ইসলাম

তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, পড়ার নিয়ম ও ফজিলত

তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, পড়ার নিয়ম ও ফজিলত পাবেন এই পোস্টে।

তাশাহহুদ আরবি
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত-ত্বায়্যিবাতু; আস-সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ; আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন; আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

তাশাহুদ বাংলা অর্থ

‘সব মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।

আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ পড়ার নিয়ম

নামাজি ব্যক্তি নামাজের মধ্যে যখন মৌখিকভাবে তাওহিদের সাক্ষ্য দেয়, তখন তার আঙুলও এই সাক্ষ্য দেবে। এজন্য আত্তাহিয়াতু পড়তে পড়তে যখন ‘আশহাদু আল্লা… ইলাহা’ পর্যন্ত পৌঁছবে, তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা গোল ভিত্ত বানাবে এবং শাহাদত আঙুল দ্বারা ইশারা করবে। আর কনিষ্ঠা ও অনামিকা হাতের তালুর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার পর শাহাদত আঙুল নিচু করবে। তবে অন্য আঙুলগুলো আপন অবস্থায় নামাজের শেষ পর্যন্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, বৃদ্ধাঙ্গুলির নিকটতম আঙুলকে শাহাদত আঙুল বলা হয়। ইশারা শেষ করে আঙুল আর নাড়াচড়া করবে না। (তথ্যসূত্র: সহিহ মুসলিম: ১৩৩৬-১৩৩৭ সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫/২৭০, সুনানে নাসায়ী কুবরা: ১১৯৩, আবু দাউদ: ৯৮৯)

আত্তাহিয়াতু সম্পর্কিত হাদিস

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করতাম তখন এ দোয়া পাঠ করতাম, “আসসালা-মু আলাল্ল-হি ক্বাবলা ইবাদিহী, আসসালা-মু আলা-জিবরীলা, আসসালা-মু আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু আলা- ফুলা-নিন” (অর্থাৎ আল্লাহর ওপর সালাম তাঁর বান্দাদের আগে, জিব্রাইলের ওপর সালাম, মিকায়িল-এর ওপর সালাম। সালাম অমুকের ওপর)। রাসুলুল্লাহ (স.) যখন সালাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, “আল্লাহর ওপর সালাম” বলো না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।
অতএব তোমরা সালাতে বসলে বলবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু…..ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন” (অর্থ: যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধিসমূহ নাজিল হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের ওপর ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের ওপর।) নবী (স.) বললেন, কোনো ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌছবে। এরপর নবী (স.) বললেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু”- (অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসুল)। নবী (স.) বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দোয়া ভালো লাগে সে দোয়া পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। (বুখারি: ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম: ৪০২, আবু দাউদ: ৯৬৮, নাসায়ি: ১২৯৮, ইবনু মাজাহ: ৮৯৯, আহমদ ৪১০১, মেশকাত ৯০৯। হাদিসের মান সহিহ)

তাশাহহুদ পড়ার বিশেষ ফজিলত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে নামাজ পড়তাম; তখন বলতাম, ‘আসসালামু আলা জিবরিলা ওয়া মিকালা এবং আসসালামু আলা ফুলান ওয়া ফুলান’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন-
আল্লাহ নিজেই তো সালাম, তাই যখন তোমরা কেউ সালাত/নামাজ আদায় করবে, তখন সে যেন বলেঃ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ
কেননা, যখন তোমরা এটি বলবে তখন আসমান ও জমিনে থাকা আল্লাহর সব নেক বান্দার কাছে তা (শান্তি) পৌঁছে যাবে। আর এর সঙ্গে তোমরা (তাওহিদের কালেমার সাক্ষ্য) أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ এটিও পড়বে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বৈঠকে বসে পড়ার জন্য তাশাহহুদ জানা না থাকলে তা শিখে নেয়া। বাংলা উচ্চারণ ঠিকভাবে না পারলে কোনো আরবি জানা লোকের কাছ থেকে তা শিখে নেয়া। কেননা এতে রয়েছে আল্লাহ এবং বান্দার জন্য শান্তি ও রহমত কামনার দোয়া, যা না পড়লে বঞ্চিত হবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে তাশাহহুদ শেখার তাওফিক দান করুন। তাশাহহুদ পড়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করতে তাওহিদের কালেমার সাক্ষ্য দেয়ারও তাওফিক দান করুন।

আমিন।

5/5 - (15 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button