চুল সিল্কি করার উপায়
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে বলবো কিভাবে আপনারা আপনাদের চুল সিল্কি রাখবেন বা ঘরোয়া ভাবে চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে। সুন্দর এবং ঘন কালো চুলের প্রশংসা শুনতে কে না চায়। আর প্রত্যেক নারীর আশঙ্কা থাকে যে চুলগুলো ঘন কালো, সিল্কি সাইনী এবং ঝলমলে থাকুক সবসময়। অনেকটা সময় এরকম থাকে যেন হালকা বাতাসে তার চুলগুলো খেলা করে বাতাসের সাথে।
বর্তমানে নারীদের পাশাপাশি ছেলেদের চুলের যত্ন বা সৌন্দর্য নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তারাও সাধারণত ভাবতে থাকে তাদের প্রিয়জনের সামনে তারা তাদের সিল্কি চুলের একটি দারুন স্টাইল দেখাবে।
এখন আমি চুল সিল্কি করার উপায় হিসেবে যে কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করবো এগুলো জানলে আপনাকে চুল সিল্কি রাখার জন্য বাজার থেকে দামি দামি প্রোডাক্ট কিনতে হবে না। পার্লারে গিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হবে না। আপনি চাইলে ঘরে বসে অতি দ্রুত আপনার হাতের কাছের কিছু উপাদান দিয়ে আপনি আপনার চুল সিল্কি এবং সুন্দর করে তুলতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সহজ কয়েকটি উপায়ঃ
Contents
চুল সিল্কি করার উপায়
অ্যালোভেরা ও লেবুর ব্যবহার
সাধারণত অ্যালোভেরার যেমন ত্বকের যত্নের জন্য উপকারী তেমনি চুলের যত্নের জন্য এটা অনেকাংশে উপকারী। চুলের জন্য এলোভেরার চেয়ে ভাল উপাদান আর হয়তো পাওয়া যাবে না। সাধারণত চুলের সঠিক পুষ্টি জোগাতে অ্যালোভেরার কোনো জুড়ি নেই। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সাধারণত চুলের বৃদ্ধি বজায় রেখে আপনার চুল সিল্কি এবং সুন্দর করে তুলে দ্রুত। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক এই মিশ্রণটি কিভাবে বানানো যায়-
ব্যবহার বিধি
প্রথমে আপনার চুলে শ্যাম্পু করে নিতে হবে এবং চুল ভালো করে ধুয়ে তারপর শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর আপনাকে একটি পাত্র নিতে হবে এবং সেই পাত্রে ২ চামচ অ্যালোভেরার জেল নিতে হবে। তারপর তার সাথে আধা চামচ লেবুর রস মিলিয়ে সেটি ভালো করে নেড়ে একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। সাধারণত এই মিশ্রণটি কাজ করবে একটি ন্যাচারাল কন্ডিশনার এর মতো।
আর হ্যাঁ, তবে এই মিশ্রণটি আপনার চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী তৈরি করতে হবে। আপনার চুল যদি এক্ষেত্রে অনেক বেশি লম্বা হয় তাহলে আপনি অ্যালোভেরার পরিমাণ এবং লেবুর রসের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত টেনে টেনে আংগুল দিয়ে তেলের মত ম্যাসাজ করে লাগান। তারপর চুলে মিশ্রণটি এইভাবে ২০ মিনিট রাখার পর নর্মাল পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সাধারণত দেহের প্রতি এতটাই কাজ করে থাকে যে আপনি এটা একবার ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন। একবার ব্যবহারে আপনার চুল হয়ে উঠবে রেশমি, ঝলমলে এবং সিল্কি। আর যারা সাধারণত নিয়মিত চুল কালার রাখতে পছন্দ করেন তারা এই হেরপেটিক নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।
পাকা কলা ও মধুর প্যাক
কলার উপকারিতার কথা আমদের কারোরই অজানা নয়। সাধারণত চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করতে এটি একটি অসাধারণ টনিক হিসেবে কাজ করে থাকে। কলা চুলকে করে তোলে দ্রুত লম্বা, মোলায়েম এবং ঝলমলে। কেননা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইডেট, পটাশিয়াম ও ভিটামিন। সাধারণত কলা চুলের খুশকি দূর করার সাথে সাথে চুলের রুক্ষতাও দূর করে থাকে যা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে থাকে।
আর মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে চুলের উজ্জ্বলতা ও পুষ্টি বৃদ্ধি করে থাকে। চুল ঘন এবং লম্বা করতে হলে মধুর উপকারিতার কোনো জুড়ি নেই। মিশ্রণটি যেভাবে তৈরি করবেন এবং ব্যবহার করবেন, চলুন জেনে নেয়া যাকঃ
ব্যবহার বিধি
প্রথমে আপনাকে একটি পাকা কলা নিতে হবে এবং সেই কলা ব্লেডারে রেখে ব্লেড করে নিতে হবে একটি পাত্রে। এবার এরসাথে দুই চামচ মধু এবং এক চামচ নারিকেল তেল নিয়ে ভালো করে এই মিশ্রণটি তৈরি করে ফেলুন। এবার এই মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত আপনি ভালো করে লাগিয়ে ফেলুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল সুন্দর ভাবে ধুয়ে ফেলুন।
আপনি যদি আরো ভালো ফলাফল বা উপকার পেতে চান তাহলে আপনাকে এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে হবে। আর এই প্যাকটি ব্যবহার করার ফলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে গিয়ে আপনার চুল হবে আরও সিল্কি এবং সুন্দর।
ভিটামিন এ ও লেবুর তৈরি প্যাক
চুলের যত্নে আমরা সবাই কমবেশি লেবুর উপকারিতার কথা তো জানি। চুল সিল্কি রাখতেও লেবু খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড সাধারনত চুল পড়া কমে চুলের বৃদ্ধি করে থাকে। আর ভিটামিন-এ সাধারনত চুল পড়া কমিয়ে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রেখে চুল ঘন করতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া চুলের আগা ফাটা রোধ করে চুলকে উজ্জ্বল ও সিল্কি করে তোলে।
ব্যবহার বিধি
আপনাকে চুল সিল্কি করার এই অসাধারন একটি প্যাক যদি তৈরি করতে হয় প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ রেগুলার শ্যাম্পু নিয়ে নিতে হবে। আপনি সাধারণত যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তার সাথে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও আধা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। তবে এই হেয়ার প্যাকটি চুলে ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেওয়া যায়।
আপনি এই হেয়ার প্যাক টি গোসলের কিছুক্ষণ আগে আপনার মাথায় শ্যাম্পুর মতো ব্যবহার করে গোসল করে নিতে পারেন। আপনি যদি চান এই হেয়ার প্যাকটি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যখনই চুলে শ্যাম্পু লাগাবেন তখনই আপনি শ্যাম্পুর সাথে ভিটামিন ই এবং লেবুর রস অবশ্যই নিবেন তাহলে আপনার চুলের ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারী হবে। আর শুধু তাই নয় আপনার চুল সব সময় নরম সিল্কি এবং ঝলমলে থাকবে এর মাধ্যমে।
ডিম মধু ও লেবুর প্যাক
আপনার চুল পড়া বন্ধ শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুল মজবুত লম্বা এবং ঘন করার জন্য এই তিনটি উপাদান সাধারণত খুবই কার্যকরী। ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সালফার যা আপনার চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে চুলের স্বাস্থ্য খুবই সুন্দর করে তোলে।
আর লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সাইট্রিক এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সাধারণত চুলকে পুষ্টি জাগিয়ে চুলের বৃদ্ধি করে। আর মধু সাধারণত চুলের ফাটা রোধ করে থাকে।
ব্যবহার বিধি
প্রথমে আপনাকে একটি পাত্রে দুইটি ডিমের সাদা অংশ নিয়ে তার সাথে ২ টেবিল চামচ মধু এবং ১ চা চামচ লেবুর রস নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলতে হবে। তারপর ওই মিশ্রণের সাথে ২ চা চামচ নারকেল তেল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলতে হবে।
আর এই মিশ্রণটি সাধারণত গোসল করার ১ ঘন্টা আগে আপনার চুলে সম্পূর্ণভাবে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে ফেলুন। তারপর এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে আপনার ঘরে থাকা শ্যাম্পু নিয়ে এসে শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলুন। আর সাধারনত এমনভাবে চুল ধুতে হবে যেন চুলে ডিমের কোন গন্ধ পর্যন্ত না থাকে।
আপনি যদি এই প্যাকটি সপ্তাহে একবার নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার চুল হবে সুন্দর ঘন এবং সিল্কি।
Conclusion
চুল সিল্কি করার উপায় হিসেবে উপরে দেওয়া যে চারটি পদ্ধতি রয়েছে সব পদ্ধতি গুলো সব ধরনের চুলের জন্য উপকারী। আপনারা যদি কেউ ঘরোয়াভাবে চুল সিল্কি করতে চান তাহলে এই প্যাক গুলো আপনারা ব্যবহার করতে পারেন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার চুল উজ্জ্বল এবং সিল্কি হয়ে উঠবে।