সাহিত্য

ভলপোনি নাটকের সারমর্ম

এক অনন্য চরিত্রের নাম ভলপোনি। তিনি ছিলেন স্ত্রী, সন্তান ও অভিবাবকহীন। তিনি অঢেল সম্পদের প্রাচুর্য গড়ে তুলেছিলেন। তার সম্পত্তির লোভে চারপাশ থেকে কড়া নাড়ছিলেন তার আত্মীয়স্বজন ও পরজীবীকারীরা। এ বিশাল সম্পত্তি অর্জনের জন্য কোন শস্য বপন করতে হয়নি, ব্যাংক থেকে সুদ পাবার আশায় টাকা-পয়সা ব্যাংকে রাখতে হয়নি। তার জমাকৃত সম্পদের দেখাশুনা করার জন্য একজন চাকর ছিল। সে ভলপোনিকে স্যার বলে সম্বোধন করতো। ভলপোনিও চাকরকে তার অভিবাবকের চেয়ে, বন্ধুদের চেয়ে বেশি শ্রেষ্ঠ বলে মনে করত।

এখানে তার নাম ছিল মসকা। মসকা সবসময় তার স্যারের প্রসংসা করত। ভলপোনি সবসময় কৌশল ও পাণ্ডিত্য অর্জনে পটু ছিলেন। তার সম্পদের পরবর্তী অংশীদার ঠিক করার জন্য অনেকের কাছ থেকে উপহার গ্রহন করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো। ভলপোনি সবসময় অসুস্থতার ভান করতো ও প্রতারণার ছক আঁকত। কিন্তু কেউই তাকে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারত না।

সবাই ভাবত সে মারা গেলেই সম্পত্তির মালিক হয়ে যাব। এইজন্য তার প্রশংসা ও নানা রকম উপহার আসতো। উকিল মহোদয় ঘরে প্রবেশ করার আগে ভলপোনি অসুস্থতার ভান ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আর ভাবছিলেন এই বুঝি আমি উপহার পেতে যাচ্ছি। মহামান্য স্যারকে বলে বেড়াচ্ছিলেন আপনার জন্য বিশেষ কিছু অপেক্ষা করছে। ঘরের দরজা খুলতেই মসকা উকিলকে সম্বোধন করলেন। উকিল ঘরে ঢুকতেই মসকাকে উপহারের কথা জানালেন।

ভলপোনি কাশতে কাশতে উকিলের সামনে এলেন ও উপহার গ্রহন করলেন। উকিল মহোদয় বলে উঠলেন যে, আপনার অসুস্থতার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে। তবে আমি যদি আপনার রোগমুক্তি করতে পারতাম তহলে আমার কাছে প্রশান্তি লাগত। ভলপোনি বলতে লাগলেন আমার সম্পদের পরবর্তী মালিক তুমি। মসকা বেশ আগ্রহের সাথে উকিলকে উৎসাহিত করলেন। উকিল মহোদয় আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন। তার অনুভূতি আকাশচুম্বী।

একসময় বলে উঠলেন, সত্যিই কি আমি আপনার সম্পত্তির পরবর্তী মালিক হতে চলেছি? মসকা উকিলকে আরো বেশি করে আশ্বাস দিয়ে চললেন। মসকা বলতে লাগলেন এই বিশাল সম্পত্তির মালিক যেহেতু আপনি হতে চলেছেন আমাকে আপনার চাকর হিসেবে রাখবেন। উকিল মহোদয় ভলপোনিকে প্রশংসার সাগরে ভাসাতে লাগলেন। এইভাবে মসকাকেও বিভিন্ন আশ্বাস ও প্রনোদনা করছিলেন। ভলপোনি উকিল মহোদয়কে এক পর্যায়ে স্যার বলেও সম্বোধন করেছিলেন। ভলপোনি অসুস্থতার ভানই করেনি একাধারে শুধু উপহারটির কথা ভাবছিলেন।

ভলপোনি বড় করে নিঃশ্বাস নিলেন উকিল মহোদয়কে অবগত করলেন তিনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না। এক পর্যায়ে সবাই একে একে প্রস্থান করলো। মসকা উপহারটি হাতে নিয়ে ভলপোনিকে আরো বেশি করে উপহার পাবার আশ্বাস দিলেন। এইভাবে পরপর সবার কাছ থেকেই ভলপোনি উপহার গ্রহন করতে থাকলেন। তিনি সবার কাছ থেকে উপহার গ্রহন করতেন ও সবাইকে তার সম্পত্তির মালিক বানানোর আশ্বাস দিতেন।

মসকা ও ভলপোনির সেবা শুশ্রূষার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকলেন। কেননা মসকা এ বিশাল সম্পত্তির দেখা-শুনা করতেন। সবাই ভলপোনির জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে আসলেও তারা তার মৃত্যু কামনা করছিলেন। তার মৃত্যু হলেই এ বিশাল সম্পত্তির মালিক বনে যাবেন। মসকা বলতে লাগলেন এইসব লোভী এবং নিষ্ঠুর লোকদের বোকা বানাতে আপনি দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকবেন।

ভলপোনি সবাইকে প্রতারণা করে চলেছেন ও বিভিন্নভাবে আশ্বাস দিতে লাগলেন। শেষ পর্যায়ে ভলপোনি তাদের আসল চেহারাটি সকলের কাছে প্রকাশ করে দিয়েছে। তারপরও তারা নতুন নতুন বুদ্ধিও কৌশল বের করে আর সফল হয় না। অবশেষে  তারা সকলেই আইনের কাছে ধরা পরে যায় এবং কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়। আর জনগন বুঝতে পারে এরা সবাই লোভী ও পরজীবী ছিলেন। ম্যজিস্ট্রেড সকলকে অপরাধী চিহ্নিত করলেন ও আইনের আওতায় এনে বিচার করার প্রয়াস করলেন।

ছবিঃ সগৃহীত

Rate this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button