নারকেল তেল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
স্বাস্থ্যের জন্য নারকেলের ব্যবহার কোনো ওষুধের চেয়ে কম নয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর নারকেল বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, নারকেল তেল সারা বিশ্বে বিখ্যাত। নারকেল তেল রান্না থেকে চুল এবং ত্বক সবকিছুর জন্য ব্যবহৃত হয়। এই কারণেই এই পোস্টে আমরা নারকেল তেলের মুখের মাস্ক সম্পর্কিত তথ্য দিতে যাচ্ছি। এখানে আপনি নারকেল তেলের ফেস মাস্কের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে শিখবেন কিভাবে ঘরে বসে নারকেল তেলের মুখোশ তৈরি করবেন। মনে রাখবেন যে নারকেল তেল প্রয়োগের উপকারিতাগুলি পোস্টে উল্লিখিত ত্বকের কিছু সমস্যা কমাতে কাজ করতে পারে, তবে সেগুলি তাদের নিরাময় নয়।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ঘরে তৈরি নারকেল তেলের ফেস মাস্কের কী কী উপকারিতা রয়েছে।
Contents
নারকেল তেলের ফেস মাস্কের উপকারিতা
নারকেল তেলের ফেস মাস্কের কিছু উপকারিতা নিম্নরূপঃ
ব্রণ নিরাময়ে সহায়কঃ ব্রণ এমন একটি সমস্যা যা যেকোনো সময় যে কারোরই হতে পারে। এর কোন ঋতু নেই এবং সময় নেই। Propionibacterium acnes এর মত কিছু ব্যাকটেরিয়া দ্বারাও ব্রণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নারকেল তেলে উপস্থিত মনোলাউরিন নামক একটি উপাদান এই ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কাজ করে। মনোলাউরিন লৌরিক অ্যাসিড থেকে নিষ্কাশিত হয়। এটিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কাজ করে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে লরিক অ্যাসিডের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা ব্রণের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। যাইহোক, নারকেল তেলের কমেডোজেনিক প্রকৃতির কারণে, কিছু লোক আগের চেয়ে বেশি ব্রণের অভিযোগ করতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে একটি প্যাচ টেস্ট করে নিন।
আরো পড়ুনঃ মধুর ফেসপ্যাক দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়, ব্রণ দূর করার উপায়, সহজে ব্রণের দাগ দূর করার উপায়
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করেঃ নারকেল তেলের ফেস মাস্কের উপকারিতা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। নারকেল তেলকে একটি ইমোলিয়েন্ট হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, যা ত্বককে ময়শ্চারাইজিং এবং নরম করতে সহায়ক। এটি এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বকের উপরের স্তর এবং ত্বককে সুস্থ করে তোলে এমন কোষগুলিকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কুমারী নারকেল তেল ত্বকে জল এবং গ্লিসারল আরও ভালভাবে বিতরণ করে, যা ত্বককে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
প্রদাহ উপশমে উপকারীঃ নারকেল তেল যেকোনো পোকামাকড় বা মশার কামড়ে লাগাতে পারেন, এটি পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে ফোলা থেকে মুক্তি দিতে পারে। উপরন্তু, UV বিকিরণ এছাড়াও ত্বক প্রদাহ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, কুমারী নারকেল তেলে পাওয়া অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি UV বিকিরণের প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে কাজ করে। এর সাথে, এটি ত্বককে ক্যান্সার, বার্ধক্যজনিত লক্ষণ, ডার্মাটাইটিস এবং একজিমা (ত্বকের উপর লাল চুলকানি ফুসকুড়ি) থেকে রক্ষা করতেও উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। এইভাবে নারকেল তেলের ফেসপ্যাকের উপকারিতা ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ক্ষত নিরাময়েঃ ক্ষত নিরাময়ে নারকেল তেলের ফেস মাস্কের উপকারিতা দেখা যায়। নারকেল তেল খাবারের পাশাপাশি অনেক প্রসাধনী এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয়। নারকেল তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি ত্বক মেরামতে সহায়ক।
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধঃ গবেষণা অনুসারে, নারকেল তেলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্য একটি গবেষণায় জানা গেছে যে নারকেল তেলের অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বককে ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। নারকেল তেলে উপস্থিত এই বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বককে সংক্রমণ এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
আসুন, এখন আপনাদের জানাই কিভাবে ঘরে বসে নারকেল তেলের ফেসপ্যাক তৈরি করবেন।
নারকেল তেলের ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম
ফর্সা ত্বকের জন্য মধু এবং নারকেল তেলের ফেসমাস্ক
উপাদানঃ
- এক-চতুর্থাংশ কাপ নারকেল তেল
- এক চামচ মধু
- এক চামচ শিয়া মাখন
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে নারকেল তেল এবং শিয়া মাখন নিন এবং মাইক্রোওয়েভে গলিয়ে নিন। এবার বের করে একটু ঠান্ডা করে তাতে মধু মেশান। ভালো করে মিশিয়ে মুখে লাগান। প্রায় আধঘণ্টা শুকানোর পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বক ছাড়া সব ধরনের ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারিতাঃ এটি ত্বককে সংক্রমণ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। সেইসাথে মধু ইউভি রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে এবং কোষগুলিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা ত্বকে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
উপরন্তু, শিয়া মাখন একটি ময়শ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে এবং ত্বককে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঘরে তৈরি নারকেল তেলের ফেসপ্যাকে মধু যোগ করলে তা ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে।
পরিষ্কার ত্বকের জন্য নারকেল তেলের ফেস মাস্ক
উপাদানঃ
- এক চা চামচ নারকেল তেল
- দুই থেকে তিন ফোঁটা চা গাছের তেল
- একটি স্প্রে বোতল
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে উভয় তেলই ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে তিন থেকে চার ফোঁটা এই তেল মুখে লাগান। এবার হালকা হাতে কিছুক্ষণ মুখে ম্যাসাজ করে ঘুমাতে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
সংবেদনশীল, শুষ্ক এবং সংমিশ্রণ ত্বকের লোকেরা এটি প্রতি রাতে প্রয়োগ করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের লোকেরা প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি তৈরি করার সময় খুব বেশি চা গাছের তেল ব্যবহার করবেন না।
উপকারিতাঃ নারকেল তেল ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, আমরা যদি চা গাছের তেলের কথা বলি, এটি ত্বককে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। টি ট্রি অয়েলেও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা ত্বকে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ফর্সা রঙের জন্য হলুদ এবং নারকেল তেলের ফেসপ্যাক
উপাদানঃ
- তিন টেবিল চামচ নারকেল তেল
- ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
- ১ চা চামচ লেবুর রস
- এক চামচ মধু
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার মুখ পরিষ্কার করে এই প্যাকটি লাগান। এটি প্রায় 15-20 মিনিটের জন্য মুখে রেখে দিন। ভালো করে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী এবং সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বক সংবেদনশীল হলে এই প্যাকে লেবুর রস ব্যবহার করবেন না।
উপকারিতাঃ ঘরে তৈরি নারকেল তেলের ফেসপ্যাকে হলুদ যোগ করলে এটি ত্বকের টোন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আসলে, ত্বক মেলানিন নামক রঙ্গক থেকে তার রঙ পায়। নির্দিষ্ট ধরণের কোষ এই রঙ্গক তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটিকে মেলানোজেনেসিস বলা হয়। শরীরে মেলানিনের মাত্রা বেড়ে গেলে ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে।
ব্ল্যাকহেডসের জন্য বেকিং সোডা এবং নারকেল তেল ফেসমাস্ক
উপাদানঃ
- এক টেবিল চামচ নারকেল তেল
- এক চা চামচ বেকিং সোডা
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে উভয় উপাদান ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মুখের ব্ল্যাকহেডস আক্রান্ত স্থানে লাগান। প্রায় 10 মিনিট আঙ্গুলের সাহায্যে মুখে ম্যাসাজ করুন। সবশেষে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী এবং সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারিতাঃ ব্ল্যাকহেডস হল এক ধরনের ব্রণ যা প্রায়ই নাকের চারপাশে দেখা দেয়। নারকেল তেলে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ ছড়ানো জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি বেকিং সোডা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে ব্ল্যাক হেডস দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কফি এবং নারকেল তেলের ফেস মাস্ক
উপাদানঃ
- এক চা চামচ নারকেল তেল
- এক চা চামচ কফি পাউডার
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে উভয় উপাদান ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি সারা মুখে লাগিয়ে আঙ্গুল দিয়ে প্রায় পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এবার 10-15 মিনিটের জন্য মুখে শুকানোর জন্য রেখে দিন। সবশেষে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারিতাঃ UV রশ্মি ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং অকাল বার্ধক্যের লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। এই ক্ষেত্রে, কফির নির্যাস ত্বকে ইউভি রশ্মির প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে, বার্ধক্যের লক্ষণ যেমন বলিরেখা প্রতিরোধ করতে পারে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে পারে। এর পাশাপাশি, কফি কোলাজেন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, কফি নারকেল তেলের ফেস মাস্কের সুবিধার সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
অ্যালোভেরা এবং নারকেল তেলের ফেস মাস্ক
উপাদানঃ
- এক চা চামচ নারকেল তেল
- এক চামচ অ্যালোভেরা জেল
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে নারকেল তেল এবং অ্যালোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি মুখে লাগান, দুই থেকে তিন মিনিট আঙ্গুল দিয়ে ম্যাসাজ করুন এবং শুকানোর জন্য রেখে দিন। প্রায় 10 মিনিট শুকানোর পরে, ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস মাস্ক তৈলাক্ত ত্বক ছাড়া সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপযোগী। এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারিতাঃ নারকেল তেল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, নারকেল তেলে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বককে অনেক ধরণের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ঘরে তৈরি নারকেল তেলের ফেসপ্যাকের উপকারিতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আসলে, অ্যালোভেরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বককে UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে।
এর পাশাপাশি এতে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য, যা ত্বককে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। অ্যালোভেরার ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বককে আর্দ্র এবং নমনীয় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং এর অ্যান্টিএজিং বৈশিষ্ট্যগুলি বার্ধক্যের লক্ষণগুলি কমাতে পারে।
ব্রণ জন্য দারুচিনি এবং নারকেল তেল ফেসমাস্ক
উপাদানঃ
- এক চা চামচ নারকেল তেল
- 1 চা চামচ জৈব দারুচিনি গুঁড়া
- আধা চা চামচ মধু
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে সব উপকরণ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ব্রণের উপর লাগিয়ে রেখে দিন। প্রায় 20 মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই মাস্ক সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
দ্রষ্টব্যঃ দারুচিনি অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকে জ্বালা হতে পারে, তাই এটি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করুন।
উপকারিতাঃ NCBI দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দারুচিনি এবং মধু দিয়ে তৈরি প্যাক ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যেমন P. acnes এবং A এর সাথে লড়াই করে। নারকেল তেলেও ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই প্যাকে থাকা দারুচিনি ও মধুর গুণাগুণ সহ নারকেল তেলের ফেস মাস্কের উপকারিতা আরও ভালো কাজ করে।
ওটমিল এবং নারকেল তেলের ফেস প্যাক
উপাদানঃ
- দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল (গলিত)
- এক চতুর্থাংশ কাপ ওটমিল
ব্যবহারবিধিঃ একটি ব্লেন্ডারে ওটমিল রাখুন এবং পাউডার তৈরি করুন। এবার একটি পাত্রে নারকেল তেল এবং ওটমিল পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মুখে লাগান এবং প্রায় 15-20 মিনিটের জন্য শুকাতে দিন। ভালো করে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।
উপকারিতাঃ ওটমিলকে ডার্মাটোলজিতে একটি কার্যকর পণ্য হিসাবে দেখা হয়। ওটমিল ত্বকের অবস্থা যেমন ডার্মাটাইটিস (লাল, চুলকানিযুক্ত ত্বকের ফুসকুড়ি), চুলকানি, ব্রণ এবং ভাইরাল সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, ওটমিল অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ঘরে তৈরি নারকেল তেলের ফেসপ্যাকে ওটমিল যোগ করলে তা ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লেবু, দই এবং নারকেল তেলের ফেসমাস্ক
উপাদানঃ
- চা চামচ নারকেল তেল
- এক চামচ দই
- আধা চা চামচ লেবুর রস
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে তিনটি উপাদান মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্টটি মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে কিছুক্ষণ শুকাতে দিন। প্রায় 15 মিনিট শুকানোর পরে, হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী, তবে যেহেতু এতে লেবু রয়েছে, তাই আমরা সংবেদনশীল ত্বকের লোকদের এটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেব।
উপকারিতাঃ ত্বকে ব্রণের সমস্যা অতিরিক্ত সিবাম অর্থাৎ ত্বকে তেল তৈরির কারণে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, দইয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বক থেকে ব্রণ দূর করতে এবং স্বাস্থ্যকর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল দূর করতে এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, দই UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে এবং ত্বকের pH স্তর বজায় রাখতেও সাহায্য করে। একই সময়ে, লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ত্বককে বার্ধক্য, ট্যানিং, শুষ্ক ত্বক এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে পারে। দই এবং লেবুর মিশ্রণ মুখের জন্য নারকেল তেল ফেস মাস্কের উপকারিতা দ্বিগুণ করতে পারে।
অল্পবয়সী ত্বকের জন্য অ্যাভোকাডো এবং নারকেল তেল ফেসমাস্ক
উপাদানঃ
- এক চা চামচ নারকেল তেল
- 1/4 চা চামচ অ্যাভোকাডো পেস্ট
ব্যবহারবিধিঃ একটি পাত্রে অ্যাভোকাডো পেস্ট এবং নারকেল তেল একত্রিত করুন এবং ভালভাবে মেশান। এই মাস্কটি মুখে লাগান এবং প্রায় 15-20 মিনিটের জন্য রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অ্যাভোকাডো এবং নারকেল তেলের মুখোশ সব ধরণের ত্বকের লোকেরা উপভোগ করতে পারে। এটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকারিতাঃ অ্যাভোকাডোতে উপস্থিত লিনোলিক অ্যাসিড ত্বকের বার্ধক্যের লক্ষণগুলি কমাতে কাজ করে। এটি বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি যেমন ত্বকে আর্দ্রতা হ্রাস এবং ঝুলে পড়া (ত্বকের অ্যাট্রোফি) কমাতে সাহায্য করে। নারকেল তেল UV রশ্মির কারণে ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে।
সতর্কতাঃ যেকোনো ফেসপ্যাক লাগানোর আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরিঃ
যেকোনো ফেসপ্যাক লাগানোর আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
মাস্ক লাগানোর পর ঘর থেকে বের হবেন না। এর কারণে ধুলো-ময়লা ত্বকে লেগে যেতে পারে।
ফেসপ্যাক ধোয়ার পর মুখে ঘষবেন না। এমনটা করলে মুখের সুস্থ কোষের ক্ষতি হতে পারে। সর্বদা হালকা ভাবে মুখ মুছুন।
মুখ মোছার পর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
কারো যদি ত্বক সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে যেকোনো ধরনের ফেসপ্যাক ব্যবহার করার আগে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এছাড়াও, ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে একবার প্যাচ টেস্ট করে নিন।
আশা করি আপনি নারকেল তেলের ফেসমাস্কের উপকারিতা এবং কীভাবে এটি তৈরি করবেন তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এই পোস্টে উল্লিখিত টিপসগুলির সাহায্যে, আপনি ঘরে তৈরি নারকেল তেলের ফেসমাস্কের সুবিধাগুলি পেতে পারেন। এই মুখোশগুলি খুব সাশ্রয়ী এবং এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলি সহজেই পাওয়া যায়। ত্বকের যত্ন সম্পর্কিত এই ধরনের আরও তথ্য পেতে, আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অন্যান্য নিবন্ধগুলিও পড়তে পারেন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য
ত্বকে নারকেল তেল ব্যবহার করা কি ঠিক?
হ্যাঁ, ত্বকে নারকেল তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। নারকেল তেলে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটোপিক ডার্মাটাইটিসের মতো ত্বকের সমস্যায়ও এর ব্যবহার উপকারী। এছাড়াও, এই তেলটি ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে এবং ত্বকের জ্বালা এবং সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করতেও ব্যবহার করতে পারেন।
প্রতিদিনের নারকেল তেল কি ত্বকের জন্য ভালো?
প্রতিদিন এটি ব্যবহার করা কিছু লোকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। নারকেল তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বককে চটচটে ও তৈলাক্ত করে তুলতে পারে।
নারকেল তেল কি ত্বক কালো করে?
না, নারকেল তেলকে অ্যাকন্থোসিস নাইগ্রিক্যানসের মতো ত্বকের সমস্যার জন্য উপকারী বলে জানা গেছে, অর্থাৎ এটি হাইপারপিগমেন্টেশনের প্রভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে। এই ভিত্তিতে, এটি বলা যেতে পারে যে নারকেল তেলের উপকারিতাগুলি ত্বক সাদা করার আকারেও দেখা যায়।