পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান a to z জেনে রাখা খুব জরুরী। কেননা বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রিলিমিনারি আর লিখিত পরীক্ষায় প্রায়শই পদ্মা সেতু সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। এমনকি ভাইভাতেও পদ্মা সেতু সম্পর্কে নানান প্রশ্ন করা হয়। যেমন পদ্মা সেতুতে খরচ বৃদ্ধির কারণ কী এবং পদ্মা সেতুর গুরুত্ব কী? পদ্মা সেতু সম্পর্কে নিচের লেখাটা পড়লে এ সমস্ত খুটিনাটি প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।কিন্তু তার মৃত্যুর কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এরপর ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর উপর ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব করেন।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী নির্মাণকাল ধরা হয় ১৯৯৯-২০০৪ সাল। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিলো। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ২০১১ সালে সেতু নির্মাণের কাজ আরম্ভ হওয়ার কথা ছিলো।
এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের সাথে একটি ঋণচুক্তি হয়। কিন্তু ঐ বছর ১০ অক্টোবর দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন এবং সেতু বিভাগের সচীব মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় এবং মোশাররফ হোসেনকে রিমান্ডে নেয় দুদক।
২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মোশাররফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অতপর নিজ দেশের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় শেখ হাসিনা সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসুন আমরা জেনে নিই স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে অনেক জানা অজানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
Contents
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান a to z সকল প্রশ্নোত্তর
প্রথমেই জেনে নিন পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু এবং পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ
- পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু?
- দৈর্ঘের বিবেচনায় পৃথিবীর বৃহত্তম সড়ক সেতুর মধ্যে পদ্মা সেতুর অবস্থান ২৫ তম এবং অন্যান্য সব দিক বিবেচনায় এ সেতুটি বিশ্বে ১২২ তম অবস্থান দখল করেছে।
- পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ?
- ২৫ শে জুন, ২০২২
১. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর অবস্থান কত?
উত্তরঃ ২৩°২৫′২১″ উত্তর ৯০°১৮′৩৫″ পূর্ব।
২. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম কী?
উত্তরঃ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
৩. প্রশ্নঃপদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত?
উত্তরঃ ৬.১৫ কিলোমিটার।
৪. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর প্রস্থ কত?
উত্তরঃ ১৮.১০ মিটার বা ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক।
৫. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হবে কোথায়?
উত্তরঃ নিচ তলায়।
৬. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ ৩.১৮ কিলোমিটর।
৭. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার।
৮ প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে কত কিলোমিটার?
উত্তরঃ দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটর।
৯. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় কত?
উত্তরঃ মূল সেতুতে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
১০. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় কত?
উত্তরঃ ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
১১. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে জনবল কতজন?
উত্তরঃ প্রায় ৪ হাজার।
১২. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার কয়টি?
উত্তর : ৮১টি।
১৩. প্রশ্নঃ পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা কত?
উত্তরঃ ৬০ ফুট।
১৪. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত?
উত্তরঃ ৩৮৩ ফুট।
১৫. প্রশ্নঃ প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং কয়টি?
উত্তরঃ ৬টি।
১৬. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ২৬৪টি।
১৭. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুতে কী কী থাকবে?
উত্তর : গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা।
১৮. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর ধরন কেমন?
উত্তরঃ দ্বিতলবিশিষ্ট এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হবে।
১৯. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ৪২টি।
২০. প্রশ্নঃ পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম কী?
উত্তরঃ চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড।
২১. প্রশ্নঃ সেতুর নকশা প্রনয়ণ করেছে কারা?
উত্তরঃ আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম AECOM।
২২. প্রশ্নঃ সেতুটির ভূমিকম্প সহনশীল মাত্রা কত?
উত্তরঃ ভূমিকম্প সহনশীল মাত্রা ৯।
২৩. প্রশ্নঃ পিলার ও স্প্যান সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ৪২ ও ৪১
২৪. প্রশ্নঃ প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য কত?
উত্তরঃ ১৫০ মিটার
২৫. প্রশ্নঃ সেতুর পরিচালনা,রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরশন(KEC)
আরো পড়ুনঃ মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর, রচনা ও অনুচ্ছেদ 2023
পদ্মা সেতুর খরচ কত? পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ কত হয়েছে? padma bridge cost
পদ্মা সেতুর খরচ মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তে মুন্সগীঞ্জের মাওয়া এবং দক্ষিণ প্রান্তে শরীয়তপুরের জাজিরা অবস্থিত। প্রাথমিকভাবে পদ্মাসেতু নির্মাণে যে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিলো, পরবর্তীতে নানান কারণে সে খরচ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পদ্মা সেতু ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। পুরো প্রকল্পের ব্যয় এত টাকা হলেও মূল সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে এর তিন ভাগের এক ভাগ টাকা। আর বাকি টাকা খরচ হয়েছে নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, পুনর্বাসন প্রকল্পসহ অন্যান্য আরও কিছু খাতে।
প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণ করেছে চীনে চায় মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। সেতুর পাশ দিয়ে ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইন তৈরি করতে খরচ হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। মূল সেতুর রেললাইনের সাইড দিয়ে যে গ্যাস লাইন টানা হয়েছে, সেটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে আরও ৩০০ কোটি টাকা।
নদীশাসনে খরচ
বিশ্বের উত্তাল নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা অন্যতম। পানিপ্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী পদ্মা। এ ধরনের খরস্রোতা নদীতে এর আগে সেতু নির্মাণ হয়নি। পানিপ্রবাহের দিক থেকে পদ্মার প্রবাহ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়। তাই নদী শাসন বেশ কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল হবে এটাই স্বাভবিক।
পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। এমন একটি নদীর উপর সেতু নির্মাণ খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ। পদ্মা সেতুর আশেপাশের এলাকাকে নদী ভাঙনসহ যে কোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রকল্প এলাকার দুই পাশে প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হয়েছে।
এর মধ্যে মাওয়া সাইডে ১.৬ কিলোমিটার এবং জাজিরাতে ১২.৪০ কিলোমিটার এলাকা নদীশাসন করতে হয়েছে। চীনের কোম্পানি সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড এই নদী শাসনের কাজটি সম্পন্ন করেছে। এই নদী শাসন বাবদ খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা।
সংযোগ সড়ক
পদ্মা সেতুর দুই সাইডের মূল সড়কের সাথে পদ্মা সেতুকে সংযুক্ত করতে নির্মিত হয়েছে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়ক। জাজিরা প্রান্তের মূল অ্যাপ্রোচ সড়কটির দৈর্ঘ্য ১০.৬৭ কিলোমিটার। অন্য দিকে অর্থাৎ মাওয়া প্রান্তে ১.৬৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে এএমএল-এইচসিএম(জেভি)কে। পদ্মাসেতুর দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ১২৯০.৮ কোটি টাকা।
সার্ভিস এরিয়ায় নানা খাতে ব্যয়
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী সার্ভিস এরিয়া-২ এর জন্য খরচ হয়েছে ২০৮.৭ কোটি টাকা। ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট এবং সেফটি টিমের জন্য প্রথম পর্যায়ে খরচ হয়েছে ৭২ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট অ্যান্ড সেফটি টিমের নিরাপত্তার জন্য আরও কিছু পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে। জলযান কেনার চুক্তি মূল্য ৭৭ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা।
কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট-১ বাবদ খরচ হয়েছে ৮৯ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট-২ এর জন্য খরচ হয়েছে ৬০৯ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা। সার্ভিস এরিয়ার ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে আব্দুল মোনেম লিমিটেডকে এবং কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি।
ভূমি অধিগ্রহণ
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় সর্বমোট ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর জমি। এই জমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা।
পুনর্বাসন
পদ্মা সেতু নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ হওয়ার কারণে ওই এলাকায় বসবাসরতদের অনেককেই তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করতে হয়েছে। এই সব মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য পদ্মা নদীর দুই পাশে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সহ ৭ টি পুনর্বাসন সাইট নির্মাণ করা হয়েছে।
সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য মোট ২৬৯৮ টি আবাসিক প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বানিজ্যিক প্লটের সংখ্যা ৮০ টি। এইসব প্লটের জন্য মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এই ৩ টি জেলার ২২ হাজার ৫৯৩ উপকারভোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৭৫৯ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
গ্রামীণ সড়ক
পদ্মা সেতুর কারণে এর আশপাশের এলাকার রূপও বদলে গেছে। সেখানে এলজিইডির মাধ্যমে গ্রামীন সড়ক নির্মাণ এবং সংস্কার করা হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ৬ টি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের জন্য মোট খরচ হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার ৪ টি গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যায় হয়েছে ১০ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু জাদুঘর স্থাপন
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মধ্যে চুক্তির আওতায় ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর’ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই জাদুঘরের জন্য বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। এই বছরের (২০২২) মে মাস পর্যন্ত সর্বমোট ২ হাজার ৩৫৫ টি নমুনা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু জাদুঘরের জন্য প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের কাজ দেরিতে হওয়ায় জাদুঘরের কাজ সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগছে।
জাদুঘরটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৩ টাকা।
বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ খাতে ব্যয়
পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে পরিবেশ যেন হুমকির সমুখীন না হয় সে জন্য ২০১২ সাল থেকে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে পদ্মা সেতুর দুইপাশের এলাকা, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়াগুলোতে বনায়ন করার জন্য ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ২৯৪ টি গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে বন বিভাগের মাধ্যমে লাগানো হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০টি গাছ এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড ও অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাগানো হয়েছে আরও ২৪ হাজার ৫৯৪টি গাছ।
এই গাছ লাগানোর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও অভয়ারণ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি খাতে খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ইতিমধ্যেই ঘোষণা সম্পন্ন হয়েছে এবং এর জন্য গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে।
পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাস্তবায়ন করার জন্য স্থানীয় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর পরিবেশগত সকল ধরনের কার্যক্রমে এ পর্যন্ত সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কনসালটেন্সি খাতে খরচ ১২৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা।
মসজিদ, বিদ্যালয়, কবরস্থান খাতে ব্যয়
পদ্মা সেতু প্রকল্পের চারটি পুনর্বাসন এড়িয়াতে স্থাপিত হয়েছে মোট ৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই সাথে পুনর্বাসন এলাকাতে রয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে ১৩টি নতুন মসজিদ, ৩ টি কবরস্থান এবং ৩ টি মসজিদ সংস্কার করা হয়েছে। এসব খাতেও বিভিন্ন অংকের টাকা খরচ হয়েছে।
অন্যান্য খাতে ব্যয়
যশোলদিয়া এলাকার জলবদ্ধতা দূর করার জন্য আউট-লেট ড্রেন নির্মাণ বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। কুমারভোগ এলাকার জলবদ্ধতা দূর করার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। প্রকল্প এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৪৮টি হস্তচালিত টিউবওয়েল। প্রকল্পের পুনর্বাসন খাত হতে প্রকল্পের আওতাধীন ৩ জেলার জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৩৬ লক্ষ টাকার বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
পদ্মা সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলা (তিনটি বিভাগ)কে যুক্ত করেছে। এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে।পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দারিদ্র্য কমবে ০.৮৪% এবং জাতীয় জিডিপি ১.২৩% এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি ২.৩% বৃদ্ধি হবে বলে বিশ্বব্যাংকের অভিমুখ।
পদ্মাসেতুর কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রায় ২ কোটি বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের আয় বাড়বে প্রায় ৬০০০ মিলিয়ন ডলার। পদ্মা সেতুর দুই পাড় সিঙ্গাপুর ও চীনের সায়ংহাই নগরের আদলে শহর গড়ে তোলা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ট্রান্স এশিায়ন হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই পদ্মাসেতু। এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক বিকাশ ঘটবে। হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠবে। কুয়াকাটা সৈকত, সুন্দরবন ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা।
শেষ কথা
মানুষের জানার কোন শেষ নেই। পদ্মা সেতু নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একটা বড় অর্জন। তাই একজন বাংলাদেশী হিসেবে পদ্মা সেতু সম্পর্কে জানাটা জরুরি। আশা করি এই পোস্টে বর্ণিত পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান a to z জেনে রাখলে আপনারা উপকৃত হবেন।
তথ্যসূত্রঃ সেতু উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সেতু বিভাগ, গুগল, ইউটিউব।
লিখেছেন
রাজীব আহমেদ সুজন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফেসবুক পেইজঃ https://facebook.com/RajibAhamedSujan
আরো পড়ুনঃ
পদ্মা সেতুর সকল ইনফর্মেশন গুলি অনেক ভালো হয়েছে আপনার। তবে আরো ভালো হতে যদি পদ্মা সেতুর ছবিটি বাস্তব রূপে প্রদর্শন করতে। ধন্যবাদ