স্থায়ীভাবে এলার্জি দূর করার উপায়
এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে। এলার্জির কথা কম বেশি আমরা সবাই শুনেছি। কিন্তু অনেকে আছেন যে এলার্জি সম্পর্কে তাদের তেমন কোন ধারণা নেই। আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগের জন্য দায়ী এলার্জি। শ্বাসকষ্ট, একজিমা এসব রোগের জন্য এলার্জিকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
এলার্জির সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। এলার্জির যন্ত্রণা যে কতটা ভয়াবহ তা শুধু ভুক্তভোগীরা জানেন। এলার্জি দূর করার জন্য তারা নানা ধরনের চেষ্টাও করে থাকেন। কিন্তু শেষমেশ তারা কোন ফলাফল পান না।
চোখের সামনে সুস্বাদু সব খাবার থাকলেও তারা খেতে পারেন না শুধুমাত্র এলার্জির ভয়ে। যার ফলে তাদেরকে ভুগতে হয় পুষ্টিহীনতার সমস্যায়। আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব এলার্জি কি এবং এলার্জি দূর করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কেঃ
Contents
- এলার্জি কি?
- এলার্জি কেন হয়?
- এলার্জি দূর করার কয়েকটি উপায়
- ১.কোল্ড শাওয়ার করার মাধ্যমে এলার্জি থেকে মুক্তি
- ২.এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে অলিভ অয়েল
- ৩.বেকিং সোডা দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
- 8.অ্যাপল সিডার ভিনেগার দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
- ৫.অ্যালোভেরা দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
- ৬.নারকেল তেল দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
- ৭.তুলসী দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
- ৮.নিম পাতা দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
- এলার্জি দূর করার ঔষুধ
এলার্জি কি?
এলার্জির শব্দটি আসলে গ্রিক শব্দ Allos এবং Ergos শব্দের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। যার অর্থ হলো পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া। ধুলাবালি ফুলের রেণু এবং নির্ধারিত কিছু খাবার ঔষধ ইত্যাদির ফলে শরীরে প্রদাহজনিত যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয়ে থাকে এলার্জি।
আমাদের শরীরে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম রয়েছে। কোন কারণে যদি ইমিউন সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে এলার্জি বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে।
সহজভাবে বলতে গেলে, আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন ক্ষতিকর বস্তুর ওপর শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে অ্যালার্জি। এই রোগটি আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষের কাছে অসহনীয় একটি নাম।
এলার্জি কেন হয়?
এলার্জি মূলত কি কারণে হয়ে থাকে এটার সম্পর্কে সুস্পষ্ট সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। আপনারা অনেকেই জানেন শ্বাসকষ্ট, একজিমা ইত্যাদি চর্ম রোগের প্রধান কারণ হলো এলার্জি।
ধুলাবালি হলো হাঁপানির জনিত এলার্জির অন্যতম একটি কারণ। ঘরের ধুলাবালিতে থাকে মাইটি নামক এক ধরনের জীবাণু যা সাধারণত হাঁপানির জনিত এলার্জির সৃষ্টি করে থাকে। তাই যারা সাধারণত হাঁপানিজনিত এলার্জির সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা অবশ্যই ধুলাবালি থেকে দূরে থাকবেন। মূলত ধুলাবালিতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার জন্যই এলার্জির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
এলার্জি দূর করার কয়েকটি উপায়
১.কোল্ড শাওয়ার করার মাধ্যমে এলার্জি থেকে মুক্তি
ঠান্ডা স্নান ত্বকের জ্বালা বা এলার্জির যন্ত্রণা দূর করতে অনেকটা সাহায্য করে থাকে। একটি শীতল ঝরনা আপনার রক্তনালী সংকুচিত করতে সাহায্য করে থাকে এবং হিস্টোমিন বেরোতে দেয়না। আর এটা সাধারণত ত্বকের জ্বালা এবং এলার্জির তীব্রতা অনেকাংশে হ্রাস করে থাকে।
২.এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে অলিভ অয়েল
সাধারণত অতিরিক্ত ভার্জিন জলপাই তেল ত্বকের জন্য দুর্দান্ত ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে থাকে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, অ্যালার্জির সমস্যা পরে ত্বক নিরাময় এবং মেরামত করতে সহায়তা করে থাকে এবং চুলকানিটা কমাতেও কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি রাসায়নিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করে এই উপাদানটি ব্যবহার করলে সব থেকে ভালো ফল পাবেন।
৩.বেকিং সোডা দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
বেকিং সোডা হল এলার্জি দূর করার জন্য দুর্দান্ত একটি ঘরোয়া উপায়। এটি মূলত ত্বকে ফুসকুড়ি দূর করতে সাহায্য করে থাকে এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। তাছাড়া চুলকানীর সমস্যা টাও অনেক কমিয়ে আনে এটি।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
আধা চা চামচ বেকিং সোডা কিছু জলে মিশিয়ে প্রথমে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর পেস্টটি তৈরি হয়ে গেলে এটি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় প্রয়োগ করুন এবং ধুয়ে ফেলার আগে এটি কয়েক মিনিট রেখে দিন। বেকিং সোডা বেশিক্ষণ রাখবেন না বেশিক্ষণ রাখলে আপনার জ্বালা আরো বেড়ে যেতে পারে।
8.অ্যাপল সিডার ভিনেগার দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
অ্যাপল সিডার ভিনেগার হচ্ছে শুধু এলার্জি নয় অনেক রোগের জন্যই আশ্চর্য এক উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিটিক অ্যাসিড যা সাধারণত শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। সাধারণত এই দুটি উপাদান ত্বকে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
এক কাপ গরম জলে ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার প্রথমে আপনাকে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর খুব ভালোভাবে সেটা নাড়তে হবে। তারপর একটি তুলো বল দিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখুন।
এটা হয়ে গেলে আক্রান্ত স্থানে দ্রবণটি ছড়িয়ে দিতে হবে এবং এটি শুকাতে দিতে হবে। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট হয়ে গেলে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত এলার্জির সমস্যা থেকে আপনি মুক্তির না পারছেন দিনে দুইবার আপনি এই কাজটি করতে পারেন।
৫.অ্যালোভেরা দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
এলার্জি প্রতিরোধ করতে অ্যালোভেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যালোভেরা জেল মূলত প্রাকৃতিক ঔষধী এবং অ্যান্টিইনফ্যামেলটরি বৈশিষ্ট্য গুলোর কারণে অনেক প্রাকৃতিক নিরাময়ের প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াটিকে গতি দেয় এবং প্রশস্ত স্বস্তি দেয়, এটি হলো দেহের ত্বকের এলার্জির অন্যতম সেরা প্রতিকার।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
প্রথমে আপনাকে অ্যালোভেরার পাতা সংগ্রহ করতে হবে এবং অ্যালোভেরার পাতা থেকে ১ চা-চামচ জেল বের করে নিতে হবে একটি বাটিতে। তারপর এলার্জি দ্বারা আক্রান্ত স্থানে আপনি এই অ্যালোভেরার জেল টি সরাসরি প্রয়োগ করুন। তারপরে ৩০ মিনিট রাখতে হবে এই দ্রবণটি তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে। এই দ্রবণটি আপনি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন নিয়মিত।
৬.নারকেল তেল দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
সাধারণত শিশুদের এলার্জির জন্য নিরাপদ একটি উপাদানের নাম হল নারকেল তেল। এটিতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য যা সাধারণত এলার্জি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া এটিতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যানালজেসিক বৈশিষ্ট্য চাইটি অনেকগুলো ত্বকের অবস্থার জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিকার তৈরি করে থাকে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
প্রথমে আপনাকে এক চা চামচ নারকেল তেল একটি পাত্রে নিয়ে সেটিকে হালকা গরম করে নিতে হবে এবং এটি আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। তারপর হাল্কা গরম জলে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। এলার্জি নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এটি দিনে তিন থেকে চার বার করতে পারেন।
৭.তুলসী দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
সাধারণত তুলসীতে রয়েছে ব্রড স্পেক্ট্রাম অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ত্বককে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে। তাছাড়া এটিতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা সাধারণত ফুলে যাওয়া এবং চুলকুনি হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে। এটি প্রাকৃতিক ভাবে ত্বককে এলার্জি থেকে মুক্তি দিতে কার্যকারী একটি উপায়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
প্রথমে আপনাকে একমুঠো তুলসির পাতা নিতে হবে এবং সেগুলো ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর পাতাগুলি আপনাকে একটি ব্লেন্ডারে গিষে নিতে হবে। তারপর যেই পেস্টটি তৈরি হবে সেটি আক্রান্ত স্থানের উপর প্রয়োগ করুন। ধুয়ে ফেলার আগে আক্রান্ত স্থানে এটি ৩০ মিনিট রেখে দিন এবং নিয়মিত কয়েকদিন এভাবে ব্যবহার করতে থাকুন।
৮.নিম পাতা দিয়ে এলার্জি দূর করার উপায়
নিম পাতার রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুন। নিমপাতার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এটি সাধারণত প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে লালচে ভাব ফোলা ভাব এবং চুলকুনি লাঘব করতে পারে।
নিমকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন বলা হয়ে থাকে তাই এটি মুখের ত্বকের এলার্জির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারে এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
প্রথমে নিমপাতা গুলো একটি ব্লেন্ডারে সুন্দর করে পিষে নিতে হবে। তারপর আক্রান্ত স্থানের ওপর এই পেস্টটি প্রয়োগ করুন এবং এটি ৩০ মিনিট রেখে দিন।
এলার্জি দূর করার ঔষুধ
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনো কোন ঔষুধ সেবন করবেন না। তবে সামান্য এলার্জির জন্য alatrol ট্যাবলেট খেতে পারেন। এলার্জির সমস্যা বেশি হলে Ebatin ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।
পরিশেষে, ত্বকের এলার্জি সাধারণত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এইগুলো বিভিন্ন অ্যালার্জেন যেমন ধাতু, গাছপালা, পোকার কামড়, খাবারের কারণেও হতে পারে। উপরে যে সব প্রতিকারের কথা আমি বলেছি এসব উপাদান গুলোর মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে আপনি এলার্জির জ্বালা ভাব এবং ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।