পাকা চুল কালো করার উপায়
আপনার চুল কালো, লম্বা ও ঘন হলে মুখের সৌন্দর্য বাড়ে, আবার চুল সাদা হয়ে গেলে তা মুখের ওপরও প্রভাব ফেলে। অনেকের ধারণা বয়স হলেই চুল সাদা হয়ে যায়, কিন্তু তা নয়। খাবারে অসাবধানতাসহ অন্যান্য কারণে আজ ছোট শিশুরাও সাদা চুলের মতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে মেলানিন নামক উপাদান কম হয়ে যায়। অতএব, 35-40 বছর পরে, ধীরে ধীরে বেশিরভাগ মানুষের চুল সাদা হতে শুরু করে। আপনারও যদি সাদা চুল থাকে এবং আপনি সাদা চুলকে কালো করতে চান, তাহলে আপনি এর জন্য ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করতে পারেন।
আয়ুর্বেদ অনুসারে, শরীরে বাত, পিত্ত এবং কফের দোষের কারণে অনেক রোগ হয়। পিত্ত দোষও চুল পাকার কারণ। বর্তমানে ৭০ শতাংশ মানুষ বয়সের আগেই চুল সাদা হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। এর জন্য শুধু দূষণই দায়ী নয়, খাদ্যাভ্যাসও একটি বড় কারণ। অনুপযুক্ত খাবারের কারণে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। এর ফলে চুল শুকিয়ে যেতে শুরু করে।
Contents
চুল পাকা বা সাদা হবার কারণ
সাধারণত এই চারটি কারণে আপনার চুল সাদা হয়ে যায়:-
১। টক, তীক্ষ্ণ, লবণ এবং মশলাদার বা গরম খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে চুল সাদা হয়।
২। কঠোর পরিশ্রম করা এবং রাতে জেগে থাকা। সূর্যালোক এবং ধুলোর অতিরিক্ত এক্সপোজার।
৩। রাগ, শোক, ভয় এবং মানসিক চাপে ভুগছেন।
৪। এটি একটি জেনেটিক কারণ। একজনের পরিবারে অকালে চুল পাকা হওয়ার সমস্যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দেখা যায়।
অন্যান্য কারণ
চুল পেকে যাবার আরো কিছু কারণ আছে যা নিম্নরূপঃ
- শরীরের কোষগুলো মেলানিন তৈরি করা বন্ধ করে দিলে চুল সাদা হতে শুরু করে।
- শরীরে ভিটামিন বি-এর অভাবের কারণে মেলানিন উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
- মাথাব্যথা বা সাইনাসের মতো অসুস্থতার কারণেও চুল সাদা হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও চুলের সাদা হবার সমস্যা শুরু হয়।
- সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল না খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়, যার কারণে অকালে চুল পাকা হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
- খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন না নেওয়ার কারণে চুল সাদা হয়ে যায়।
- যৌবনে, থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত নিঃসরণ বা অভাবের কারণেও চুল অকালে পাকা হতে শুরু করে।
- দীর্ঘদিন ওষুধ খেলেও অসময়ে চুল সাদা হয়ে যায়।
- অল্প বয়সে ডায়াবেটিসের শিকার হওয়ার ফলে চুল পাকা হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
- অনিদ্রার (ঘুমের ব্যাধি) কারণে চুল পাকা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- রক্তশূন্যতা বা শরীরে রক্তের অভাবের কারণেও চুল সাদা হতে শুরু করে।
- অতিরিক্ত ধূমপান ও মাদক সেবনের কারণে তরুণদের মধ্যে চুল পাকা হওয়ার সমস্যাও বাড়ছে।
- জিনগত কারণেও চুল অকালে পেকে যায়।
- চুলে রাসায়নিক সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করা বা রাসায়নিক রং ব্যবহার করা।
শিশুদের চুল ধূসর বা সাদা হবার কারণ
মেলানোসাইট থেকে মেলানিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হলে চুল সাদা হয়ে যায়। শিশুদের শরীরে মেলানিনের অভাব হলে শিশুদের চুল সাদা হয়ে যায়।
এটি কিছু পরিবারে জেনেটিক্যালি প্রব্লেম পাওয়া যায়।
নিউরোফাইব্রোমাটোসিস, লিউকোডার্মা, টিউবারাস স্কলেরোসিস ইত্যাদি যেকোনো রোগের কারণে মেলানিন নামক উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়।
খাবারে ভিটামিন বি এর অভাব
যেসব শিশুর কোনো অস্ত্রোপচার হয়েছে, বা তাদের পরিপাকতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করছে না তাদের মধ্যে ভিটামিন বি শোষিত হয় না। এর সঙ্গেই শুরু হয় সাদা চুলের সমস্যা।
গর্ভাবস্থায় মা পুষ্টিকর খাবার না খেলেও শিশুদের চুল পাকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পাকা চুল কালো করার উপায়
চুল কালো করার জন্য আপনি এই আয়ুর্বেদিক প্রতিকার গুলো অবলম্বন করতে পারেন:-
চুল কালো করার জন্য তুলসীর ব্যবহার
তুলসী পাতা, আমলকী ফল বা পাতার রস, ভাংরায় পাতার রস সমান পরিমাণে খান। এটিকে ভালো করে মিশিয়ে চুলে লাগান। এতে চুল কালো ও ঘন হয়।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা, আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
ইন্দ্রায়ণ বীজ
প্রতিদিন ইন্দ্রায়ণ বীজের তেল দিয়ে মাথায় মালিশ করুন। এতে চুল পড়া বন্ধ হয়। এটি আপনার চুল খুব দ্রুত কালো করে।
লেবুর রস
15 মিলি লেবুর রস এবং 20 গ্রাম আমলকি গুঁড়ো 15 মিলি। পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মাথায় লাগান। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। কয়েকবার করার পর এর ব্যবহারে চুল কালো হয়ে যায়।
লবঙ্গ এবং মেহেদি
লবঙ্গ ও মেহেদি পাতার সমান অংশ নিয়ে পানি দিয়ে পিষে নিন। চুলে লাগান। চুল কালো হয়ে যায়।
আমলকি গুড়ো এবং মেহেদি
মেহেদির সঙ্গে আমলকির গুঁড়া মিশিয়ে চুলে লাগান। এর ফলে চুল পাকা ও চুল পড়া দুটোই বন্ধ হয়ে যায়।
নারিকেল তেল
নারকেল তেলে কারি পাতা রান্না করুন। তেল ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে তেলের রং কিছুটা বদলে গেলে কারিপাতা আলাদা করে নিন। এই তেল দিয়ে চুল ম্যাসাজ করুন। এটি চুল কালো করতে উপকারী।
আরও পড়ুন: নারিকেল তেলের উপকারিতা
ভ্রিংরাজ তেল
চুলে ম্যাসাজ করার জন্য ভ্রিংরাজ তেল ব্যবহার করুন। ভ্রিংরাজের তেলের চুল কালো করার ক্ষমতা আছে।
সাদা চুল থেকে মুক্তি পেতে হিবিস্কাসের ব্যবহার
আমলা, হিবিস্কাস এবং তিলের বীজ একটি পেস্ট তৈরি করুন। এতে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন।
আমের পাতা
আমের পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল ঘন ও কালো হবে।
গুজবেরি এবং আম
একটি বহেরা, দুটি হরতকি, তিনটি আমলকি, একটি আমের গুঁড়ো নিন। পানি দিয়ে পিষে লোহার পাত্রে সারারাত রেখে দিন। সকালে লাগান। এর মাধ্যমে সাদা চুল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কালো তিল
কালো তিল দুই ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভিজে গেলে পেস্ট তৈরি করতে পিষে নিন। এই পেস্ট মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা। এরপর যেকোনো হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চায়ের পানি
চায়ের পানি চুলে লাগান। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু না করে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল কালো হয়ে যায়।
আখের রস
আখের রসে লোহার গুঁড়া, ভ্রিংরাজ, হরতকি, বহেরা, আমলা ও কালো তিল ভিজিয়ে রাখুন। পাত্রের মুখ বন্ধ করে এক মাস রোদে রেখে দিন। এরপর বের করে ফিল্টার করে নিন। এটি নিয়মিত প্রয়োগ করলে সাদা চুল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চুল কালো হয়ে যায়।
ধূসর চুল বা সাদা চুল প্রতিরোধে আপনার ডায়েট
চুল সাদা থেকে কালো করতে, আপনার জীবনধারাটি এমন হওয়া উচিৎ
পুষ্টির অভাবে চুল সাদা হতে শুরু করে, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খান। এর সাহায্যে সাদা চুল থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে।
চুল কালো রাখতে ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিয়মিত আমলা এবং সব সাইট্রাস যুক্ত ফল খান।
আমলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের সাদা কোষে নতুন প্রাণ যোগায়। এতে চুল মজবুত হয়, চুল কালো হয়।
আয়রন, কপার, জিঙ্কের মতো খনিজ উপাদান স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য দায়ী, তাই আপনার খাদ্যতালিকায় শুকনো ফল খান। বিশেষ করে বাদাম, কিশমিশ, ডুমুর এবং পেস্তা সুস্থ চুলের জন্য অপরিহার্য।
দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্রহণ করুন
এই খাবারগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য অপরিহার্য।
কারি পাতায় ভিটামিন B1, B3, B9 এবং C থাকে। এছাড়াও এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পাওয়া যায়। 10-15টি কারি পাতা ভালো করে ধুয়ে পাঁচ মিনিট সেদ্ধ করুন। ছেঁকে অর্ধেক লেবুর রস ও কিছু চিনি মিশিয়ে পান করুন।
কাঁচা নারকেল খান। এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি চুলকে মজবুত ও কালো করে।
ধূসর চুল বা সাদা চুল প্রতিরোধে আপনার জীবনধারা
- নিয়মিত প্রাণায়াম ও যোগাসন করুন। এতে করে মানসিক চাপের কারণে অসময়ে চুল সাদা হয় না।
- সকালে অন্তত আধা ঘণ্টা খোলা বাতাসে হাঁটুন।
- সময়মতো ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
- ক্ষুধার্ত না থাকলে খাবার খাবেন না।
- অত্যধিক সূর্যালোক এবং ধুলোময় পরিবেশ থেকে আপনার চুল রক্ষা করুন।
- যতটা সম্ভব মানসিক চাপ থেকে নিজেকে বাঁচান এবং ধ্যান করুন।