অর্থনীতি

RCEP চুক্তি কি? RCEP এর সাপেক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান।

RCEP (Regional Comprehensive Economic Partnership), গেলো রবিবার ১৫ই নভেম্বর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আসিয়ানের শীর্ষ বৈঠকের শেষ দিনে আসিয়ানভুক্ত দেশ গুলোর সাথে চীন, জাপান, দক্ষিণ-কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড মিলে মোট ১৫টি দেশের মধ্যকার স্বাক্ষরিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA)।

RCEP এর সদস্য দেশ সমূহ হলোঃ চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন। (বোল্ড করা রাষ্ট্রগুলো আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্র)

NAFTA, SAFTA এর মত RCEP একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। চীনের এক দশকের প্রচেষ্টার পর অবশেষে সফলতার দেখা পাওয়া এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর পরই চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।

কেন গুরুত্বপূর্ণ RCEP:

চীনের অর্থনৈতিক প্রভাবকে হ্রাস করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা ১২ দেশের সাথে মিলে তৈরি করেন ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (TPP)। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি TPP থেকে বের করে নেন যুক্তরাষ্ট্রকে। এর ফলে RCEP এখন যুক্তরাষ্ট্রে জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা।

কারন, বিশ্ব অর্থনীতির ৩০% এর যোগান দিয়ে থাকে RCEP ভুক্ত দেশগুলো। টাকার অংকে যার পরিমান ২৪,৮০০ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২.৩ বিলিয়ন এই ১৫ দেশের অন্তর্গত। যার মধ্যে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি। এই ১৫ দেশ মিলে যে মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে তা অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে অনেক বড়।

RCEP

অনেক ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা দ্বিমত পোষণ করলেও একটি ব্যাপারে সবাই একমত যে, এই চুক্তির ফলে চীনের অর্থনৈতিক উচ্চাশা পূরণের পথ আগের চাইতেও আরো সুগম এবং মজবুত হয়েছে এবং সব কিছু ঠিক থাকলে ভবিষ্যতে চীন হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি।

তবে একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে ভারত এই চুক্তি থেকে সরে গেছে। ভারত এই চুক্তিতে এখন অবজারভার কান্ট্রি হিসেবে থাকবে এবং ভবিষ্যতে চাইলে ভারত সহজেই এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। ভারতের এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার প্রধান কারন হিসেবে দেখানো হচ্ছে সস্তা চীনা পণ্যে ভারতের বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়া। কিন্তু এর পাশাপাশি আরো অনেক কারণ রয়েছে ভারতের এই চুক্তি থেকে সরে যাবার।

যদিও চীন চেয়েছিল ভারতকে রাখার। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর ভারত শেষ সময়ে এই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।

অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত বর্ধনশীল এবং সম্ভাবনাময় এই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব ধীরে ধীরে কমবে এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় এবং পশ্চিমা দেশ গুলোর উপর চীনের নির্ভরশীলতাও কমে যাবে।

যদিও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে জাপান এবং দক্ষিণ-কোরিয়ার সাথে চীনের বিবাধ চলছে তবুও এই দুই দেশ চীনের সাথে RCEP তে স্বাক্ষর করেছে। এখন সময়ই বলে দিবে এই চুক্তির ফলে চীনের সাথে এই দুই দেশের ভূ-রাজনৈতিক বিরোধ কোথায় গিয়ে ঠেকবে।

কোভিড-১৯ পরবর্তী ভেঙ্গে পরা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করে বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভাবে এশিয়ার এই অঞ্চলকে দাড় করাতেই এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে বলে বলছেন চুক্তিভুক্ত দেশসমূহের নেতারা।

RCEP ও বাংলাদেশঃ

RCEP স্বাক্ষরিত হবার পর থেকেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনার টেবিলের প্রদান বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে এটি। যদিও বাংলাদেশ ASEAN ভুক্ত দেশ ছিলোনা এবং তাদের সাথে কোন মুক্ত বাণিজ্যের সম্পর্কও ছিলোনা।

ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মত বাংলাদেশের প্রতযোগী দেশগুলো এই চুক্তিতে থাকায় তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে বা এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে সেটাই এখন মূখ্য বিষয়।

বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী অধিকাংশ দেশ এই চুক্তির মধ্যে থাকায় যে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যদিও বাংলাদেশ চীনের কাছে ৯৭% পণ্যে ডিউটি ফ্রী সুবিধা পাচ্ছে তবুও এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে ভালোভাবেই পরবে বলে বলছেন বিশ্লেষকরা।

আরো পড়তে পারেনঃ

কেমন হবে কোভিড-১৯ পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি?

প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলো রপ্তানি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ আকর্ষনে বাংলাদেশ থেকে বেশি সক্ষমতা অর্জন করবে এবং সুবিধা লাভ করবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী দেশের মধ্যে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া এই চুক্তিতে আছে বলেই চিন্তার ভাজ অর্থনীতিবিদদের কপালে।

আর কিছুদিনের মধ্যের বাংলাদেশ LDC থেকে বের হয়ে যাবে, যার ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্রে যে সকল বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছিলো বাংলাদেশ তা আর পাবেনা। সফট লোনের সুবিধাও হারাবে বাংলাদেশ। এই সময়ে এসে প্রতিযোগী দেশসমূহের এই জোট অবশ্যই চিন্তার কারণ।

তারা নিজদের মধ্যে থেকে এখন খুব সহজেই কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্য পাবে, গড়ে তুলবে শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন যার সুবিধা নেই বাংলাদেশের কাছে। কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি করবে যা বাংলাদেশ পারবেনা। জাপান, অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগের বেশিরভাগই যাবে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশে, যা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সঙ্কুচিত করবে। এই সকল কারন গুলো বাংলাদেশকে নিশ্চিত ভাবে প্রতিযোগীতায় পেছনে ফেলে দিবে।

যদিও আসিয়ানভুক্ত দেশ গুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্যের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

তবে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছেনা যে কি হতে যাচ্ছে। এই চুক্তি কার্যকর হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।

5/5 - (14 votes)

Admin at Shopnik.com.bd

As the driving force behind Shopnik.com.bd, the Admin is dedicated to providing readers with insightful and informative blogs across a wide range of topics. From expert reviews on the latest products to engaging articles from anonymous contributors, the Admin ensures that every post is designed to inform, inspire, and engage. Whether it's tech, lifestyle, or the latest trends, Shopnik.com.bd is your go-to source for up-to-date information and valuable content.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button