প্রেগন্যান্সি

গর্ভাবস্থায় পেটের কৃমি: লক্ষণ, চিকিৎসা ও ঘরোয়া প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তন ও সমস্যাগুলোর মধ্যে এক অন্যতম সমস্যা হতে পারে পেটের কৃমি, বিশেষত পিনওয়ার্ম কৃমি (Enterobius vermicularis)। এটি একটি সাধারণ পরজীবী সংক্রমণ যা গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে। এই পোস্টে, আমরা গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম কৃমির লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব।

পিনওয়ার্ম বা পেটের কৃমি কী?

পিনওয়ার্ম (থ্রেডওয়ার্ম) এক ধরনের পরজীবী, যা মানুষের পাকস্থলী এবং মলদ্বারে বাস করে। এটি সাদা রঙের, পাতলা এবং খুব ছোট, সাধারণত এক ইঞ্চি লম্বা হয়। পিনওয়ার্মের স্ত্রী কৃমি রাতে মলদ্বারের চারপাশে ডিম জমা দেয়, যা পরবর্তীতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে।

এই পরজীবী সহজেই ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত যখন আক্রান্ত ব্যক্তি তার মলদ্বার স্পর্শ করে এবং সেখান থেকে ডিম আঙ্গুলে লেগে বিভিন্ন পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে।

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম সংক্রমণ: সাধারণ সমস্যা?

হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম হতে পারে এবং এটি খুব সাধারণ একটি সমস্যা। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে, যার ফলে পিনওয়ার্মের সংক্রমণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্মের উপসর্গগুলি সাধারণত অন্যান্য সময়ের মতোই থাকে, তবে এটি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্মের লক্ষণ

পিনওয়ার্ম সংক্রমণের লক্ষণগুলি গর্ভাবস্থায় বা স্বাভাবিক অবস্থায় একই রকম থাকে। তবে গর্ভাবস্থায় কিছু শারীরিক পরিবর্তন কারণে এটি আরও অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। লক্ষণগুলো হল:

  • রাতের বেলায় মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি
  • ঘুমের সমস্যা ও বিরক্তি
  • মলদ্বারের চারপাশে ত্বকের সংক্রমণ
  • যোনিতে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস (গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে)

পিনওয়ার্ম সংক্রমণের কারণ

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্মের সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর পরিচ্ছন্নতা। এছাড়া অন্যান্য কারণসমূহও এর বিস্তার ঘটাতে পারে, যেমন:

  1. ডিমের সরাসরি সংক্রমণ: পিনওয়ার্মের ডিম শরীরের নানা স্থানে ছড়াতে পারে যেমন বিছানা, খাবার, পোশাক ইত্যাদির মাধ্যমে।
  2. অজান্তে সংক্রমণ: পিনওয়ার্মের সংক্রমণ অজান্তে হতে পারে, যেমন মুখে আঙুল নেয়া।
  3. চুলকানি এবং আঁচড়ানো: পিনওয়ার্মের ডিম নখে আটকে যায় এবং তার মাধ্যমে অন্যদের কাছে ছড়িয়ে পড়ে।

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

পিনওয়ার্মের সঠিক নির্ণয়ের জন্য কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো:

  1. টেপ টেস্ট: টেপের মাধ্যমে মলদ্বারের চারপাশ থেকে পিনওয়ার্মের ডিম সংগ্রহ করা হয়।
  2. আঙুলের নখের নমুনা: চুলকানির সময় নখের নিচে ডিম লেগে যায়, যা পরীক্ষা করে পিনওয়ার্মের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়।
  3. তুলো Swabs: মলদ্বারের কাছ থেকে তুলো সোয়াব সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয়।

গর্ভাবস্থায় পেটের কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম থেকে মুক্তি পেতে কিছু প্রাকৃতিক উপায় অত্যন্ত কার্যকরী। এই উপায়গুলি হলো:

  1. প্রতিদিন এক কাপ দই খান
    দইয়ে ল্যাকটোব্যাসিলাস প্রোবায়োটিক থাকে, যা পরজীবী সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  2. লেবুর রস
    লেবুর রস পরজীবীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী। এটি শরীর থেকে পরজীবী দূর করতে সাহায্য করে।
  3. আমলকি
    আমলকির রস পিনওয়ার্মের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী, কারণ এটি পরজীবীকে ধ্বংস করতে সহায়ক।
  4. রসুন ও গাজরের রস
    রসুন ও গাজরের রসও পিনওয়ার্ম দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্মের চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্মের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি-ওয়ার্ম ওষুধ ব্যবহৃত হয়, তবে গর্ভাবস্থায় এই ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক সঠিক সময়ে সঠিক ডোজ প্রযোজ্য করবেন, এবং গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের পর এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন।

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম প্রতিরোধের উপায়

পিনওয়ার্ম সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ও গরম পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
  • প্রতিদিন গোসল করুন, এবং ঝরনা ব্যবহার করুন।
  • অন্তর্বাস নিয়মিত পরিবর্তন করুন এবং বিছানার চাদর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • খাবার খাওয়ার পর টুথব্রাশ ব্যবহার করুন এবং হাত মুখে নেবেন না।

পিনওয়ার্ম সংক্রমণ কি ভ্রূণকে প্রভাবিত করতে পারে?

হ্যাঁ, পিনওয়ার্ম সংক্রমণ গর্ভের শিশুকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি শিশুর স্নায়ু এবং নিউরোট্রান্সমিটারগুলির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কোনও ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।

কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি আপনার পরিবারের অন্য সদস্যেরও পিনওয়ার্ম সংক্রমণ হয়, তবে তাদের চিকিৎসা করা এবং গর্ভাবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ।


গর্ভাবস্থায় পিনওয়ার্ম সংক্রমণ একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তবে এটি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা করা সম্ভব। আপনি যদি উপরের ঘরোয়া প্রতিকার ও সতর্কতা অনুসরণ করেন, তবে সহজেই এই সমস্যাটি সমাধান করতে পারবেন। গর্ভাবস্থায় যদি পিনওয়ার্ম সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ

4.8/5 - (25 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button