ইসলাম

সূরা ফাতিহা বাংলা অনুবাদ সহ, উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত

সূরা ফাতিহা বাংলা অনুবাদ সহ, উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত জানতে পারবেন আজকের পোস্টে। মহানবী (সা.) বলেছেন, “সেই ব্যক্তির নামায হয় না, যে ব্যক্তি তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করে না।” (বুখারী, মুসলিম, আআহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩০২নং)

সূরা ফাতিহা পবিত্র কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সুরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কোরআন কোনো কিতাবে এই সুরার তুলনীয় কোনো সুরা নেই। (বুখারি, মেশকাত: ২১৪২)

পবিত্র কোরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহিদ, আহকাম ও নসিহত। সুরা ইখলাসে ‘তাওহিদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সুরা ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কোরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভ করেছে। (তাফসিরে কুরতুবি: ১৪৮)

সূরা ফাতিহার এর আরবি উচ্চারণ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

সূরা ফাতিহা বাংলা অনুবাদ সহ উচ্চারণ

বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম।
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন।
আররহমা-নির রাহি-ম।
মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।
ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন
ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম
সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।

সূরা ফাতিহা বাংলা অনুবাদ ও অর্থ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
আমাদের সরল পথ দেখাও।
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

সুরা ফাতিহার ফজিলত

সুরা ফাতিহা এবং সুরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নুর, যা ইতোপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (সহিহ মুসলিম: ৮০৬)

যে ব্যক্তি নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসুলুল্লাহ (স.) এ কথাটি তিনবার বললেন। (মেশকাত: ৮২৩)

আবু সায়িদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিতঃ একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (সহিহ বুখারি: ৫৪০৫)

হজরত আবদুল মালেক ইবনে ওমায়ের (রা.) থেকে বর্ণিতঃ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূরা ফাতেহা সব রোগের মহৌষধ।’- (সুনানে দারেমি, হাদিস ৩৪১৩; মিশকাত, হাদিস ২১৭০)

হজরত আবু সাঈদ ইবনে মুয়াল্লা রা: বর্ণিতঃ একদা হজরত রাসূল সা: বললেন, আমি কি মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতর সূরা শিক্ষা দেবো না? তারপর যখন মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম, তখন বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি না আমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতর সূরা শেখাবার কথা বলেছিলেন? তিনি বললেন, তা হলো সূরা ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’। এটিই সেই সাতটি পুনঃ আয়াত এবং আমাকে প্রদত্ত মহা কুরআন। ( সুনানে দারেমি. ৪, ২১২২)

হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক সময় জিব্রাঈল আ: নবী করিম সা:-এর কাছে বসা অবস্থায় উপর দিক থেকে একটি দরজা খোলার আওয়াজ শুনে উপর দিকে মাথা উঠিয়ে বললেন, আকাশের এ দরজাটি আগে আর কখনো খোলা হয়নি। নবী করিম সা: বললেন, ওই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা নেমে আসতে দেখলাম। জিব্রাঈল আ: বললেন, এই ফেরেশতা জমিনে এর আগে আর কখনো নামেনি। নবী করিম সা: বললেন, ওই ফেরেশতা আমাকে বলল, দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। যা আপনার আগে কোনো নবী আ:-কে দেয়া হয়নি। তা হলো সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ। (মুসলিম)

হজরত আবু সাঈদ ইবনে মুয়াল্লা রা: বর্ণিতঃ একদা হজরত রাসূল সা: বললেন, আমি কি মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতর সূরা শিক্ষা দেবো না? তারপর যখন মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম, তখন বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি না আমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতর সূরা শেখাবার কথা বলেছিলেন? তিনি বললেন, তা হলো সূরা ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’। এটিই সেই সাতটি পুনঃ আয়াত এবং আমাকে প্রদত্ত মহা কুরআন। (বুখারি)

উবাই ইবনু কাব রা: বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ উম্মুল কোরআনের মতো তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাজিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাবউল মাসানি’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসায়ি: ৩১৯)

আবু হুরায়রা রা: বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা সুরা ফাতিহা পড়ো। কোনো বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতায়ীন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। (মুসলিম: ৩৯৫)

সুরা ফাতিহার আমল

হজরত জাফর সাদেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, সুরা ফাতেহা ৪০ বার পাঠ করে পানির ওপর দম করে কোনো জ্বরে আক্রন্ত লোকের মুখমণ্ডলে ছিঁটিয়ে দিলে, এর বরকতে জ্বর দূরীভূত হয়ে যাবে।

ফজরের নামাজের সুন্নত ও ফরজ নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে ৪১ বার এ সুরা পাঠ করে চোখে ফুঁ দিলে চোখের ব্যথা দূর হয়।

শেষ রাতে এ সুরা ৪১ বার তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তাআলা রিজিক বাড়িয়ে দেন।

এ সুরা ৪০ দিন নিয়মিত তেলাওয়াত করে পানিতে ফুঁ দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে পান করালে আল্লাহ অসুস্থতা দূর করে দেবেন। -( বুখারি, ৬/১৮৭)

5/5 - (11 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button