অর্থনীতি

কভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে বাংলাদেশের করনীয়

Rate this post

কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস এর প্রকোপে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব আজ থমকে দাড়িয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর প্রথম বারের মতো সারা বিশ্ব এই মহামারির শিকার বলতে পারেন তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ। থমকে গেছে দেশের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি অর্থনৈতিক চাকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই মহামারি যদি এইভাবে চলতে থাকে তবে অচিরেই বাংলাদেশসহ অনেক দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিবে।

অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে বাংলাদেশের করনীয়

অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিবে এটা স্বাভাবিক কারন দেশের এই আপদকালে থমকে গেছে ব্যবসায়-বানিজ্যসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে আমাদের দেশের পোশাক শিল্প এখন অনেক বেশি হুমকির মুখে। উৎপাদন কমে যাচ্ছে, কর্মী ছাটাই হচ্ছে। শহরমুখী মানুষগুলো এখন নিরুপায় হয়ে গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছে। সেদিন একটা রিপোর্টে দেখলাম ঢাকা ছেড়েছে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। যারা কিনা গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছিল নিজেদেরকে ভালো রাখবে বলে, নিজেদের অবস্থার উন্নতি করবে বলে অথচ ভেঙ্গে গেলো তাদের সেই স্বপ্ন। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে যাচ্ছে।

আমি চেষ্টা করবো আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দ্বারা কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে যাতে কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশ অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে পারে ।

একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে এবছর রাজস্ব আহরণ বড় জোড় ২ লক্ষ ৫০ বা ৬০ হাজার কোটি টাকা সম্ভব। যেটা কিনা সংশোধিত বাজেটের (৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি) চেয়ে অনেক কম। তাই আসন্ন বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করাও কঠিন হবে। এইক্ষেত্রে আমরা যদি এনবিআর কে চাপ না দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করি তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল হবে। তবে এই রাজস্ব ঘাটতি সামাল দিতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকের উপর নির্ভর না করে আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সহজ শর্তের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তুলনামূলক নিরাপদ বলে আমি মনে করি। বাজেট প্রস্তাবে যে পরিমাণ ঋণের কথা বলা হয়েছে অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে তা দ্বিগুণ করা সম্ভব।

দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা যদি শূণ্য শতাংশ ইন্টারেস্টে অন্যান্য ব্যাংকদেরকে ঋণ দেয় এবং ব্যাংকগুলো যদি মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান এর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে তবে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের এই মন্দা কাটাতে।

আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছে যাদের কোন টিন নাম্বার নেই। তাই তারা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেনা। তবে সরকার চাইলে তাদেরকে ট্যাক্সের আওতায় নিয়ে আসতে পারে যা কিনা এই দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের মন্দা কাটাতে সহযোগিতা করবে। তাই কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা হাঁস-মুরগির খামার , মাছ চাষ ,পশু-পালন থেকে শুরু করে নানান ব্যবসায়ের সাথে জড়িত, এই সময়ে তারা অনেকটা বিপদের মধ্যে আছে, এই সময় যদি তাদের কাছে পৌছাতে হয় তবে সরকারকে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান এর সহায়তা নিয়ে আগাতে হবে।

দেশের ভিতরে আরো একটা উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করা যায় সেটা হলো আমাদের দেশের যারা বিত্তবান তারা যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বন্ড ক্রয় করেন। আগেরকার সময়ে বিভিন্ন এক্সচেন্জ হাউজের মাধ্যমে বিক্রি করা হতো কিন্তু এখন সময় এসেছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিক্রয় করার। ইতোমধ্যে ট্রেজারি বন্ড বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের বন্ড রয়েছে, এগুলো যদি অনলাইনের আওতায় আনা হয় তবে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুনরায় অর্থনৈতিক চাকা সচল হতে। আমি শুনেছি যে বন্ডের উপর নাকি কর আরোপ করা হয়েছে, আমি মনে করি এই সময়ে এটা করা ঠিক হয়নি কারন এই সময়ে মানুষকে যত পারা যায় বন্ড কিনতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। যাতে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র থেকে টাকা বেড়িয়ে আসে।

সর্বশেষ যে কথাটি বলতে চাই তা হলো, শহর থেকে গ্রামমুখী মানুষগুলো এই সময়ে নিরুপায় হয়ে ভরসা করবে তাদের শেষ সম্বল জমির বা পুকুর এর উপর। কেউ করবে চাষাবাদ আবার কেউবা মৎস্যচাষ করবে। বোঝা যাচ্ছে এই, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অনেকটা চাপ পড়বে তাই সরকারকে এই বিরাট বেকার জনগোষ্ঠীকে যদি অর্থনীতির চাকাকে সচল করার কাজে যুক্ত করতে হয় তবে এই দিকে দৃষ্টি দেয়া একান্ত দরকার। এছাড়াও বিদেশ ফেরত প্রবাসীদেরকে কিভাবে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা যায় সেদিকেও বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি।

আপদকালীন এই সময় কাটিয়ে উঠার পরবর্তী সময়ের মন্দা কাটিয়ে উঠতে হলে সরকারকে উপরোক্ত বিষয়গেুলোর উপর গুরুত্বআরোপ করা উচিত বলে আমি মনে করি।

zahid

A professional SEO Expert & Digital Marketing Consultant. Enhancing online visibility of business is my job. Keeping update myself with new search algorithm update and stay top on search results is my passion.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button