শিক্ষা

সময়ের মূল্য রচনা

সময় জীবনের অমূল্য একটি সম্পদ। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের সময়নিষ্ঠ হওয়ার পাঠ দান ও সময়ের মূল্যকে আমরা যেন উপলব্ধি করতে পারি সেজন্য স্কুল-কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা করা হয়েছে সময়ের মূল্য রচনাকে। তাই আপনাদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখে দেওয়া হলো সময়ের মূল্য রচনা।

সময়ের মূল্য রচনা

ভূমিকাঃ পৃথিবীতে সবচেয়ে চিরন্তন সত্য কথা হলো সময় কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। সময় সময়ের নিজের গতিতে চলতে থাকে। ‘Time and tide wait for none’.অর্থাৎ সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। মানুষের জীবনের আরো অনেক সীমিত থাকে। মানুষের এই সীমিত সময়ের জীবনের মধ্যে অনেক কাজ ও অনেক দায়িত্ব থাকে । তাই এই অল্প জীবনের সময়ের প্রতিটা মুহূর্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। সময় আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।যা একবার হারালে আর কখনো তা ফিরে পাওয়া যায় না । তাই সময় সময়ের মূল্য আমাদের জীবনে অপরিসীম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন –

“কারো পানে ফিরে চাহিবার
নাই যে সময়
নাই নাই।”

মানব জীবন ও সময়ঃ সময়ের মূল্য আমাদের জীবনে অপরিসীম। তাই সময়ের মূল্য দিতে পারলে আমাদের জীবন সার্থক হবে। জীবনকে সার্থক ও পরিপূর্ণ করতে হলে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। মানুষের জীবনের সময় খুব অল্প অথচ তার সম্মুখীন হতে হয় বিশাল কর্মক্ষেত্রের।অলস ভাবে জীবন কাটালে জীবন হবে অন্ধকার। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সময়ের কাজ সময়ে করতে পারলে জীবন সাফল্যময় হয়ে উঠবে। আর সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারলে কাজ জমে ভারী হবে আর জীবন হবে অন্ধকারময়। এলোমেলো ভাবে কাজ করলে জীবনে কোন কাজে সফলতা আসে না। এতে সময়ের অপচয় হয়। সুতরাং সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হলে আগে নির্ধারণ করতে হবে জীবনের লক্ষ্য তারপর নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত কাজগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য বিশেষভাবে যত্নশীল হতে হবে। তাহলে জীবনের সাফল্য আনতে পারবে।

সময়ের মূল্যঃ সময় হলো প্রবাহমান নদীর মত। নদীর স্রোত যেমন কারো জন্য থেমে থাকে না তেমনি সময়ও কারোর জন্য থেমে থাকে না। সময় নিজের মতো চলতেই থাকে। মানুষ মারা গেলে যেমন পৃথিবীতে আর আসে না তেমনি সময় একবার চলে গেলে সে সময় আর ফিরে আসে ন। তাই সময় থাকতে সময়ের মূল্য দেওয়া উচিত আমাদের সবার । কারণ সময় চলে গেলে আফসোস করে আর কোন লাভ হবে না। সুতরাং সময়ের মূল্য আমাদের জীবনে অপরিসীম। মহাপুরুষ ও পৃথিবীর বিখ্যাত খ্যাতিমান ব্যক্তিদের জীবনী পড়লে দেখা যায় যে তারা যখন যে সময় যে কাজটি করা প্রয়োজন বোধ মনে করতেন তখন সে সময়ে ঠিক কাজটি সম্পূর্ণ করে ফেলতেন। তাই তারা জীবনে মনীষী হতে পেরেছে এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিও হতে পেরেছে। কারণ তারা সময়ের কাজ সময়ে করেছে। আমাদের সবারই উচিত আজকের কাজ আজকেই করে ফেলা সেটা আগামী দিনের জন্য আর ফেলে রাখা উচিত না। তাহলে জীবনে কিছু করা সম্ভব হবে।

সময় মূল্যবান হওয়ার কারণঃ সময় এবং বর্তমান কারো জন্য অপেক্ষা করে না সেটা আমরা সবাই জানি। সময়কে মাপা যায় না সময় কে অনুমান করা যায়। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না আর একবার সময় হারালে তা ফিরে পাওয়া যায় না। সময়ের কাজ সময় না করলে কাজ জমবে জমে ভারী হবে তারপর বিশ্বনতা আমাদের গ্রাস করবে। জীবনকে সুন্দর ও আনন্দময় করতে সময়ের সাথে সমান তালে চলতে হবে। সারাদিনে আমাদের যে কাজগুলো থাকে তা সময় অনুযায়ী ভাগ করে নিতে হবে এবং সেভাবেই কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে। প্রতিটি কাজ ই আমাদের জীবনে পারস্পরিক সম্পর্কে বাধা। অলস ভাবে সময়কে অবহেলা করে জীবনে সফলতা হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং প্রতিটি মানুষের জীবনে সময় খুব মূল্যবান সম্পদ।

সময়কে অবহেলার পরিণতিঃ সময়কে অবহেলার পরিণতি খুবই ভয়াবহ ও মর্মান্তিক। কারণ আমরা খুব অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসেছি আমরা এই সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালো থাকবো। আর অবহেলা করে অলস ভাবে সময় গুলোকে নষ্ট করলে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও ভালো থাকতে পারবো না।অলস ব্যক্তির জীবনে অন্ধকার নেমে আসে । অলসতার জন্য তারা জীবনে সফল হতে পারেনা। সময়কে অবহেলা করার জন্য তাকে মৃত্যু পর্যন্ত অভিশপ্ত জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আর অন্যদিকে সময় সঠিক ব্যবহার জীবনকে করে সুখী। আমাদের জীবনে প্রতিটি কাজের নির্দিষ্ট সময় আছে সে নির্দিষ্ট সময়ের কাজগুলো করা আমাদের দায়িত্ব। শৈশবের কাজ যেমন যৌবনে হয় না আবার যৌবনের কাজও বার্ধক্য হয় না। সুতরাং সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সময় কে কাজে লাগানো আমাদের উচিত।

সময়ের সদ্ব্যবহারঃ সময়ের কাজ সময় মতো সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে সময়ের সদ্ব্যবহার। মানুষের জীবনে বিশাল কর্মক্ষেত্র রয়েছে। সময়ের কাজ সময়ে না করতে পারলে সে পিছিয়ে পড়ে। কর্মের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। একজন কর্মহীন মানুষ পৃথিবীতে অনেক বছর বেঁচে থেকেও অমরত্ব লাভ করতে পারে না। তার মৃত্যুর সাথে সাথে জীবনের সবকিছুই তার শেষ হয়ে যায়। আর কর্মফলের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষ অমর হয়ে থাকে। আর একজন দায়িত্ববান মানুষ পৃথিবীতে অল্প সময় বেঁচে থেকেও অমরত্ব লাভ করতে পারে। পরিশ্রমী মানুষরা কখনো অবসর পায় না। তারা সব সময় সময়ের কাজ সময় মত করতে পছন্দ করে আর সেজন্য তারা সফলও হতে পারে।

সময়ের প্রতি উদাসীনতাঃ সময়ের প্রতি যারা উদাসীন তারা কখনোই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে যেতে পারে না। সময়ের সঠিক মূল্যায়ন না করলে মেধাবীরা ও অধঃপতনে তলিয়ে যায়। কোন না কোন সময় জীবনের হারানো সম্পদ ফিরে পাওয়া গেলেও সময় কখনো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না।অলস ভাবে সময়কে অবহেলা করলে পরবর্তীতে আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা।তাই সময়ের প্রতি উদাসীন না সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে।

ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্যঃ জীবন গড়ার শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে জীবনে সফল হওয়া সম্ভব। ছাত্রজীবনে সময়ের মূল্য অপরিসীম। ছাত্রজীবন কে আগুনে গলিত লোহার সাথে তুলনা করা হয়। কারণ গলিত লোহাকে যে আকার দেয়া হয় সেই আকার ধারণ করে আর লোহা ঠান্ডা হয়ে গেলে সেটা আর সম্ভব না। তেমনি ছাত্রজীবন এমন একটি সময় যেই সময়ে নির্ধারণ হবে ভবিষ্যৎ সময় কেমন হবে। ছাত্র জীবনের সময়টাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারলে আমাদের জীবন হবে সকল সুন্দর । ছাত্র জীবনে আমাদের জীবনের বীজ বপন করতে হয়। ছাত্র জীবনের সময়টুকু আমাদের জীবনের অনেক মূল্যবান সময়। এই সময়টাতে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ভালো-মন্দ সবকিছু নির্ভর কর। যে ছাত্র সময় কে অলস ভাবে অবহেলা করে তার ছাত্রজীবনের সাথে ভবিষ্যৎ জীবন ও অন্ধকার ও খারাপ হয়। সুতরাং ছাত্র জীবনের সময়টাকে অবহেলা না করে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।

সময় মূল্যায়ন ও জীবনের সাফল্য লাভঃ সময়কে যদি আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি তাহলে জীবনের সাফল্য লাভ করা সম্ভব। জীবনকে সুখী ও সুন্দর করতে চাইলে এবং জীবনে সফলতা পেতে হলে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সময় মতো পালন করতে হবে। সবার কাজ এক রকম হয় না ব্যক্তি ভেদে কাজ ভিন্ন হয়। জীবনে যারা সময়কে মূল্যায়ন করতে পারে তারাই সাফল্য লাভ করতে পারে। কারণ সময় হচ্ছে আমাদের মূল্যবান সম্পদ। অতএব জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও সাফল্য লাভ করা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সময়ের মূল্যায়নের উপর।

সময়ানুবর্তিতার বাধাসমূহঃ অলসতা সময়ানুবর্তিতার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। যখন এর কাজ তখনই করা উচিত। অলসতা কে পরিহার করে সময়ের কাজ সময় অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অলস বন্ধু বাছাই করা হলো সময়ানুবর্তিতার আরেকটি বাধা। আপনার বন্ধু যদি সঠিক সময়ে সময়কে অনুসরণ করে তাহলে সেটা আপনার মধ্যেও গড়ে উঠবে আর আপনার বন্ধু যদি অলসভাবে সময়কে অবহেলা করে তাহলে সেটার প্রভাব আপনার মধ্যে পড়বে। তাই সময় অনুযায়ী ভালো বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। আর প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

উপসংহারঃ বিশ্বের উন্নত দেশ ও উন্নত জাতির মূলে রয়েছে সময় সম্বন্ধে সচেতনতা। তাদের কাছে প্রার্থীব সম্পদের মধ্যে সময় অধিক মূল্যবান বলেই তারা আজকে উন্নত দেশ ও জাতি হিসেবে পৃথিবীর ওপর কতৃত্ব করছে।আর আমরা বাঙ্গালিরা সময়ের মূল্য বুঝি না বলেই দুঃখ – দুদশা নিত্যসঙ্গী।একজন মানুষ সফল হবে যদি সে জীবনকে উপভোগ করার পাশাপাশি সময়কে মূল্য দিতে পারে। তাইতো সময়ের মূল্যকে মানুষের জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি বলা হয়।

5/5 - (12 votes)

Sajjad Hossain

When I'm not immersed in the world of content creation, you'll find me actively engaging with the online community. I believe in the power of collaboration and learning from shared experiences. Let's connect on [social media platform] for real-time updates, discussions, and a glimpse into the exciting journey of online earning.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button