শিক্ষা

অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব

কোভিড-১৯ এর গ্লোবাল প্যান্ডেমিকে আমরা সবাই কম-বেশী ঘরবন্দী। কিন্তু তাতে তো আর আমাদের দৈনন্দিন জীবন থামিয়ে রাখা যায় না, অবলম্বন করতে হচ্ছে নতুন নতুন পন্থা। মাইটি ইন্টারনেটের বদৌলতে ঘরেই আমরা বসিয়ে ফেলেছি আমাদের স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে হাট-বাজার পর্যন্ত সব।

কিন্তু তাতেই কি আর সব সমস্যা মিটে! অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে ছাত্ররা হিমশিম খাচ্ছেন, পড়ছেন বিভিন্ন সমস্যায়। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নূর-ই-সিদ্দিকা এ বিষয়ে বলেছেন, ” অফলাইনের মতন অনলাইনে পড়া বোঝাটা খুব একটা সহজ বিষয় না। তাছাড়া অফিস আওয়ারে আমরা যে ফ্যাকাল্টির কাছ থেকে সহযোগিতাগুলো পেতাম কিংবা ল্যাব-লাইব্রেরীর সুবিধা সেগুলোও এখন পাচ্ছি না। যদিও অনলাইনেই আমরা মাঝেমধ্যে গ্রুপ স্টাডি করছি, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে হুটহাট ইন্টারনেট কানেকশনের ঝামেলা লেগেই থাকে”।

বোঝা ই যাচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষা রেগুলার চললেও মনমতন ফলাফল পেতে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে অনেক, কিংবা ভালো গ্রেড ফসকে যাচ্ছে হয়ত হাত থেকে। তাই আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় কি করে অনলাইনে ক্লাস করেও ভালো ফলাফল আনা যায় তা নিয়েই-

সুষ্ঠু পরিকল্পনা

সেমিস্টারের শুরুতেই ছক কষে নিতে হবে কয়টা কোর্স, তার টাইমটেবিল এবং কোন বিষয়ে কখন আর কতটুকু সময় দিতে চান এইসব ব্যাপারে। একটা ভালো গ্রেডের জন্য পরিশ্রম করতে হয় সেমিস্টারের গোড়া থেকেই। পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পাশ করা গেলেও লং রানে তা কোন সাফল্য এনে দেয় না। পড়াকে জমিয়ে রাখা যাবে না।

কারণ অল্প অল্প জমিয়ে রাখতে রাখতে হুট করে এক সকালে দেখবেন টোপাপানার মতন চারপাশ ভরে গেছে এবং শেষ মুহূর্তে হায়হায় বলে হাতড়ে বেড়াতে হবে তখন। পরীক্ষার প্রস্তুতি আগেই নিতে শুরু করুন, এসাইনমেন্ট সাবমিট করুন সময়ের মধ্যে। ঢিমেতালে সবকিছু ছেড়ে না দিয়ে ভাগ ভাগ করে নিন কখন কি করবেন। দিনের যেই সময়টাতে আপনি বেশী ফোকাসড এবং প্রোডাক্টিভ সেই সময়টা রাখুন পড়াশুনার জন্যে।

গোছানো সুনির্দিষ্ট পড়ার জায়গা

একটি পরিছন্ন ছিমছাম জায়গা শুধু মনকেই প্রফুল্ল রাখে না, মনযোগও বাড়াতে সাহায্য করে। পড়তে বসার আগে জায়গাটা গুছিয়ে নিন, ছড়ানো পেইজগুলো ফাইলবন্দী করে ফেলুন, বইগুলো থরে থরে সাজান। এখানে ওখানে পরে থাকা ধুলো মুছে, পেন্সিলের কাঠের গুড়ো কিংবা চকলেটের র‍্যাপারগুলো বিনে ফেলে জায়গাটা তকতকে করে নিন। দেখবেন কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যাবে তৎক্ষণাৎ। আর পড়তে বসার জায়গাটা একটু নিরিবিলি জায়গায় বাছুন, যাতে কোন ধরণের ডিসট্র্যাকশন আপনি আর আপনার পড়ার মধ্যে হামলে পড়তে না পারে।

বিছানা সবচেয়ে আরামের জায়গা হলেও আপাতত তাকে রেখে দিন ঘুমের জন্য, নাহলে বিছানায় এসাইনমেন্ট নিয়ে গড়াগড়ি করতে করতে কখন ঘুমের দেশে হারিয়ে যাবেন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার লুপে আটকে যাবেন টেরটিও পাবেন না।

ডিসট্র্যাকশন এলিমেন্টগুলোকে বিদায়

না, একেবারে বিদায় দিতে বলছি না। কিন্তু পড়ার সময়ে যেসব কারণে ডিসট্র্যাকশন চলে আসে সেগুলোকে পরিহার করা আবশ্যক। ওইযে মা ছোটবেলায় বলতেন- “পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা।” ঠিক তেমনি। একটা চ্যাপ্টার নিয়ে এদিক ওদিক করে ৩ঘন্টা বসে ঝিমানোর চেয়ে, ১ঘন্টায় শেষ করে এরপর যা ইচ্ছা তা-তাইরে নাইরে না করা কি বেশী পরিত্রাণের নয়? এরপর নাহয় বসে যাওয়া যাবে চিপস হাতে প্রিয় সিরিজ বিঞ্জ ওয়াচ করতে।

ফোন এরোপ্লেন মোডে কিংবা সাইলেন্ট মোডে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে দিন কিছুক্ষণের জন্য। অথবা সোশ্যাল মিডিয়া ব্লকের এপগুলো ব্যবহার করে সাময়িক নিস্তার পেতে পারেন মুহুর্মুহু বাজতে থাকা নটিফিকেশন কিংবা স্ক্রলে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে। Forest, Focus me, Appblock, Cold Turkey ইতাদি এবং আরও অনেক এপ আছে যা কিনা আপনাকে সাহায্য করবে এইক্ষেত্রে।

ক্লাসে উপস্থিতি ও মেন্টরের সাথে সুসম্পর্ক

চেষ্টা করুন নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থেকে লেকচার মনযোগ দিয়ে শুনতে ও নোট ডাউন করতে। লেকচার চলাকালীন সময়ে নোটস নেয়া একটি খুবই ভালো অভ্যাস। কারণ এরথেকে শিক্ষক কোন কোন বিষয়ে জোর দিচ্ছেন, টপিকে কোনগুলো কী-পয়েন্ট বা বেশী গুরুত্বপূর্ণ বের করা অনেক সহজ হয়ে যায়। কোন বিষয়ে না বুঝলে ক্লাসে প্রশ্ন করুন, প্রয়োজনে মেইলে ফ্যাকাল্টির সাথে যোগাযোগ রাখুন।

দয়া করে ক্লাস মিউট করে ঘুমিয়ে যাবেন না, তাহলে দিনশেষে আন্ডা পেতে হবে। স্লাইডসহ অন্যান্য যেসব কপি ফ্যাকাল্টিরা দিয়ে থাকেন সেগুলো সংগ্রহ করুন নিয়মিত। ক্লাসের আগে আলোচ্য বিষয়টি পড়ে যেতে পারলে আরও ভালো হয়। পরীক্ষার তারিখ বা এসাইনমেন্ট সাবমিশনের লাস্ট দিন আমরা অনেক সময়ই ভুলে যাই বা উল্টা-পাল্টা বাধিয়ে ফেলি, এজন্য একটা অর্গ্যানাইজার বা এজেন্ডা রাখতে পারলে ভালো।

মনোটনি ভাঙুন

হরদম ব্যস্ততা আর আড্ডাময় জীবন থেকে হুট করে ঘরে বসে যাওয়াটা বা রুটিনে এত ড্র্যাস্টিক পরিবর্তন আসাটা হয়ে উঠতে পারে দুর্বিষহ। আশপাশে কান পাতলেই শোনা যায় অনেকেই অভিযোগ করছেন একঘেয়ে আর বিরক্তিকর হয়ে উঠছে তাদের প্রাত্যহিক জীবন। এতে অবশ্য তাদের দোষ দেয়া যায় না।

করোনা পূর্ববর্তী সময়ে জীবন কাটতো দিনভর হই হই করে। ক্লাসে, ক্যান্টিনে খাবার কাড়াকাড়ি ভাগাভাগিতে, গ্রুপ স্টাডির কচকচানিতে, নরম ঘাসে আড্ডা জমানো বিকেল, টঙের হইচই-তর্কে কিংবা সন্ধ্যায় কফিশপে সোডিয়াম আলোর নিচে আলাপে। কিন্তু হুট করেই সব বন্ধ, দিনরাত মুখ গুঁজে সেই একই দেয়াল একই ছাদ দেখা। মাঝেমধ্যে বের হলেও সেই চঞ্চলসময়গুলো ফেরত আসছে না, ঘাটতি তাতে পূরণ হচ্ছে সামান্যই। এরথেকে কাজে চলে আসছে অনীহা-অরুচি।

এইজন্য কিছুটা নড়েচড়ে বসতে হবে নিজেরই, নিতে হবে কিছু উদ্যোগ। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই গুছিয়ে ফেলুন ঘরটি, নিজেও পরিপাটি হয়ে খেয়ে-দেয়ে তারপর লেগে পড়ুন কাজে। স্ক্রিন থেকে বিরতি নিন মাঝেমধ্যে। হেটে আসুন ঘরের মধ্যেই বা ব্যালকনি বা ছাদ থেকে। পরিবারের সদস্যদের সাথে আড্ডা দিন সময় বের করে, পোষা প্রাণীটিকে কিংবা বারান্দার পোষ্য গাছগুলোকে দিন আপনার অবসরের একটি ভাগ।

ঝরঝরে মন আর শরীরের জন্য দিনের কিছু সময় ব্যয় করুন শারীরিক কসরতে। বন্ধুরা মিলে গুগোল মিটেই করতে পারেন ভার্চুয়াল মুভি নাইট, অনলাইনকে কিছু সময়ের জন্য ছুটি দিয়ে ডুব দিতে পারেন বইয়ের জগতে কিংবা ঝালাই করে নিতে পারেন কোন নতুন শখ।
দেখবেন এতে অনেকখানি একঘেয়েমি কেটেও যাচ্ছে, আবার পড়াতে মনও বসছে পটাপট।

করোনা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ক্ষতিও করছে অনেকখানি। অনেকে কাজে স্পৃহা হারাচ্ছেন, বিষাদগ্রস্থ হচ্ছেন। তারমধ্যে অনলাইন ক্লাসের অনেক প্রতিবন্ধকতা ও মনঃপুত গ্রেড না আসাটা তৈরী করছে নতুন এক মানসিক অশান্তি। কিন্তু কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে এবং প্রোক্যাস্টিনেশনকে দূরে ঠেলে দিলে এখানেও ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। দিনশেষে আমরা সবাই করোনামুক্ত একটি সুন্দর ঝলমলে দিনের অপেক্ষায় আছি।

জমির পরিমাপ সম্পর্কে বিস্তারিত এখনই জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটে। ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এবং ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয় করার উপায় কমপ্লিট গাইডলাইন দেওয়া আছে এটিও দেখে নিন।

5/5 - (19 votes)

Admin at Shopnik.com.bd

As the driving force behind Shopnik.com.bd, the Admin is dedicated to providing readers with insightful and informative blogs across a wide range of topics. From expert reviews on the latest products to engaging articles from anonymous contributors, the Admin ensures that every post is designed to inform, inspire, and engage. Whether it's tech, lifestyle, or the latest trends, Shopnik.com.bd is your go-to source for up-to-date information and valuable content.

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button