স্বাস্থ্য

বাসক পাতার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

আজকের পুরো আর্টিকেলে আমরা বাসক পাতা কি, এটি খাওয়ার নিয়ম, বাসক পাতার উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানবো।

বাসক পাতা হচ্ছে এক ধরনের ওষুধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এটির ১-২ টি পাতা দৈনিক খেতে পারলে এটি আমাদের শরীরের নানাবিধ রোগের উপসম করে।

অনেক আগে থেকেই ভেষজ গুণে গুণান্বিত এই বাসক পাতা। বাসকের ভেষজ নানাবিধ গুণাগুণ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। বাসকের কাঁচা পাতা খেলে এটি তৎক্ষণাৎ আমাদের শরীরে কাজ করতে শুরু করে দেয়।

বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এটির চাষ করা হয়ে থাকে। বাসকের পাতার মধ্যে নানাবিধ ওষধি গুণ থাকার কারণে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো পাতাগুলো কিনে থাকে। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন এই পাতার গুণাগুণ কতটা।

বাসক পাতা কি?

এতক্ষনে নিশ্চই বুঝে গিয়েছেন বাসক পাতা এক ধরনের উদ্ভিদের পাতা, যেটির অনেক ওষধি গুণাগুণ আছে। বাসক একটি ভেষজ উদ্ভিদ যেটি ভারত উপমহাদেশীয়। অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশের সর্বত্র এটি পাওয়া যায়।

বাসক পাতার বৈজ্ঞানিক নাম

‘আড়াটোডা বাসিকা’ হলো বাসক এর বৈজ্ঞানিক নাম, এটির আয়ুর্বেদিক নাম হলো বাসকা/বাঁসা এবং ‘Vasaka, Malabar Nut Tree’ হলো এটির ইংরেজি নাম। হিন্দিতে এটিকে ‘আডুসা’ বলা হয়ে থাকে।

বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য

বাসক পাতার গাছটি লম্বায় ৩-৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদটি সাধারণত আর্দ্র এবং সমতলভূমিতে বেশি জন্মে থেকে।

বাসক পাতা আমাদের অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। নিয়ম করে এটি খেতে পারলে আমাদের শরীরের বেশ উপকার হবে।

বাসক পাতার উপকারিতাঃ

১)সর্দি ও কাশির সমস্যা দূর হয়

আদিকাল থেকেই সর্দি-কাশি এর সমস্যায় ব্যবহার করা হতো বাসকের পাতাকে। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তন এর কারণে সৃষ্ট সর্দি এবং কাশির সমস্যা আমাদের অনেককে ভুগিয়ে থাকে। যদি আপনারও এমন হয় বা বহু পুরনো সর্দি-কাশি থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ২-৩ টি বাসক পাতা বেটে এর রস পান করতে পারেন। এটির রস অনেকটা তেতো হয়। তবে এক চামচ মধুর সাথে এক চামচ বাসক পাতার রস নিয়মিত কয়েকদিন খেতে পারলে অতি দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।

২) শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করতে

অনেক সময় আমাদের শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা বড় আকারে দেখা দিয়ে থাকে। এটির মধ্যে থাকা ওষধি গুণ শ্বাসনালী প্রশস্ত রাখে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হলে ২ চামচ বাসকের রস সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। নিয়মিত কয়েকদিন খেলে বেশ উপকার পাবেন। এছাড়া এটি ব্রঙ্কাইটিস ও হাপানি রোগের মতো সমস্যায় বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩)জ্বর কমানোতে

ঋতু পরিবর্তনের কারণে হোক অথবা অন্যান্য কোনো কারণে আমরা প্রায় জ্বর আক্রান্ত হয়ে থাকি। জ্বর হলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বেশি থাকে এইসময় এই ভেষজ উদ্ভিদ পাতার রস আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। জ্বর এর সাথে যাদের সর্দি এবং কাশি থাকে তারা নিচের দেয়া বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম মেনে এটি খেলে উপকার পাবেন।

৪)জন্ডিসের সমস্যা দূর করতে

যারা জন্ডিসের মত সমস্যায় ভুগছেন তারা বাসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। এটির রস জন্ডিসের মত সমস্যা দূর করতে বেশ উপকারী। এক চামচ বাসকের রস এর সাথে এক চামচ মধু অথবা চিনি মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে জন্ডিস অনেকটা সেরে যাবে। জন্ডিস নিয়ে সমস্যায় পড়ে থাকলে এটি করে দেখতে পারেন।

৫) দাঁতের সমস্যা দূর করে থাকে

দাঁতের সমস্যায়ও এই ভেষজ উদ্ভিদের রস অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। দাঁতের নানা সমস্যা যেমন পাইরিয়া বা অনেক সময় দেখা যায় আমাদের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে, এই ধরনের সমস্যায় বাসকের পাতাকে ভালোমতো ধুয়ে দুই কাপ জল নিয়ে তাতে ফুটিয়ে নিন। এরপর সে জলগুলো দিয়ে কুলকুচি করুন ভালোমতো। আপনার দাঁতের সমস্যা অনেকখানি দুর হয়ে যাবে।

৬)ঘামের গন্ধ দূর করতে

গরমের কারণে আমাদের শরীরে অনেক ঘাম হয়, যার কারণে আমাদের শরীর থেকে বাজে ঘামের গন্ধ বের হয়ে থেকে। এই ঘামের গন্ধ যদি শরীর থেকে দূর করতে চান তাহলে স্নানের আগে বাসকের পাতার রস গায়ে ভালোমতো মেখে নিন এবং পরে স্নান করে নিন। আপনার ঘামের দুর্গন্ধ চলে যাবে।

৭)আমাদের ত্বকের যত্নে

আমরা আমাদের ত্বক ফর্সা বা উজ্জ্বল করার জন্য কতকিছুই না করে থাকি। অনেক ধরনের ফেস ওয়াশ কিংবা অনেক ক্রিম আমরা আমাদের ত্বকে ব্যবহার করে থাকি। তবে অনেক ক্ষেত্রে এর ভালো ফল আমরা পাইনা। বাসকের রসের সাথে শঙ্খচূর্ণ মিলিয়ে মুখে লাগাতে পারলে আমাদের ত্বক অনেকটা উজ্জ্বল ও ফর্সা হবে।

৮) খিচুনির সমস্যা দূর করতে

আমাদের অনেকের মধ্যে খিচুনির রোগ রয়েছে। এই রোগটি সারানোর জন্য বাসক পাতার রস অনবদ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত এই উদ্ভিদের রস খাওয়ার ফলে এ ধরণের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৯)রক্ত পরিষ্কার করতে

শরীরের রক্ত পরিষ্কার না থাকলে আমাদের মুখে ব্রণ হওয়া, পেটের সমস্যা বা এলার্জি আরো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই বলা যায়, রক্ত পরিষ্কার না থাকলে আমাদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার রক্তকে পরিষ্কার রাখতে চান তাহলে আপনার দৈনিক রুটিনে বাসক পাতাকে অবশ্যই রাখুন। এটি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে। রক্তচাপ কমাতেও এটি আমাদের সাহায্য করে।

১০)চর্মরোগের সমস্যায়

চর্ম রোগ জনিত সমস্যা যাদের রয়েছে তারা এই উদ্ভিদের রস থেকে খেয়ে দেখতে পারেন। চর্ম রোগ জনিত সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

কোন কিছু সেবনের পূর্বে এটির কোনো অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা সেটি জেনে নেওয়া দরকার। তাহলে চলুন বাসকের পার্শপ্রতিক্রিয়া কি সেগুলো জেনে নেওয়া যাকঃ

কোন ধরনের সমস্যা ছাড়া অথবা প্রয়োজন ছাড়া যদি এই উদ্ভিদের পাতার রস খাওয়া হয় তাহলে বমি ভাব, বমি সমস্যা বা পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলেও এ ধরনের সমস্যা হয়।

বাসক পাতা খাওয়ার নিয়মঃ

এমনিতে অনেকভাবেই বাসক পাতা খাওয়া যায়। এছাড়া অনেক ধরনের সমস্যা দূর করার জন্যে এটি খাওয়া হয়ে থাকে। তবে আপনি দুইভাবে এটি খেয়ে দেখতে পারেন।

১) আপনি এটিকে বেটে এর রস তৈরি করে খেতে পারেন। বাসক পাতা বেটে এর রস খেতে চাইলে প্রথমে পাতাগুলো একটি পরিষ্কার পাত্রে নিন, এরপর পরিষ্কার জলের সাহায্যে পাতাগুলো ভালোমতো ধুয়ে নিন।

এখন আপনি যেকোনো কিছুর মাধ্যমে পাতাগুলো বেটে সেখান থেকে রসগুলো নিয়ে নিন। এইভাবে পাতা পেতে রসগুলো খেতে পারেন।

২) পরিষ্কার জলে ফুটিয়ে খেতে পারেন বাসক পাতা। এক্ষেত্রেও প্রথমে বাসকের পাতা ভালোমতো ধুয়ে নিন। এরপর পানিতে এটিকে ফুটিয়ে নিন।

পাতাগুলো জলে ফুটানো হয়ে গেলে, জল ঠান্ডা হলে সেটিকে ছেঁকে তারপর পান করবেন।

৩)যাদের খুব বেশি সর্দি কাশি এর সমস্যা আছে তারা নিয়মিত ২-৩টি বাসক পাতা বেটে এর রস খেতে পারেন। যাদের কোনো ধরনের সমস্যা নেই তারা অযথা বাসক এর পাতা না খাওয়াটা ভালো হবে।

তাহলে বাসক পাতা কিভাবে খাওয়া যায় তার নিয়ম জেনে নিলাম।

আমাদের শেষ কথা

বন্ধুরা আজকে আমরা বাসক পাতার উপকারিতা এবং এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানলাম।

উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলো থেকে যদি আপনার ওই ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি বাসক পাতা আপনার দৈনিক রুটিনে রাখতে পারেন। নিয়ম করে কয়েকদিন খেলে আপনি আপনার ওই ধরনের সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পাবেন।

আজকের আর্টিকেলটা ছিল মূলত এই পর্যন্ত। আর্টিকেলটা কেমন লেগেছে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুনঃ

5/5 - (36 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button