চালের পানি দিয়ে চুল ও ত্বকের যত্ন নেয়ার নিয়ম
পরের বার যখনই চালের পানি ফেলতে যাবেন, তার আগে অবশ্যই ভাববেন। কারণ চালের পানিতে রয়েছে খনিজ ও ভিটামিন, যা আপনার ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এশিয়ান মহিলারা বহু শতাব্দী ধরে তাদের চুলকে সুন্দর করতে চালের পানি ব্যবহার করে আসছেন। এর ব্যবহারে চুল গজায় এবং মুখ ও ত্বকের কোষ পুষ্ট হয়।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, চালের পানি চুল ও ত্বকের জন্য কতটা উপকারী-
Contents
চালের পানি দিয়ে ত্বকের যত্ন
ব্রণের সমস্যা নিরসনে চালের পানিঃ যারা প্রদাহ , ফুসকুড়ি (ফুসকুড়ি) এবং ডার্মাটাইটিসের মতো ত্বক সম্পর্কিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের দিনে দুবার চালের পানি দিয়ে গোসল করা উচিত। এতে উপস্থিত প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। ভাতের পানিতেও প্রচুর পরিমাণে মাড় থাকে, যা ব্রণের জন্য খুবই কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ মধুর ফেসপ্যাক দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়, ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ হলে করণীয়, সহজে ব্রণের দাগ দূর করার উপায়
সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে চালের পানির ব্যবহারঃ চালের পানি একটি প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন, যা আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, চালের পানি রোদে পোড়া (সানবার্ন) নিরাময়েও ব্যবহৃত হয়। এটি সূর্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকে কাজ করে এবং এইভাবে এটি আপনার ত্বককে দ্রুত নিরাময় করে। এটি ত্বকের ওপেন পোরস কে টাইট করে।
অ্যান্টি-এজিং হিসেবে চালের পানির ব্যবহারঃ চালের পানিতে ত্বকের হারানো সৌন্দর্য ও স্থিতিস্থাপকতা ফিরিয়ে আনার গুনাগুন রয়েছে। বিশেষ করে যখন ত্বক শুষ্ক এবং পানিশূন্য হয়। চালের পানি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদানে সমৃদ্ধ। এছাড়াও, এতে রয়েছে ফেরুলিক অ্যাসিড এবং অ্যালানটোইন নামক উপাদান, যা ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ মুখের পিগমেন্টেশন: এই ৭টি ভুলের কারণে মুখে বাড়ে কালো দাগ
চেহারা ফর্সা করতে চালের পানির ব্যবহারঃ চালের পানি ত্বককে সুন্দর করে এবং ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। চালের পানিতে তুলোর বল ডুবিয়ে মুখে লাগালে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এর প্রতিদিনের ব্যবহারে চেহারার দাগ অনেক কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ স্থায়ীভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়, মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় ঘরোয়া স্কিন গ্লোয়িং টিপস
ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চালের পানির ব্যবহারঃ এটি কেবল কোষেরই উপকার করে না, ত্বককে নরম ও কোমল করে তোলে। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা অনেক ধরনের ত্বকের ক্যান্সারকে দূরে রাখে এবং অ্যান্টি-এজিং হিসেবে কাজ করে।
চালের পানি ত্বকের ছিদ্র দূর করেঃ চালের পানি ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে একটি ভাল উপকরণ। এর পাশাপাশি, এটি ত্বকের পোরস বা ছিদ্র বন্ধ করার একটি প্রাকৃতিক বিকল্প। চালের পানি মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার ত্বক টানটান ও নরম মনে হবে।
চালের পানি ফেইস কে টোনড আপ রাখেঃ চালের পানি প্রাকৃতিক স্কিন টোনার হিসেবে কাজ করে । এটি ত্বককে নরম, তরুণ এবং সুস্থ রাখে। তুলো দিয়ে মুখে চালের পানি লাগান। এর ফলে আপনার পোরস বা ছিদ্র সঙ্কুচিত হতে শুরু করবে এবং রক্ত চলাচলও বৃদ্ধি পাবে।
ত্বককে কোমল ও সুন্দর করে ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে চালের পানির ব্যবহারঃ অপরিষ্কার পরিবেশ এবং বার্ধক্য জনিত কারণে ত্বক প্রাণহীন দেখাতে শুরু করে। ত্বকের যত্নের জন্য মানুষ বাজার থেকে অনেক পণ্য কিনে থাকে।
অন্যদিকে, চালের পানি শুধু আপনার ত্বককে কোমল ও সুন্দর করে না, ত্বককে চিরতরে তারুণও রাখে। এছাড়া এটি ত্বকের দাগও দূর করতে সাহায্য করে। তাই শুরুতেই বাজারের পন্য না কিনে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের সৌন্দর্য কিভাবে রক্ষা করা যায় তা চিন্তা করা উচিৎ।
ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চালের পানিঃ আপনার যদি কোনও আঘাত বা অন্য কোনও ধরণের ত্বকে জ্বালা থাকে তবে আক্রান্ত স্থানে চালের জল লাগান। এছাড়াও, চালের জল ত্বকের প্রদাহ বা সংক্রমণ দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। উপরন্তু, চালের জল প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের প্রদাহ এবং জ্বালা নিরাময় করতে সক্ষম।
চালের পানি একজিমায় সাহায্য করেঃ একজিমা এমন একটি রোগ যাতে ত্বক লাল, শুষ্ক এবং ফাটা হয়ে যায় এবং এটি খুব চুলকায়। এমতাবস্থায় চালের পানির ব্যবহার এই রোগের জ্বালা নিরাময়ে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারে।
চালের পানি দিয়ে চুলের যত্ন
নিম্নোক্ত উপায়ে চালের পানি চুলের জন্য উপকারী-
চালের পানি চুলের উন্নতি ঘটায়ঃ চুল পড়া রোধ ও চুলের বৃদ্ধিতে চালের পানির চেয়ে ভালো আর কিছু নেই। চালের পানিতে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি করে।
এর পাশাপাশি চালের পানিতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর চালের পানি ব্যবহার করুন । সপ্তাহে দুবার এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।
চালের পানি দ্বিমুখী চুলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেঃ চুল ফাটা বা দ্বিমুখী চুল শুধুমাত্র চুলকে খারাপ দেখায় না, এটি অস্বাস্থ্যকর চুলের লক্ষণও বটে। স্প্লিট এন্ডের সমস্যা দূর করতে আপনার চুলের প্রোটিন প্রয়োজন এবং চালের পানিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে।
দূষণ এবং অপর্যাপ্ত যত্নের কারণে দুই মাথার চুল গজাতে শুরু করে, যার কারণে চুল অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। চালের পানিতে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করে।
দুই মুখের চুল অত্যাধিক পরিমাণে থাকলে সেই চুলগুলো চালের পানিতে ভিজিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পড়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার এ আপনি ধীরে ধীরে চুলের অবস্থার উন্নতি দেখতে পাবেন।
চালের পানি চুল নরম করেঃ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনার না দিয়ে তাতে চালের পানি লাগান। এটি চুল ঘন করতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারে আপনার চুল নরম মনে হবে। এছাড়া চালের পানি চুলকে মজবুত ও সুস্থ রাখে।
চুল পড়া বন্ধে চালের পানিঃ চালের পানি চুলের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এতে ইনোসিটল নামক একটি কার্বোহাইড্রেট রয়েছে , যা ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করে এবং চুল ফাটা বা ভাঙা প্রতিরোধ করে।
আরো পড়ুনঃ চিরতরে চুল পড়া বন্ধ করার উপায়, চুল পড়া বন্ধ ও ঘন করার উপায়
চালের পানি চুলের গোড়া মজবুত করেঃ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে ভাতের পানিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। অ্যামিনো অ্যাসিড চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলকে চকচকে ও নরম করে।
চালের পানি দিয়ে খুশকি দূর করুনঃ খুশকি দূর করা খুবই কঠিন কাজ। এতে শুধু মাথায় চুলকানি হয় না, অনেক বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ও পড়তে হয়। কখনো কখনো খুশকি চুলকানির সৃষ্টি করে যা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিদিন চালের পানি ব্যবহার করলে আপনার মাথার ত্বক থেকে খুশকি দ্রুত দূর হয়।
আরো পড়ুনঃ লেবু দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়, খুশকি দূর করার ৫টি ঘরোয়া উপায়
চালের পানি চুল ঝলমলে করেঃ চুল ঝলমলে ও নরম করতে চালের পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। ধোয়ার পর পানি চুলে ২০ মিনিট রেখে দিন এবং তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সেরা ফলাফলের জন্য আপনি চালের পানির সাথে গোলাপ জলও মিশিয়ে নিতে পারেন।
চালের পানি উকুন মেরে ফেলতে পারেঃ চালের পানি নিট এবং উকুন এর জন্য খুবই উপকারী। ভাতের পানিতে উপস্থিত স্টার্চ মাথার উকুন ও নিটকে দ্রুত মেরে ফেলে।
আরো পড়ুনঃ উকুন দূর করার উপায় যা চুলকে সুস্থ রাখবে
চালের পানি চুলের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করেঃ চালের পানি খুবই ভালো এবং চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। আপনি এটিতে রোজমেরি তেল, ল্যাভেন্ডার তেল বা জেরানিয়াম তেল যোগ করতে পারেন। শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর মিশ্রণটি সারা চুলে লাগান। লাগানোর পরে, কন্ডিশনারটি ১০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য রাখুন এবং তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চালের পানি চুলের স্বাস্থ্য বাড়ায়ঃ এটা বিশ্বাস করা হয় যে চালের পানি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বহু শতাব্দী ধরে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে উপস্থিত ইনোসিটল এবং কার্বোহাইড্রেট চুলের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করে।
চালের পানি কিভাবে প্রস্তুত করবেন?
চালের পানি দুইভাবে তৈরি করা যায়। উভয় পদ্ধতি নীচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে-
পদ্ধতি ১: ১/২ কাপ কাঁচা চাল নিন। পানি দিয়ে ধুয়ে ২-৩ কাপ পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে দিন। এরপর পানি ফিল্টার করুন। এখন আপনি এই জল ব্যবহার করতে পারেন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: ১/২ কাপ কাঁচা চাল ধুয়ে দ্বিগুণ পানি দিয়ে সিদ্ধ করুন। চাল ফুটে উঠলে ছেঁকে নিয়ে পানির বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন।
কীভাবে ত্বকে চালের পানি ব্যবহার করবেন?
ত্বকের যত্নে চালের পানি নানাভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আসুন, জেনে নেই কিছু সহজ উপায়-
- চালের পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন
- পরিষ্কার করার পর চালের পানি ত্বকে টোনার হিসেবে লাগাতে পারেন।একটি স্প্রে বোতলে চালের পানি ভরে মুখে ছিটিয়ে দিন।
- গোসলের পানিতে অল্প পরিমাণ চালের পানি ব্যবহার করুন।
- পেডিকিউর করতে চালের পানিতে পা ডুবিয়ে রাখুন।
- একই সময়ে, কেউ কেউ চুলের কন্ডিশনার বা চিকিৎসা হিসাবেও চালের পানি ব্যবহার করতে পারেন।
চুলে চালের পানি কীভাবে ব্যবহার করবেন?
চুলে চালের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে নিম্নরূপ পদ্ধতিতে-
- প্রথমে চুলে শ্যাম্পু করুন।
- এরপর চালের পানি দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
- তারপর হালকা হাতে চুলে প্রায় ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন ।
- এবার এভাবেই ২০ মিনিট রেখে দিন।
- এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- আপনি চালের জলে কিছু অ্যালোভেরা জেল বা যেকোনো এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ।
- এছাড়াও, শ্যাম্পু করার পরে, আপনি লিভ-ইন-কন্ডিশনার হিসাবে চুলে চালের পানি স্প্রে করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
এগুলো কি আসলেই কার্যকারি