স্বাস্থ্য

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি সমস্যা হয় ও করনীয়

5/5 - (1 vote)

বর্তমান সময়ে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা একটি অতি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ঝাল খাবার খাওয়া-দাওয়া করে বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত। তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অফিস কর্মী, গৃহিণী কিংবা ছাত্রছাত্রী, সবাই কখনো না কখনো হজম সমস্যা ও বুক জ্বালা নিয়ে ভুগেছেন। এই সমস্যাটি অবহেলা করলে তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই জানা দরকার, গ্যাস্ট্রিক হলে ঠিক কী কী সমস্যা হয় এবং হলে এর করণীয় কী।

গ্যাসের ব্যথা কোথায় হয়

গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের ব্যথা সাধারণত পেটের উপরিভাগে, নাভির ওপরের দিকে বা বুকের নিচে হয়। অনেক সময় এই ব্যথা ডান বা বাম দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে এটি পিঠেও অনুভূত হয়। এই ব্যথার সঙ্গে ঢেঁকুর, অম্বল, খালি পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, ও খাওয়ার পর পেটের অস্বস্তি হতে পারে। অনেকেই এই ব্যথাকে হার্ট অ্যাটাক মনে করে ভয় পেয়ে যান, যদিও এটি মূলত অ্যাসিডিটি বা গ্যাসজনিত ব্যাথা।

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি সমস্যা হয়

গ্যাস্ট্রিকের কারণে শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যে অনেক প্রভাব পড়ে। যেমন:

  • বুক জ্বালা ও অম্বলঃ অ্যাসিড খাদ্যনালিতে উঠে আসলে এমন জ্বালাভাব হয়।
  • ঢেঁকুর ও গলার কষাভাবঃ গ্যাস বেড়ে গেলে বারবার ঢেঁকুর ওঠে।
  • গ্যাস্ট্রিক পেট ব্যাথাঃ পেটের মাঝখানে বা বুকে ব্যথা অনুভব হয়।
  • খাওয়ার পর অস্বস্তিঃ পেট ভারী লাগে, যেন খাবার হজম হচ্ছে না।
  • মাথা ঘোরা ও ক্লান্তিঃ হজম না হওয়ায় শরীরে দুর্বলতা আসে।
  • ঘুমের সমস্যাঃ রাতে গ্যাস্ট্রিক হলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে।
  • খাদ্যবিমুখতাঃ পেট ভরা লাগায় অনেক সময় খেতে ইচ্ছা করে না।

এসব সমস্যার জন্য দায়ী আমাদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, দেরিতে ঘুমানো, স্ট্রেস এবং পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া।

গ্যাস্ট্রিক হলে করনীয়

১. খাদ্য নিয়ন্ত্রণ

  • সময়মতো খাবার খান ও অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • ঝাল, চর্বি, ভাজাপোড়া এবং অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার কমিয়ে দিন, কারণ এসবের ঝাল খাবারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
  • হালকা খাবার যেমন ভাত, সবজি, ডাল প্রাধান্য দিন।
  • লক্ষণগুলি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ খাবার যেমন পাকা কলা এবং পরিষ্কার স্যুপ উপভোগ করুন।
  • মশলাদার ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং গভীর রাতের খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • ছোট ছোট পরিমাণে ঘন ঘন খাবার খান, যাতে হজমে সুবিধা হয়।

২. ঘরোয়া চিকিৎসা

  • সকালে খালি পেটে গরম পানির সঙ্গে লেবু ও মধু খান।
  • এক চামচ জিরা গুঁড়ো এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে খেলে ব্যথা উপশম হয়।
  • পুদিনা পাতার রস ও আদার রস গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে কার্যকর ঘরোয়া উপাদান।

৩. নিয়মিত পানি পান

  • দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।

৪. স্ট্রেস কমানো

  • মানসিক চাপ হজম সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।
  • হালকা ব্যায়াম করুন, যা শরীর ও মনকে প্রশান্ত রাখে।

৫. গ্যাস কমানোর উপায়

  • খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান।
  • খাওয়ার পরে হেঁটে কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে গ্যাসের ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
  • চা এবং কফি সীমিত করুন, কারণ এগুলো অম্বল বা বুক জ্বালা বাড়াতে পারে।
  • অ্যালকোহল সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়।

কখন ওষুধ বা চিকিৎসার প্রয়োজন?

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে নিচের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা উপেক্ষা করা উচিত নয়:

  • খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বমি বমি ভাব
  • অতিরিক্ত বুক জ্বালা, অম্বল ও গলার জ্বালা
  • ওজন হ্রাস
  • রক্তবমি বা কালো পায়খানা
  • ঘন ঘন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা

এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত  গ্যাস্ট্রোরোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়?

  • সময়মতো খাবার খাওয়া
  • পানি পান বৃদ্ধি করা
  • হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া
  • ঘরোয়া উপায়ে যেমন আদা-জিরা-লেবুর ব্যবহার
  • প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ

কোন খাবার খেলে গ্যাস কমে?

ভাত-ডাল, জিরা পানি, আদার রস, পুদিনা পাতা, তুলসি পাতার রস ইত্যাদি খাবার গ্যাস কমানোর উপায় হিসেবে কার্যকর।

গ্যাস্ট্রিকের তাৎক্ষণিক সমাধান কী?

  • গরম পানি পান
  • আদা চা বা জিরা চা
  • চটজলদি গ্যাসের ওষুধ (চিকিৎসকের পরামর্শে)
  • ডান পাশে কাত হয়ে বিশ্রাম

গ্যাস্ট্রিক কি সম্পূর্ণ ভালো হয়?

সঠিক জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে গ্যাস্ট্রিক অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। একে পুরোপুরি নির্মূল না হলেও প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সর্বশেষ কথা

গ্যাস্ট্রিক একটি অস্বস্তিকর কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা। সময়মতো খাওয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ঘরোয়া চিকিৎসা ও সচেতনতা আপনাকে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই রেহাই দিতে পারে। গ্যাস্ট্রিক হলে করনীয় বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি প্রতিদিনের কাজে সুস্থভাবে মনোযোগ দিতে পারবেন।

Also Read: ব্রেন স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

zahid

A professional SEO Expert & Digital Marketing Consultant. Enhancing online visibility of business is my job. Keeping update myself with new search algorithm update and stay top on search results is my passion.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button