এইচএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষা 2023
অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও তাদের এইচএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বাহিরের দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় আবেদন করে থাকেন। বিদেশে পড়াশোনার জন্য বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই প্রথমে বৃত্তি লাভের জন্য নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারেন। এবং যে দেশগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি আবেদন করতে দেখা যায় সেই দেশগুলো হলো :
যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি,কানাডা।
এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃত্তি প্রদান করে থাকে, যেমন হাঙ্গেরি, চায়না, জাপান। অনেক সময় সেসব বৃত্তি লাভের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন করার সুযোগ করে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
Contents
এইচএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ:
১.ভাষাগত দক্ষতা
আপনি যে দেশে যেতে চাচ্ছেন সে দেশের ভাষাগত দক্ষতা যদি আপনার থেকে থাকে তাহলে সেটি আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
IELTS, TOEFL, PTE এর মত পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকা অন্যতম একটি প্লাস পয়েন্ট। কখনো কখনো IELTS এর ক্যাটাগরি গুলোতেও স্কোরের রিকোয়ারমেন্টস থাকতে পারে।
অনেক সময় আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করছেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের IELTS এর স্কোর এবং আপনি যদি ডিপার্টমেন্টের জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন সেই ডিপার্টমেন্টের IELTS এর স্কোর রিকোয়ারমেন্টস বিভিন্ন হতে পারে তাই আবেদনের পূর্বে অবশ্যই বিষয়গুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো জায়গায় ওই দেশের ভাষা সম্পর্কে ভালো স্কোর থাকা প্রয়োজন।
২.ভালো সিজিপিএ
বিভিন্ন দেশে আগের পরীক্ষাগুলো ভালো সিজিপিএ থাকাটা বাধ্যমূলক না হলেও ন্যূনতম সিজিপিএ থাকাটা অবশ্যই বাধ্যতামূলক এবং যাদের ভাল সিজিপিএ রয়েছে তাদের বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে যায়। যেমন সিজিপিএ স্কেল ৪ এ ন্যূনতম ৩ পয়েন্ট থাকতে হবে।
৩.আপনার কাজের অভিজ্ঞতা
আপনি যে বিষয়ের জন্য আবেদন করছেন সেই বিষয়ে যদি আপনার কয়েক বছরের( ন্যূনতম ১ বছর) কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে তা আপনার বৃত্তি প্রাপ্তিতে একটি প্লাস হিসেবে কাজ করতে পারবে।আমরা প্রায়ই এক বা দুই দিনের ভলেন্টিয়ারিং বা নানা প্রতিষ্ঠান এর সাথে কাজ করে থাকি।কিন্তু এক বা দুই দিনের কাজের এরকম অভিজ্ঞতা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের জন্য শিক্ষনীয় হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা গুলো খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না। তাই কোন কোন কাজের অভিজ্ঞতা গুলো আপনি আপনার আবেদনপত্রের মেনশন করবেন পরিকল্পনা করে রাখুন এবং সে অনুযায়ী আপনাদের কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর পরই আবেদন করুন।
৪. বিভিন্ন প্রকাশনা বা পাবলিকেশন্স ও এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস
বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের পূর্বে আপনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সুপারভাইজার বা কোন প্রসেসর এর আন্ডারে যে বিষয়ে আপনার ইন্টারেস্ট রয়েছে সেই বিষয়ের উপর কোনো রিচার্জ বা পাবলিকেশন রিলিজ করতে পারেন। এবং আবেদন করার সময় এটাও মাথায় রাখতে হবে যে আপনি আপনার বিষয়ের উপর তখনই বৃত্তি পাবেন যখন আপনার কাংখিত বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রফেসরের রিসার্চ ইন্টারেস্ট আপনার ইন্টারেস্ট এর সাথে মিলে যায় যে আপনাকে সুপারভাইজ করতে পারবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে বিষয়ে আপনি বৃত্তির জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন, সেই বিষয়ের ওপর আপনার ভালো কোন জার্নালে পাবলিকেশন্স বা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তা খুব গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
৫. প্রফেশনাল রাইটিং
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের একটি ভীতি হলো এক্যাডেমিক রাইটিং অথবা প্রফেশনাল রাইটিং।বিভিন্ন ভার্সিটিতে বৃত্তির জন্য আবেদন করার পূর্বে আপনার এসওপি,কিছু রিটেন স্যাম্পল ওদের দিতে হয় যেমন আপনি যে স্টেটমেন্ট অফ পারপাস টা দিবেন, সেটাতেও আপনার অনেক এক্যাডেমিক রাইটিং লিখতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের রিটেন স্যাম্পল,রিটেন এসএ দেওয়ার দরকার হয়ে থাকে, এবং এই রিটেন স্যাম্পল গুলোই একাডেমিক হয় যা অনেক বেশি প্রফেশনাল।তাই এর ভালো প্র্যাকটিস থাকা অনেক জরুরী।
৬.স্টেটমেন্ট অব পারপাস
যখন আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি পাবার জন্য আবেদন পত্র লিখছেন আপনার সে আবেদন পত্রটিকে স্টেটমেন্ট অব পারপাস বলে। এই আবেদন পত্র আপনি কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সে সম্পর্কে লিখতে হয়। আবেদন পত্র লেখার সময় প্রত্যেকটি মানুষকে অনেক বেশি সৃজনশীল হবার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইটে এই লেখার স্যাম্পল দেয়া থাকে সে স্যাম্পল সম্পূর্ণরূপে কপি না করে নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সৃজনশীলভাবে আপনার স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গুলো গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করুন।
৭.রিকমেন্ডেশন লেটার
অনেকক্ষেত্রে বিদেশে ভর্তির সময় আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের রিকমেন্ডেশন লেটার দরকার হয়। এ লেটার এর ভাষা যদি আর আর বাকি আট দশ জন শিক্ষার্থীর মতই হয় তাহলে আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই আপনি যে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পড়েছেন বা যে শিক্ষক হয়তো ক্নেক বছর ধরে আপনার কাজের সাথে পরিচিত সেরকম শিক্ষকের কাছ থেকে যথেষ্ট সময় নিয়ে ভালো রিকমেন্ডেশন লেটার লিখিয়ে নিন।আর তাতে অনেক বেশি সৃজনশীল হবার চেষ্টা করুন।
৮.পরিকল্পনা ও গবেষণা করুন
আপনার মত হাজারো শিক্ষার্থী হয়তো একই বৃত্তির জন্য আবেদন করছেন। তাই আবেদনের প্রত্যেকটি ধাপে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করার জন্য নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর প্রয়োজন। আপনি যত ভালোভাবে আপনার কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার সাবজেক্টের ফান্ডিং এর পরিমান এবং এবং কারা পড়াচ্ছেন সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকলে আরো ভালোভাবেই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাই ভালোভাবে সময় নিয়ে গুছিয়ে পরিকল্পনা করুন। এবং যারা এর আগে আপনার কাঙ্খিত বৃত্তির জন্য আবেদন করেছেন এবং সফল হয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা জানে নিন।বৃত্তির আবেদন থেকে শুরু করলে ভর্তি প্রক্রিয়া এটি বেশ দীর্ঘ ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া তবে ধৈর্য নিয়ে ঠিক সময়ের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে আপনিও পেতে পারেন আপনার কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ।
কিভাবে স্কলারশিপের খোজ পাবেন?
একেক দেশের বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ধরন একেকরকম। তাই প্রথমেই জেনে নিতে হবে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আপনি আবেদন করতে চান।
প্রথমেই খোজ করতে হবে বিভিন্ন দেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ।
নানা দেশের বাংলাদেশের দূতাবাসেও বৃত্তির সব তথ্য দেয়া থাকে।দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেও ওই দেশের রাষ্ট্রীয় বৃত্তি গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন।
আমাদের দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক এর ওয়েবসাইটেও থাকে বিভিন্ন দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির তথ্যসমূহ।
বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে ইন্টারভিউ গুলো কেমন হয়?
আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ই বা ডিপার্টমেন্টেই আবেদন করেন না কেনো একটা পর্যায়ে যেয়ে আপনাকে অবশ্যই ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে। অনেক সময় একবার একের অধিক ও ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিটেন অ্যাপ্লিকেশনের আপডেট হওয়ার পর ইন্টারভিউর জন্য কল করা হয়। এবং সেই ইন্টারভিউ গুলোতে সেই ইউনিভার্সিটির এক বা একাধিক প্রফেসর উপস্থিত থাকেন অথবা অনেক সময় যার সাথে আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট মিলে গিয়েছে সেই প্রফেসর উপস্থিত থাকতে পারেন। ইন্টারভিউর প্রথম পর্যায়ে থাকে আপনার self-introduction. এরপর ইন্টারভিউ শিফট হয়ে যায় একাডেমিক পর্যায়ে। যে বিশ্ববিদ্যালয় আপনি ভর্তির জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিপার্টমেন্টর ওয়ে অফ টিচিং অনুযায়ী আপনার স্কিল টেস্ট বা আপনাকে বিভিন্ন সৃজনশীল প্রশ্ন করে আপনাকে পরীক্ষা করতে থাকবে।কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব ইন্টারভিউ অনেক বেসিক এবং প্রানবন্ত হয়।তাই ইন্টারভিউ তে আত্মবিশ্বাসী এবং প্রাণবন্ত ভাবে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেওয়ার অনুশীলন করতে হবে এখন থেকেই।
আবেদন করতে যা যা প্রয়োজন:
১. মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
২. পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট
৩. ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট
৪. কিছু কিছু দেশে এসব কাগজপত্র সত্যায়িত করে পাঠাতে হয় কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে এর প্রয়োজন হয় না।
যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির জন্য আবেদনের পূর্বে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে যে রিকোয়ারমেন্টস গুলো রয়েছে তা খুব ভালোভাবে পড়ে সে অনুযায়ী কয়টা ক্রাইটেরিয়া আপনি ফুলফিল করতে পেরেছেন এবং আপনার আরো কি কি করা উচিত সে অনুযায়ী ভালো অভিজ্ঞতা রাখুন। রিকোয়ারমেন্টস ফুল ফিল না করেই বৃত্তির জন্য আবেদন করলে আপনার বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা অনেক ক্ষীণ হয়ে থাকে, তাই বিদেশে ভর্তির জন্য আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই পরিকল্পনা এবং গবেষণা এর প্রেক্ষিতে কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।