আইইএলটিএস

আইইএলটিএস স্পিকিং প্রস্তুতি

বেশিরভাগ পরিক্ষার্থীদের কাছে আইইএলটিএস স্পিকিং অংশটি এক ভীতির নাম। যদিও আইইএলটিএস এর অন্যান্য অংশগুলোর তুলনায় স্পিকিং হচ্ছে সবচেয়ে ছোট কিন্তু তুলনামুলকভাবে জটিল অংশ। স্পিকিং নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে আপনার ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা বহুগুণে বেড়ে যাবে। যদি আপনার নিজের উপর বিশ্বাস শক্ত করতে পারেন তাহলে আপনি স্পিকিং এ অনায়াসে ৮.৫ এমনকি ৯ ও পেয়ে যাবেন।

আইইএলটিএস স্পিকিং: প্রাথমিক ধারণা

আইইএলটিএস পরীক্ষা মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত।

১। লিখিত পর্ব

২। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার

লিখিত অংশে শুনে কিংবা পরে প্রশ্ন বুঝে প্রশ্নের উত্তর খাতায় লেখতে হয়। আর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার অংশে পরীক্ষকের প্রশ্ন শুনে, বুঝে, মুখে উত্তর করতে হয়। স্পিকিং পরীক্ষার জন্য ১১-১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে।

লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং টেস্ট এক সিটিং এ শেষ হয় আর স্পিকিং সাধারণত আলাদাভাবে নেয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবগুলো অংশের পরীক্ষা রাখা হয় একই দিনে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আবার এক সপ্তাহের গ্যাপ থাকতে পারে। আপনি যখন নিকটস্থ রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করবেন তখনই আপনাকে এই সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আইইএলটিএস স্পিকিং পরীক্ষায় কী ধরণের প্রশ্ন করা হয়

বাংলাদেশের কোনো সেন্টারে টেস্টে অংশগ্রহণ করলে তার পরীক্ষক একজন বাংলাদেশী হবার সম্ভাবনা প্রবল। যাহোক, প্রবেশ করার পর তিনি দুই একটি কথা বলতে পারেন, যেমন, আপনার কী নাম, বসুন ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি কিন্তু টেস্টের অংশ নয়। তিনি আপনার পাসপোর্ট দেখতে চাইবেন। তারপর নতুন করে শুরু করবেন। নিজের পরিচয় দিবেন আপনার পরিচয় জানতে চাইবেন।

এবার তিনি আপনার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করবেন। এই প্রশ্নগুলো বেশ সহজ। আপনি কী করেন, কেন আইইএলটিএস দিতে চান, আপনার হবি কী ইত্যাদি ধরণের প্রশ্ন। আপনার দেয়া উত্তরের উপর ভিত্তি করে তিনি আরও কিছু প্রশ্ন করতে পারেন।

প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া হলে তিনি একটি জেনারেল বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করবেন। এই প্রশ্নগুলো আপনার কমন পড়তে পারে, নাও পারে। যেমন ধরুন, আমাকে প্রশ্ন করা হলো, বাংলাদেশে ওয়াটার স্পোর্টস কতটা প্রচলিত, আমি কোন ওয়াটার স্পোর্টসে খেলেছি কী না, বাংলাদেশে কেন ওয়াটার স্পোর্টস জনপ্রিয় নয়, আমার কোন পরিকল্পনা আছে কী না ইত্যাদি।

এই ধাপ পার হলে তিনি আপনাকে একটি টপিক লিখা কার্ড/পাতা দিবেন। নোট নেয়ার জন্য একটি পেন্সিল এবং কাগজ দিবেন। টপিকে একটি সিচুয়েশন উল্লেখ করা থাকবে এবং দুই তিনটি প্রশ্ন থাকবে। যেমন: আপনার সাম্প্রতিক দেখা একটি সিনেমা সম্পর্কে বলুন। সিনেমাটি কোথায় দেখেছেন? কবে দেখেছেন? কেমিন লেগেছিল? ইত্যাদি। আপনাকে এক মিনিট সময় দেয়া হবে উত্তর সাজিয়ে নেয়ার জন্য। তারপর আপনাকে ঐ টপিক সম্পর্কে দুই তিন মিনিট বলতে হবে।

সর্বশেষ ধাপে আপনাকে দেয়া সেই টপিকের সাথে সম্পর্কযুক্ত এমন কিছু প্রশ্ন করা হবে। যেমন: বাংলাদেশের সিনেমা কেন জনপ্রিয় নয়? মানুষ কেন সিনেমা দেখে? ইত্যাদি।

ব্যাস, হয়ে গেল আপনার স্পিকিং টেস্ট। আপনি বের হয়ে আসার পর টেস্ট পরীক্ষক কিছু সময় নিয়ে আপনাকে মার্কিং করবেন।

নিচের ভিডিওটিতে আইইএলটিএস স্কোর ৯ অর্জনকারী একজন পরীক্ষার্থীর স্পিকিং অংশে উত্তর করার ধরন দেখে আরো স্পস্ট  ধারণা করতে পারবেন, আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের জন্য কতোটুকু দক্ষতা প্রয়োজন।

আইইএলটিএস স্পিকিং এর জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন

আইইএলটিএস প্রস্তুতির কথা ভাবতেই প্রথমে সবাই খুঁজতে শুরু করেন কোনটা সবচেয়ে ভাল কোচিং সেন্টার। আসলে তারা আপনাকে শুধুই গাইডলাইন দিবে। কিন্তু শিখতে হবে আপনাকেই। আইইএলটিএস এর সব রকম রিসোর্ছ অনলাইনে সম্পূর্ন ফ্রী পাওয়া যায়। পূর্নাংগ প্রস্তুতির জন্য আপনার প্রয়োজন একটি পরিপূর্ন স্টাডি প্ল্যান।

স্পিকিং টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে আপনাকে প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে। আসলে এই একটি পরামর্শ আপনাকে আইইএলটিএস-এর প্রত্যেকটি ধাপের জন্যই করা হবে। প্র্যাকটিস ছাড়া ভালো স্কোর করা সম্ভব নয়। গুগল করলেই জানতে পারবেন বহু নেটিভ স্পিকার, অর্থ্যাৎ যারা ইংরেজি মাতৃভাষার মতোই ভালো জানে, তারা স্পিকিং এ ৯ স্কোর অর্জন করতে পারে না। আবার নেটিভ স্পিকার নয়, এমন অনেকেই ৯ স্কোর করার গৌরব অর্জন করতে পারে।

১। গ্রামারঃ আপনাকে শুদ্ধ গ্রামারে বাক্য তৈরী করা শিখতে হবে। এটা আইইএলটিএস এর সকল টেস্টের জন্য পূর্বশর্ত। সুতরাং আমি ধরে নিচ্ছি, আপনি মোটামুটি শুদ্ধভাবে গ্রামার মেনে বাক্য লিখতে, পড়তে, বলতে পারেন। আর মনে মনে ধরে নিবেন যে, ইংলিশ বিদেশি ভাষা, তাদের নিয়ম মেনেই আমাদের কথা বলতে হবে। যদি গ্রামার মিসটেক হয় তাহলে জেল জরিমানা ও হতে পারে।

২। প্র্যাকটিসঃ আপনাকে সারাদিনই প্র্যাকটিসের মধ্যে থাকতে হবে। মনে মনে ইংরেজিতে কথা বলুন, বিড়বিড় করে ইংরেজিতে কথা বলুন। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের সাথে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে কোন একজন পার্টনার ঠিক করে নিন যিনি আপনার সাথে ইংরেজিতে কথা বলবে, আপনার ভুলগুলো ধরিয়ে দিবে ইত্যাদি। আর মোবাইল এপ সবসময় ব্যবহার করুন। স্পিকিং টেস্টের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে এভাবে ইংরেজি পরিবেশের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

আইইএলটিএস প্রস্তুতির জন্য সেরা ৫টি ফ্রি এপ (android/ios)

৩। রিসার্চঃ বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং আইইএলটিএস সংক্রান্ত বইয়ে স্পিকিং টেস্টের জন্য কিছু টপিক দেয়া থাকে। এ ধরনের এক একটি টপিক নিয়ে এক মিনিট ধরে চিন্তা করুন এবং তারপর তিন মিনিট ধরে সশব্দে সেই টপিক সম্পর্কে বর্ণনা করুন। যদি কোন পার্টনার ঠিক করতে পারেন, তবে তাকে বলুন, সেই টকিপ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করতে এবং আপনি চেষ্টা করুন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে।

৪। নিজের কথা রেকর্ডিংঃ এই যে বিভিন্ন সময়ে ইংরেজিতে কথা বলছেন, এই কথাগুলো রেকর্ড করার সুযোগ থাকলে রেকর্ড করে রাখুন। তারপর পরে বাজিয়ে শুনুন, আপনি কি Coherence, Lexical Resources, Grammatical Range & Accuracy এবং Pronunciation শর্তগুলো মেনে চলে কথা বলতে পারছেন কিনা। তারপর পরের বার সেই ত্রুটিগুলো কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করুন।

৫। ইংলিশ নিউজ শোনাঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০মিনিট মনোযোগ দিয়ে ইংলিশ নিউজ চ্যানেল থেকে নিউজ শুনুন। নিউজ গুলো বার বার মাথার ভিতরে ঘুরাতে থাকুন। যেভাবে নিউজ চ্যানেলে খবর পড়ছে ওইভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার কথা ভাবুন।

৬। মুভি দেখাঃ ঘটনা বহুল মুভিগুলো দেখুন, যেগুলো নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করতে পারবেন। মুভি দেখার সময় ডায়লগ গুলো মনে মনে উচ্চারন করতে থাকুন। প্রতিটি মুভি বেশ কয়েকবার করে দেখুন। সাথে অবশ্যই মোবাইলের ডিকশনারি এপ রাখবেন। নতুন কোন শব্দ পেলে সাথে সাথে অর্থ জেনে নিবেন।

এই হলো স্পিকিং টেস্টের প্রস্তুতি। সত্যি কথা হলো, আপনি আগে থেকেই বিষয়গুলো জানতেন। আমি কেবল মনে করিয়ে দিলাম এবং এই অনুযায়ী প্র্যাকটিস করার জন্য তাগাদা দিলাম। মনে রাখবেন, স্পিকিং এ আপনি মাত্র একবারই কথা বলার সুযোগ পাবেন এবং চিন্তা করার জন্য তেমন কোন সুযোগ পাবেন না বললেই চলে।

আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন পরামর্শঃ টেস্ট ডে-তে যিনি আপনার টেস্ট নিচ্ছেন তিনি আপনার কোন বন্ধু নন, আপনার সাথে আলাপ করতেও তিনি আগ্রহী নন। তার কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তৈরী করা আছে, তিনি কেবল সেগুলো আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন (পাঠ করবেন)। তার দায়িত্ব হলো আপনার থেকে শুনে আপনার দক্ষতা যাচাই করা। ফলে তার সাথে কথা বলা নয়, বরং তার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য বেশী মনযোগী হোন। উত্তর দেয়ার সময় নিজের সৃজনশীলতা ফুটিয়ে তুলুন।

মুভি দেখার মাধ্যমে ভাষা শিখবেন যেভাবে

  • কোনো একটি মুভি দেখলে, সে সিনেমার উপরে লিখিত বিভিন্ন আর্টিকেল পড়তে হবে এবং সিনেমার অধিকাংশ শব্দগুলোর অর্থ জানতে হবে।
  • প্রথমে এমন মুভি দেখতে হবে, যেটার কথোপকথনের ভাষা কিছুটা সহজ প্রকৃতির। সাধারণত শিশুদের জন্য তৈরিকৃত মুভিগুলোর ভাষা সহজ হয়।
  • আপনি যে মুভি দেখছেন, তার কথপোকথন লক্ষ্য করুন, চরিত্রগুলো বিশ্লেষণ করুন এবং বাস্তবতার নিরিখে ব্যাখা করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকবে এবং ভাষা দ্রুত রপ্ত করতে সক্ষম হবেন।
  • সম্পূর্ণ মুভি একটানা না দেখে, বরং বিরতি দিয়ে দেখুন এবং এ বিরতির সময়ে স্পিকিং অনুশীলন করতে পারেন।
  • ভাষা শিখতে হলে আপনাকে মুভির সাথে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে এবং প্রত্যক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। মুভি দেখার মধ্য দিয়েই রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং অনুশীলন করতে হবে। তবেই সিনেমা দেখে ভাষা আয়ত্ত করতে পারবেন।
  • আপনি প্রাথমিকভাবে শব্দের অর্থ জানার চেয়ে বাক্যের মর্মার্থ উপলব্ধি করার প্রতি অধিক মনোনিবেশ করুন।
  • আপনি সিনেমা দেখার প্রথম দিকে সাবটাইটেলসহ দেখতে পারেন, তবে ধীরে ধীরে সাবটাইটেল না দেখে কথোপকথন বোঝার চেষ্টা করুন।
  • ভাষা আপনি একাকী শিখতে চেষ্টা করলে ব্যর্থ হবেন। এজন্য যারা ভাষা শিখতে আগ্রহী তাদের নিয়ে একটি গ্রুপ করুন। তারপর দলগতভাবে ভাবে সিনেমা দেখুন এবং পরস্পর সিনেমা নিয়ে চর্চা করুন।

আইইএলটিএস প্রস্তুতি

আইইএলটিএস রাইটিং টিপস

আইইএলটিএস রিডিং ভালো করার ৫টি সেরা কৌশল

আইইএলটিএস প্রস্তুতির জন্য সেরা ৫টি ফ্রি এপ (android/ios)

আইইএলটিএস স্পিকিং প্রস্তুতি

5/5 - (33 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button