গর্ভাবস্থায় মেহেদি ব্যবহার করা যাবে কি? – সতর্কতা ও নিয়ম
গর্ভাবস্থায় এমন অনেক অনুষ্ঠান আসে, যাতে গর্ভবতীকেও সাজাতে হয়। যখন সাজসজ্জার কথা আসে, তখন মেহেদি কীভাবে ভুলে যাওয়া যায়? গর্ভাবস্থায় মেহেদি লাগানো নিরাপদ কি না এই প্রশ্নটি আপনার মনে অবশ্যই আসছে। আপনি এই পোস্টে এই প্রশ্নের উত্তর পাবেন এবং জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় মেহেদি ব্যবহারের নিয়ম ও যেসব সতর্কতা মানতে হবে।
Contents
গর্ভবতী মহিলারা কি মেহেদি ব্যবহার করতে পারবেন?
গর্ভবতী মহিলারা মেহেদি ব্যবহার করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অভাব রয়েছে। হ্যাঁ, এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রাকৃতিক লাল রঙের মেহেদি বেশ নিরাপদ। কিন্তু, কিছু সংবেদনশীল মানুষের জন্য মেহেদি এলার্জি প্রবণ। তাই সংবেদনশীল মহিলারা এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করলে বাজারে পাওয়া রাসায়নিক সমৃদ্ধ মেহেদি একেবারেই কিনবেন না। এতে উপস্থিত রাসায়নিক গর্ভাবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যদি এই সময়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক মেহেদি পাওয়া না যায়, তাহলে মেহেদি ব্যবহার করবেন না।
গর্ভাবস্থায় হাতে মেহেদি লাগানো কি নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় হাতে প্রাকৃতিক মেহেদি লাগানো নিরাপদ। হাতে অর্গানিক অর্থাৎ রাসায়নিক মুক্ত মেহেদি লাগালে গর্ভবতী ও অনাগত শিশুর যে কোনো ধরনের বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকে না।
গর্ভাবস্থায় চুলে মেহেদি লাগানো কতটা নিরাপদ সে সম্পর্কে আরও জানুন।
গর্ভাবস্থায় চুলে মেহেদি লাগানো কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় চুলে প্রাকৃতিক মেহেদি লাগানো নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় চুলের যত্নে হেনা ব্যবহার করা হয়। এই সময়ে রাসায়নিকযুক্ত মেহেদি প্রয়োগ করা এড়িয়ে চলুন, কারণ গর্ভবতী মহিলার মাথার ত্বক এবং চুলের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গর্ভবতী মহিলারা চুল রঙ করার জন্য কোন রাসায়নিক রং ব্যবহার করবেন না।
আসুন এখন জেনে নিই গর্ভবতীর জন্য কালো মেহেদি ব্যবহার নিরাপদ কি না।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কালো মেহেদি কি নিরাপদ?
না, কালো মেহেদি গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা অনিরাপদ। প্রকৃতপক্ষে, কালো মেহেদিতে ফেনাইলেনডিয়ামাইন (পিপিডি) নামক একটি রাসায়নিক যৌগ পাওয়া যায়, যা একটি গুরুতর এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে গর্ভাবস্থায় কালো মেহেদির ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মেহেদি ব্যবহারে কি কি ক্ষতি হতে পারে?
গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক মেহেদি ব্যবহার না করাও কিছু ক্ষতির কারণ হতে পারে। এগুলো এখানে জেনে নিন-
১. এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ গর্ভাবস্থায় ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল থাকে। এই অবস্থায় রাসায়নিক সমৃদ্ধ মেহেদি ব্যবহারে এলার্জি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর জন্য রাসায়নিক সমৃদ্ধ মেহেদিতে উপস্থিত রাসায়নিক ফেনাইলেনডিয়ামিন দায়ী। কিছু সংবেদনশীল মানুষের এমনকি প্রাকৃতিক মেহেদির প্রতি হালকা এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
২. ক্যান্সারের ঝুঁকিঃ একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, গর্ভাবস্থায় চুলে কেমিক্যাল সমৃদ্ধ মেহেদি লাগালে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে, রাসায়নিক সমৃদ্ধ রং এবং মেহেদিতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক থাকে। এসব কারণে বারবার বাজারের মেহেদি ব্যবহারে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় মেহেদি ব্যবহার করার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত তা পড়ুন।
মেহেদি ব্যবহার করার সময় গর্ভবতী মহিলাদের কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
মেহেদি ব্যবহারের সময় গর্ভবতীকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এটি গর্ভাবস্থায় ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি সতর্কতা নিম্নরূপ:
১. গর্ভাবস্থায় শুধুমাত্র খাঁটি প্রাকৃতিক মেহেদি ব্যবহার করুন।
২. ত্বক বেশি সংবেদনশীল হলে মেহেদি লাগানোর আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন।
৩. চুলে মেহেদি লাগাতে চাইলে নিজে না লাগিয়ে বাড়ির কোনো সদস্যের সাহায্য নিন।
৪. মেহেদি লাগাতে অনেক সময় লাগতে পারে, তাই লাগানোর সময় আরামদায়ক অবস্থায় বসুন।
৫. চুলে মেহেদি দেয়ার পরে চুল ধুলে ক্লান্তি লাগে। তাই চুল ধোয়া বা চেয়ারে বসে আরামে চুল ধোয়ার জন্য স্বামীর সাহায্য নিন।
৬. মেহেদি লাগানোর পর যদি জ্বালাপোড়া হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলুন।
৭. গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করবেন না যদি গর্ভবতী হওয়ার আগে কারো মেহেদিতে অ্যালার্জি থাকে।
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জন্য মেহেদি কতটা নিরাপদ আর কতটা নয়, এই লেখাটি পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। এখানে উল্লিখিত সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে, মেহেদি ব্যবহার করবেন কিনা তা ঠিক করুন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একেবারেই মেহেদি ব্যবহার করবেন না।
গর্ভাবস্থার সকল বিষয়ে সঠিক তথ্যবহুল প্রতিটি লেখা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে পড়ে নিন এবং সকল নিয়মকানুন মেনে আপনার সুস্থ ও সুন্দর গর্ভাবস্থা উপভোগ করুন।
এছাড়াও দেখুনঃ ১০০+ মেহেদী ডিজাইন পিক – সিম্পল, নরমাল, গর্জিয়াস, হাতের তালু ও পায়ের ইউনিক মেহেদী ডিজাইন