মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় ঘরোয়া স্কিন গ্লোয়িং টিপস
ত্বক আমাদের শরীরের বাহ্যিক অংশ যা প্রতিনিয়ত নানা দূষণের শিকার হয়। আমাদের শরীরের ত্বকের তুলনায় মুখের ত্বক অনেক বেশি স্পর্শকাতর বা সেনসিটিভ। যার দরুন দূষণের ফলে নানাবিধ সমস্যা আমাদের ত্বকে সৃষ্টি হয়।
মুখের উজ্জ্বলতা হারানোর কারণ
আমরা নানা কাজে ঘরের বাহিরে যেয়ে থাকি, এছাড়াও ঘরে নানাবিধ ধুলো ময়লার কাজ ও করে থাকি। এসব কারণে আমাদের ত্বকের কোষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘরে বা বাহিরে যেসব কারণে ত্বকের বা মুখের উজ্জ্বলতা হারায় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. বাহিরের বায়ু দূষণ।
২. যানবাহনের কালো ধুয়া, সিগারেট এর ধুয়া।
৩. সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি।
৪. সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে বাহিরে যাওয়া।
৫. মুখে মাস্ক ব্যবহার না করা।
৬. যখন তখন ত্বকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা বা কাউকে করতে দেয়া।
৭. বাহির থেকে এসে ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার না করা।
৮. সারাদিন চুলার সামনে কাজ করা।
৯. ক্যামিকেল যুক্ত প্রোডাক্ট বেশি বেশি ব্যবহার করা।
১০. রাতে এবং দিনে রুটিন করে স্কিন কেয়ার এবং বডি কেয়ার না করা।
এসব কারণেই ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। এসব থেকে বেচে কিভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর যায় তার উপায় নিচে আলোচনা করা হলো:
মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
নিয়মিত স্কিনকেয়ার:
মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়ে শুরুতেই বলতে হয় নিয়মিত স্কিনকেয়ার করার কথা।কারণ আমরা যেহেতু প্রতিনিয়ত নানা কাজে বাহিরে যাই বা ঘরে নানা ধুলোবালি রান্নার কাজ করে থাকি সেসব আমাদের ত্বকে বিশাল এক ময়লার আস্তরণ গড়ে তোলে। সময় থাকতে যদি আমরা এসব পরিষ্কার না করি তা বড় ধরনের সমস্যা যেমন, ব্রণ, মেছতা, পোরস, ব্লেক/ওয়াইট হেডস, ক্ষত, বলিরেখা ইত্যাদি নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত সকালে এবং বিকালে স্কিন কেয়ার করাটা অনেক জরুরি। নিচে কিছু টিপস দেয়া হলো:
১. মুখের ত্বক তৈলাক্ত বা শুষ্ক যাই হোক না কেনো সকালে উঠেই একটা ভালো মানের ফেইসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. ত্বকে সানস্ক্রিন এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
৩. যার ত্বকে যে ফেসিয়াল ওয়েল ব্যবহার করা সম্ভব সেটি ব্যবহার করে দিনে ১/২ বার ফেইস মাসাজ বা facial yoga করার অভ্যাস করা ভালো। এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মুখের ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
৪. সপ্তাহে ১-২ দিন ফেইসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে।
৫. সকালে এবং রাতে একটা নিয়ম মেনে ত্বকের পরিচর্যা করে ঘুমাতে যেতে হবে।
৬. যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার এর আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।
৭. রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ফেইসওয়াস দিয়ে ধোয়ার পর প্রথমে টোনার পর্যায়ক্রমে সিরাম, এসেন্স, ময়েশ্চারাইজার, ফেসিয়াল ওয়েল অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট অর্ডার ফলো করে স্কিন কেয়ার করলে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়া শুধু সময়ের ব্যপার মাত্র।
পুষ্টিকর খাবার :
আমাদের খাবারের সাথে আমাদের ত্বকের সরাসরি একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যা খাই বা সেবন করি তার সরাসরি প্রভাব আমাদের ত্বকে পড়ে।
১. তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।একদমই পরিহার করতে না পারলে যতটুকু কম খাওয়া যায়।
২. প্রতিদিন একটি বা দুইটি ফল নিত্যদিনকার খাবার তালিকায় যোগ করতে হবে।যে সময়ে যে ফল পাওয়া যায় সেভাবে প্ল্যান করা যেতে পারে।
৩. নিয়মিত ডিম, দুধ এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
৪. অবশ্যই খাদ্য তালিকায় শাক সবজি জাতীয় খাবারের পরিমান বাড়াতে হবে।
৫. যত বেশি পরিমানে গ্রিন জুস খাওয়া যায় তত বেশি মুখের ত্বক উজ্জ্বল হয়।
৬. অলিভ ওয়েল দিয়ে খাবার বানানোর অভ্যাস করতে হবে।
৭. বেশি করে পানি পান করতে হবে।
৮. চা বা ক্যাফেইন যত কম খাওয়া যায়।
ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে ফেইসপ্যাক ব্যবহার
প্রতিদিন ঘরে রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে এমন নানা উপকরণ দিয়ে ফেইসপ্যাক তৈরি করা যায়। যেমন: টকদই, লেবু, টমেটো, হলুদ, অ্যালোভেরা, আলু, বেসন, চালের গুঁড়া, মধু, প্রাকৃতিক উপাদান মুলতানি মাটি ইত্যাদি। নিয়মানুসারে এসব উপকরণ মিক্স করে ফেইসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো যায়, ট্যানিং দূর করা যায়, পোরস ছোট করা যায়।
স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল :
১. এক গ্লাস কুসুম গরম পানি দিয়ে দিনের শুরুটা করতে হবে।
২. নিয়মিত ১০-২০ মিনিট করে ব্যায়াম বা হাটার অভ্যাস করতে হবে।
৩. খাবার দাবারে অনিয়ম করা যাবেনা।
৪. যখন তখন মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. শোয়ার বালিশ অবশ্যই পরিষ্কার আর সম্ভব হলে সিল্ক এর ব্যবহার করতে হবে।
৬. যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার এর পূর্বে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।
আপনার মুখের ত্বক আপনার কনফিডেন্স বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে। এর সৌন্দর্য ধরে রাখতে কিছুটা যত্নশীল হওয়া উচিত সকলেরই। উপরে বর্নিত ছোট খাটো কাজ গুলো নিয়মিত করার মাধ্যমেই মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ানো সম্ভব।