অর্থনীতি

১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা এবং দেশের অর্থনীতির সুফল

বর্তমান সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয় বরং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিটাই চ্যালেঞ্জ।

রং বা কালারের কারণে কোনো টাকাকে সাদা বা কালো বলা হয় না; উপার্জনের প্রক্রিয়ার কারণে টাকাকে কালো বা ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা এবং দেশের অর্থনীতির সুফল বলা হয়। অপ্রদর্শিত অর্থ হচ্ছে সেই অর্থ বা টাকা, যা বৈধভাবে উপার্জিত; কিন্তু প্রদর্শন করা হয় না বা কর নেটওয়ার্কের বাইরে রাখা হয়। অর্থাৎ যে টাকার বিপরীতে কোনো কর প্রদান করা হয় না। যেমনঃ কেউ একজন বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এক কোটি টাকা উপার্জন করলেন, কিন্তু সেই টাকার বিপরীতে সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স বা কর প্রদান করলেন না।অন্যদিকে কালো টাকা হচ্ছে সেই টাকা, যা দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে অসৎভাবে উপার্জিত ও কর নেটওয়ার্কের বাইরে থাকে।কর ফাঁকি দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থের মালিক একটি অপরাধ করেন। অপরদিকে, কালো টাকার মালিকরা দুটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন। তারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেন এবং সেই টাকার জন্য সরকারকে নির্ধারিত হারে ট্যাক্স প্রদান করেন না।

যাদের অনেক ক্ষমতা তাদের অধিকাংশই কালো টাকার মালিক। তারা কেনো ১০শতাংশ কর দিয়ে এত এত পরিমাণ টাকা সাদা করবে? তারা জীবন দিয়ে হলেও সেই টাকা অন্যভাবে ব্যবহার করবে। আর সেটাও সম্ভব না হলে বিদেশে পাচার করবে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হলে জাতীয় অর্থনীতিতে লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে দেশের তথা জনগণেরই ক্ষতি হচ্ছে। এইসমস্ত কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থকে দেশেই খাটাতে হবে, এধরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ১০শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয়া হলো কিন্তু সাদা হওয়ার পর সেই টাকাকে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করার যোগ্যতা পাবে তা নির্ধারণ করাসহ ঢালাওভাবে বাধ্যতামূলক কিছু নিয়মে নিয়ে আসতে হবে।যেমন ধরা যাক, সাদা টাকাকে কেউ বিনিয়োগ করবে ব্যাংকের ডিপোজিটে, যা পুরোপুরি নিরাপদ লাভজনক বিনিয়োগ । আবার কেউ পরিচিতজনদের ঋন দিবে বা কোনো না কোনো ভাবে ব্যয় করবে। আমরা এটাও জানি, লেনদেন যত বাড়বে সরকারের তহবিলে ট্যাক্স/ভ্যাট জমা হবে। এসব পুরনো পরিকল্পনার কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। যেমনঃ সাদা টাকা আপনাকে অবশ্যই শিল্পখাতে বিনিয়োগ করতে হবে, অথবা কমপক্ষে ১০ জনকে কর্মজীবি হওয়ার জন্য ঋন প্রদান বা নিজেই কোনো ফার্ম খুলে ১০ জনকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া।

আবাসন খাত,উন্নয়ন প্রকল্প,শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বেকার সমস্যা সহ জিডিপির প্রবৃদ্ধিও সম্ভব হতে পারে।যেহেতু,উচ্চমাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি আমরা অবশ্যই চাই; কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধি কীভাবে অর্জিত হচ্ছে, তা মানবকল্যাণে কতটা অবদান রাখছে- এগুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারছে কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু জাতীয় আয়ের যে হিসাব পাই, তা গড় হিসাব। সবার ক্ষেত্রে এগুলো একই মাত্রায় অবদান রাখে না। বাংলাদেশ উচ্চমাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে; কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির সুফল কি সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারছে? অপ্রদর্শিত অর্থের মালিক এবং কালো টাকার ধারকরাও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। কারণ টাকা যে প্রক্রিয়াই উপার্জিত হোক না কেন, তা মানি লন্ডারিং বা অন্য কোনোভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবিষ্ট হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই ফেরানো যাচ্ছে না। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে কালো টাকা সাদাকরণ বা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগদানের বিরোধিতা করা ঠিক হবে না।

আপাতদৃষ্টিতে, এটিও মঙ্গলজনক। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হোক তবে এসব কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থ সৃষ্টির সব রাস্তা বন্ধ করতে হবে। কারণ কোনো অন্যায় দিনের পর দিন চলতে পারে না। কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই যদি কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়, পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কিছু নিয়ম বাধ্যতামূলক করলে দেশের বিনিয়োগ কার্যক্রমে গতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এই করোনা পরিস্থিতি ও তার পরবর্তী মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগযোগ্য পুঁজির জোগান নিশ্চিত করা।

(বহু অর্থনীতিবিদরা এটাকে আংশিক সাপোর্ট করেন)

Rate this post

One Comment

  1. দশ পারসেন্ট কর দিয়া টাকা বৈধ করা কতটুকু নৈতিক???
    তারচেয়ে নীতিবান হওয়া জরুরি।
    সরকারের উচিত নীতিবান করার তাগিদ দেওয়া।
    আর এ প্রসেসটাকে চেন্জ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button