে অন্য বাক্যে বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন অনুরূপ এ স্থলেও এভাবে বলেছেন যে, যখন অবসর পাও অর্থাৎ যখন তুমি বিদায় হজ পালন করে নবুওয়াতের দায়িত্ব সম্পন্ন করে নেবে তখন আলীকে খলিফা নিযুক্ত করার কঠোর প্রচেষ্টায় রত হও। অতঃপর আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করবে। অর্থাৎ মৃত্যুর প্রস্ততি নেবে। অবশ্য সুন্নী মুফাসসিররা এরূপ ব্যাখ্যা করেননি।
মহানবী (সা) যখন একত্ববাদের প্রচার শুরু করেন তখন কাফের ও মুশরিকদের ব্যাপক বিরোধিতা আর বাধার মুখোমুখি হন। তাই রেসালতের দায়িত্ব পালন তাঁর কাছে খুব কঠিন মনে হচ্ছিল প্রথমদিকে। অবশ্য প্রত্যেক নবী-রাসুলের জন্যই প্রথম দিকে কঠিন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল; মহান আল্লাহর সহায়তায় তারা সব সংকট ও বাধা কাটিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে মহানবীর (সা) জন্য পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল অনেক বেশি কঠিন ও প্রতিকূল। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ সূরা ইনশিরাহ’তে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত মহানবী (সা:) কে বলছেন, আল্লাহর ধর্ম প্রচারের জন্য কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার কখনও বিফলে যায় না। প্রতিটি সংকট ও কষ্টের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুক্তির পথ। পবিত্র লক্ষ্য অর্জনের জন্য কষ্ট করা ও ত্যাগ স্বীকার এবং নানা বাধার মোকাবিলা করা ক্রম-বিকাশ ও উন্নতির নতুন নতুন পথ খুলে দেয়। তাই সংকট বা সমস্যাকে ভয় না করে সানন্দে বরণ করা উচিত। মহানবী (সা:) যেমন অবর্ণনীয় নানা কষ্টের শিকার হয়েছেন তেমনি আল্লাহর অনেক বিশেষ অনুগ্রহও পেয়েছেন। আর এ জন্যই সূরা ইনশিরাহতে মহান আল্লাহ বলেছেন: নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে।
আরও পড়ুন: সূরা আল হাক্কাহ’র গুরুত্ব ও উমর (রা:) ইসলাম গ্রহণ
সূরা ইনশিরাহ’র চার নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ রাসুল সম্পর্কে বলছেন, আমরা তোমার স্মরণকে উন্নীত করেছি। – আজ বিশ্বব্যাপী যত খানে যতবার নামাজের পবিত্র আজান দেয়া হয় ততবারই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)’র নাম শ্রদ্ধাভরে উচ্চারণ করা হয়। মহান আল্লাহর নামের পরই মহানবীর (সা:) নাম উচ্চারণ করা হয়।
সূরা ইনশিরাহ’র শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, হে নবী! যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করে অবসর পাবে তখন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করবে। সব সময়ই সাধনায় ব্যস্ত থাকবে এবং সর্ব অবস্থায় আল্লাহর প্রতি মনোযোগী থাকবে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট থাকবে ও তাঁর নৈকট্য অর্জনের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে।
আরো পড়ুনঃ