বিসিএস

কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ও বিস্তারিত তথ্য – ২০২৩

কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের একটি যুগান্তকারী অবকাঠামো প্রকল্প যা দেশের পরিবহন ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করতে প্রস্তুত। চলুন জেনে নেই কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ও সামগ্রিক তথ্য।

কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান, কর্ণফুলী টানেলের ইতিহাস, অবস্থান, নকশা, নির্মান, অর্থায়ন, চ্যালেঞ্জ, সুবিধা সমূহ সহ সকল কিছুই থাকছে আমাদের আজকের আলোচনায়।

প্রথমে চলুন জেনে নেই – সংক্ষিপ্ত ভাবে কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান –

কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

১. কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের যাত্রা কবে শুরু হয়? – ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী।
২. কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ কবে উদ্ভোদন করা হয়? – ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী।
৩. কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ কে উদ্ভোদন করেন? – বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪. কর্ণফুলী টানেল অবস্থিত- চট্টগ্রাম জেলায়।
৫. কর্ণফুলী টানেল সংযুক্ত হচ্ছে – পতেঙ্গা ৪১ নং ওয়ার্ডের নেভাল একাডেমির বন্দর অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের আনােয়ারা পর্যন্ত।
৬. কর্ণফুলী টানেলে রয়েছে – ২ লেনের রাস্তা।
৭. কর্ণফুলী টানেলে রয়েছে – ৪ লেনের ক্যারেজওয়ে এবং একটি পৃথক সার্ভিস লেন।
৮. কর্ণফুলী টানেল মোট দৈর্ঘ্য – ৯.৩৯২ কিলোমিটার।
৯. কর্ণফুলী মূল টানেলের দৈর্ঘ – ৩.৪৩ কিলোমিটার।
১০. কর্ণফুলী টানেলে বায়ুচলাচল ফ্যান আছে – মোট ৮টি।
১১. কর্ণফুলী টানেলের জেট ফ্যান সংখ্যা – ১২৬ টি।
১২. কর্ণফুলী টানেলে যানবাহন চলাচল ক্ষমতা – প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৮,০০০ টি।
১৩. কর্ণফুলী টানেলে যানবাহনের গতিসীমা – ৬০ কি.মি./ ঘন্টা।
১৪. কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ করছে – চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (CCCC)।
১৫. কর্ণফুলী টানেলের মোট ব্যয় প্রায় ১০,৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
১৬. কর্ণফুলী টানেলে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ মোট ব্যয়ের ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ।
১৭. চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে সহায়তা পায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি।
১৮. চায়না এক্সিম ব্যাংকের বিনিয়োগের সুদের হার – ২%।
১৯. কর্ণফুলী টানেলটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ০.১৬৬ শতাংশ অবদান রাখবে।
২০. কর্ণফুলী টানেলের দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার।
২১. কর্ণফুলী টানেলের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।
২২.কর্ণফুলী টানেলের ইংরেজি অপর নাম -Two towns – one city.
২৩. কর্ণফুলী টানেলের আসল নাম – ববঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টানেল।
২৪. কর্ণফুলী টানেলের নির্মান কাজ শেষ হবে – ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে।

টানেল কী?

একটি টানেল হল একটি ভূগর্ভস্থ গিরিপথ, যা আশেপাশের মাটি, মাটি বা পাথরের মধ্য দিয়ে খনন করা হয় এবং সাধারণত প্রতিটি প্রান্তে প্রবেশ ও প্রস্থান বাদে ঘেরা। একটি পাইপলাইন একটি টানেল নয়, যদিও সাম্প্রতিক কিছু টানেল ঐতিহ্যগত টানেল বোরিং পদ্ধতির পরিবর্তে নিমজ্জিত টিউব নির্মাণ কৌশল ব্যবহার করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টানেল

কর্ণফুলী টানেল, যার প্রকৃত নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টানেল দেশের একটি বড় ও উপকারী প্রকল্প। কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের প্রধান নৌপথ গুলোর একটি। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ঢাক-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথের সংযোগ স্থাপনে এই টানেল নির্মান করা হয়। আধুনিক বিশ্বের নান্দনিক কাঠামো নিয়ে নির্মান করা হচ্ছে এই টানেল।

কর্ণফুলী টানেল ২০২৩

কর্ণফুলী টানেল একটি বিস্তর ইতিহাস, কঠোর পরিশ্রম, নানা বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে পার হওয়া একটি বড় প্রকল্প। তাই কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা আমাদের সকলেরই উচিত দেশকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই টানেল নানা বিষয় চলুন জেনে নেই।

ইতিহাসঃ- কর্ণফুলী নদীর তলদেশে একটি টানেল নির্মাণের ধারণা প্রথম ১৯৬০ সালে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এই প্রকল্পের শুরু করার ভিতিস্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন।

অবস্থানঃ- কর্ণফুলী টানেলটি চট্টগ্রামে অবস্থিত, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। টানেলটি কর্ণফুলী নদী জুড়ে বিস্তৃত। টানেলটি পতেঙ্গার ৪১ নং ওয়ার্ড থেকে প্রবেশ করে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে আনোয়ারা প্রান্তে সার কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে বহির্গমণ করবে। টানেলের অবস্থান কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি প্রধান বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে দেশের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করে। যার ফলে সংযোগের উন্নতি হয় এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়।

নকশাঃ- কর্ণফুলী টানেলে রয়েছে একটি দুই লেনের রাস্থা, চার লেনের ক্যারেজওয়ে এবং একটি পৃথক সার্ভিস লেন। টানেলটির মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩৯২ কিলোমিটার। কিন্তু টানেল, যা পানিতে অবস্থান করবে তা ৩.৪৩ কিলোমিটার। টানেলের ভিতরে পর্যাপ্ত বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য টানেলে মোট আটটি বায়ুচলাচল ফ্যান এবং ১২৬ টি জেট ফ্যান থাকবে। টানেলটি প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৮,০০০টি যানবাহনকে চালনা করতে সক্ষম হবে এবং টানেলের ভিতরে গতি সীমা হবে ৬০ কিমি/ঘন্টা।

নির্মানঃ- কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (CCCC)। এটি চীনের একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার ও চীন সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

অর্থায়নঃ- প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। যার সম্পূর্ণটি বাংলাদেশি অর্থায়নে করা হচ্ছে না। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং ঢাকা সফরে আসলে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের সুদের হার ২ শতাংশ। কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ভিত্তিক এমন তথ্য জানতে আমাদের সকলেরই কৌতূহল অনেক বেশি।

চ্যালেঞ্জঃ- টানেলটির নির্মানে ভূতাত্ত্বিক অসুবিধা, পরিবেশগত উদ্বেগ এবং COVID-19 মহামারীর প্রভাব সহ বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজ স্থিরভাবে এগিয়ে গেছে। বর্তমানে কর্ণফুলী টানেলের নির্মান কাজ প্রায় শেষ। ২০২৩ সালের মার্চ মাসেই এটি উদ্ভোদন হবে বলে আশা করা যায়।

সুবিধাঃ- কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি পণ্য এবং জনগণের জন্য একটি দ্রুত এবং আরও দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থা প্রদান করবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাড়িয়ে তুলবে। টানেলটি দেশের অন্যতম যানজটপূর্ণ শহর চট্টগ্রামে যানজটও কমিয়ে দেবে।

এছাড়াও, কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করবে। এটি কক্সবাজার জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে একটি সরাসরি সংযোগ প্রদান করবে, যা উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদের একটি অঞ্চল।

শেষকথা

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কর্ণফুলী টানেলের মতো এমন বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা অনেক। কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ভিত্তিক তথ্যে আমরা বুঝতে পারি কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের অর্থনীতির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চলেছে। দেশের মানুষের জীবনধারা সহজ হওয়ার প্রত্যাশায় উদ্ভোদন হবে কর্ণফুলী টানেল।

আজকের আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম- কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ও সামগ্রিক তথ্য। লেখাটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানান। এরকম লেখা নিয়মিত পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন, ধন্যবাদ।

5/5 - (14 votes)

Sajjad Hossain

When I'm not immersed in the world of content creation, you'll find me actively engaging with the online community. I believe in the power of collaboration and learning from shared experiences. Let's connect on [social media platform] for real-time updates, discussions, and a glimpse into the exciting journey of online earning.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button