শিক্ষা

তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা

তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনাটি বোর্ড পরীক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা খুব সহজ ও সুন্দর ভাষায় আজকের পোস্টে এই রচনাটি লিখেছি। জীবনে সফলতা অর্জন করার মূল শর্ত হলো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দ্যেশ্য নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেই বিষয়কে মাথায় রেখে, আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায় ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমার জীবনের লক্ষ্য

ভূমিকা: শৈশব থেকেই মানুষ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। বিভিন্ন রকম চিন্তা ও কল্পনায় সময় কাটে। সে বড় হয়ে কি হবে না হবে এ নিয়ে সবসময় স্বপ্নে বিভোর থাকে। এটাই হলো জীবনের বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেকটা মানুষেরই জীবনে লক্ষ্য থাকা উচিত। তার ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে তা নিয়ে ভাবা উচিত। ছাত্র জীবন থেকে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। উদ্দ্যেশ্যহীন জীবন হয়ে যায় মাঝিবিহীন নৌকার মতো। তাই প্রত্যেকটা মানুষেরই তার জীবনের শুরু থেকেই লক্ষ্য স্থির করা অত্যাবশক।

জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা: মানুষের জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা লক্ষ্যহীন মানুষের জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই ভেবেছি জীবনের লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু তখন মন ছিল চঞ্চল। আর সেই চঞ্চল মনে ছিল সবকিছু নিয়ে জানার ও বোঝার অধিক আগ্রহ। ছোটবেলা ভাবতাম আমি বড় হয়ে একজন ডাক্তার হব। আবার পাঠ্য বই পড়ার সময় বিজ্ঞানী নিউটন ও আলভা এডিসন এর চমকপ্রদ ও আবিষ্কারের কাহিনী পড়ে ভাবতাম আমি একজন বড় বিজ্ঞানী হব। কখনো কখনো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের লেখা পড়ে ভাবতাম আমি তাদের মতো জগৎ বিখ্যাত সাহিত্যিক হব। বড় হওয়ার সাথে সাথে সব কিছু বুঝতে পারলাম ইচ্ছে করলে সব কিছু হওয়া যায় না। তার জন্য স্রষ্টার দেওয়া প্রতিভা, মেধা, ইচ্ছাশক্তি এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে যে কোন উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব। সুতরাং আগে জীবনের লক্ষ্য স্থির হওয়া প্রয়োজন তাহলে লক্ষ্য অনুযায়ী সবকিছুই সম্ভব হবে।

জীবনের লক্ষ্য স্থির করার কারণ: প্রত্যেক মানুষেরই তার বন্ধু মহলের বিভিন্ন জনের লক্ষ্য বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ হতে চায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ কেউ ম্যাজিস্ট্রেট বা অর্থনীতিবিদ। সবাই চাকরি কে একমাত্র লক্ষ্য রূপে স্থির করেছে। বাংলাদেশের মধ্যে চাকরি প্রিয়তা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, সারাদেশে শিক্ষিত কর্মক্ষম লোকের জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া সত্যিই অনেক দুঃসাধ্য কাজ। আবার শিক্ষিত যুবকরা কেউ কেউ সেই মাটির ডাকে সাড়া দিয়ে তারা কৃষি কাজ করে। আবার কিছু কিছু যুবকরা কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, গরু-ছাগলের খামার , হাঁস -মুরগির পোল্ট্রি ফার্ম ইত্যাদি এগুলা করে থাকে। তাই ছোট থেকেই আমাদের জীবনের লক্ষ্য স্থির করা উচিত তাহলে বড় হয়ে খুব অল্পতেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

লক্ষ অর্জনের উপায়: বর্তমানে আমি একজন নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আমার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভালোভাবে লেখাপড়া করব, যাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ নিয়ে পাস করতে পারি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হব। পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে একজন দক্ষ ডাক্তার হব। এদেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াবো। আমার কর্মজীবনকে মানবসেবায় নিয়োজিত করব এবং এই মহৎ কাজের মাধ্যমে আমি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই এটাই হলো আমার জীবনের লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে অধ্যবসায় করতে থাকবো।

জীবনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলা: আমি আমার জীবনের লক্ষ্য অর্জন করা জন্য এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছি। বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি বরাবরই আমার আকর্ষণ ছিল। তাই বিজ্ঞান বিভাগকেই বেছে নিয়েছি। বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পড়া শেষ করে আমি আমার অবসর সময়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন রকম বই পড়ি। মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চমাধ্যমিকেও বিজ্ঞান বিভাগ নিবো। আমার অন্যতম বিষয় থাকবে জীববিদ্যা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে আশা করছি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার। আমাকে কঠোর অধ্যবসায় করতে হবে তাহলে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যেকোনো শাখার বিশেষজ্ঞ হওয়া। দৃঢ় মনোবল নিয়ে আমার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করব।

জনসেবা ও কর্মজীবন: আমি আমার কর্মজীবন শুরু করতে চাই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে। ভালো ডাক্তার হয়ে আমি দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সেবা দিব। গ্রামে ভালো ডাক্তার পাওয়া যায় না। তাই আমি গ্রামে গিয়েও গ্রামের মানুষদের সেবা দিব। গ্রামের অনেক মানুষের শহরে এসে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য থাকে না। আমি গ্রামের সেইসব জনগণের সেবা দিতে চাই। গ্রামের হতদরিদ্র লোকদের বিনা ফিতে চিকিৎসা সেবা দিবো। আর যারা ধনী, তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফি আদায় করব। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় নির্দিষ্ট স্থান করে হত দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিব। এতে গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র মানুষ গুলো চিকিৎসা সেবা পাবে। আমি আমার কর্ম জীবনের মাধ্যমেই নিজেকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। যখন আমি থাকবো না তখনও যেন মানুষ আমাকে মনে করে। মানুষ হয়ে মানুষের জন্য এটুকু সেবা আমি দিতে চাই। এতে আমারও ভালো লাগবে এবং সমাজের দরিদ্র জনগণেরও উপকার হবে।

আমার দৃষ্টিভঙ্গি: বর্তমান যুগে এত শিক্ষিত মানুষের ভিড়ে মনুষত্বহীন মানুষের অভাব হবে না। আগের যুগের মানুষ থেকে বর্তমান যুগের মানুষগুলো দিন দিন কেমন মনুষত্বহীন ও বিবেকহীন হয়ে পড়ছে। যার যত বেশি থাকে তার তার থেকেও বেশি প্রয়োজন পড়ে। মানুষের প্রয়োজনের শেষ নাই এবং বিলাসী জীবনযাপন ও ভোগবিলাসের জন্য মানুষ বিবেকহীন হয়ে যাচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা যেমন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের মানুষগুলো তাদের নিজের চিকিৎসা গুলো ঠিক মত করাতে পারে না। চিকিৎসকের কাছে গেলেই অনেক গুলো টেস্ট যেগুলো দরকার সেগুলো দেয় এবং যেগুলো প্রয়োজন ছাড়া সেগুলোও দেয়। এজন্য দরিদ্র মানুষগুলো তাদের চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারে না। সেজন্য আমার জীবনের লক্ষ্য হলো একজন আদর্শ চিকিৎসক হওয়া। চিকিৎসক হলে আমি এসব দরিদ্র মানুষ গুলোর পাশে দাঁড়াতে পারব। বিনা টাকায় সুচিকিৎসা দিব তাদের। যেন তাদের বিনা চিকিৎসায় মরতে না হয়। তারা যেন সত্যের সাথে নিজের চিকিৎসা টুকু অন্তত পড়াতে পারে। এই সুবিধা দেয়ার জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

ডাক্তারি পেশায় দুর্নীতি: আমাদের দেশে ডাক্তারি পেশা যেমন ভালো ও পবিত্র তেমনি এর কাল অন্ধকার দিক রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ডাক্তারই জনগণের সেবার থেকে বেশি তাদের নিজের পকেট ভরার চিন্তায় থাকে। এদেশের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষগুলো অতিরিক্ত ভিজিট নেওয়ার কারণে ডাক্তারদের কাছ থেকে পরিষেবা পাননা। অধিকাংশ ডাক্তাররাই রাজি থাকেন না সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে। তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে যেতে। যার কারনে বেশিরভাগ গরিব মানুষ নূন্যতম স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হন। যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়। ডাক্তার ছাড়া যে কোন সমাজই অথর্ব হয়ে পরবে। তাই আমি চাই একজন আদর্শ ডাক্তার হতে। যেটা মানুষের মনে আবার আশার আলো সঞ্চার ঘটাবে। আমি চাই সাধারণ জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে ডাক্তারি পেশায় নিযুক্ত মানুষের উপর। যা এই সমাজের জন্য অনেক প্রয়োজন।

উপসংহার: আমরা সভ্য সমাজের আধুনিক যুগের মানুষ হয়ে বিবেকহীন ও মনুষ্যত্বহীন হয়ে যাচ্ছি। বর্তমান যুগে পারস্পরিক হিংসা, হানাহানি ও এই কঠিন সময়ে এসে অন্যের বিষয়ে ভাববার কথা ও ভালো কিছু করার কথা ভুলতে বসেছি। যদি কেউ নিজের স্বার্থের কথা ভুলে সমাজ সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে তাহলে সে সমাজের উপহাসের পাত্র হয়ে যায়। তবু আশা রাখি যে, আমার জীবনে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আমি সফল হব। আমার একার পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না সকল মানুষের দুঃখ দরিদ্রের অভিশাপ দূর করার। আমার এই লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে অসহায় মানুষদের রোগ যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা করার যে ক্ষমতা আমি আয়ত্ত করব, তা দিয়ে যতটুকু সম্ভব সকলের মঙ্গল করার চেষ্টা করব। আমি আমার ভালো কর্মের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই এবং এটাই হলো আমার জীবনের লক্ষ্য।

5/5 - (13 votes)

Sajjad Hossain

When I'm not immersed in the world of content creation, you'll find me actively engaging with the online community. I believe in the power of collaboration and learning from shared experiences. Let's connect on [social media platform] for real-time updates, discussions, and a glimpse into the exciting journey of online earning.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button