এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম। এটি মূলত একটি আয়ুর্বেদিক ঔষুধ। রোগ নিরাময় থেকে শুরু করে রূপচর্চায়ও এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও কিভাবে এর ব্যবহার করবেন আজকের আর্টিকেলে আমরা এ সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত বলব।
এলোভেরার কি ত্বকের জন্য ভালো?
প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত মেয়েদের সৌন্দর্য চর্চায় এলোভেরা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধু সৌন্দর্যের জন্যই না সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানান রোগের ঔষধ হিসেবে এলোভেরা ব্যবহার করা হয়। বৃদ্ধদের শরীর ব্যথা, শরীর ঠান্ডা, মাথা ঠান্ডা রাখার কাজে এর ভূমিকা অনেক। তাছাড়াও এলোভেরা ডায়াবেটিস এর প্রতিষেধক হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এলোভেরায় আছে এমন কিছু খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা নিমিষেই শরীরে ফ্যাট কমিয়ে ফেলে। একটি মানুষের সৌন্দর্য এবং সুস্থ শরীরের প্রতীক এলোভেরা।
ত্বকে এলোভেরার উপকারিতা
ত্বকের যত্নে এলোভেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের যত্নে এখন সকলেই এলোভেরা ব্যবহার করে থাকে। এটিকে নাইট ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এলোভেরা ত্বককে ন্যাচারালি ফর্সা করে ও মুখের পোরসের গর্ত ভরাট করে দেয়। নিয়মিত এলোভেরা ব্যবহারে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এলোভেরা রোদে পোড়া ভাব শেষ করে নিমিষেই। এলোভেরা কে আমরা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারি এমনকি ক্লিনজার হিসেবে এলোভেরা অন্যতম। এলোভেরা ত্বককে চামড়ার ভিতরে থেকে পরিষ্কার করে এমনকি আমরা ফেসপ্যাক হিসেবেও এলোভেরাকে ব্যবহার করতে পারি।
এলোভেরা ফেসপ্যাক ত্বককে নরম ও ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ত্বককে উজ্জ্বল করে, ত্বকের ভিতরের মরা কোষ কে বের করে আনে, এর ফলে ত্বক থাকে সুস্থ ও জীবাণুমুক্ত। এলোভেরা জেল সারারাত মুখে লাগিয়ে সকালে মুখ ধুয়ে ফেললে খুব ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। এমনকি মুখে ব্রণের দাগ থাকলে তা চলে যায়। এছাড়াও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি খুব ভালো কাজ করে। তাই নিয়মিত এলোভেরা ত্বকে লাগালে, আপনিও আপনার স্কিনকে সুন্দর, উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় বানাতে পারবেন।
অ্যালোভেরার অনেক সুবিধা পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। অসুবিধাগুলো হলো –
• যাদের এ্যালার্জী রয়েছে তাদের ত্বকে অ্যালোভেরার ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
• গর্ভবতী মহিলাদের এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করা উচিত না কা রণ এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
• অ্যালোভেরার রস বেশি পরিমাণে খাবেন না শুধুমাত্র ডোজ হিসেবে খাবেন অন্যথায় ডায়রিয়া হতে পারে।
• অ্যালোভেরা ব্যবহারের কারণে যদি কোনও সমস্যা হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে এর ব্যবহার বন্ধ করুন।
এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
এখন চলুন জেনে নেই অ্যালোভেরার দিয়ে তৈরী ত্বক ফর্সাকারী কিছু যাদুকরী ফেসপ্যাক সম্পর্কে-
অ্যালোভেরা এবং মুলতানি মাটিঃ এই প্যাকটি তৈরী করার জন্য একটি বাটিতে ২ চা চামচ এলোভেরা জেল, ১ চা চামচ মুলতানি মাটি, ১ চা চামচ মধু, আধা চা চামচ লেবুর রস ও পরিমাণমতো গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে তা সম্পূর্ন মুখে লাগিয়ে নিতে হবে ও শুকানোর জন্য ২৫-৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। তারপর প্যাকটি শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখটি ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বককে ফর্সা করে তোলার জন্য সপ্তাহে অন্তত ২ বার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও নিয়ম, মুখ ফর্সা ও সুন্দর করার উপায়
অ্যালোভেরা এবং চালের গুড়াঃ অ্যালোভেরা এবং চালের গুড়োর এই ফেসপ্যাকটি বানাতে আপনাদের লাগবে ১ চা চামচ অ্যালোভেরার জেল, ১ চা চামচ চালের গুঁড়া, আধা চা-চামচ কাঁচা হলুদের গুড়া, একটি অর্ধেক পাকা টমেটোর পেস্ট ও
পরিমান মত কাঁচা তরল দুধ।
সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। তারপর প্যাকটি সম্পূর্ন মুখে লাগিয়ে নিতে হবে ও শুকানোর জন্য ১০ – ১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। তারপর প্যাকটি শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখটি ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক ফর্সা করার জন্য এলোভেরার তৈরী এই ফেসপ্যাকটি অত্যন্ত কার্যকরী।
অ্যালোভেরা ও চন্দন পাউডারঃ অ্যালোভেরা এবং চন্দন পাউডারের এই ত্বক ফর্সাকারী যাদুকরী ফেসপ্যাকটি বানাতে লাগবে ২ চা চামচ এলোভেরা জেল, ১চা চামচ চন্দন পাউডার, ২ টেবিল-চামচ কাঁচা তরল দুধ, ২ চা চামচ শশার রস ও ১ চা চামচ মধু।
একটি বাটিতে সব উপকরণ গুলো ভালভাবে মিশিয়ে নিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। তারপর তা মুখ ও ঘাড়ে লাগিয়ে নিন এবং ২০-২৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে অনন্ত ৩ বার ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরা ও আলুঃ অ্যালোভেরা এবং আলুর ফেসপ্যাকটি বানাতে আমাদের লাগবে ২ চা চামচ অ্যালোভেরার জেল। একটি খোসা ছাড়ানো বড় আলুর পেস্ট, একটি আধা পাকা টমেটোর রস ও ১চা চামচ অলিভ অয়েল।
একটি পাত্রে সবগুলো উপকরণ ভালভাবে মিশিয়ে নিয়ে এলোভেরার মিশ্রণটি তৈরি করে নিন। তারপর এটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিন ও শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন। প্যাকটি শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে অনন্ত ২ বার ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরা ও নিমপাতাঃ অ্যালোভেরা ও নিমপাতার এই প্যাকটি বানাতে একটি পাত্রে ১ চা চামচ নিমপাতার রস এবং পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল এক সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক ব্যাক্টেরিয়া মুক্ত হবে ও পাশাপাশি ফর্সাও হবে।
অ্যালোভেরা ও অলিভ অয়েলঃ ত্বকের মরা কোষ দূর করতে অ্যালোভেরা ও অলিভ অয়েল এ দুটি উপাদান বিশেষ ভুমিকা পালন করে। এই প্যাকটি বানাতে একটি বাটিতে পরিমাণ মতো এলোভেরা জেল এবং ১চা চামচ অলিভ অয়েল একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঘড়ি দেখে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২ দিন এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরা ও মধুঃ এই প্যাকটি তৈরী করতে আমাদের লাগবে ২ চা চামচ অ্যালোভেরা ও ১ চা চামচ মধু।
প্যাকটি তেরী হয়ে গেলে এটি হালকা ভাবে মুখে ১০ মিনিটের মতো ম্যাসাজ করুন। ত্বকে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করুন সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ বার।
অ্যালোভেরা ও শশার রসঃ এই প্যাকটি তৈরী করতে আমাদের লাগবে পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল এবং ১চা চামচ শশার রস।
উপাদানগুলো একত্রে মিশিয়ে এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি ত্বকের ময়লা অপসারণ করে। এবং ত্বকে উজ্জ্বল রঙ এনে দেবে।
অ্যালোভেরা ও লেবুঃ ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এ দুটি উপাদান অত্যান্ত কার্যকরী। এলোভেরা জেলের সঙ্গে ১চা চামচ লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ উপায় টি ত্বকের কালো ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
সৌন্দর্য জগতে এলোভেরার ব্যবহার অনেক বেশি। এলোভেরা দিয়ে রূপচর্চা করার কোন বিকল্প নেই। খুব অল্প খরচে প্রাকৃতিক এই উদ্ভিদ দিয়ে সহজে রুপচর্চা করা যায় যা আপনার ত্বক কে রাখবে সতেজ, সুন্দর এবং উজ্জীবিত।
আরো পড়ুনঃ