শিক্ষা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা টি বোর্ড পরীক্ষার জন্য খুবই কমন একটি রচনা। ২০২৩ সালের সকল বোর্ডের জন্য দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ। তাই আপনাদের জন্য এই রচনাটি খুব সুন্দর ও সহজ ভাষায় নিম্নে দেওয়া হলো-

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

ভূমিকা: দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম।বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ বিশেষ জ্ঞান অর্জন করে বিভিন্নভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক সভ্য জগতে পৌঁছে গেছে।দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান অনেক যা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়। বিজ্ঞান ছাড়া এখন মানুষের এক মুহূর্ত আর চলে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই বিজ্ঞানের দান। আমাদের পৃথিবীতে বিজ্ঞানের জন্যই বিভিন্ন দেশ জাতি সমাজ ব্যবস্থা উন্নতির পথে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা: সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের প্রতিটি কর্মকান্ডের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগে আছে আমাদের জীবনের সব দিকেই। মানুষের জীবনযাত্রা এখন অনেক সুখের হয়েছে শুধুমাত্র বিজ্ঞানের বিচিত্র ও বিস্ময়কর আবিষ্কারের ফলে।বিজ্ঞানের সাথে আমরা প্রতিটা মানুষ প্রতিটা পদে পদে সংযুক্ত রয়েছি। যেমন লাইট, ফ্যান, ঘড়ি, সাবান, রান্নার চুলা, গ্যাস, রান্নার সরঞ্জাম, এসি, টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার, ফ্রিজ ও ইলেকট্রিক যন্ত্রাদি এবং বিদ্যুৎ ইত্যাদি। আমাদের জীবনের সবকিছুই বিজ্ঞানের কল্যাণকর অবদান।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান: দৈনন্দিন জীবনে আমাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। মানুষের জীবন দানকারী অন্ধকার সভ্যতাকে আলোতে রুপান্তর করেছে বিজ্ঞান। যেসব রোগ মানুষের নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ ছিল সেসব রোগগুলোকে এখন সহজভাবেই নিরাময় করা যায়। বিভিন্ন রোগ নির্ণয়,প্রতিরোধ ও নিরাময় করা যায় বিজ্ঞানের মাধ্যমে। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি রোগের ঔষধ ও আবিষ্কারের শেষ প্রান্তে। তাছাড়া জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি ছোটখাটো অসুখের বিভিন্ন প্রকার ওষুধের আবিষ্কার বিজ্ঞানের মাধ্যমে সাধিত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানুষের অকাল মৃত্যুকে রোধ করতে বিজ্ঞান সক্ষম হয়েছে। মানব জাতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

বিজ্ঞানের আবিষ্কার: দৈনন্দিন জীবনে মনুষ্য জাতি একই সুতায় গাঁথা। শিক্ষ, চিকিৎসা, যাতায়াত, আবহাওয়া সহ দৈনন্দিন জীবনে সর্বত্রই বিজ্ঞানের অবদান। পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষ অপর প্রান্তের মানুষের সাথে টেলিফোনের মাধ্যমে আজ যোগাযোগ করতে পারে এবং আবিষ্কৃত হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে দ্রুতগামী ট্রেন, যানবাহ, উড়োজাহাজ, লঞ্চ স্টিমার আরো অনেক কিছু। তাছাড়া মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইমেইল, ইন্টারনেট, প্রিন্টার এই সবকিছুই হচ্ছে বিজ্ঞানের অবদান। কৃষি ক্ষেত্রে ও বিজ্ঞান এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্ত। ট্রাক্টর, রাসায়নিক সার, উন্নত বীজ, কীটনাশক, মারাই যন্ত্র ইত্যাদি যন্ত্রাদি আবিষ্কার করে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে। টেপ রেকর্ডার, টেলিভিশন,সংবাদপত্র ইত্যাদি আবিষ্কারের দ্বারা শিক্ষা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের মাধ্যমে রাডার আবিষ্কৃত হয়েছে এবং রাডারের মাধ্যমে আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারি। এতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানবজাতির অনেক উপকার হয়। বিভিন্ন দেশের খনিজ সম্পদ, জলজ সম্পদ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে ও উত্তোলন করা যাচ্ছে সব বিজ্ঞানের মাধ্যমে। বিজ্ঞানের অবদান যেমন আমাদের অনেক উপকার করছে, তেমনি এর অপব্যবহারে আমরা অনেক ক্ষতির শিকার হচ্ছি।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের নেতিবাচক প্রভাব: মানুষের বিলাসী জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাদি ব্যবহার করা। যার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আগের থেকে অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মেরু অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের বরফ গলতে শুরু করেছে।এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন সমতল দেশগুলো এক সময় পানির নিচে তলিয়ে যাবে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন কে কাজে লাগিয়ে যা পৃথিবীর ওজন উন্নত দেশগুলো এমন কিছু কাজ করছে যা পৃথিবীর ওজন স্তর দিন দিন কমে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রীন হাউস গ্যাস। ক্ষেত্রবিশেষ মানুষের জীবনে যেমন উন্নতি হচ্ছে বিজ্ঞানের দ্বারা তেমনি অবনতিও হচ্ছে। বিজ্ঞানের অবদানকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে নেতিবাচক দিকে নয়।

মোবাইল ফোন আবিষ্কার: দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান অনেক। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারের মধ্যে হচ্ছে একটি মোবাইল ফোন আবিষ্কার। যা দৈনন্দিন জীবনকে সুখ স্বাচ্ছন্দে ভরে দিয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যোগাযোগ করতে পারি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ তার সুখ-দুঃখ, অনুভূতি ভাগ করে নিতে পারছে। আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কার করেন। তার দুই সহকারী গবেষক ছিলেন রিচার্ড এইচ.ফ্রাঙ্কিয়াল এবং কোয়েল এস.এঞ্জেল। পরবর্তীতে তারাই এর ব্যবহার উদ্ভাবন করেন। দৈনন্দিন জীবনে শুধু কথা বার্তায় ব্যবহৃত হয় না মোবাইল ফোন। বর্তমানে এর বিভিন্ন ব্যবহার সত্যি আমাদের বিস্মিত করে।

কম্পিউটার আবিষ্কার: ১৯৪৪ সালে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও আইবিএম কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করেন। ১৯৭১ সালের পর থেকে বিশ্বে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত করে কম্পিউটার। তারপর থেকেই কম্পিউটার ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। আশির দশকে কম্পিউটার এসেছে আমাদের বাংলাদেশ। বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ কম্পিউটারের আগমন ঘটেছে। কম্পিউটার যন্ত্রটির গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে তৈরি হয়েছিল। কম্পিউটারে এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, প্রযুক্তিবিদ্যা, মহাকাশবিজ্ঞান, ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কম্পিউটার আজ কোন ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই। পত্রপত্রিকা প্রকাশনা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন, পরিকল্পনা তৈরি, প্রকল্প বিশ্লেষণ, মিডিয়া ইন্টারনেট শিল্প বাণিজ্য ইত্যাদি সহজেই সব কিছুর সমাধান দিচ্ছে কম্পিউটার। এছাড়াও কম্পিউটারের মাধ্যমে আউটসোর্সিং এর কাজ করে উপার্জন করছে তরুণ প্রজন্ম। কম্পিউটারের মাধ্যমে পৃথিবীর সমস্ত তথ্যই জানা যাচ্ছে।

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ এই জন্যই বলা হয়েছে মানুষের ব্যবহৃত সবকিছুতেই এখন বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগে আছে। সামান্য কলম থেকে শুরু করে যেখানেই যাওয়া হোক না কেন সেখানেই বিজ্ঞানের ছোঁয়া রয়েছে। জীব ও জড় জগতে বিভিন্ন রহস্য উদঘাটনে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ব্যবহার করতে করতে এখন আর দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ব্যবহার ছাড়া কোন কিছুই করতে পারে না। মহাবিজ্ঞানি আইনস্টাইন বলেছিলেন-বিজ্ঞানী বাস্তব এবং বিজ্ঞান-ই আমাদের পরম বন্ধু। দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই বিজ্ঞানের দ্বারা মানুষের সৃষ্টি। এজন্যই আজকের যুগকে বিজ্ঞানের যুগ বলা হয়।

রোজকার জীবনে বিজ্ঞানের বিবর্তন: আদিম যুগ থেকেই মানুষের প্রতিদিনকার জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। সেই সময় প্রতিদিন মানুষের খাবার সংগ্রহ করা, আশ্রয়, জীবন রক্ষা করা প্রতিটি ধাপ ই ছিল কঠিন। সেই সময় মানুষ সাধারণভাবে আস্তে আস্তে তারা আবিষ্কার করা শুরু করলো এবং তাদের উপকার হওয়ার ফলে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর নির্ভর করা শুরু করল। খাদ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজন মিটিয়ে তারা বৈজ্ঞানিক জিনিস গুলো ব্যবহার করা শিখেছে। আদিম কাল থেকে সেই চেষ্টার ফলে আজকের যুগে এসে মানুষ দাঁড়িয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে আধুনিক যুগের চরম পর্যায়ে রয়েছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের এক মুহূর্ত চলা ও কষ্টকর হয়ে পরে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদানের জন্য মানুষ যেমন সুখে শান্তিতে রয়েছে তেমনি ভয়াবহভাবে সংকটাপণ্য করছে দৈনন্দিন জীবনকে। বিজ্ঞানের ব্যবহার কে অবশ্যই ভালো দিকে ব্যবহার করতে হবে খারাপ দিকে নয়। বিজ্ঞানের অবদান কে ব্যবহার করে শান্তিময় পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে।

5/5 - (10 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button