আইইএলটিএস

আইইএলটিএস প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন?

আইইএলটিএস হল আন্তর্জাতিকভাবে ইংরেজী ভাষার উপর দক্ষতা যাচাই করণ পরীক্ষা। আইইএলটিএস প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এই পোস্টে থাকবে পূর্ণাংগ গাইডলাইন। International English Language Testing System (IELTS) বা আইইএলটিএস। নিজের ইংরেজী ভাষার উপর দক্ষতা যাচাইয়ের সবচেয়ে ভাল প্লাটফর্ম যা এই ভাষার প্রতি আত্নবিশ্বাস জাগিয়ে তুলবে। শুধুমাত্র বিদেশে উচ্চশিক্ষা নয় বরং আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষার গুরুত্ব অতীব জরুরী। আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের ইংরেজী ভাষার গুরুত্ব কতখানি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আইইএলটিএস প্রস্তুতি

ইংরজেী ভাষার উপর দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য বর্তমান সময়ে অনেকগুলো পরীক্ষা বিদ্যমান তন্মধ্যে IELTS, TOEFL, PTE অন্যতম। তবে ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হওয়া IELTS এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। অবশ্য এর পিছনে কারন হলো বর্তমানে প্রায় প্রতিটি দেশই এই স্কোর গ্রহণ করে থাকে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ইংরেজী ভাষার প্রতি একটা ভয় কাজ করায় অনেকে এই পরীক্ষায় বসতে ভয় পান তবে এই পরীক্ষার সুবিধাজনক দিক হলো কোনো পাশ-ফেল নেই। মূলত এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি আপনার ভাষার দক্ষতা ঠিক কতোখানি তা জানতে পারবেন।

আইইএলটিএস মূলত দুই ধরনের-

একাডেমিক ও জেনারেল। আপনারা যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে চান তাদের জন্য অ্যাকাডেমিক আর যারা কাজ বা স্থায়ী বসবাসের জন্য যেতে চান তাদের জন্য জেনারেল।
এই দুই ধরনের IELTS এ চারটি সেকশন থাকে। যথাঃ

  • লিসেনিং
  • রিডিং
  • রাইটিং
  • স্পিকিং

অর্থাৎ আইইএলটিএস দ্বারা আপনার প্রতিটি সেকশনের দক্ষতা যাচাই করা হবে। এখানে সর্বোচ্চ ব্যান্ড হলো ৯। তাই আপনার অর্জিত ফলাফলও ব্যান্ড হিসেবে গণনা হবে। প্রতিটি সেকশনের আলাদা ফলাফল হয়। চারটি সেকশনের আলাদা আলাদা ফলাফল গড় করে যে ব্যান্ড পাওয়া যাবে সেটাই হবে আপনার ব্যান্ড।
আইইএলটিএস যৌথভাবে British Council, IDP: IELTS Australia এবং Cambridge English Language Assessment এর অধীনে একটি পরীক্ষাপদ্ধতি।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কতো দিনের মধ্যে প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। আসলে প্রস্তুতি নেয়ার সময়টা নির্ভর করবে আপনার ব্যাসিক দক্ষার উপর। আপনার ইংরেজী ভাষার উপর দক্ষতাই আপনাকে এগিয়ে রাখবে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে । আমরা এমনও দেখেছি যে, ২০দিনের প্রস্তুতি নিয়েও অনেকে ৭.৫ ব্যান্ড পেয়েছে। তাই আপনার ব্যসিক দক্ষতার উপর সময় নির্ভর করবে।

এইবার আমরা জানার চেষ্টা করবো যে চারটি সেকশনে কিভাবে প্রস্তুতি নিলে আমাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়া বিশেষ করে আমরা যারা নন-নেটিভ তাদের জন্য ভালো হবে।

লিসেনিংঃ

লিসেনিং এ মূলত একজন একটা বিষয় সম্পর্কে বলবে সেইটা শুনে শুনে আপনাকে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে যে ওয়ার্ডটা বলসে ঐটা দিয়ে। লিসেনিং সেকশনে আমরা যারা নন-নেটিভ তাদের অনেকটা সমস্যা দেখা দেয় এ্যাকসেন্ট বুঝতে।

এই সেকশনের জন্য সাজেশান থাকবে বেশি বেশি করে ইংরেজী গান শুনতে হবে এবং মুভি দেখতে হবে। এছাড়া ইংরেজী সিরিজ দেখা । এগুলো শুনতে শুনতে বোঝার চেষ্টা করা তারা আসলে কি বলছে। তবে সাবটাইটেল ছাড়া দেখাটা খুবই গুরত্বপূণ।

যদি আপনি এসব দেখে তাদের কথা বুঝতে পারেন তখন থেকে প্রাকটিস শুরু করতে হবে। আর তা না হলে আপনাকে এই সেকশনে ২-৩ মাস সময় দিতে হবে। তাছাড়া আপনি চাইলে ইংরেজীতে দেয়া বিখ্যাত ব্যক্তিদের বক্তৃতা শুনতে পারেন।

সর্বশেষ আপনি ক্যামব্রিজের ১২টা বইয়ের একটা সেট আছে আইইএলটিএস এর জন্য সেখান থেকে লিসেনিং টেস্ট গুলো প্রাকটিস করবেন। আমি মনে করি লিসেনিং এর জন্য যথেষ্ট।

রিডিংঃ

আমাদের মতো নন-নেটিভদের জন্য এই সেকশনটা অনেক কঠিন বলে অনেকে ধারনা করেন। এই সেকশনে ভালো করতে হলে আপনাকে অনেক সময় দিতে হবে কারন এখানে কোন শর্টকাট নেই। বেশি বেশি পড়ার কোন বিকল্প নেই এই সেকশনে। বারবার প্রাকটিস করতে হবে, ভুল হবে, আবার কয়েকদিন পর চেষ্টা করতে হবে।
যাদের বই পড়ার অভ্যাস আছে বিশেষ করে ইংরেজী বই পড়ার অভ্যাস আছে অনেক দিনের তাদের জন্য একটু হলেও এই সেকশনটা সহজ হবে। যাদের বই পড়ার অভ্যাস নাই তাদেরকে বলবো প্রতিদিন সময় করে ইংরেজী পত্রিকা পড়বেন।

তবে মনে রাখবেন এই সেকশনের ক্ষেত্রে স্পীড এবং একুর‌্যাসি বা সঠিক উচ্চারণ দুইটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারন সঠিক উচ্চারণ এবং রিডিং স্পীডের উপর নম্বর পাওয়া অনেকটা নির্ভরশীল।
আইইএলটিএস রিডিং সেকশনে ভালো করার টিপস দেখতে লেখাটির উপর ক্লিক করুন।

রাইটিংঃ

রাইটিং এর ক্ষেত্রে মূলত দুইটা প্রশ্ন থাকেঃ

  • যেকোন বিষয়কে সামারাইজ করার দক্ষতা।
  • কোন বিষয়ে মতামত দেয়া বা সেটাকে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা।

তারমানে হলো আপনার অনেক বেশি লেখার অভ্যাস থাকতে হবে। প্রথমদিকে লেখার কোয়ালিটি ভালো না হলেও লিখতে লিখতে কোয়ালিটি বৃদ্ধি পাবে সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। আপনি যদি ইতোপূর্বে রিডিং এ দক্ষ হয়ে থাকেন সেটা আপনাকে লেখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজে দিবে।

এছাড়াও আপনি চাইলে ইউটিউব থেকে লেখা ভালো করার বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন যাতে কোয়ালিটি ভালো পায়। তবে যাদের লেখালেখির অভ্যাস কম, তাদের এই সেকশনে সময় দিতে হবে। যদিও এই সেকশনে তেমন নম্বর পাওয়া যায় না তাই বেশি বেশি লেখার প্রাকটিস করতে হবে।

স্পিকিংঃ

আপনি যখন বসে বসে সারাদিন সবার সাথে কথা বিরক্ত করে । ঠিক সেই কাজটাই করবেন তবে সেটা ইংরেজীতে। তবে সেই জন্য আপনাকে একজন সঙ্গী খুজে নিবেন যাতে তার সাথে আপনি ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে পারেন।

যদি আপনি কোন সঙ্গী খুজে না পান তবে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন আবার নিজেই উত্তর দিবেন। প্রথমদিকে আপনার ভিতর অনেক জড়তা দেখা দিবে, কথা বলতে লজ্জ্বা লাগবে। কিন্তু আপনাকে এই সেকশনে সময় দিতে হবে তবেই আপনার লজ্জ্বা কাটিয়ে ভালো স্পিকার হতে পারবেন।

আপনি যদি দেখেন যে আপনার ভিতর থেকে একদম কোন কথা বের হচ্ছে না তবে আপনি কোন কোচিং এ ভর্তি হতে পারেন। স্পিকিং পরীক্ষার সময় আপনাকে নিজের থেকে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। মুখস্ত করা উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে মনে রাখবেন প্রশ্নকর্তা আপনার থেকে নতুন কিছু শুনতে চায় সর্বদা সেইদিক মাথায় রেখে আপনাকে উত্তর দিতে হবে।

এছাড়াও আপনি চাইলে বাসায় বসে বসে প্রাকটিস করতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে থাকেন তবে বিদেশী বন্ধু বানিয়ে তাদের সাথে স্পিকিং প্রাকটিস করেন। এতে আপনার স্পিকিং এ দক্ষতা বারবে পাশাপাশি আপনার উচ্চারণ এ দক্ষতা আসবে। এক্ষেত্রে আপনার লিসেনিং সেকশনের প্রাকটিস অনেকটা কাজে আসবে সঠিক উচ্চারণ করার ক্ষেত্রে।

আইইএলটিএস প্রস্তুতির জন্য সহায়ক বইঃ

  1. Cambridge English IELTS 6-12 (Academic for foreign studies)
  2. Academic writing practice for IELTS _ Sam Mccarter (For writing part)
  3. Listening & Speaking skills- Barry Cusack & Sam Mccarter
  4. IELTS practice tests- Plus 3: Margaret Matthews and Katy Salisbuty (Model test book)
  5. Barron’s IELTS Superpack
  6. The Official Cambridge Guide to IELTS

সবশেষে একটা কথা বলতে চাই, আপনি যদি প্রস্তুতি শুরু করার পূর্বে মকটেস্ট দিয়ে আপনার লেভেল যাচাই করে নেন তবে আপনার প্রস্তুতি নিতে অনেক সুবিধা হবে। কেননা আপনি আপনার লেভেল অনুযায়ী ঠিক কতদিনের প্রস্তুতি নেয়া দরকার সেটা শনাক্ত করতে পারবেন। যেটা কিনা আপনাকে অন্যদের থেকে একটু হলেও এগিয়ে রাখবে।
প্রাকটিসের কোন বিকল্প নেই তাই যত বেশি প্রাকটিস করবেন স্কোর তত ভালো হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আশা করছি আমার এই পরামর্শ কিছুটা হলেও আপনাদের উপকারে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। আপনার শেখা আনন্দময় হোক সেই প্রত্যাশায়। আরো জানতে আইইএলটিএস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

পূর্নাংগ প্রস্তুতির জন্য নিচের পোস্ট গুলো পড়ুন

আরো পড়ুন

5/5 - (12 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button