স্ট্রেচ মার্কস দূর করার জন্য ঘরে তৈরি ক্রিম
স্ট্রেচ মার্ক হলো ত্বকে দৃশ্যমান রেখা, যা দেখতে বর্ণহীন এবং অনেকটা পুরু আকারের। স্ট্রেচ মার্ক বিশেষ করে তলপেটের অংশের ত্বকে দেখা যায়। তবে এটি উরু, বাহু, নিতম্ব এবং স্তনেও দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থার পরে স্ট্রেচ মার্ক খুব সাধারণ। অন্যান্য কারণ যেমন হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, জেনেটিক কারণ, মানসিক চাপ এবং শারীরিক পরিবর্তন ইত্যাদি কারণেও স্ট্রেচ মার্ক দেখা যায়।
স্ট্রেচ মার্ক থাকলে আপনি পছন্দের পোশাক পরতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। তাই এখন থেকে আর অস্বস্তি বোধ করার দরকার নেই, কারণ এই পোস্টে স্ট্রেচ মার্ক দূর করার ক্রিম সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই ক্রিমগুলি আপনার ত্বকের গভীরে যাবে এবং স্ট্রেচ মার্ক কমাতে সাহায্য করবে। কিন্তু ব্যবহার এর পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিবেন।
Contents
- স্ট্রেচ মার্কস দূর করার জন্য ঘরে তৈরি ক্রিম
- শিয়া বাটার এবং কোকো বাটার দিয়ে তৈরি স্ট্রেচ মার্কস রিমুভাল ক্রিম:
- কোকো বাটার এবং অলিভ অয়েল এর তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
- শিয়া বাটার এবং অ্যাভোকাডো তেল এর তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
- বাদাম তেল এবং অ্যালোভেরার তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
- মাখন এবং জোজোবা তেলের তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
- শিয়া বাটার এবং বিটরুট দিয়ে তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
স্ট্রেচ মার্কস দূর করার জন্য ঘরে তৈরি ক্রিম
এখানে আমরা কিছু উপকারী ক্রিম বলছি, যেগুলো ঘরে তৈরি করা সহজ এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। কারো যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তাহলে এই ক্রিম ব্যবহারের আগে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিবেন এবং প্যাচ টেস্ট করে নিবেন। আসুন, জেনে নেই কিভাবে ঘরেই তৈরি করবেন এই ক্রিম-
শিয়া বাটার এবং কোকো বাটার দিয়ে তৈরি স্ট্রেচ মার্কস রিমুভাল ক্রিম:
শিয়া বাটার ত্বককে গভীরভাবে ময়শ্চারাইজ করে এবং মৃত কোষ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। কোকো বাটারে উচ্চ পরিমাণে ইমোলিয়েন্ট রয়েছে যা ত্বককে ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। এই ক্রিমে অন্তর্ভুক্ত নারিকেল তেল ত্বকের টিস্যুগুলিকে সুন্দর করে ত্বককে নরম করে তোলে।
ব্রণ বা এলার্জি জাতীয় সমস্যা থাকলে ভিটামিন ই তা নিরাময় করে থাকে। এবং ল্যাভেন্ডার তেলে সংক্রমণবিরোধী কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বককে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
ব্যবহারবিধি:
উপাদান-
- দুই টেবিল চামচ শিয়া মাখন।
- দুই টেবিল চামচ কোকো মাখন।
- দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল।
- দশ ফোঁটা ভিটামিন ই তেল।
- পাঁচ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল।
প্রক্রিয়া-
- প্রথমে শিয়া বাটার, কোকো বাটার এবং নারকেল তেল একসাথে মিশিয়ে নিন।
- এবার এই মিশ্রণে ভিটামিন ই তেল যোগ করুন।
- তারপর পুরো মিশ্রণটি একটি প্যানে রেখে অল্প আচে সম্পূর্ণ গলে যেতে দিন।
- মিশ্রণটি গলে গেলে ভালো করে নাড়ুন এবং তারপর প্যানটি গ্যাস থেকে নামিয়ে নিন।
- এবার এতে ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে পুরো মিশ্রণটি ভালো করে নাড়তে থাকুন।
- তারপর এই স্ট্রেচ মার্ক ক্রিমটি একটি বন্ধ বাক্সে রাখুন।
- প্রতিদিন যেসব স্থানে স্ট্রেচ মার্ক আছে সেসব স্থানে এই ক্রিমটি লাগান।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে আপনার ত্বককে সঠিক উপায়ে এক্সফোলিয়েট করবেন?
কোকো বাটার এবং অলিভ অয়েল এর তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
কোকো মাখন এবং নারকেল তেল এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা স্ট্রেচ মার্কস থেকে মুক্তি পেতে অনেক বেশি কার্যকরী। অলিভ অয়েল ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা ত্বকে সহজেই স্ট্রেচ মার্কস পড়তে দেয়না।
ব্যবহারবিধি:
উপাদান-
- তিন চা চামচ নারকেল তেল।
- দুই চা চামচ অলিভ অয়েল।
- দুই চা চামচ কোকো মাখন।
প্রক্রিয়া-
- প্রথমে একটি পাত্রে নারকেল তেল এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।
- এবার এতে কোকো বাটার দিন।
- তারপর এই মিশ্রণটি গ্যাসে বা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে হালকা আচে রাখুন।
- মিশ্রণটি গলে গেলে ভালো করে নাড়ুন।
- তারপর মিশ্রণটি ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন। এভাবে ক্রিমটা একটু শক্ত হয়ে যাবে।
- এবার ক্রিমটি একটি বোতলে রেখে দিন এবং দিনে দুবার ব্যবহার করুন। বিশেষ করে রাতে এই ক্রিম ব্যবহারে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ জয়তুন তেলের উপকারিতা কি এবং ব্যবহারের সতর্কতা, মেথি তেলের উপকারিতা ও তৈরির নিয়ম
শিয়া বাটার এবং অ্যাভোকাডো তেল এর তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
শিয়া মাখন হল এক ধরনের ময়শ্চারাইজিং মাখন যা শুষ্ক ত্বকের নানা সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। ত্বকের শুষ্কতা, বলিরেখা এবং স্ট্রেচ মার্ক এর জন্য এই ক্রিম অনেক কার্যকরী। তাই, গর্ভবতী মহিলাদের যখন গর্ভাবস্থায় স্ট্রেচ মার্ক থাকে, তখন তাদের পেটে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে বলা হয়। ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম স্ট্রেচ মার্কগুলি ধীরে ধীরে কমাতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো তেল খুব মৃদু অর্থাৎ এতে কোনো চিটচিটে ভাব নাই। এটি গভীরভাবে ত্বকে পুষ্টির যোগান দেন। এই ক্রিম এর ব্যবহার এ পেট, উরু ইত্যাদি স্থানে বলিরেখা বা স্ট্রেচ মার্ক কমে যায়।
ব্যবহারবিধি:
উপাদান-
- দুই চা চামচ শিয়া মাখন।
- দুই চা চামচ অ্যাভোকাডো তেল।
- দশ ফোঁটা ভিটামিন ই তেল।
প্রক্রিয়া-
- প্রথমে অ্যাভোকাডো তেলের সাথে শিয়া বাটার মিশিয়ে নিন।
- এবার এতে ভিটামিন ই তেল যোগ করুন। ভিটামিন ই তেলের জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুলও ব্যবহার করতে পারেন।
- এবার মিশ্রণটি মিডিয়াম আচে একটু গরম করে রাখুন। মিশ্রণটি গলে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন।
- এবার একটি বন্ধ বোতলে ক্রিমটি রাখুন।
- এখন ক্রিমটি স্ট্রেচ মার্কগুলিতে লাগান এবং ভালো ফলাফলের জন্য দিনে দুবার এটি ব্যবহার করুন।
বাদাম তেল এবং অ্যালোভেরার তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
বাদাম তেল ভিটামিন-ই তে সমৃদ্ধ। ভিটামিন ই ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং “কোলাজেন” (কোলাজেন: ত্বকের জন্য একটি অপরিহার্য প্রোটিন ) বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই স্ট্রেচ মার্ক রিমুভ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের জন্যও খুব ভালো। এছাড়াও অ্যালোভেরায় প্রতিরোধ করবার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বক বা শরীরকে মশ্চারাইজ করার পাশাপাশি কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকেও ত্বককে রক্ষা করে। অ্যালোভেরা জেলে উপস্থিত আর্দ্রতা কার্যকরভাবে স্ট্রেচ মার্কস কমায়।
ব্যবহারবিধি:
উপাদান-
- পাঁচ চা চামচ বাদাম তেল।
- পাঁচ চা চামচ বিশুদ্ধ অ্যালোভেরা জেল।
প্রক্রিয়া-
- প্রথমে বাদাম তেল এবং অ্যালোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে নিন।
- পেস্ট নরম না হওয়া পর্যন্ত মিশ্রণটি নাড়ুন। তেল ও জল মিশতে যেমন দীর্ঘ সময় লাগে, তেমনি এই দুইটি উপকরণ মিক্স হতেও সময় লাগবে। তাই আপনাকে এই মিশ্রণটি নাড়তে হবে যতক্ষণ না এটি একটি পেস্ট হয়ে যায়।
- মিশ্রণটি নরম হয়ে গেলে বোতলে ঢেলে দিন।
- রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই স্ট্রেচ মার্কের উপর এই ক্রিমটি লাগান। লাগানোর পর দুই থেকে তিন মিনিট ম্যাসাজ করুন।
- ভালো ফলাফলের জন্য সকালেও এই ক্রিম টি ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বাদাম তেলের উপকারিতা, ব্যবহারের নিয়ম এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, এলোভেরার উপকারিতা ও গুণাগুণ, এলোভেরা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
মাখন এবং জোজোবা তেলের তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
মাখন ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং স্থিতিস্থাপকতাও বজায় রাখে। মাখন ভিটামিন ই এর একটি ভালো উৎস। অন্যদিকে জোজোবা তেল ত্বকের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। এটিও স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি:
উপাদান-
- তিন টেবিল চামচ মাখন।
- জোজোবা তেল এক চা চামচ।
প্রক্রিয়া-
- প্রথমে মাখন ও জোজোবা তেল একসাথে মিশিয়ে নিন।
- মাখন একটু গরম করুন, যাতে জোজোবা তেলের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যেতে পারে। যদি একটি চামচ দিয়ে মাখন ভালোভাবে মেশানো যায়, তাহলে গরম করার দরকার নেই।
- স্ট্রেচ মার্কের চারপাশে লালভাব কমাতে দিনে দুবার এই ক্রিমটি ব্যবহার করুন।
শিয়া বাটার এবং বিটরুট দিয়ে তৈরি স্ট্রেচ মার্ক রিমুভাল ক্রিম:
এটি প্রমাণিত হয়েছে যে শিয়া বাটার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে কোমল করে তোলে। এতে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকে পুষ্টি যোগায়। বিটরুট অল্প বয়সে ত্বকের বার্ধক্যজনিত সমস্যা নিরসনে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে। অ্যালোভেরা ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং কোলাজেন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।
ব্যবহারবিধি:
উপাদান-
- এক টেবিল চামচ শিয়া মাখন।
- এক টেবিল চামচ বিটরুটের রস।
- এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল।
প্রক্রিয়া-
- প্রথমে একটি বড় পাত্রে শিয়া বাটার এবং বিটের রস মিশিয়ে নিন।
- সম্পূর্ণ মিশ্রণটি ভালোভাবে মেশান যতক্ষণ না বিটরুটের রস শিয়া বাটারের সাথে সম্পূর্ণভআবে মিশে যাচ্ছে।
- এবার মিশ্রণটিতে অ্যালোভেরা জেল দিন। পুরো মিশ্রণটি ভালো করে নাড়ুন। এবার মিশ্রণটি ত্বকে লাগানোর চেষ্টা করুন। যদি মিশ্রণটি একটি ক্রিমে পরিণত হয়, তাহলে সহজেই আপনার ত্বকে মিশে যাবে।
- প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই ক্রিমটি লাগান।
- প্রয়োগ করার পরে, কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন এবং মিশ্রণটি ত্বকে ভালভাবে শোষিত না হওয়া পর্যন্ত ম্যাসাজ করতে থাকুন।সারা মাসব্যাপী এই ক্রিম ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ বিট ফলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম, বেসনের ফেসপ্যাকঃ ১৫ টি সহজ টিপস, এলোভেরা দিয়ে রূপচর্চা করার সহজ উপায়
সারসংক্ষেপ
এখন আর দেরি কিসের, আজই বেছে নিন এসব থেকে আপনার পছন্দের ক্রিমটি এবং বানিয়ে ফেলুন। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবেন যে এটিকে শুরুতে অল্প পরিমাণে তৈরি করুন এবং তৈরি করার পর একটি প্যাচ টেস্ট করুন। প্যাচ টেস্টে ব্যবহারকৃত ক্রিম থেকে যদি আপনার কোনো অ্যালার্জি না হয় তবেই সেই ক্রিম ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ
Good post