প্রেগন্যান্সি

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

3/5 - (3 votes)

গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় কিছু খাওয়ার আগে অনেকবার চিন্তা করে। কী খাবে আর কী খাবে না- এই প্রশ্নটা তাদের মনে ঘুরপাক খায়। কারণ গর্ভবতী মহিলা যাই খান না কেন, ভ্রূণের উপর তার সরাসরি প্রভাব পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে, গর্ভবতী মহিলারা যদি শুকনো ফলের মধ্যে বাদাম খেতে চান, তবে তাদের বাদাম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে হবে। এই পোস্ট থেকে জেনে নিন গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া নিরাপদ কিনা। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এই পোস্টে দেওয়া হয়েছে।

আসুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া নিরাপদ কি না।


গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া যায়। কারণ, এটি আয়রন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার সহ অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এই সমস্ত পুষ্টি গর্ভবতী মহিলার পাশাপাশি ভ্রূণের স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে কাজ করে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে বাদাম অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই, আমাদের পরামর্শ হলো গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার আগে একবার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এখন, আমরা আরও জানব যে গর্ভাবস্থায় কী পরিমাণে বাদাম খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কী পরিমাণ বাদাম খাওয়া নিরাপদ?
একজন সুস্থ মানুষ দিনে এক মুঠো (এক কাপের এক তৃতীয়াংশ) বাদাম খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় সারা দিনে ৪-৬ টি বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে, কারণ সবার গর্ভাবস্থা এক নয়। তাই শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকই এর সেবন সম্পর্কিত সঠিক তথ্য দিতে পারেন।

পরবর্তী অংশে জেনে নিন গর্ভাবস্থায় ভিজিয়ে রাখা বাদাম খাবেন নাকি ভিজিয়ে না রেখে।

গর্ভাবস্থায় কোনটি খাওয়া ভালো, কাঁচা বাদাম না ভিজিয়ে রাখা বাদাম?
বাদাম সাধারণত উভয় প্রকারেই খাওয়া হয়, তবে ভিজিয়ে রাখা বাদাম বেশি উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পেছনের কারণটি আমরা নিচে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছি:

১. সাইট্রিক অ্যাসিড হ্রাস করে: সাইট্রিক অ্যাসিড বীজ, বাদাম, শস্য এবং লেবুতে পাওয়া যায়। এই এসিড শরীরে পুষ্টির শোষণে বাধা দিতে পারে। ফলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। সারারাত বাদাম ভিজিয়ে রাখলে সাইট্রিক অ্যাসিড কমে যায়।
২. হজমে সহায়ক: কাঁচা বাদাম শক্ত, যা হজম করা কঠিন। ভিজিয়ে রাখলে বাদাম নরম হয়ে যায়, যা চিবানো ও হজমে সহজ হয়। তাই বলা হয়, বাদাম ভিজিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
বাদাম একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য আইটেম, যা পুরো গর্ভাবস্থায় খাওয়া যেতে পারে। এর কারণ, এতে উপস্থিত কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম পুরো গর্ভাবস্থায় প্রয়োজন হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা গর্ভাবস্থায় এই বিশেষ পুষ্টি পূরণের জন্য বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে মনে রাখবেন সব বাদাম একসঙ্গে না খেয়ে আপনার সুবিধা অনুযায়ী দুই-তিন ভাগে ভাগ করে নিবেন। এছাড়াও, খাওয়ার সময় বাদামের পরিমাণটি মনে রাখবেন, কারণ এটির অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকারক হতে পারে।

দ্রষ্টব্য – আমরা এখানে উল্লেখ করেছি যে, সবার গর্ভাবস্থা এক নয়, তাই কোন ত্রৈমাসিকে বাদাম খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপকারী হবে, তা শুধুমাত্র অভিজ্ঞ ডাক্তার বলতে সক্ষম হবেন।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বাদামে কি কি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।

বাদামের পুষ্টিগুণ

NCBI (ন্যাশনাল সেন্টার অফ বায়োটেক ইনফরমেশন) এবং USDA (US ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার) অনুসারে, ১০০ গ্রাম বাদামে অনেকগুলি প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে, যা নিম্নরূপ :

পুষ্টি উপাদানপ্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে
প্রোটিন ১২ মিলিগ্রাম
ফ্যাট২.৩ মিলিগ্রাম
ফাইবার১.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-ই২৫.৬৩ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ২৬৯ মিলিগ্রাম
আয়রন ৩.৭১ মিলিগ্রাম

বাদামের পুষ্টিগুণ জানার পর আসুন এখন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থায় বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া বিভিন্ন উপায়ে উপকারী হতে পারে। আমরা নীচে এই বিষয়ে তথ্য প্রদান করছি-

১. ফলিক অ্যাসিড – ফলিক অ্যাসিড বাদামে পাওয়া যায়। এই এসিড শিশুদের নিউরাল টিউব ত্রুটির (মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড জড়িত ত্রুটি) ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২. আয়রন – গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন। বাদাম আয়রনের ভালো উৎস। তাই বাদাম সেবন করলে শরীরে লোহিত রক্ত ​​কণিকা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখবেন যে, বাদাম গর্ভাবস্থায় আয়রন টেবলেট এর বিকল্প হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না। এটি খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
৩. ক্যালসিয়াম – গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম একটি অপরিহার্য পুষ্টি। গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম ভ্রূণের হাড় গঠনের বিকাশে সাহায্য করে। ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স অনুসারে, গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া উচিত। অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের সাথে বাদাম খাওয়াও ক্যালসিয়ামের চাহিদাও পূরণ করতে পারে।
৪. বাদাম হজমে সাহায্য করে- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের মতো সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। বাদামে উপস্থিত ফাইবার সঠিক হজমশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া, গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার কিছু অসুবিধাও আছে। আসুন, জেনে নিন গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

১. বাদাম ওজন বাড়াতে পারে- অতিরিক্ত বাদাম খেলে ওজন বাড়তে পারে। কারণ, বাদামে ক্যালোরি এবং চর্বির উপস্থিতি অনেক।
২. ম্যাঙ্গানিজ – ম্যাঙ্গানিজ বাদামের মধ্যে পাওয়া যায়, যা অকাল প্রসবের কারণ হতে পারে। যদিও গর্ভাবস্থায় এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান, তবে এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ক্ষতি হতে পারে। অতএব, বাদাম খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. পেট সম্পর্কিত সমস্যা – বাদামে ফাইবার পাওয়া যায় এবং ফাইবার অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটে ক্র্যাম্প হতে পারে।
৪. অ্যালার্জি হতে পারে – বাদামের অতিরিক্ত ব্যবহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তবে এমন ঘটনা খুব কমই দেখা যায়।
৫. ভিটামিন-ই-এর প্রভাব – আমরা ইতিমধ্যে উল্লেখ করেছি যে, বাদামে ভিটামিন-ই পাওয়া যায় এবং ভিটামিন-ই-এর অত্যধিক গ্রহণ জন্মজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

আসুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

বাদাম খাওয়ার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
বাদাম খাওয়ার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

. আপনার খাদ্যতালিকায় বাদাম অন্তর্ভুক্ত করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
২. প্রাকৃতিক অবস্থায় বাদাম খাওয়া উপকারী। বাজারে পাওয়া নোনতা, মিষ্টি বা চকলেটযুক্ত বাদাম খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
. বাদাম সবসময় ধুয়ে খাবেন, যাতে এতে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এড়ানো যায়।
৪. ভালভাবে প্যাক করা বাদামগুলো আরও উপকারী হতে পারে, কারণ খোলা জায়গায় পাওয়া বাদামগুলোর তুলনায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ঝুঁকি কম।

আমি কীভাবে আমার ডায়েটে বাদাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারি?
আপনার খাদ্যতালিকায় বাদাম অন্তর্ভুক্ত করার এই উপায়গুলো দেখে নিন।

. সারারাত বাদাম ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সকালে ভালো করে পেস্ট করুন। এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে পান করুন।
২. সকালে নাস্তায় এক গ্লাস দুধের সাথে খোসা ছাড়ানো বাদাম ভিজিয়ে নিন।
৩. মাখনের জায়গায় বাদাম ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য ভেজানো বাদামের মিহি পেস্ট তৈরি করে গমের রুটিতে লাগিয়ে খান।
৪. যেকোনো ডেজার্টের পুষ্টি বাড়াতে এতে কাটা বাদাম যোগ করুন।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য

বাদামের খোসা খাওয়া কি ক্ষতিকর?

না, বাদামের খোসা খাওয়া ক্ষতিকর নয়। এতে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান (যেমন ফাইবার) পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

খালি পেটে বাদাম খাওয়া কি ভালো?

বাদাম খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে, এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে, যদিও এটি নিয়ে আরো গবেষণা করা প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় যেসব নারীর ওজন বেশি বেড়ে যায়, তাদের বাদাম খাওয়া কমাতে হবে। কারণ বাদামে ক্যালরির পরিমাণ অনেক বেশি।

এই পোস্ট থেকে, আপনি জানলেন কিভাবে গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্য এর জন্য উপকারী হতে পারে। একই সময়ে, গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা প্রত্যেকের জন্য আলাদা হতে পারে। তাই এর সেবনে কিছু গর্ভবতী মহিলাদের অ্যালার্জির মতো সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, এটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভাল। আমরা আশা করি যে, এই পোস্টে দেওয়া তথ্য আপনার জন্য উপকারী হবে। গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য আমাদের অন্যান্য লেখাগুলো পড়তে থাকুন।

আরো পড়ুন-

zahid

A professional SEO Expert & Digital Marketing Consultant. Enhancing online visibility of business is my job. Keeping update myself with new search algorithm update and stay top on search results is my passion.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button